বাস্তবতার দর্পনে ওহাবি মতবাদ (৩১-৩৫)


৩১নং পর্ব:-
আপনাদের হয়তো মনে পড়বে, আমরা গত আসরের পরিসমাপ্তি টেনেছিলাম ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলি'র প্রফেসর হামিদ আলগারের একটি বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে। 'ওহাবিজম' নামে তিনি গবেষণামূলক একটি বই লিখেছেন। ঐ বইতে তিনি বলেছেন সৌদি আরবের মতো দেশে এবং মুসলিম বিশ্বের ভৌগোলিক মূল কেন্দ্র হারামাইনের কাছে এই মতবাদটির উত্থান ঘটার পাশাপাশি তেলের বিশাল সম্পদের অধিকারী সৌদি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই মতবাদটি টিকে আছে। এ দুটি সুবিধা না থাকলে ওহাবি মতবাদটি ইতিহাসে তার গুরুত্ব হারাতো।
 
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা এবং তাদের তেলের বিশাল ভাণ্ডারের ওপর ভিত্তি করে ওহাবিরা তাদের মতবাদ প্রচারের জন্যে বহু সংস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এরিমাঝে মুসলিম দেশগুলোতে এই ফের্কার প্রচার সৌদি সরকারের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের বেশ কিছু আরব সরকার বিভিন্ন কারণে সৌদি আরব এবং ওহাবি মতবাদের অনুসারী হয়ে পড়েছে। এর পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণটি হলো আরবরা গোত্রীয় বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। তাছাড়া পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের আরব দেশগুলোর আয়তন এবং জনসংখ্যা দুটোই কম। এই দেশগুলোর অর্থনীতি তেল নির্ভর। সে কারণে তারা সৌদি আরবকে তাদের বড় ভাইয়ের দৃষ্টিতে দেখে এবং প্রয়োজনীয় সাহায্যও গ্রহণ করে থাকে।
সৌদি আরবের ওহাবিরা অবশ্য তাদের পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষকদের সহায়তায় বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় এ অঞ্চলে আরো বেশি প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে এবং ছোটো ছোটো আরব দেশগুলোকে ওহাবিরা আগের চেয়েও আরো বেশি নিজেদের কব্জায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছে।
আরব দেশগুলো ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও যেখানেই ওহাবিরা উপযুক্ত মনে করেছে সেখানেই প্রচুর টাকা পয়সা খরচ করে তাদের ভ্রান্ত মতবাদ প্রচারের চেষ্টা করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ সংকটময় পরিস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিগত কয়েক দশকে ওহাবিরা ঐ দেশ দুটিতে চোখে পড়ার মতো প্রভাব বিস্তার করেছে। পাকিস্তানের ওহাবি গোষ্ঠিগুলো কখনো রাজনৈতিক দল হিসেবে সরকারের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করেছে, কখনোবা সন্ত্রাসী গোষ্ঠি হিসেবে কিংবা কখনো আবার সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
 
পাকিস্তানে ওহাবি মতবাদের অনুসারী ধর্মীয় নেতারা সৌদি আরবের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং প্রচারণাগত সুযোগ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ধর্মীয় শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি সৌদিআরবেও তারা এইসব কার্যক্রম চালিয়ে বড়ো বড়ো অনেক দায়িত্ব ও পদ দখল করে নিয়েছে। পাকিস্তানে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতসহ অন্যান্য প্রতিনিধিবর্গ সবসময় শিয়া বিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠিকে সহায়তা করে আসছে। তারা পাকিস্তানের অসংখ্য যুবককে সৌদি আরবের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার জন্যে উৎসাহিত করে। বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ গঠন করা, আর্থিক এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া থেকেও তারা পিছিয়ে নেই।
সৌদি আরবের ওহাবিরা প্রথমে আফগান মুজাহিদদেরকে মানবিক সাহায্য ও প্রশিক্ষণমূলক সহযোগিতা দেওয়ার নাম করে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে অসংখ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলে।
 
অনেক অর্থ কড়ি ব্যয় করে এইসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তারা মূলত তাদের ওহাবি ফের্কার প্রচার চালায়। বিভিন্ন রকম আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তারা এই প্রদেশের আফগান শরণার্থীদের মাঝে ছবি, ক্যাসেট, ফিল্ম এবং বই পুস্তক বিলি করে। এভাবে তারা আফগান শরণার্থীদের ভেতর মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাবের চিন্তাধারা ও মতবাদ প্রচার করে। আফগানিস্তানের অভ্যন্তরেও পাকিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক ও আর্থিক সহযোগিতায় তালেবান নামের দলটি গড়ে তোলে। সৌদি সরকার তালেবানদেরকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদের মাধ্যমে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে ব্যঅপক হস্তক্ষেপ চালায়। ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তারা তালেবান বাহিনী গড়ে তুলতে দুই শ' কোটি ডলার অর্থ সাহায্য দেয়। মিশরেও তারা সেবামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণকে ওহাবি মতবাদে আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু আলআজহার ইউনিভার্সিটি এবং এখওয়ানুল মুসলেমিনের সতর্ক উপস্থিতির কারণে ওহাবিরা মিশরে খুব একটা সাফল্য পায় নি।
 
মধ্য এশিয়া এবং উত্তর ককেশাস অঞ্চলে ওহাবিজম নামে একটি দল গঠিত হয়েছে। এ এলাকার ওহাবিদের বাজেট নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সৌদি আরবের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে এই দেশগুলো যখন স্বাধীন হয়েছিলো তখন সৌদি আরব দেশগুলোর মেরামত কাজের জন্যে, মসজিদ নির্মাণের জন্যে, ইসলামের প্রাথমিক শিক্ষার জন্যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরকে বিদেশে ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্রে পাঠানোর জন্যে প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য নিশ্চিত করেছিল। এ কারণে বহু লেখকের দাবি হচ্ছে এইসব অঞ্চলে ওহাবি দলটি সৌদি আরবের অর্থেই গড়ে উঠেছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মুসলমানরা ওহাবিদের নীতি আদর্শে প্রভাবিত। প্রত্যেক বছর উন্নত মানের কাগজে মুদ্রিত নয়নাভিরাম ডিজাইনের লক্ষ লক্ষ জিলদ কোরআন শরিফ সৌদি বাদশার পক্ষ থেকে দেওয়া উপহার হিসেবে জনগণের মাঝে বিনামূল্যে বিলি করা হয়।
 
ককেশাস এবং সেন্ট্রাল এশিয়ার নেতৃবৃন্দ তাদের এলাকায় ওহাবিদের অবস্থান শক্তিশালী করার প্রচেষ্টার ব্যাপারে বহুবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।এইসব অঞ্চলে সহিংসতা বৃদ্ধি এবং মাযহাবগত মতনৈক্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে মধ্য এশিয়ার প্রজাতন্ত্রগুলোতে ওহাবিদের কার্যক্রমের ব্যাপারে গণমাধ্যমগুলোতেও লেখালেখি হয়েছে এবং হচ্ছে। সর্বোপরি বলা যায়, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতির কারণেই এই অঞ্চলের দেশগুলোতে বিশেষ করে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ওহাবি মতবাদ বিকাশ লাভ করতে পেরেছে। ভারতও একই বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে। সেখানে বহু ধর্ম ও মাযহাব রয়েছে। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী দেশ ভারত থেকে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করার পর সে দেশটিও ওহাবি মতবাদ প্রচার থেকে মুক্ত ছিল না। কারণ ভারতের মুসলমানদের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক থাকায় সৌদি ওহাবিরা তাদেরকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি ওহাবি মতবাদও প্রচার করে। বলকানের দেশগুলোতেও যুদ্ধ ও বিচিত্র সংকটের সুযোগে ওহাবিরা সে এলাকার মুসলমানদের মাঝে প্রভাব ফেলে। অবশ্য এ অঞ্চলের জনগণ ইসলামী মূল্যবোধ ও মূলনীতি সম্পর্কে তেমন অবহিত ছিল না।
 
এছাড়াও মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, আফ্রিকার দেশ কেনিয়া, ইথিওপিয়া, উগান্ডা, গায়না, নাইজেরিয়া, মালি, সেনেগাল, সোমালিয়াসহ আরো বহু দেশে আলে সৌদ সরকার বিভিন্ন উপায়ে ওহাবি এবং সালাফি ইসলাম প্রচারের চেষ্টা চালিয়েছে। তবে দেশ ও অঞ্চলভেদে জনগণের মাঝে এই মতবাদের প্রভাবে বৈচিত্র রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই জনগণের মাঝে ওহাবি মতবাদের প্রভাব ছিল একেবারেই সাময়িক। এই মতবাদে মুসলমানরাই বিশেষ করে শিয়া মুসলমানরাই বড়ো শত্রু হিসেবে গণ্য। সেজন্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ওহাবি মতবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সহায়তা দিচ্ছে। কেননা ইসলামের বিকৃত রূপ বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার সবচেয়ে উপযুক্ত মাধ্যম হলো সহিংস এবং উগ্র মাযহাব ওহাবিয়্যাত। তাই এই মতবাদ যতো বেশি প্রচার পাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আলেসৌদ সরকারের স্বার্থ ততো বেশি নিশ্চিত হবে।
 
৩২নং পর্ব
গত পর্বে আমরা বলেছিলাম সৌদি সরকার বিভিন্ন পন্থায় মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ওহাবি মতবাদ প্রচার ও প্রসারের জন্যে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের জাতীয় সম্পদ তেলের টাকা এবং পশ্চিমাদের বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আলেসৌদ সরকার ওহাবি মতবাদ প্রচারকারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন দেশে পাঠায়। বিভিন্ন গ্রন্থ, ম্যাগাজিন ইত্যাদি ছাপিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তাদর্শ থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থানকারী ওহাবি মতবাদ প্রচার করার চেষ্টা চালায়। যেই ওহাবি মতবাদ কিছুদিন আগেও টেলিফোনের মতো প্রযুক্তির উপহারকে অবৈধ বলে মনে করতো, তারাই এখন তাদের গোঁড়া মতবাদ প্রচারের স্বার্থে ইন্টারনেট এবং স্যঅটেলাইট চ্যানেলগুলোকে কাজে লাগাচ্ছে। এতো বিশাল ব্যয়ের মাধ্যমে যৎসামান্য মানুষকে প্ররোচিত করতে পারলেও ধর্মীয় এবং রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে বিচ্যুত এই মতবাদের পতন ঘটতে ঘটতে এখন সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।
 
ওহাবিরা মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাবের নেতৃত্বে প্রথমদিকে মুসলমানদের ব্যাপক রক্ত ঝরিয়েছে। বৃদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা ও গবেষণার বাইরে অবস্থান করার কারণে এরা মুসলমানদেরকেও মুশরিক, বেদায়াতকারী, জাহেল এবং কাফের ইত্যাদি বলে গণ্য করে তাদের রক্ত ঝরায়। শিয়া এবং সুন্নি আলেমদেরকে পর্যন্ত এরা মুশরিক উপাধি দিয়েছে। কারণটা যারাই ওহাবি মতবাদ গ্রহণ করবে না তারাই তাদের দৃষ্টিতে অমুসলিম কাফের ইত্যাদি। ইমাম আলী (আ) এ ধরনের আত্ম অহমিকা কিংবা নিজেকে নিজে শ্রেষ্ঠ বলে ভাববার মনোবৃত্তিকে শয়তানের গুণাবলির অংশ বলে গণ্য করে বলেছেনঃ 'অহংকারী এবং গোঁড়াদের নেতা হলো আল্লাহর শত্রু শয়তান।'ওহাবিরা নিজেদের ফের্কার পক্ষে যথার্থ যুক্তি দেখাতে না পেরে মুসলমান আলেম ওলামাকে অকথ্য ভাষায় সম্বোধন করছে। অথচ ওহাবি মতবাদটা হলো ইবনে তাইমিয়া আর মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাবের মস্তিষ্ক প্রসূত ফের্কা যা যুক্তি তর্ক বা বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা-চেতনার ধার ধারে না। অথচ ইসলাম হচ্ছে যুক্তি এবং চিন্তাশীলতার ধর্ম। ঐশী এই ধর্ম নবীজীর গঠনমূলক দিকনির্দেশনায় মুসলমানদের মাঝে ঐক্য ও দৃঢ় বন্ধনের শিক্ষা দেয়,অভদ্রতা কিংবা হিংসা-বিদ্বেষ নয়।
 
ওহাবি ফের্কা গড়ে ওঠার শুরুর দিকে তাদের মূর্খতা আর গোঁড়ামির কারণে নতুন নতুন সকল আবিষ্কারকে বেদআত বলে গণ্য করা হতো এবং সেগুলোর ব্যবহারকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছিল।তারা বলতো রাসূলের যুগের স্টাইলে জীবনযাপন করতে হবে-এই অজুহাত দেখিয়ে তারা মানব সভ্যতার নতুন নতুন সকল উদ্ভাবনীর বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগে গিয়েছিল।উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,ওহাবিরা সাইকেলকে 'শয়তানের বাহন'নাম দিয়েছে,তারা টেলিফোন ব্যবহার করা নিষেধ করেছিল।তারা সৌদি বাদশার প্রাসাদের যে টেলিফোনটি সেনানিবাসের সাথে সংযুক্ত ছিল সেই লাইন ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলেছিল।
 
সৌদি আরবে এখনো মহিলাদের ড্রাইভিং করা নিষেধ। কিছুদিন আগেও সেখানে ক্যামেরা ব্যবহার করা হারাম ছিল,মক্কা ও মদিনার বাজারগুলোতে এগুলো কেনাবেচা করা নিষেধ ছিল।তালেবান নেতা কট্টর ওহাবি মোল্লা ওমর এই জাহেলি দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করার কারণেই কোনো ফটোগ্রাফারকে তার ছবি তোলার অনুমতি দেয় নি।আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের সময়ও মেয়েদের স্কুলে মেয়েদেরকে এমনকি হিজাব পরেও পড়ালেখা করার অনুমতি দেওয়া হয় নি,মেয়েদের স্কুলে যাওয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ ছিল।মিলাদুন্নবি অর্থাৎ নবীজীর জন্মদিন পালন করা বা এ ধরনের উৎসবকেও ওহাবিরা বেদআত এবং হারাম বলে মনে করে।ওহাবিদের বাইরে শিয়া হোক কিংবা সুন্নি কেউ যদি এইসব আনুষ্ঠানিকতা পালন করে তাদেরকে কাফের বলে ঘোষণা করে।
 
এখন যে প্রশ্নটি সামনে এসে দাঁড়ায় তা হলো-নতুন কোনো জিনিস ব্যবহার করা কি বেদআত? এ ব্যাপারে ইসলামের বড়ো বড়ো ফকিহদের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে গোঁড়া ওহাবিদের দৃষ্টিভঙ্গির মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। ইসলামী ওলামায়ে কেরামের মতে নতুন নতুন উদ্ভাবনী ও আবিষ্কারগুলোর যথার্থ বা সঠিক ব্যবহারে কোনো সমস্যা নেই এবং তাকে তাঁরা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার বলে মনে করেন। এগুলোর ব্যবহার তখনই অবৈধ বলে মনে করা হবে যখন এগুলো ব্যক্তিগত বিচ্যুতি ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। তা না হলে ইসলাম সবসময়ই নৈতিকতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়ন বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। রাসূলে খোদা (সা) মুসলমানদেরকে জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করেছেন, এমনকি জ্ঞান যদি কাফেরদের মাঝেও থাকে তাদের কাছ থেকে হলেও জ্ঞান অর্জন করতে অনুপ্রাণিত করেছেন। কিন্তু জানি না ওহাবি আলেমরা কীসের ভিত্তিতে উন্নয়ন ও সভ্যতা বিরোধী আজগুবি সব ফতোয়া দেন!
 
সালাফিরা অবশ্য এখন তাদের ফতোয়া বা কর্মপদ্ধতিতে অনেক পরিবর্তন এনেছে। এই পরিবর্তনের মানে হলো তারা ইবনে তাইমিয়া এবং মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাবের বহু আকিদা বিশ্বাস থেকে সরে এসেছে। ওহাবি আলেমরা এখন চেষ্টা করছে অযৌক্তিক এবং হাস্যকর ফতোয়া জারি করা থেকে বিরত থাকতে। তবে ওহাবিরা সহিংসতা এবং হত্যাকাণ্ডের বাইরেও আরো কিছু পদ্ধতি প্রয়োগ করেছে।তারা তো শুরুতেই মুসলমানদের মালামাল লুট করে এবং পাশবিক কায়দায় রক্তপাত ঘটিয়ে ওহাবি মতবাদটিকে মানুষের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল।তবে দীর্ঘকাল ধরে তারা সহিংস নীতিপদ্ধতি ব্যবহার করছে না।অবশ্য এখনো তারা নিজেদেরকে অন্যান্য মুসলমানের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর বলে মনে করে্এবং অন্যদেরকে গোমরাহ বলে ভাবে।তবে পার্থক্যটা হলো মুসলমানদের ওপর হত্যাকাণ্ড চালিয়ে ভয়ভীতি ও ত্রাস ছড়িয়ে তাদের আকিদা চাপিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে এখন তারা প্রচারণা কৌশল অবলম্বন করেছে।সালাফিরা এখন এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে বর্তমান বিশ্বে যোগাযোগ ও প্রচারণার সাহায্যে আরো ভালো ফলাফল অর্জন করা সম্ভব।
 
সে কারণেই সৌদি আরব এখন নিজেদেরকে সদয়েএবং মহান স্বরূপে নিজেদেরকে উপস্থাপন করে গণমাধ্যমের বিচিত্র ব্যবহার করে চেষ্টা চালাচ্ছে বিচ্যুত ওহাবি ফের্কার প্রচার প্রসার ঘটাতে।কিন্তু বন্ধুত্বের বাহ্যিক পর্দার আড়ালে মুসলমানদের ব্যাপারে তাদের বিদ্বেষ বিন্দুমাত্র কমে নি।সুযোগ মতো তারা সুন্নি শিয়া নির্বিশেষে মুসলমানদের হত্যা করে যাচ্ছে।এখনো আলকায়েদা,তালেবান,সিপাহে সাহাবার মতো উগ্র ওহাবি গোষ্ঠিগুলোকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পাশবিক অভিযান চালাতে দেখা যাচ্ছে।ইরাকে যিয়ারতকারীদের গমণাগমণের পথে কিংবা বিভিন্ন শোকানুষ্ঠানে বোমা পেতে রাখাসহ মুসলমানদের হত্যা করার মতো নোংরা কাজগুলো এখনো তারা অব্যাহত রেখেছে।
 
৩৩নং পর্ব
ওহাবি ফের্কার আলেমরা সভ্যতার নতুন নতুন আবিষ্কারের বিরুদ্ধে যে এখন ফতোয়া দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, তার পেছনে কারণ হলো সৌদি সরকারের চাপ। কেননা ওহাবি আলেমদের এ ধরনের ফতোয়া আলে-সৌদ সরকারকে ভীষণ বে-কায়দায় ফেলে দিচ্ছে। ওহাবি মতাদর্শ ভিত্তিক হুকুমাতের অধিকারী একমাত্র সৌদিআরব। সে হিসেবে সৌদিসরকার প্রযুক্তির নতুন নতুন আবিষ্কারের বিরোধিতা করতে বাধ্য। কিন্তু সমস্যা হলো বিশ্বের অপরাপর দেশের মতো সৌদিআরবকেও তো নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হয়। সেজন্যেই ওহাবি আলেমরা দেখলো যে মানবসভ্যতার জন্যে প্রয়োজনীয় এইসব প্রযুক্তির বিরুদ্ধে মূর্খের মতো ফতোয়া জারি করলে বর্তমান বিশ্বে তাদের অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যাবে, যার ফলে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে শীঘ্রই। এ কারণেই তুলনামূলকভাবে কম কুসংস্কারাচ্ছন্ন ওহাবি মুফতিরা তাদের ফতোয়ায় পরিবর্তন এনেছেন।
 
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মোবাইল, সাইকেল, ক্যামেরা ইত্যাদির ব্যবহারকে এক সময় ওহাবি আলেমরা হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছিল,কিন্তু কয়েক বছর ধরে এখন এগুলোর ব্যবহার হালাল বলে গণ্য করা হচ্ছে। আগের মতো এখন আর এসব প্রযুক্তির ব্যবহারকে শিরক বলে মনে করা হচ্ছে না। এই ফতোয়াগুলো যদিও ওহাবিদেরকে এখন কিছুটা ভারসাম্যপূর্ণ বলে ভাববার সুযোগ সৃষ্টি করেছে, তারপরও এর মধ্যেই তাদের অর্থাৎ ওহাবি মতবাদের চরম দুর্বলতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মজার ব্যাপার হলো এক্ষেত্রেও সৌদিরা এমনকি ওহাবি আলেমরা উগ্রতা দেখিয়েছে। যারা এক সময় সাইকেলকে শয়তানের বাহন বলে অভিহিত করেছিল তারা এখন ইউরোপ ও আমেরিকার অত্যাধুনিক এবং দামি দামি গাড়িতে চলাফেরা করছে। আলেসৌদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে স্বর্ণ-জহরতের মতো জমকালো আধুনিক বিলাস বাহুল্য ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়। এ থেকেই তাদের আকিদা অর্থাৎ ওহাবি মতবাদ এবং তার বাস্তব প্রয়োগের মাঝে ব্যাপক বৈপরীত্য লক্ষ্য করা যায়। আর এই বৈপরীত্য থেকেই বোঝা যায় ওহাবি মতবাদ একটি ভ্রান্ত মতবাদ এবং এই মতবাদ এখন পতনোন্মুখ।
 
যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতির এই যুগে সৌদি সরকার এখন আর তাদের দেশে ওহাবি মতবাদ বিরোধী বই পুস্তকের প্রবেশ নিষেধ করার পথ বন্ধ করার শক্তি রাখে না। ওহাবি মতবাদের ভ্রান্তি এবং ইসলামের উন্নত শিক্ষাদীক্ষার সাথে সৌদি জনগণের পরিচিত হবার পথ আটকে রাখার আর সুযোগ নেই। বিশেষ করে ওহাবিদের তরুণ প্রজন্ম এখন বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যবহার করছে। তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, বিভিন্ন ধরনের স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল দেখছে। এসবের ফলে তারা বহু রকম মতাদর্শের সাথে পরিচিত হবার সুযোগ পাচ্ছে। সে কারণেই তারা ইসলামের উন্নত মানবিক শিক্ষাদীক্ষার বাইরে গিয়ে ওহাবি মতবাদের মতো একটা ভ্রান্ত মতবাদ গ্রহণ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তাই সৌদি আরবের বাইরে অন্যান্য দেশে ওহাবি মতবাদ প্রচার কাজে ব্যাপক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কেননা এসব দেশের মুসলমানরা বিভিন্ন রকম চিন্তাদর্শের সাথে স্বাধীনভাবে যোগাযোগের সুযোগ পাচ্ছে। ওহাবিদের এখন আশাভরসার একমাত্র উপায় হলো সৌদিআরবের তেলের টাকা। এই টাকা ব্যবহার করেই তাদের আকিদা প্রচার করার চেষ্টা করছে আর টাকায় প্রচারিত মতবাদ গ্রহণ করে অনেকেই নিজেদের অজান্তে ধোকা খাচ্ছে, প্রতারিত হচ্ছে। তবে টাকার বিনিময়ে মতবাদ প্রচারের এই ধারাও বেশিদিন টিকবে না কেননা এটা হলো মাকড়সার বাসার মতো। কোরআনের ভাষায় যে বাসাটি একেবারেই নাজুক।
 
ডক্টর এসাম আল এমাদ ইয়েমেনের একজন নামকরা ওহাবি মুফতি ছিলেন। তিনি সৌদি আরবের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ওহাবিদের নামকরা শিক্ষকদের একজন ছিলেন। ইয়েমেনের রাজধানী সানআর মসজিদগুলোতে তিনি জুমার ইমাম হিসেবে নামায পড়াতেন। তিনি প্রচুর পড়ালেখা করার পর বুঝতে পারলেন যে ওহাবি মতবাদটা ঠিক নয়,ভ্রান্ত্একটা মতবাদ। সে কারণে ঐ মতবাদ ছেড়ে দিয়ে শিয়া হয়ে যান। তাঁর বক্তব্যের একটি উদ্ধৃতি এখানে প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছি। তিনি বলেছেনঃ 'আমি সৌদি আরবের সাবেক মুফতি 'বিন বাযে'র কাছে লেখাপড়া করতাম। তবে সবসময় ভাবতাম যে কেন শতাব্দির পর শতাব্দি পেরিয়ে যাবার পরও এখনো কেন মানুষের মনে ইমাম আলী (আ) কিংবা ইমাম হোসাইন (আ) এবং অন্যান্য মহান ইমামদের চিন্তাদর্শ জাগ্রত রয়েছে,কেন এগুলো পুরনো হয়ে যাচ্ছে না। অন্যদিকে সৌদিআরবের শিক্ষামূলক সভা বা অধিবেশনগুলোতে ইমাম আলী (আ) এবং ইমাম হোসাইন (আ) এর ব্যাপক সমালোচনা হতো। আবার আশ্চর্যভাবে লক্ষ্য করতাম ইয়াযিদ বা মুয়াবিয়ার অত্যাচারগুলোর ব্যাখ্যা দেওয়া হতো...একবার এক সভায় দেখলাম অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে আলী (আ) এর সমালোচনা করা হচ্ছে আর তাঁর ব্যাপারে নোংরা শব্দ ও কথা ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু যখন তাদের নিজেদের কিতাবেই আলী (আ) এর ফযিলতের কথা শুনতে পান তখন সহ্য করতে পারেন না। বিষয়টা আমাকে একটু ভাবিয়ে তুললো। বাধ্য হয়ে আহলে বাইত আলাইহিমুস সালামকে নিয়ে পড়ালেখা শুরু করে দিলাম। পড়ালেখার একটা পর্যায়ে বুঝতে পারলাম ইমাম আলী (আ) এর সকল কথাই ছিল যৌক্তিক এবং প্রজ্ঞাপূর্ণ। তখন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে ওহাবিদের সকল ব্যাখ্যাই বা বক্তব্যই যুক্তি বহির্ভুত এবং অশালীন।"
 
যাই হোক, ডক্টর এসাম আল এমাদ এরপরই ওহাবি মতবাদ ছেড়ে দিয়ে শিয়া হয়ে গেলেন। আমরা ওহাবি মতবাদ সম্পর্কে ডক্টর এসাম আল এমাদের বক্তব্য ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার চেষ্টা করবো। তবে আজকের আসরে যেহেতু সময় নেই। পরবর্তী আসরে ইনশাআল্লাহ তাঁর বক্তব্য ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কথা বলবো।
আমাদের এপর্ব সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই অনেক কিছু ভাবছেন। নিশ্চয়ই আপনাদের মনে অনেক প্রশ্নের উদ্রেক ঘটে থাকবে। আপনাদের সেই দৃষ্টিভঙ্গি, আপনাদের মনের সেই কথাগুলো কিংবা প্রশ্নগুলো আমাদের জানাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করবেন না। আপনাদের চিন্তা, আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি, আপনাদের প্রশ্ন আরো অনেক অজানাকে জানার, সুপ্ত অনেক সত্যকে জানার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
 
৩৪নং পর্ব
এসাম আলি ইয়াহিয়া আল-এমাদ ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় আল-এমাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছয় বছর বয়সেই ওহাবিদের মাদ্রাসায় প্রাথমিক পড়ালেখা শুরু করেন এবং পরবর্তীকালে সৌদি আরবের ওহাবি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হাদিস এবং কোরআন বিষয়ে পড়ালেখা করেন। সালাফিদের বড়ো বড়ো আলেমের কাছে তিনি শিক্ষা লাভ করেন তিনি। তবে তাঁর আসল শিক্ষক ছিল সৌদিআরবের বিখ্যাত মুফতি আব্দুল আযিয বিন বায। আকিদা বিষয়ক পরিপূর্ণ জ্ঞান তাঁর কাছ থেকেই লাভ করেন তিনি। ডঃ এমাদ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাবের লেখা "তাওহিদ", "কাশফুশ শাবহত ফিত তাওহিদ" এবং 'সিরাতুন নববী'সহ সালাফিদের প্রায় সব বইই পড়েছেন এবং সৌদিআরবের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই আকিদার ওপর পড়িয়েছেন। এসাম আল-এমাদ সৌদি বিশ্ববিদ্যালয়ে এলমে হাদিস পড়েছিলেন সালাফিদের দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে। সে সময়েই ইবনে তাইমিয়া এবং মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাবের বইয়ের প্রভাবে শিয়াদের ব্যাপারে খারাপ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন এমনকি শিয়াদের বিরুদ্ধে তিনি বইও লেখেন।
 
কিন্তু সাইয়্যেদ কুতুবের লেখা বই পুস্তক পড়ার পর ডক্টর এমাদের চিন্তাজগতে ঝড় উঠতে শুরু করে। সাইয়্যেদ কুতুব মিশরের একজন বড়ো আলেম ছিলেন। তিনি ইমাম আলী (আ) এবং তাঁর সন্তান ইমাম হোসাইন (আ) এর ভক্তদের একজন ছিলেন। সাইয়্যেদ কুতুবের লেখা একটি বই হলো "গ্রন্থমালা এবং ব্যক্তিত্ববর্গ"। এই বইতে ইমাম আলী (আ) সম্পর্কে ইবনে তাইমিয়ার সকল আপত্তি ও অভিযোগের জবাব দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ডঃ এমাদ বলেছেনঃ "যেহেতু আমি হাদিস বিষয়ে পড়ালেখা করেছি, সেজন্যে সহজেই বুঝতে পেরেছি যে, সনদের দিক থেকে সাইয়্যেদ কুতুবের তথ্য প্রমাণগুলো যথার্থ। আমি ইমাম আলী (আ) এর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বেশিরভাগই শেখ ইবনে তাইমিয়ার বই থেকে ধারণা পেয়েছিলাম। সে কারণে ইমাম আলী (আ) সম্পর্কে খুব একটা আগ্রহ ছিল না আমার। কিন্তু স্ইয়্যেদ কুতুবের বই পড়ার পর ইমাম আলী (আ) সম্পর্কে আগ্রহ বাড়ে।" ডঃ এমাদ বলেনঃ "ইমাম আলী (আ) সম্পর্কে শহিদ সাই্য়্যেদ কুতুবের কথাবার্তা কেবল আমার ভেতরেই নয় বরং সমগ্র সৌদিআরবেই চিন্তাশীলদের মনে ঝড় তোলে।...এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে সৌদিতে বহু বই লেখা হয়েছে।"
 
ডঃ এমাদ ১৯৮৯ সালে ইরানে এসেছিলেন এবং কোমের ধর্মতত্ত্ব কেন্দ্রে নবীজী (সা) এর আহলে বাইতের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইসলাম নিয়ে স্টাডি করেন। শিয়াদের ব্যাপারে তাঁর আপত্তিগুলো নিরসন প্রসঙ্গে তিনি বলেনঃ "আমি আমার সকল প্রশ্নের জবাব শেখ মুফিদ (রহ) এর বইতে পেয়েছি। শেখ মুফিদ হাজার বছর আগেকার লেখক। তিনি নিজে থেকে সেইসব প্রশ্নের উত্তর দেন নি বরং জবাবগুলো কোরআন থেকে, নবীজীর সুন্নাত থেকে এবং আহলে বাইত (আলাইহিমুস সালামের) বিভিন্ন বর্ণনা পর্যালোচনা করে দিয়েছেন। সেজন্যে শেখ মুফিদের জবাবগুলো আসলে আহলে বাইতেরই জবাব।"
 
এসাম আল-এমাদ শিয়া হবার পর ওহাবি আকিদার ভ্রান্তি সম্পর্কে বেশ কিছু বই লিখেছেন। বইগুলো বেশ সুখপাঠ্য। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় তিনি "আযযিলযাল" নামক বইতে ওহাবি আলেম শেখ ওসমান খামিসের সাথে তাঁর বিতর্ক বা বাহাসগুলো চমৎকারভাবে উদ্ধৃত করেছেন। তাঁর ঐ বিতর্ক অবশ্য ইরানের স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল আলকাওসার, আহলে বাইত এবং আল-আলম থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। ঐ বিতর্ক বই আকারেও রচিত হয়েছে। ডঃ এমাদ কোমের ধর্মতত্ত্বে পড়ালেখার পর ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়েও ধর্মতত্ত্বের ওপর পড়ালেখা চালিয়ে যান এবং ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বলেনঃ শেখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাবের চিন্তাধারার বিরুদ্ধে অনেক বই লেখা হয়েছে। ওহাবি মতবাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন "যুক্তিবিদ্যা, উসূল বা ইসলামের মূলনীতি কিংবা লোগাতের ব্যাপারে ওহাবি ফের্কার প্রতিষ্ঠাতার পরিপূর্ণ জ্ঞানন ছিল না। আমি বিশ্বাস করি শেখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব বড়ো বড়ো দুটি সমস্যার মুখে পড়েছিলেন,ঐ সমস্যা দুটোর সামনে তিনি ছিলেন অসহায়...একটি হলো জ্ঞানের স্বল্পতা...অপরটি ছিল মৌলিক অর্থাৎ চিন্তাধারাগত সমস্যা।"
 
কুফুরির প্রকৃত অর্থের গভীরে ঢুকতেই পারে নি মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব। সে কারণেই শিয়া এবং সুন্নি মুসলমানদের অনেককেই তিনি শিরকের মাঝে লীন বলে মনে করতেন এবং তাদেঁরকে কাফের বলে ঘোষণা করেছিলেন। এটাই তার চিন্তাধারার সবচেয়ে বিপজ্জনক ভ্রান্তি। মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব যে-ই তার মতবাদের অনুসরণ করতো না তাকেই তাওহিদ বিরোধী বলে গণ্য করতো। এসাম আল এমাদ বলেনঃ তাওহিদ সম্পর্কে ইবনে তাইমিয়া এবং মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাবের ধারণা একেবারেই ভুল। তাদের ভুল উপলব্ধির কারণেই তারা শিয়া-সুন্নি নির্বিশেষে সকল মুসলমানের তৌহিদী চিন্তার বিরোধী। তাওহিদের ওহাবি ব্যাখ্যার বাইরে যারা ভাববে তারাই মুশরিক। তাদের শেরেকি কাফেরদের শেরেকির চেয়েও মারাত্মক বলে ওহাবিরা মনে করে। সে জন্যেই তারা আহলে সুন্নাতের বড়ো বড়ো আলেম এবং মুফতিদেরকে মুশরিক বলে অভিহিত করে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করেছে। তাদের এই ভ্রান্ত চিন্তার ফলে মুসলিম উম্মাহ মারাত্মকভাবে আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
 
এসাম আলএমাদ বলেন, ওহাবিরা দিনরাত কেবল কবর আর গোরস্তান নিয়েই ব্যস্ত থাকে। তারা কবরস্থানে হামলা করার জন্যে সর্বদা প্রস্তুত। যদিও বহু বছর আগেই সকল কবরস্থান ধ্বংস করা হয়ে গেছে,ভাঙবার মতো কবরস্থান আর বাকি নেই। এই বিষয়টা এখন তাদের মানসিক রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।...অর্থাৎ ওহাবিদের তাওহিদ কবরস্থানের তাওহিদে পরিণত হয়েছে। আব্দুল ওহাবের চিন্তাধারার সমালোচনা করতে গিয়ে ডঃ এমাদ বলেন " আপনি শেখ মুহাম্মাদ আব্দুল ওহাবের 'আল্লাহ পরিচিতি' বইটি পড়ুন..সর্বপ্রথম যে অধ্যায়টি তাতে রয়েছে তা হলো কবর, কবর যিয়ারত, কবরের প্রতি তাওয়াসসুল...আল্লাহকে নিয়ে কোনো কথা নেই। মানুষ যখন এরকম হয়ে যায় তখন আমেরিকার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। কেননা ধর্মের বিষয় আশয় তার কাছে আর গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না এবং আল্লাহকে চেনাটাও তাদের কাছে গুরুত্ব বহন করে না। সেজন্যে আমেরিকা এবং ইসরাইল তাদের জন্যে বিপজ্জনক নয়, দ্বীনহীনতা তাদের জন্যে ভীতিকর নয়, তাদের প্রধান ভয়ই হচ্ছে কবর। যদি কবরগুলো খারাপ হয়ে যায় তাহলে ভয়ের আর কিছু নেই, সবকিছুই জায়েয তখন, এটা ইসলামী তাওহিদ নয় এটা আমেরিকার তাওহিদ।
 
মজার ব্যাপার হলো মার্কসিজম, বাহায়ি, ইসরাইলী ও মার্কিনীদের মতাদর্শের বিরুদ্ধে ওহাবি মুফতি বা আলেমদের লেখা কোনো বই নেই, তাদের যতো লেখা সব মুসলমানদের বিরুদ্ধে।এমনকি সৌদিআরবের মতো দেশটির নীতি হলো মার্কিন ও ইসরাইলীদের স্বার্থ নিশ্চিত করা।ওহাবি মুফতি ও আলেমরা বিচ্ছিন্নতাবাদী কাফের ফতোয়া দিয়ে মুসলমান তথা ইসলামেরই ক্ষতি করছে।বিভিন্ন দেশে লক্ষ্য করা যাবে সালাফিরা শুধু মুসলমানদেরই রক্ত ঝরাচ্ছে।বর্তমান আধুনিক বিশ্ব যুক্তি-তর্ক আর সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধানে বিশ্বাসী।অথচ ওহাবিরা মুসলমানদের কোনো কথাবার্তা ছাড়াই হত্যা করে যাচ্ছে।এ কারণে আশা করা হচ্ছে নতুন প্রজন্ম ওহাবিদের এইসব ভ্রান্ত চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসবে।এরিমাঝে অনেক ওহাবি তাদের মতবাদের বিরুদ্ধে লেখা যুক্তিপূর্ণ বইপুস্তক পড়ে এই মতবাদ ছেড়ে দিয়েছেন।ওহাবিদের বিরুদ্ধে ওহাবিদের লেখা বইগুলোই এই চিন্তার পরিবর্তনে বেশি সাহায্য করছে। যেমন ডঃ এমাদের লেখা বই।
৩৫নং পর্ব
এসাম আলি ইয়াহিয়া আল-এমাদের সাথে ইতোমধ্যে আপনারা পরিচিত হয়েছেন। ওহাবি থেকে শিয়া মাযহাব গ্রহণকারী ইয়েমেনের এই মুফতি বলেন ওহাবিদের সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যাটি হলো সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড। তাঁর মতে "ওহাবিদের বিপদটা মূলত চিন্তাগত নয় বরং শিয়াদেরকে কাফের ঘোষণা করা এবং তাদের রক্ত হারাম নয় বলে দেওয়া ওহাবি আলেমদের ফতোয়াই সবচেয়ে জঘন্য। এ কারণেই বিশ্বের সর্বত্রই তারা শিয়াদেরসহ সকল অন্যান্য মুসলমানকেও হত্যা করে যাচ্ছে। তো যারা মানুষ হত্যা করে তাদেরকে স্বাভাবিকভাবেই সমাজের লোকজন ভয় পায় এবং তাদের এড়িয়ে চলে।...মূলত তাদের সমস্যাটাই হলো পাশবিকতা।" ডঃ এমাদের মতে-এতোসব সত্ত্বেও ওহাবি মতবাদে বিশ্বাসীদেরকে শত্রু হিসেবে দেখা উচিত নয়,বরং মনে করতে হবে তারা অসুস্থ ও রোগাক্রান্ত, তাদের চিকিৎসা প্রয়োজন। অধিকাংশ ওহাবিই মূর্খতার কারণে বিপথগামী। তারা কোরআনের বক্তব্যকে ভুলভাবে গ্রহণ করেছে। এটাই তাদের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা।
 
আরো একটি ব্যাপার হলো চারদিকের পরিবেশ যেমন পারিবারিক পরিবেশ, সামাজিক পরিবেশ, গণমাধ্যমের পরিবেশ ইত্যাদি সর্বত্র যখন ওহাবি মতবাদে ঢাকা তখন একজন সাধারণ মানুষ কোনদিকে যাবে! খুব স্বাভাবিকভাবেই ওহাবি হয়ে যাবে। ওহাবি হবার পর তার নিজস্ব মতবাদের পক্ষে যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করবে, কোরআনের আয়াতকে তাদের ভ্রান্ত আকিদা ও মতবাদের অনুকূলে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবে-এটাই তো স্বাভাবিক। শিয়াদের ব্যাপারে ওহাবিদের ভুল ধারণাও এই মতবাদের গভীর একটি সমস্যা। ওহাবিরা শিয়াদেরকে আলিউল্লাহিদের মতোই এক কাতারভুক্ত বলে পরিমাপ করে। অথচ শিয়ারা আলী (আ)কেমনে করে আল্লাহর বান্দা, রাসূলে খোদার স্থলাভিষিক্ত-যাঁর পরে অন্যান্য মুসলমানের খেলাফতের অধিকার ছিল। অথচ ওহাবিদের বই পুস্তক এবং তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিয়াদেরকে 'আলিউল্লাহি' বলেই প্রচার করা হয়। আলিউল্লাহি বলতে বোঝায় যারা হযরত আলী (আ) কে আল্লাহর সমমর্যাদার বলে মনে করে। তাই ওহাবিরা চায় তাদের মতবাদ প্রচার করে শিয়াদেরকে বিনাশ করতে। অথচ আলিউল্লাহি ফের্কা বিরোধী অধিকাংশ গ্রন্থই লিখেছেন শিয়া আলেমগণ।
 
ডঃ এমাদ বিগত শতক অর্থাৎ বিংশ শতাব্দিকে ওহাবি মতবাদের চরম উত্থানের শতক বলে উল্লেখ করেন। এর কারণ হিসেবে তিনি ওহাবি মতবাদকে বস্তুবাদের ওপর সুস্থিত এবং কমিউনিজমের খুব কাছাকাছি বলে মনে করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেনঃ "আমার এক কমিউনিস্ট বন্ধু ওহাবি মতবাদ গ্রহণ করার পর বরেো ইমামী শিয়া মতবাদে দীক্ষিত হন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,আপনি কমিউনিজম থেকে ওহাবি মতবাদ গ্রহণ করতে গেলেন কেন? তিনি জবাবে বললেনঃ ওহাবি মতবাদ আর কমিউনিজম খুব কাছাকাছি। এ কারণেই কমিউনিজমের পাশাপাশি ওহাবি মতবাদও দ্রুত বিকাশ লাভ করেছিল, বুদ্ধিবৃত্তিক বা শক্তিশালী কোনো যুক্তি প্রমাণ আর বক্তব্যের কারণে নয়। অবশ্য এর পেছনে তেল বিক্রির টাকারও একটা ভালোরকম ভূমিকা ছিল। কিন্তু বর্তমান শতাব্দিতে যেহেতু মানুষ কমিউনিজম ছেড়ে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে, সেজন্যে ওহাবিদের ভ্রান্ত মতবাদেরও পতন শুরু হয়েছে।
 
এসাম আল এমাদ সেই শিশুকাল থেকেই ওহাবিদের মাঝে বড়ো হয়েছেন। বড়ো হয়ে ওহাবিদের একজন বড়ো আলেম হবার সুবাদে এই ফের্কার আকিদাগুলো এবং বিচ্যুতিগুলোর সাথেও ভালোভাবে পরিচিত হবার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি এখন বিশ্বাস করেন ওহাবি মতবাদের প্রখর সূর্য এখন অস্তমিত হতে যাচ্ছে। ইরাকসহ অন্যান্য দেশে যে শিয়াদের বিরুদ্ধে ওহাবিরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে ডঃ এমাদ মনে করেন তার কারণ হচ্ছে নিজেদের অবস্থানকে দুর্বল এবং নড়বড়ে বলে মনে করা। ডঃ এমাদ এ প্রসঙ্গে বলেনঃ "মানুষ তার জীবনের শেষ মুহূর্তে অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। এই নিঃশ্বাসের মানে জীবনের দিকে প্রত্যাবর্তন করা নয়, বরং মৃত্যুর দিকে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া। ওহাবিরা যে শিয়াদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে এটাও সেই মৃত্যুপূর্ব দীর্ঘশ্বাসের মতো।"
 
অবশ্য বর্তমান সময়ের পরিস্থিতি অনেক ভিন্ন। এখন হচ্ছে চিন্তার স্বাধীনতার যুগ, প্রশ্নের যুগ, সমাধান চিন্তার যুগ। যুগের এই নতুন বৈশিষ্ট্যের কারণেই ওহাবি মতবাদের অভ্যন্তরে পরিবর্তনের সৃষ্টি হয়েছে এবং সেটাই স্বাভাবিক। ওহাবিদের নতুন প্রজন্মের ছাত্ররা আগেকার যুগের ছাত্রদের মতো নয়। এদের চিন্তাচেতনা বা প্রশ্ন আগের যুগের ছাত্রদের প্রশ্নের চেয়ে আলাদা। নতুন এই যে ধারাটি এখন ওহাবিদের মাঝে লক্ষ্য করা যায় এই মতবাদের সূচনালগ্নে তার অস্তিত্বই ছিল না। নতুন এই ধারা সম্পর্কে ডঃ এমাদ একটি বই লিখেছেন 'ওহাবি মতবাদের নতুন ধারা' নামে।
 
আজকাল ওহাবি আলেমদের পাশাপাশি অনেক সুন্নি আলেমও ওহাবি মতবাদের তীব্র সমালোচনা করে বই পুস্তক লিখেছেন। এরকম বড়ো একজন ইসলামী চিন্তাবিদ হলেন 'আব্বাস মাহমুদ আক্কাদ'। তিনি অন্তত তিন শ' বই লিখেছেন। একটি বই লিখে সুন্নি বিশ্বে ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন। বইটি হলো "ইমাম আলি (আ)"। এ বইটির ভূমিকা অংশটুকু এখন আর নেই। ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনায় আলী (আ)কে যেসব দোষ দেওয়া হয়েছে, সেসবের সত্য আবিষ্কারের জন্যে গবেষণার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন পরই এ বইটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।
 
আরেকটি বই লিখেছেন মিশরের লেখক 'আব্দুর রহমান শারকাভি'। বইটির নাম হলো 'মুত্তাকিনদের ইমাম আলী'। এটিও বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এই বইটিও পরে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় এবং লেখককে কারাগারে পাঠানো হয়। আরো একটি বই লেখা হয়েছে "কারবালায় রাসূলের সন্তানেরা" নামে। বইটি লিখেছেন "খালেদ মুহাম্মাদ খালেদ"। এটিও নিষিদ্ধ হয়ে যায়।ডঃ এমাদ বলেন,এইসব বই প্রকাশের ফলে সৌদিআরবে ওহাবিদের ভেতরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কেননা এ বইগুলোতে ইমাম আলী (আ) এর মর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
 
আলেসৌদ যেহেতু নিজিদের অবক্ষয়ের শঙ্কায় শঙ্কিত,সেজন্যে তেল সম্পদের ওপর নির্ভর করে চেষ্টা করছে ওহাবি মতবাদকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে। এখনো বিপুল অর্থ খরচ করে যাচ্ছে। ডঃ এমাদ বলেনঃ "তেল পাবার পরই মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাবের ওপর প্রচুর বই লেখানো হয়েছে। এখনো যারা তার ওপর লেখালেখি করছে তাদেরকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিচ্ছে, বিদেশে রাষ্ট্রদূত করে পাঠাচ্ছে কিংবা ইসলামের মহান মনীষী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।"
 
বাস্তবতার দর্পণে ওহাবি মতবাদ শীর্ষক ধারাবাহিকের সর্বশেষ পর্বের পরিসমাপ্তি টানবো ডঃ এমাদ উদ্ধৃত রাসূলে খোদা (সা) এর বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক একটি বাণীর মধ্য দিয়ে। রাসূল (সা) সকল মুসলমানের উদ্দেশ্যে বলেছিলেনঃ "আমি আপনাদের মাঝে মহামূল্যবান দুটি আমানত রেখে যাচ্ছি-একটি হলো আল্লাহর কিতাব কোরআন এবং অপরটি আমার পবিত্র আহলে বাইত। যতোদিন আপনারা এ দুটি অনুসরণ করে চলবেন ততোদিন বিপথগামী হবেন না এবং এই দুটি নিদর্শন কোনোদিন পরিস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না।"