গাদিরে খুমের ঘটনা

দশম হিজরীতে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)এর আহবানে সাড়া দিয়ে লাখো মুসলমান মক্কায় হজ্বব্রত পালন করতে যান। মদিনায় হিজরতের পর এটিই ছিল রাসূলের প্রথম হজ্ব। শুধু প্রথম নয়, তাঁর শেষ হজ্বও এটি। ওই হজ্বের কিছু দিন পরই বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ(সা.) ইন্তেকাল করেন। মক্কার পথে রাসূলেখোদা (সা.)-র সফরসঙ্গী হওয়ার জন্য বিপুল সংখ্যক মুসলমান মদিনায় জড়ো হন। রাসূলের এ হজ্বকে নানা নামে অভিহিত করা হয়। এর মধ্যে হুজ্জাতুল বিদা, হুজ্জাতুল ইসলাম, হুজ্জাতুল বালাগ, হুজ্জাতুল কামাল ও হুজ্জাতুত তামাম অন্যতম।
রাসূল (সা.) হজ্বের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে গোসল  করে পুত-পবিত্র হয়ে খুব সাধারণ দুই টুকরো কাপড় পরিধান করেন। এর এক টুকরো কাপড় কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত পরেন ও অপর টুকরো ঘাড়ে ঝুলিয়ে নেন। মহানবী(সা.) ২৪ অথবা ২৫ শে জ্বিলকাদ শনিবার হজ্বব্রত পালনের উদ্দেশ্যে মদিনা থেকে পায়ে হেঁটে মক্কার পথে রওনা হন। তিনি তার পরিবারের সব সদস্যকেও সঙ্গে নেন। নারী ও শিশুরা উটের পিঠে আর রাসূল চলেছেন পায়ে হেটে। রাসূলের নেতৃত্বাধীন ওই কাফেলায় সেদিন মুহাজির ও আনসাররাসহ বহু মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। ১৮ই জ্বিলহজ্ব বৃহস্পতিবার হজ্ব শেষে মদিনায় ফেরার পথে রাসূল (সা.) যখন জুহফা'র কাছাকাছি গ্বাদিরে খুম নামক স্থানে পৌঁছান, ঠিক তখনি রাসূলের কাছে ওহি নাজিল হয়। জিব্রাইল (আ.) আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
يَا أَيُّهَا الرَّ‌سُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّ‌بِّكَ ۖ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِ‌سَالَتَهُ
 'হে রাসূল ! তোমার প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা তুমি সবার কাছে পৌঁছে দাও, যদি তা না কর তাহলে তো তুমি তার বার্তা প্রচার করলে না ।' (সূরা মায়েদা: আয়াত ৬৭)
রাসূলে খোদা (সা.) আল্লাহর নির্দেশ পাওয়ার পর তিনি সবাইকে সমবেত হতে বললেন। চলার পথে যারা কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলেন তারা পেছনে ফিরে আসেন। আর যারা পেছনে ছিলেন তারা এগিয়ে এসে ওই স্থানে থেমে যান। রৌদ্রস্নাত উত্তপ্ত মরু হাওয়ায় সবাই তখন ক্লান্ত অবসন্ন । তারপরও সবাই খুবই মনোযোগ সহকারে অপেক্ষা করতে লাগলেন রাসূলের বক্তব্য শুনার জন্য। তারা বুঝতে পারলেন, রাসূল (সা.) মুসলমানদের জন্যে নতুন কোনো বিধান বা দিক নির্দেশনা দেবেন ।
ওই স্থানে পাঁচটি পুরনো গাছ ছিল। রাসূলের নির্দেশে গাছের নিচের জায়গাটুকু পরিস্কার করা হলো। এরপর সাহাবিরা সেখানে চাদোয়া টানিয়ে দিলেন। জোহরের আজান দেয়ার পর মহানবী সবাইকে নিয়ে সেখানে নামাজ আদায় করলেন। এরপর উটের জিনকে মঞ্চের মত করে তাতে আরোহণ করলেন এবং সমবেত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, 'সমস্ত প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুর আলামিনের। আমরা তারই সাহায্য চাই ও তার ওপরই ঈমান এনেছি। তার ওপরই আমাদের ভরসা। কেবল তিনিই বিভ্রান্তদেরকে সৎ পথে পরিচালনা করার ক্ষমতা রাখেন। আর আল্লাহ যাকে দিকনির্দেশনা দেন, তিনি যেন বিভ্রান্তকারীতে পরিণত না হন। আমি এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি ছাড়া আর কেউ উপাসনার যোগ্য নয় এবং মুহাম্মদ হচ্ছে তার বান্দা ও প্রতিনিধি। দয়াময় ও মহাজ্ঞানী আল্লাহই আমাকে এ সংবাদ দিয়েছেন যে, আমার ইহকালীন জীবনের মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে, অচিরেই আমার জীবনের অবসান ঘটবে, মহান সৃষ্টিকর্তার ডাকে সাড়া দিয়ে এ জগত ছেড়ে চলে যেতে হবে আমাকে। আমার ও আপনাদের ওপর যেসব বিষয় অর্পিত হয়েছে, সেসব বিষয়ে আমরা সবাই দায়িত্বশীল। আপনাদের কি অভিমত?'
এ সময় সবাই উচ্চস্বরে বলে ওঠেন, 'আমরা এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, বার্তা পৌঁছে দেয়া, কল্যাণকামিতা তথা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আপনি কোনো ধরনের অবহেলা করেননি। আল্লাহ আপনাকে পুরস্কৃত করবেন।'
এ সময় রাসূল (সা.) বলেন, 'আপনারা কি এ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে-আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল  এবং বেহেশত, দোজখ, মৃত্যু ও কিয়ামতের বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। এ ছাড়া, আল্লাহ মৃতদেরকে পুণরায় জীবিত করবেন?'
উত্তরে সবাই সমস্বরে বলেন-'হ্যা আমরা এ সত্যের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি।' এরপর রাসূল (সা.) সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে বলেন, 'হে আল্লাহ আপনিতো দেখতেই পাচ্ছেন।'
এরপর রাসূল (সা.) বলেন, 'আমি আপনাদের আগে হাউজে কাউসারে প্রবেশ করবো। এরপর আপনারা সেখানে প্রবেশ করবেন এবং আমার পাশে অবস্থান নেবেন। সানা ও বসরার মধ্যে যে দূরত্ব,আমার হাউজে কাউসের প্রশস্ত হবে সে পরিমাণ। সেখানে থাকবে তারকারাজি এবং রুপার পাত্র।'
 এরপর বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সবার উদ্দেশে বলেন, 'মূল্যবান ও সম্মানিত যে দুটি জিনিস আপনাদের কাছে রেখে যাচ্ছি, আপনারা কীভাবে তা মেনে চলেন, তা আমি দেখতে চাই।' এ সময় সবাই সমস্বরে বলে ওঠেন, 'হে রাসূলুল্লাহ, ওই দু'টি মূল্যবান ও সম্মানিত জিনিস কী?'
 
রাসূল (সা.) বললেন, আমি তোমাদের জন্য অতি মূল্যবান দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি। একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব আল কুরআন আর অপরটি হচ্ছে আমার পবিত্র আহলে বাইত। যদি তোমরা এ দুটোকে শক্ত করে আকড়ে ধর তবে কখনোই পথ ভ্রষ্ট হবে না। এ হাদিসটি সামান্য শব্দের তারতম্যভেদে বিভিন্ন বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে- সহিহ মুসলিম, ৭ম খণ্ড, পৃ:-১২২, দারুল যিল, বৈরুত; সহিহ তিরমিযি, ৫ম খণ্ড, পৃ:-৬৬৩, বৈরুত; মুসনাদে আহমাদ, ৩য় খণ্ড, পৃ:-১৪, বৈরুত; কানযুল উম্মাল, ১ম খণ্ড, পৃ:-১৮৭;  মুসতাদরাকে হাকেম, ৩য় খণ্ড, পৃ:-১৪৮, বৈরুত।
 এরপর আল্লাহর রাসূল (সা.) আলী (আ.)এর হাত উত্তোলন করেন। এ সময় তাদের বগলের নিচ থেকে এক ঝলক শুভ্রতা ফুটে ওঠে এবং সবাই তা দেখতে পায়। এরপর রাসূল (সা.) বলেন, “মহান আল্লাহ হচ্ছেন আমার ওলি এবং রক্ষণাবেক্ষণকারী । আমি হচ্ছি মুমিন-বিশ্বাসীদের ওলি ও অভিভাবক,আর আমি যার নেতা ও অভিভাবক, আলীও তার নেতা ও অভিভাবক।' এরপর তিনি দোয়া করেন। রাসূল (সা.) বলেন, 'হে আল্লাহ ! যে আলীকে বন্ধু মনে করে তুমি তাকে দয়া ও অনুগ্রহ করো, আর যে আলীর সাথে শত্রুতা করে, তুমি তার প্রতি একই মনোভাব পোষণ করো।”
 বিশ্বনবী এসব বার্তা অন্যদের কাছে পৌঁছে দিতে উপস্থিত সবার প্রতি নির্দেশ দেন। তখনও সমবেত হাজীরা ওই স্থান ত্যাগ করেননি। এরই মধ্যে হযরত জিব্রাঈল (আ.) আল্লাহর বাণী অবতির্ণ হলেন, মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন:-
'আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন বা জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করলাম।' ( সূরা মায়েদা; আয়াত-৩)
এই হাদীসটি বিভিন্ন তাফসীরকারক ও মুফাসসীরগণ তাদের নিজ নিজ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্য কিছু গ্রন্থের নাম এখানে উল্লেখ করা হল। সহিহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ:-৩৬২; সহিহ তিরমিযি, হাদীস নং:-৪০৭৮; মুসনাদে আহমাদ, ২য়  খণ্ড, পৃ:-৪১২; সুনানে ইবনে মাজা, ১ম খণ্ড, পৃ:-৪৫; মুসতাদরাকে হাকেম, ৩য় খণ্ড, পৃ:-১১৮; তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪৩; তারিখে তাবারী, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪২৯; সুনানে নাসাই, ৫ম খণ্ড, পৃ:-১৩২; আল মুসনাদ আল-জামে, ৩য় খণ্ড, পৃ:-৯২; আল মুজাম আল-কাবির, ৪র্থ খণ্ড, পৃ:-১৬; কানজুল উম্মাল, ১৩ তম খণ্ড, পৃ:-১৬৯; তারিখে দামেশক, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪৫।
 
আয়াতটি নাজিল হওয়ার পর রাসূল (সা.)বলেন, 'আল্লাহু আকবার। তিনি ধর্মকে পূর্ণাঙ্গ করেছেন, অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করেছেন এবং আমার রেসালাত ও আমার পরে আলীর নেতৃত্বের ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট।' এর পরপরই সবাই আলী(আ.)-কে অভিনন্দন জানাতে থাকেন।
সবার আগে আবু বকর ও ওমর  এগিয়ে এসে বললেন, 'হে আবি তালিবের সন্তান, তোমাকে অভিনন্দন। আজ তোমার ওপর দায়িত্ব এসেছে। তুমি আমাদের এমনকি সব নারী ও পুরুষের অভিভাবক।'
ইবনে আব্বাস বললেন, 'আল্লাহর কসম। আলীর নেতৃত্ব মেনে নেয়া সবার জন্য ওয়াজিব।'  এ অবস্থায় বিশিষ্ট কবি হিসান বিন সাবেত রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, 'হে রাসূলুল্লাহ। আলীর শানে একটি কবিতা বলার অনুমতি চাচ্ছি।' রাসূলের অনুমতি পাওয়ার পর হিসান তার কবিতা শুরু করেন। তার কবিতার মূল বক্তব্য ছিলো এ রকম:
'গাদির দিবসে মহানবী ডেকে বললেন সব মুসলমানকে
বলোতো,তোমাদের মওলা ও নবী কে?
সমস্বরে এলো উত্তর-তোমার রবই আমাদের মওলা,তুমিই নবী নি:সন্দেহে। তোমার কথার বরখেলাপ করবে না কেউ এ জগতে।
রাসূল বললেন-হে আলী ,আমার পরে তুমিই হবে সৃষ্টিকূলের নেতা, জাতিকে দেবে নির্দেশনা।
আমি যাদের নেতা আলীও তাদেরই নেতা। আমার নির্দেশ সবার প্রতি-সবার ভেতর থাকে যেন আলী-প্রীতি।
খোদা,তোমার কাছে আর্জি আমার
আলী যাদের ভালোবাসা, তুমিও তাদের ভালোবেসো
যারা তাকে শত্রু ভাবে,তুমিও তাদের শত্রু হইও। '
 
গাদিরে খুমের ঘটনা মানব ইতিহাসে নজিরবিহীন। ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা আর দ্বিতীয়টি ঘটেনি। গাদিরে খুমের ঘটনা মুসলিম জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষণীয়। গাদিরে খুমে রাসূল যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা মেনে চললে বিভ্রান্ত হওয়ার আশংকা অনেকাংশে কমে যায়।
রাসূল (সা.)-র ওফাতের পর শান্ত মুসলিম সমাজ যাতে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে না পড়ে এবং স্বার্থান্বেষীরা ওই শোকাবহ ঘটনাকে যাতে অপব্যবহার করতে না পারে সেজন্য রাসূল (সা.)-কে এ দায়িত্ব দেয়া হয় যে, তিনি যাতে তার পরবর্তী নেতার নাম ঘোষণা করেন।  রাসূলে খোদা বিদায় হজ্বের পর এক সমাবেশে  আলী(আ.)কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করেন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে বলেনঃ

هَذَا أَخِي وَ وَصِيِّي وَ خَلِيفَتِي مِنْ بَعْدِي، فَاسْمَعُوا لَهُ وَ أَطِيعُوه. এ হলো আমার ভাই, আর আমার পরে আমার ওয়াসী এবং খলীফা। তার নির্দেশের প্রতি কর্ণপাত করো এবং তার আনুগত্য করো।
(তারীখে তাবারী ২:৩৩১; মাআলিমুত তানযীল ৪:২৭৯; আল কামিল ফিত তারীখ ২:৬৩, শারহে নাহজুল বালাগা – ইবনে আবিল হাদীদ ১৩:২১১; কানযুল উম্মাল ১৩:১৩১)
**রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ "আমি আর আলী একই বৃক্ষ থেকে, আর অন্যেরা (মানুষ) বিভিন্ন বৃক্ষ থেকে"। (আল মানাকিব-ইবনে মাগাযেলী ৪০০/৫৩; কানযুল উম্মাল ১১;৬০৮/৩২৯৪৩; আল ফেরদৌস ১;৪৪/১০৯, মাজমাউল যাওয়ায়েদ ৯;১০০।)

**রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ "তুমি আমা থেকে আর আমি তোমা থেকে"। ( সহিহ বুখারী ৪:২২, ৫:৮৭; সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৫/৩৭১৬; মাসাবিহুস সুন্নাহ ৪:১৭২/৪৭৬৫ ও ১৮৬/১০৪৮; তারীখে বাগদাদ ৪:১৪০)।

**রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ নিশ্চয় আলী আমা থেকে আর আমি আলী থেকে । আর সে আমার পরে সকল মুমিনের নেতা"। (খাসায়েসে নেসায়ী ২৩; মুসনাদে আহমাদ ৪:৪৩৮; আল মু'জামুল কাবীর-তাবরানী ১৮:১২৮/২৬৫; হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ৬:২৯৬)।

**নবী করিম (সাঃ) এরশাদ করেছেন, " আল্লাহ্‌র কসম যাহার হস্তে আমার জীবন, যে ব্যাক্তি আমার আহলে বাইতকে শত্রু মনে করবে সে জাহান্নামী'' । (সাওয়ায়েকে মোহরেকা, পৃঃ-১০৪; আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৪১৮)।

হযরত আলী (আঃ) থেকে বর্ণিত, যিনি বীজ হতে চারা গজান ও আত্মা সৃষ্টি করেন, সেই আল্লাহ্‌র কসম, নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, প্রকৃত মুমীন ছাড়া আমাকে কেউ ভালবাসবে না এবং মুনাফিকগণ ছাড়া কেউ আমার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করবে না । রাসূলের (সাঃ) সাহাবাগন ইমাম আলী (আঃ) এর প্রতি ভালবাসা অথবা ঘৃণা দ্বারা কোন লোকের ইমান ও নিফাক পরোখ করতেন । আবু যার গিফারী (রাঃ), আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ), আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ), জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ), হতে বর্ণীত যে, আমরা সাহাবাগন আলী ইবনে আবি তালিবের প্রতি ঘৃণা দ্বারা মুনাফিকদের খুঁজে বের করতাম। (সহিহ মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৬০ মিশর প্রিন্ট;  আশারা মোবাশশারা, পৃঃ-১৯৭,  এমদাদিয়া লাইঃ;  সহী মুসলিম, ১ম খণ্ড, হাঃ-১৪৪  ইসঃ ফাঃ বাঃ; মুসনাদে হাম্বাল, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৮৪; সুনানে নাসাঈ, ৮ম খণ্ড, পৃঃ-১১৫  মিশর প্রিন্ট; সহিহ তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃঃ-১১৫ (মিশর); ইবনে মাজাহ, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৫৫ (মিশর); হযরত আলী, পৃঃ-১৪, এমদাদিয়া লাইঃ)।
**রাসূল (সা.) বলেছেন: আমি জ্ঞানের নগরী, আলী সেই নগরীর প্রবেশদ্বার, যে কেউ জ্ঞানের সন্ধান করে সে যেন সেই দ্বার দিয়ে প্রবেশ করে । (সহীহ বুখারী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ-৬৩১; সহীহ মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃঃ-২৩; আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ইয়ানাবীউল মুয়াদ্দাত, তাফসীরে তাবারী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ-১৭১। তাফসীরে দুররে মানসুর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ-৩৭৯; আল্লামা ইবন হাজার আসকালানী তাঁর লিসান গ্রন্থে উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, ' এই হাদীসের বহুবিধ সুত্র রয়েছে, হাকেম তাঁর মুস্তাদারাক গ্রন্থে তা বর্ণনা করেছেন । তিনি এ ব্যাপারে তাঁর রায় পেশ করতে গিয়ে বলেন এ হাদীসটি বিশুদ্ধ ।' প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আব্দুল হোসাইন আহমদ আল আমিনী আন নাজাফী, তাঁর আল গাদীর গ্রন্থে উক্ত হাদীসের বরননাকারীদের একটি তালিকা দিয়েছেন যাদের সংখ্যা হচ্ছে, ১৪৩ জন। আল গাদীর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ-৬১-৭৭)।

**রাসূল (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক নবীরই একজন উত্তরসুরী থাকে, আর "আমার উত্তরসুরী হচ্ছে, আলী ইবনে আবু তালিব।" (আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৪৬; তারিখে বাগদাদ,  ১১তম খণ্ড, পৃঃ-১৭৩; মুয়াদ্দাতুল কুরবা, পৃঃ-৫০, কানজুল উম্মাল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ-১৫৮; ইয়ানাবীউল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-১৩৩, তারিখে ইবনে আশাকীর শাফায়ী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ-৫; শাওয়াহেদুত তানজিল, ২য় খণ্ড, পৃঃ-২২৩)।
**হযরত আবু হুরাইরা, হযরত সালমান ফারসী থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত সালমান ফারসী বলেন, " ইয়া রাসূল (সাঃ) আল্লাহ্‌ যে নবীকেই প্রেরন করেছেন, তাঁকেই বলে দিয়েছেন যে, কে তাঁর উত্তরসুরী হবে । তবে কি আল্লাহ্‌ আপনাকেও বলেছেন যে, কে আপনার উত্তরসুরী হবে ? " নবী করিম (সাঃ) বললেন, " আমার উত্তরসুরী, আলী ইবন আবু তালিব হবে।" (শারহে বোখারী ইবনে হাজার আসকালানী, খণ্ড-১৮, পৃঃ-১০৫)।

**রাসূল (সাঃ) আলী কে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, এ হলো আমার ভাই আর আমার পরে আমার উত্তরসুরী এবং তোমাদের খলিফা, তাঁর নির্দেশের প্রতি কর্ণপাত করো এবং তাঁর আনুগত্য করো ।(তারিখে তাবারী, ২য় খণ্ড, পৃঃ-৩৩১; শারাহ নাহজুল বালাগা, ১৩তম খণ্ড, পৃঃ-২১১ (ইবনে হাদীদ), আল কামিল ফিত তারিখ, ২য় খণ্ড, পৃঃ-৬৩; কানজুল উম্মাল, ১৩তম খণ্ড, পৃঃ-১৩১; মায়ালিমুত তানযিল, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ-২৭৯ ।

**হযরত আবু সাইদ খুদরী (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহী ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- মান আবগাদানা আহলিল বাইতি ফা হুয়া মৃনাফিকুন । অর্থাৎ- যারা আহলে বাইতের সাথে বিদ্বেষ রাখে তারা তো কপট, মুনাফিক ।( ফাযায়িলুস সাহাবা : ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ২য় খন্ড:৬৬১, হাদিস-১১২৬; মুহিব্বে তাবারী : যখায়েরুল উকবা , পৃষ্টা-৫১; তাফসীরে আদ-দুররুল মুনসুর : আল্লামা সুয়ুতী, ৭ম:৩৪৯; শেত্ব মুক্তা নবী তনয়া ফাতেমাতুয যোহরা : শায়েখুল ইসলাম ড: তাহের আল কাদেরী, পাকিস্তান, পৃষ্টা-৪৪)

**হযরত যিরর (রা:) হতে বর্নিত, হযরত আলী (আ:) বলেছেন; আমার নিকট উম্মী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহী ওয়া সাল্লামের অঙ্গীকার হচ্ছে- কেবল মুমিনই তোমাকে ভালবাসবে আর মুনাফিকই তোমার প্রতি শত্রুতা পোষণ করবে। (সুনানে নাসাঈ, ৪র্থ খণ্ড, হাদিস নং-৫০১৭, ইসলামিক ফাঃ বাঃ)

**হুজুর পাক(সা.) বলেছেন-
“যে ব্যক্তি আলীকে গালী দিল, সে রাসূল (সাঃ) কে ই গালি দিল”। (বুখারী, তিরমিজি, মিশকাত ৫৮৪২ নং হাদিস)
“আলী কে যারা মহব্বত করে তারা মুমিন”। (আহামদ তিরমিযী, মিশকাত ১১ তম খন্ড ১৫৬ পৃ:)

“আলী এর প্রতি মহব্বত করে যারা তারা মুমিন, যারা না করে তারা মুনাফিক”। (মিশকাত ১১তম খণ্ড, পৃ: ১৫৬)
'আলহামদুল্লিল্লাযি জায়ালনা মিনাল মুতামাস্সিকিনা বিবিলায়াতি আমিরিল মুমিনিন।'
অর্থাত- আমিরুল মুমেমিন হজরত আলী (আ.)-এর নেতৃত্বের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ হিসেবে সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহর প্রশংসা করছি।