ইমাম হোসাইন (আ.) -এর অনুপম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য

সত্য ও ন্যায়ের ঝাণ্ডাবাহী ইমাম হোসাইন (আ.) ছিলেন নবী বংশের উজ্জ্বল প্রদীপ। কারবালার রক্তাক্ত প্রান্তরে শাহাদাতের অভূতপূর্ব ঘটনার আকস্মিকতায় তার সুবিশাল জীবনের অনেক দিকই পাঠকের নিকট অজানা। শোকবিহবল উম্মতে মুহাম্মাদী (সা.) প্রায় ক্ষেত্রে আশুরার আলোচনায় কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার বর্ণনা শুনেই ক্ষান্ত হন,কিন্তু তার পূত-পবিত্র বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম এবং অনুপম চারিত্রিক মাধুর্য তাদের কাছে অজানাই থেকে যায়।

নবী দৌহিত্র, মা ফাতেমা ও হযরত আলীর কলিজার টুকরা ইমাম হোসাইনের জীবনের প্রতিটি পর্যাযে রয়েছে উন্নত চরিত্রের নিদর্শন যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ ।

বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) -এর স্নেহছায়ায় লালিত ইমাম হাসান ও হোসাইন ছিলেন চেহারা-সুরতে, চলনে-বলনে নবীজীরই প্রতিরূপ। শিশুকাল হতেই নবীজীর সাহাবিগণ তাদের অত্যন্ত স্নেহ,সম্মান ও শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। তাদের ভালোবাসার কথা নবীজী বহুস্থানে বহুবার উচ্চারণ করেছেন এ কথা সর্বজনবিদিত।

ছোটবেলা হতেই তারা নবী গৃহে স্বয়ং রাসূলে পাক (সা.) হতে দ্বীনি শিক্ষা লাভ করেন। বাবা জ্ঞান নগরীর দরজা হযরত আলী (আ.) ও মা খাতুনে জান্নাত ফাতেমা (সা.আ.) –এর সান্নিধ্য ছিল তাদের শিক্ষার সবচেয়ে বড় সহায়ক।

হযরত হোসাইন (আ.) ছিলেন চরিত্র মাধুর্যে কুরআনের জীবন্ত নমুনা। তার সুললিত কন্ঠের কুরআন তিলাওয়াত শোনার জন্য সাহাবীরা ছিলেন দিওয়ানা। ইবাদাত-বন্দেগিতে তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ, অতুলনীয়। যুবায়ের বিন বকর (রা.) বলেন, মুসআব আমাকে জানিয়েছেন, হযরত হোসাইন ২৫ বার মদীনা হতে মক্কায় পায়ে হেটে পবিত্র হজ্ব পালন করেন।

নামাযের প্রতি ছিল ইমামের বিশেষ আকর্ষণ। আশুরার রাতে তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে অবর্ণণীয় ক্ষুধা-পিপাসায় কাতর অবস্থায়ও সারারাত আল্লাহর আরাধনায় মশগুল ছিলেন ।

আশুরার দিন শাহাদাতের পূর্বমুহূর্তে কারবালা প্রান্তরে শত্রু সৈন্যবেষ্টিত সংকটময় মুহূর্তেও তিনি যোহরের নামায আদায় করেন।

ইমাম হোসাইন (আ.) কেমন জ্ঞানসাধক ছিলেন তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হলো একবার আমীর মু’আবিয়া কুরাইশ বংশীয় একজন লোককে বলেছিলেন ,মসজিদে নববীতে যখন তুমি একদল লোককে (একজন ঘিরে) চাক্রাকারে নিশ্চল হয়ে বসে থাকতে দখবে, যেন মনে হবে তাদের মাথার ওপর পাখি বসে আছে, ধরে নেবে যে তা হচ্ছে আবু আব্দুল্লাহর (ইমাম হোসাইনের) পাঠচক্র,যার জামা হাতের কব্জির অর্ধেকাংশ পর্যন্ত প্রলম্বিত। লোকেরা তার পাঠ গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছে।’ (তারিখে ইবনে আসাকির)

ঘোড়া ও অসি চালনায় তিনি বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন। কিশোর বয়সেই ইমাম হোসাইন (আ.) যুদ্ধ বিদ্যার শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি দু’একটি যুদ্ধেও সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন । জিহাদের ডাকে প্রয়োজনের মুহূর্তে সারা দিতে তিনি কখনো পিছপা হতেন না। জিহাদের ময়দানে তার উপস্থিতি মুসলিম মুজাহিদদের অপরিসীম অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করত।

তিনি ছিলেন দানশীল। গরীব-অসহায়ের দরদী। তার দুয়ার হতে কেউ খালি হাতে ফিরে যায়নি। মানুষের অসহায়ত্ব দেখলে তার মন হাহাকার করে উঠত। একবার এক গ্রাম্য গরীব বেদুইন মদীনার অলিগলি ঘুরে কোথাও কিছু না পেয়ে ইমাম হোসাইন (আ.) -এর দুয়ারে এসে হাজির। তিনি তখন গভীর ধ্যানে নামাযেরত। ভিক্ষুকের হাকডাকে তাড়াতাড়ি নামায শেষ করে দুয়ারে এসে দেখেন গরীব লোকর অবস্থা সত্যিই শোচনীয়। তিনি গৃহ ভৃত্য কাম্বারের কাছে জানতে পারলেন তার পরিবারের খরচের জন্য মাত্র ২০০ দিরহাম অবশিষ্ট আছে। তিনি বললেন, ‘তা নিয়ে এসো। কারণ; এমন একজন প্রার্থী এখানে উপস্থিত হয়েছে যার প্রয়োজন আমার পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনের চাইতে বেশি ।’ ইমাম হোসাইন সে অর্থের পুরোটাই বেদুইনের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, এটা রাখো, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই,আমার অন্তর তোমার জন্য বিগলিত,আমার যদি আরো থাকত, তাও তোমাকে দিয়ে দিতাম। উম্মুক্ত আকাশ হতে সম্পদের বারিপাত হোক তোমার মাথার ওপর ,কিন্তু ভাগ্যের ওপর সন্দেহ আমাদের অসুখি করে রাখে।’ ভিক্ষুকটি ইমাম বংশের মর্যাদার কথা কৃতজ্ঞ চিত্তে উচ্চারণ করতে করতে বিদায় নিল। (তারিখে ইবনে আসাকির, ৪র্থ খণ্ড)

তিনি ঋণগ্রস্থ অনেক সাহাবীকে ঋণমুক্ত করেছেন। কবিদের তিনি ভালোবাসতেন। মুক্ত হস্তে তাদের দান করতেন। কেউ কেউ তাতে আপত্তি করলে তিনি বলতেন : ‘সেই অর্থই সর্বোত্তম যা একজন মানুষের মর্যাদা রক্ষা করে ।’ (তাহজিবুল কামাল)

তিনি বিভিন্ন মজলিসে লোকদের উদ্দেশ্যে বলতেন : ‘যে দানশীল সে-ই সম্মানিত হবে ,যে কৃপণ সে লাঞ্চিত হবে । আপন প্রয়োজনের অর্থ বিলিয়ে দেয়ার মাঝেই রয়েছে মহত্ব। প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষমতা থাকা সত্বেও যে ক্ষমা করে দেয় সে-ই সবচেয়ে উত্তম । আত্মীয়তার বন্ধনকে যে আটুট রাখে সে-ই শ্রেষ্ঠ । যে অন্যকে ইহসান করে আল্লাহ তাকে ইহসান করেন। কারণ, আল্লাহ সৎ কর্মশীলদের ভালোবাসেন।’

হযরত উসামা বিন যায়েদ (রা.) অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তিনি ভাবলেন যে, তার সময় শেষ হয়ে এসেছে। তিনি বলতে লাগেলেন : ‘আমি তো ৬০ হাজার দিরহাম ঋণী। এটা আদায় হলে আমার মৃত্যুকালীন কষ্ট লাঘব হতো। কে আমার ঋণভার লাঘব করবে?’

ইমাম হোসাইন (আ.) এ কথা শুনলেন। তিনি কালবিলম্ব না করে উসামার কাছে গেলেন এবং তার সব ঋণ আদায় করে দিলেন।

ইমাম হোসাইন (আ.) ছিলেন স্নেহশীল পিতা , অনুগত ভ্রাতা এবং আত্মীয়তার আটুট বন্ধনে আবদ্ধ একজন আদর্শ মানব। তার সন্তানরা যেমন তাকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতেন তেমনি আত্মীয়-স্বজনরা মক্কা হতে কুফার পথে ও কারবালা প্রান্তরে গভীর সংকটময় মুহূর্তেও তার সাথে ছিলেন । একে একে সকল পুরুষ সদস্য হাসিমুখে শাহাদাতের পিয়ালা পান করেছেন তবুও ইমাম কে একা ছেড়ে যাননি। পৃথিবীর ইতিহাসে এ দৃশ্য বিরল। অতীতে কেউ এরূপ ঘটনা দেখেনি,শুনেনি,ভবিষ্যতেও কেউ তা দেখবে না,শুনবে না।

নবী নন্দিনী ফাতেমা যাহরার পুত্র ইমাম হোসাইন (আ.) ছিলেন পরম বাগ্মী ও শৈল্পিক মনের মানুষ । তিনি যখন কথা বলতেন তা যেন কথা নয়,তখন মনে হতো যে, তার মুখ দিয়ে ঝরে পড়ছে মুক্তোর দানা। কবিত্ব শক্তিতেও তিনি ছিলেন বলীয়ান। তার কাব্য প্রতিভার অনেক নিদর্শন ছড়িয়ে আছে আরবি সাহিত্যে। তার অধিকাংশ কবিতায় ফুটে উঠেছে নীতি কথা , কাল্যাণমূলক উপদেশ। যেমন :

‘যদি দুনিয়ার জীবনকে বেশি মূল্যবান মনে করা হয়,স্মরণ রেখ, আল্লাহর পুরস্কার তার চেয়েও মর্যাদার ও অতীব চমৎকার।’

‘যদি দেহকে তৈরী করা হয়ে থাকে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য , তাহলে তলোয়ারের আঘাতে মৃত্যুই অধিক শ্রেয়।’

‘পৃথিবীর সমস্ত সম্পদকেই যদি মৃত্যুর মাধ্যমে ছেড়ে যেতে হয়, তাহলে সম্পদ বিলিয়ে দিলে ক্ষতিই বা কী? দু’দিনের এ সম্পদ নিয়ে কেনইবা এত কৃপণতা ।’

তিনি অন্য একটি কবিতায় বলেছেন :

‘সৃষ্টির মুখাপেক্ষী হয়ো না

নির্ভার হয়ে নির্ভর করো সৃষ্টার ওপর

সত্যবাদী হোক কিংবা মিথ্যা্বাদী,

কারো হাতে মিটবেনা তোমার প্রয়োজন

মহান আল্লাহর অফুরন্ত ভাণ্ডার হতে তালাশ করো তোমার রিযিক।

তিনি ছাড়া রিযিকের মালিক আর কেউ নই।

যে বিশ্বাস করে মানুষই তার প্রয়োজন মেটানোর ক্ষমতা রাখে,

বুঝতে হবে পরম দয়ালু দাতার প্রতি তার বিশ্বাস অনিমেষ শূন্য।’

ইমামের কবিতার মধ্য দিয়েই তার মনোভাব প্রস্ফুটিত হয়েছে। কষ্টার্জিত অর্থ মুক্ত হস্তে দান করে তিনি যখন অসহায়ের দুঃখ লাঘব করছেন তখন ইয়াযীদ ও তার দোসররা রাষ্ট্রিয় কোষাগার বায়তুল মালকে ব্যক্তিগত সম্পদ মনে করে লুটে-পুটে খাচ্ছে আর চারদিকে ষড়যন্ত্রের জাল বুনে অবৈধ ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে । নবী দৌহিত্র এ অন্যায়-অবিচার কীভাবে মুখ বুজে সহ্য করে থাকতে পারেন?

প্রজ্ঞাবান অনুপম চরিত্রের অধিকারী ইমাম হোসাইন (আ.) -এর ব্যক্তিত্ব কারো সাথে তুলনা করা যায়না। ইয়াযীদ যখন তার পিতার অবৈধ অসিয়তনামার বদৌলতে মুসলিম উম্মাহর ঘাড়ে চেপে বসে তখন তার এমন কোনো গুণ ছিল না যে,মানুষ তাকে সানন্দে ‘আমীরুল মু’মিনীন’ হিসাবে মেনে নবে। যেখানে আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের,আবদুল্লাহ ইবনে ওমর,আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) প্রমুখ উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ কেউই তার হাতে বাইয়াত হননি এবং হযরত হাসান (আ.) ও আমীর মুয়াবিয়ার মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ইমাম হোসাইন খেলাফতের একমাত্র হকদার সেখানে তিনি কি করে অবৈধ শাসন মেনে নেবেন?

ঐতিহাসিক সৈয়দ আমীর আলী তার A Short History of the Saracens (p. 83) -এ বলেন, ইয়াযীদ ছিল যেমন নিষ্ঠুর তেমনি বিশ্বাসঘাতক; তার কলুষিত মনে দয়া-মায়া বা সুবিচারের কোনো স্থান ছিল না। তার আমোদ-প্রমোদ যেমন নিচুস্তরের; সঙ্গী-সাথীরাও ছিল তেমনই নিচাশয় ও দুশ্চরিত্র। একটি বানরকে মাওলানার মতো পাশোক পরিয়ে সে ধর্মীয় নেতাদের বিদ্রূপ করত এবং যেখানে যেত সেখানে জন্তুটিকে নিয়ে যেত কারুকার্যময় বস্ত্রে সজ্জিত একটি সিরীয় গাধার পিঠে বসিয়ে। তার দরবারে মদপানজনিত হাঙ্গামা হতো এবং তা প্রতিফলিত হলো রাজধানী দামেস্কের রাস্তায়।

ইয়াযীদ যখন অনৈতিকভাবে রাজসিংহাসনে আরোহণ করে তখন তার বয়স মাত্র সাইত্রিশ বছর। আর ইমাম হোসাইন (আ.) জ্ঞানে-গুণে পরিপক্ক ছাপ্পান্ন বছরের এক পরিপূর্ণ মানুষ ।

বংশানুক্রমিকভাবে নানা, বাবা ও মায়ের পূত-পবিত্র স্বভাব ও গুণাবলী তার মাঝে বিরাজমান ছিল ।

ইংরেজ ঐতিহাসিক সিডিলট ইমাম হোসাইনের সহজ-সরল জীবনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন : ‘তার মধ্যে একটি গুণেরই অভাব ছিল তা হলো ষড়যন্ত্রের মানসিকতা যা ছিল উমাইয়্যা বংশীয়দের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ।’ (প্রাগুক্ত ,. ৮৪)

শাহাদাত লাভের জন্য এমন উদগ্রীব মানুষ এ পৃথিবীতে খুব কমই পরিদৃষ্ট হয়েছে। তিনি বলতেন : ‘শরীরের জন্য যদি মৃত্যুই অনিবার্য,তবে আল্লাহর পথে শহীদ হওয়াই মানুষের জন্য উত্তম ।’ জিহাদের জন্য নিজের ধন-সম্পদ, পুত্র-পরিজন ও নিজের জীবনকে দৃঢ়চিত্তে, স্থির মস্তিষ্কে উৎসর্গ করার মাধ্যমে তিনি তা প্রমাণ করেছেন। জীবন উৎসর্গের এমন , দৃষ্টান্ত এ পৃথিবীতে আর একটিও নেই। সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের খোদায়ী আহবানে সাড়া দানের এ বিরল নজির আর কোথাও খুজে পাওয়া যাবেনা।

ইমাম হোসাইনের চারিত্রিক মাধুর্যের আকর্ষণ ক্ষমতা এত প্রবল ছিল যে,পরম শত্রুও তার মিত্রে পরিণত হয়ে ছিল । ইয়াযীদ বাহিনীর একাংশের অধিনায়ক হোর ইবনে ইয়াযীদ নিজের জীবন বিপন্ন করে হোসাইন (আ.) -এর নিকট নিজেকে সমর্পণ করে ছিলেন । শুধু কি একা! না, আরো কয়েক জন সৈন্যসহ। আহলে বাইতের সম্মান রক্ষার্থে সম্মুখ সমরে অংশ নিয়ে এ জিন্দাদিল মুজাহিদগণ একে একে নিজেদেরকে কারবালা প্রান্তরে কুরবান করে দিলেন।

বন্ধু, আত্মীয়-পরিজন, ভাইয়ের সন্তান, নিজের সন্তানদের একের পর এক মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেও ইমাম হোসাইন (আ.) ক্ষণিকের জন্য বিব্রত, বিচলিত হননি। নিশ্চিত মরণ জেনেও তার পদযুগল একটুও টলেনি। একবারের জন্যও শত্রুকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেননি। পর্বতসম দৃঢ়তা নিয়ে প্রগাঢ় আস্থার সাথে একাকী শতসহস্র ইয়াযিদী সৈন্যের বিরুদ্ধে সিংহের মতো লড়াই করে হাসিমুখে শহীদ হলেন। কিন্তু খোদা ও রাসূলবিরোধী অবৈধ , স্বৈরশাসকের সাথে হাত মেলাননি। এ অসম, একতরফা চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে নিজের পরিণতি কী হতে পারে তা পূর্বাহ্নে নিশ্চিত জেনেই এ আপসহীন সিপাহসালার শাহাদাতের পেয়ালা পান করলেন। তিনি প্রায়ই বলতেন : ‘নির্যাতনকারীর আনুগত্য জঘন্যতম অপরাধ। আমি মৃত্যুকে সৌভাগ্য মনে করি। কিন্তু জালিমের সাথে জীবনযাপনকে অপমান ছাড়া কিছুই মনে করিনা।’

কারবালায় কি ইমাম হোসাইনের মৃত্যু হয়েছে? না,প্রকৃত মৃত্যু হয়েছে ইয়াযীদের । পাপিষ্ট ইয়াযীদ ইতিহাসের আস্তাকূঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে, পক্ষান্তরে হোসাইন কিয়ামত পর্যন্ত মুমিনের হৃদয়ে জাগরুক থাকবেন। হোসাইনের পবিত্র খুন কিয়ামত পর্যন্ত সকল মজলুম মুসলমানের হৃদয়ে বিপ্লবের অগ্নিশিখারূপে প্রজ্জ্বলিত হবে । কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী রাজতন্ত্রী স্বৈরশাসকদের পতন ঘটাবে।

বেহেশতের সর্দার ইমাম হাসান ও হোসাইন (আ.) -এর সাথে মিলিত হবার ও তাদের নেতৃত্ব অনন্তকাল বেহেশতে বসবাসের এই তো উত্তম সোপান । ইমাম হোসাইন (আ.) -এর পূত- পবিত্র চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অর্জনের মধ্যেই আমাদের জীবনের কাল্যাণ নিহিত। পরিশেষে রাসূলেপাক (সা.) -এর সহীহ ও সুপ্রসিদ্ধ সেই হাদীস উল্লেখ করছি :

‘হোসাইন আমা হতে আর আমি হোসাইন থেকে। যে হোসাইন কে ভালোবাসে আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন। সে আমার দৌহিত্রের একজন । যে আমাকে ভালোবাসে সে যেন হোসাইনকে ভালোবাসে।’