ইমাম হোসাইনের এই আশুরা বিপ্লবে নারীদের ভূমিকা

ইমাম হোসাইনের অভ্যুত্থানের দু’টি রূপ ছিল এবং ঐ দু’টি রূপের প্রত্যেকটির ওপর এক একটি কর্ম উৎপত্তি লাভ করেছে; তার মধ্যে একটি আত্মত্যাগ,সংগ্রাম এবং শাহাদাত। আর অপরটি হচ্ছে ‘বাণী প্রচার’। অবশ্য এই বাণী প্রচারটি আত্মত্যাগ ও অক্লান্ত পরিশ্রম ব্যতীত সম্ভব ছিল না। এ ক্ষেত্রে নারীদের মূল ভূমিকা ছিল দ্বিতীয় বিষয়টিতে। যদিও নারীরা সংগ্রামীদেরকে প্রস্তুত করা,তাঁদেরকে উদ্বুদ্ধ করা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন; কিন্তু তাঁদের মূল ভূমিকা ছিল ‘বাণী প্রচার করা’।

ইসলামী ও হোসাইনী বিপ্লবের ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে প্রথমে দু’টি পটভূমি সম্পর্কে আলোচনা করা দরকার। প্রথমটি হচ্ছে হাদীস অনুসারে। সাইয়্যেদুশ শুহাদা ইমাম হোসাইনের সমস্ত কাজই অত্যন্ত নিপুণ ছিল এবং বিপদের আশঙ্কা থাকার বিষয়টি জানা সত্ত্বেও যে তিনি তাঁর পরিবার-পরিজনকে সাথে নিয়ে কুফা শহরের দিকে যাত্রা করেছিলেন তার কারণ হলো রাসূল (সা.)-কে তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন যে,তিনি (রাসূল) তাঁকে বলছেন :

سبایا ان الله شاء ان یراهنّ

১ (নিশ্চয় আল্লাহ তাঁদের বন্দি অবস্থায় দেখতে চান)-এ থেকে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে,তাঁদের বন্দি হওয়ার বিষয়টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত আছে। অর্থাৎ তিনি দেখলেন যে,পরিবারকে সাথে নিয়ে যাওয়াটাই কল্যাণকর। প্রকৃত অর্থে ইমাম হোসাইন (আ.) এই কাজের মাধ্যমে স্বীয় প্রচারকগণকে বিভিন্ন শহরে,এমনকি শত্রুর শাসনব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্রে পাঠিয়েছেন এবং স্বীয় বাণীকে সবার কর্ণকুহরে পৌঁছে দিয়েছেন।

নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে দ্বিতীয় আলোচনাটি হচ্ছে ইতিহাসে। কেননা,কারবালায় নারীদের ভূমিকার কথা কোন ঐতিহাসিকই অস্বীকার করেননি। সরাসরিভাবে না হলেও বিভিন্নভাবে নারীদের বিশেষ ভূমিকা পালনের বিষয়ে তাঁরা সকলেই একমত পোষণ করেছেন; আর সেটা এভাবে যে,নারীরা পুরুষদেরকে প্রস্তুত করে আর পুরুষরা ইতিহাস রচনা করে। আর পুরুষদেরকে তৈরির ক্ষেত্রে নারীরা যে ভূমিকা পালন করে থাকে সেটা পুরুষরা যে ইতিহাস রচনা করে তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি। সর্বোপরি,নারিগণের ভূমিকা পালন করা অথবা ভূমিকা পালন না করার ক্ষেত্রকে ইতিহাসে তিন ভাগে বিভক্ত করা যায় :

ক. কোন কোন সমাজে নারী মূল্যবান রত্ন বলে গণ্য হত। কিন্তু সামাজিকভাবে তারা কোন দায়িত্ব পালন করত না। এক্ষেত্রে নারী ব্যক্তি হিসাবে গণ্য হত না,মূল্যবান সম্পদ বলে তাদের অন্দর মহলে আবদ্ধ থাকত এবং পুরুষের ওপর তার প্রভাব মূল্যবান এক রত্নের পর্যায়ে ছিল; এর বেশি কিছু নয়। এধরনের সমাজের রচনাকারী কেবল পুরুষ।

খ. কোন কোন সমাজে নারীরা বস্তু বলে গণ্য হওয়ার গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে সমাজের সকল অঙ্গনে প্রবেশ করে; কিন্তু এক পর্যায়ে তারা তাদের মর্যাদার সীমানাকে হারিয়ে ফেলে। কারণ তারা তাদের সৌন্দর্য ও রূপের প্রকাশসহ সকল ক্ষেত্রে বিচরণ করা শুরু করে। যেহেতু এক্ষেত্রে তাদের পদচারণার সাথে নিজেকে প্রদর্শনের প্রবণতাও থাকে তাই তাদের মর্যাদাকে হারিয়ে ফেলে মূল্যহীন হয়ে পড়ে! এ ধরনের সমাজে নারীরা একপ্রকার ‘ব্যক্তিত্বের অধিকারী’ বটে,কিন্তু মূল্যহীন এক ব্যক্তিত্বের অধিকারী। যদিও এরূপ সমাজ মানবিক উৎকর্ষের কিছু কিছু দিক -যেমন জ্ঞান,ইচ্ছাশক্তি,সামাজিক ব্যক্তিত্ব,বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন,কর্মচঞ্চল উপস্থিতি ইত্যাদি- থেকে তাকে মর্যাদা দিয়ে থাকে ও নিছক বস্তুর পর্যায়ে থাকার অবস্থা থেকে বের করে এনে ব্যক্তিত্ব দান করে,কিন্তু অপর দিকে পুরুষদের কাছে তাদের মর্যাদা আর থাকে না। কেননা,যেখানে নারীদের প্রকৃতি হচ্ছে পুরুষদের কাছে পণ্যের দৃষ্টিতে মূল্যবান হওয়া নয় বরং মানুষের মূল্যে মহামূল্যবান হিসেবে গণ্য হওয়া,কিন্তু বাস্তবে নারীকে সে মর্যাদা দেওয়া হয় না; বরং তাদের থেকে ঐ মর্যাদাকে কেড়ে নেওয়া হয় ও তাদেরকে নিজেদের প্রবৃত্তি ও বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহার করে। ফলে তাদের মানসিক বিপর্যয় ঘটে।

এ ধরনের সমাজের স্রষ্টা যদিও নারী-পুরুষ উভয়ই,কিন্তু নারীকে সস্তা এক পণ্য বলে মনে করা হয়; ফলে পুরুষরা তাদেরকে উপযুক্ত সম্মান দেয় না।

গ. ইসলামের দৃষ্টিতে,নারীকে অবশ্যই তার পূর্ণ মর্যাদা দিতে হবে। অর্থাৎ একদিকে সে যেমন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে একজন আধ্যাত্মিক ও পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্বের,যেমন জ্ঞান,শৈল্পিকতা,শক্তিশালী ইচ্ছাশক্তি,সাহসিকতা,সৃজনশীলতা,এমনকি নৈতিকতার দিক থেকে মর্যাদা ও সর্বোচ্চ মানের অধিকারী হবে,অপর দিকে সে অশ্লীল হবে না। পবিত্র কোরআনও নারীদেরকে এ ধরনের মর্যাদা দান করেছে। উদাহরণস্বরূপ,(মহান আল্লাহ) হযরত হাওয়া (আ.)-কে হযরত আদম (আ.)-এর পাশাপাশি সম্বোধন করে কথা বলেছেন। দু’জনকেই বলা হয়েছে যেন ঐ বৃক্ষের নিকটবর্তী না হন। হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর স্ত্রী সারা’ও হযরত ইবরাহীমের মতো ফেরেশ্তাদেরকে দেখতে পেতেন এবং তাঁদের সাথে কথা বলতেন। হযরত মারইয়াম (আ.) আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন রিযিক বা খাদ্য পেতেন যা দেখে আল্লাহর নবি হযরত যাকারিয়া (আ.)ও অবাক হয়ে যেতেন এবং হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.)-কে কাউসার তথা ‘মহা কল্যাণ’ বলা হয়েছে।

ইসলামী ইতিহাসে সর্বোত্তম উদাহরণ হচ্ছে হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.)। যিনি আনন্দিত হতেন শুধু এ কারণেই যে,রাসূল (সা.)-এর পক্ষ থেকে ঘরের কাজকর্মের দায়িত্ব তাঁর ওপর অর্পণ করা হয়েছে,তিনিই মসজিদে আল্লাহর তাওহীদের ওপর এমন এক বক্তব্য দিয়েছিলেন যেরূপ বক্তব্য ইবনে সীনার মতো দার্শনিকও দিতে সক্ষম হননি। কিন্তু তারপরেও তিনি পর্দার আড়াল থেকে বের হননি,বরং সেখান থেকেই বক্তব্য দিয়েছেন। অর্থাৎ পুরুষদের সাথে স্বীয় ব্যক্তিত্ব ও গণ্ডি রক্ষার পাশাপাশি দেখিয়ে দিয়েছেন যে,একজন নারী সমাজে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে!

উক্ত দু’টি ভূমিকার পর অবশ্যই বলতে পারি যে,কারবালার ইতিহাস নারী-পুরুষ উভয়ের ইতিহাস। অর্থাৎ নারী-পুরুষ উভয়েরই ভূমিকা তাতে বিদ্যমান,কিন্তু প্রত্যেকটি তার স্বীয় সীমারেখা ও মান-মর্যাদার মধ্যে সীমিত।

কারবালাতে পুরুষদের ভূমিকা সুস্পষ্ট,কিন্তু নারীদের ভূমিকা বিশেষ করে হযরত যায়নাব (আ.)-এর ভূমিকা আশুরার (১০ মুহররম) বিকাল থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে জ্যোতির্ময় হয়ে উঠেছিল এবং এরপর থেকে শুরু করে সমস্ত দায়িত্ব (বন্দি কাফেলার নেতৃত্ব ও পরিচালনা এবং ইমাম হোসাইন ও আহলে বাইতের মুখপাত্র হিসাবে বক্তব্য তুলে ধরা) তাঁর ওপর অর্পণ করা হয়েছিল। তিনি ইমাম হোসাইনের পবিত্র দেহ মোবারকের সামনে এমন কিছু কাজ করেছিলেন যা দেখে বন্ধু ও শত্রু সকলেই অঝরে ক্রন্দন করেছিল। প্রকৃত অর্থে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর প্রথম শোকানুষ্ঠান তিনি সেখানেই পালন করেছিলেন। ইমাম হোসাইনের পুত্র ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এবং অন্যান্য নারী-শিশুর সেবা-শুশ্রুষা করেছিলেন এবং কুফা শহরের প্রধান ফটকের সামনে স্বীয় বক্তব্যের মাধ্যমে হযরত আলী (আ.)-এর বীরত্ব ও হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.)-এর আত্মসম্মানবোধের সংমিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন। আর হযরত আলীর উচ্চমানের বক্তব্যগুলোর কথা জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন এবং কুফা শহরের অধিবাসীদের অন্যায় কর্মকে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করে তাদেরকে জাগ্রত করছিলেন। এটাই হল ইসলামের কাঙ্ক্ষিত নারী। যে স্বীয় সম্মান ও লজ্জা এবং ধর্মীয় সীমারেখা বজায় রেখে একজন সামাজিক পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসাবে আবিভ’ত হয়। এই মহিয়সী নারী তার উত্তম দৃষ্টান্ত।।

উপরিউক্ত বর্ণনা অনুসারে,আশুরা বিপ্লবে ইমাম হোসাইনের পরিবারকে সাথে নেওয়ার বিষয়কে কয়েকটি দিক থেকে বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী বলে মনে করি :

১. নারী ও শিশুরা প্রচার ও বার্তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বিশেষ যোগ্যতার অধিকারী।

২. প্রচারক্ষমতা ছাড়াও শত্রুরাও নারীদের সামনে অনেক ক্ষেত্রে অক্ষম হয়ে যায়। কেননা,অবশ্যই তাদের (নারীদের) যে সীমারেখা আছে সেটা মেনে চলতে হয়। আর নারী ও শিশুদেরকে আঘাত করলে প্রত্যেকের সহানুভূতিতে আঘাত হানে ও যারা এই জঘন্য কাজটি করে সাধারণ মানুষের চিন্তা-চেতনা তাদেরকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করে থাকে। যেমনভাবে কারবালার ঘটনায় এমনকি শত্রুরাও স্বীয় পরিবারের নিকট লাঞ্ছিত হয়েছে।

অপরদিকে আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইমাম হোসাইন (আ.) তাঁর সর্বস্ব ও তাঁর সঙ্গী-সাথিসহ কোন প্রকার ঘাটতি ছাড়াই ঐকান্তিকতার সাথে সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে আল্লাহর সমীপে হাজির হয়েছিলেন। আর এ ধরনের ঐকান্তিকতার ফসলই হচ্ছে এই যে,আশুরা বিপ্লবের বিষয়টি মুসলমান ও অমুসলিম সকলকেই প্রভাবিত করেছে। আর কিয়ামতের দিনেও তাঁরা (শহীদগণ) এমন এক মর্যাদায় উন্নীত হবেন যে,সকলেই ঐ মর্যাদা লাভ করার আশা পোষণ করবে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা আবশ্যক :

এক. বাণী পৌঁছানো

ইসলামী শাস্ত্রে সামাজিক দায়িত্ব শুধু পুরুষদের জন্যই নির্দিষ্ট নয়; বরং ধার্মিক মুসলিম নারীরাও সত্য-মিথ্যার মোকাবিলায় ঐশী বেলায়াত বা নেতৃত্বের প্রতি দায়িত্বশীল আর তারাও অবশ্যই সঠিক নেতার অনুসরণ করবে এবং দুর্নীতিবাজ শাসক ও অনুপোযুক্ত শাসকদের কর্ম ও আচরণের সমালোচনা ও প্রতিবাদ করবে এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরব উপস্থিতি দেখাবে।

আর ঐ পথের ওপর অবিচল থাকবে যে পথের ওপর হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.) ছিলেন যিনি আল্লাহর মনোনীত ইমামের সহযোগিতায় তৎকালীন শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভুমিকায় নেমেছিলেন এবং তার অন্যায় কর্মকাণ্ডগুলোকে তুলে ধরার মাধ্যমে ভূমিকা পালন করেছিলেন। নারীরা বিশেষ করে হযরত যায়নাবও কারবালা বিপ্লবে ইমাম হোসাইনের সহযোগী ছিলেন।

প্রতিটি বিপ্লব ও সংগ্রামই অধিকাংশ ক্ষেত্রে দু’টি অংশ ‘রক্ত’ ও ‘বাণী’ দ্বারা গঠিত। ‘রক্ত’ শিরোনামের অংশটির উদ্দেশ্য হচ্ছে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও সশস্ত্র সংগ্রাম- যেটা আল্লাহর রাস্তায় হত্যা করা ও নিহত হওয়া এবং আহত হওয়াকে বুঝায়। ‘বাণী’ শিরোনামের অপর অংশটির উদ্দেশ্য হচ্ছে বাণী পৌঁছানো ও বিপ্লবের উদ্দেশ্যকে প্রচার করা।

ইমাম হোসাইনের এই বিপ্লবকে পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে,উল্লিখিত দুটি অংশই তার মধ্যে বিদ্যমান ছিল; কেননা,আশুরার বিকাল পর্যন্ত ইমাম হোসাইনের বিপ্লব ছিল প্রথম অংশ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় হত্যা করা,নিহত হওয়া ও আহত হওয়া ইত্যাদি। এসময় পর্যন্ত ইসলামের পতাকা বহন ও নেতৃত্বের সম্পূর্ণ দায়িত্ব ছিল তাঁরই ওপর ন্যস্ত। অতঃপর দ্বিতীয় অংশটি ইমাম হোসাইনের পুত্র ইমাম সাজ্জাদ (যায়নুল আবেদীন) ও হযরত যায়নাব (আ.)-এর নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল। তাঁরা তাঁদের জ্বালাময়ী বক্তব্যের মাধ্যমে ইমাম হোসাইন ও তাঁর সাথিদের দ শাহাদাত ও বিপ্লবের বাণীকে সাধারণ মানুষের চিন্তা-চেতনার মধ্যে পৌঁছে দিয়েছিলেন ও কুখ্যাত উমাইয়া শাসকগোষ্ঠীকে জনগণের সামনে নিকৃষ্ট হিসেবে পরিচয় করিয়েছিলেন।

উমাইয়া শাসকরা মুয়াবিয়ার সময় থেকে,আহলে বাইতের বিরুদ্ধে যে ব্যাপক অপপ্রচার ইসলামী ভ’খণ্ডের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ করে শাম বা সিরিয়ায় চালিয়ে আসছিল তাতে এটা নিশ্চিত যে,ইমাম হোসাইনের বংশের যাঁরা বেঁচে ছিলেন তাঁরা যদি তাদের মুখোশ উন্মোচন ও সাধারণ মানুষের চেতনা জাগ্রত করার কাজটি না করতেন তাহলে ইসলামের শত্রুরা ও ক্ষমতাশালীদের কর্মচারীরা তাঁর চিরজীবি মহান বিপ্লবকে ভবিষ্যতে মূল্যহীন করে দিত ও তার (বিপ্লবের) রূপকে পাল্টে অন্যভাবে তুলে ধরত;

যেমনভাবে কিছু কিছু ব্যক্তি ইমাম হোসাইনের ইতিহাসকে বিকৃত করে বলে থাকে : ‘তিনি যক্ষ্মা রোগের কারণে ফুসফুস নষ্ট হয়ে মারা গেছেন।’

কিন্তু ইমাম হোসাইনের বংশধরদের বন্দিদশার কারণে পরবর্তীতে যে বিশাল প্রচারণার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল তা এ ধরনের বিকৃতি ও পরিবর্তন ঘটানোর সুযোগ শত্রুদেরকে দেয়নি। আহলে বাইতের নারী ও শিশুদের উপস্থিতির আবশ্যিকতা ও আশুরায় তাদের বিশেষ ভূমিকার বিষয়টি সিরিয়ায় উমাইয়াদের শাসনক্ষমতা সম্পর্কে পর্যালোচনা ও গবেষণা করলেই সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।

দুই. বনি উমাইয়ার প্রচারব্যবস্থাকে অকার্যকরকরণ

সিরিয়া যে দিন থেকে মুসলমানদের হাতে এসেছিল সে দিন থেকেই সেখানকার শাসনকর্তৃত্ব খালেদ বিন ওয়ালিদ ও মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের মতো জঘন্য ব্যক্তিদের ওপর ন্যস্ত ছিল। সেখানকার জনগণ রাসূল (সা.)-এর বাণী শোনার সৌভাগ্যও অর্জন করেনি আর তাঁর সাহাবীদের নিয়মনীতির সাথেও তারা খুব একটা পরিচিত ছিল না এবং ইসলাম ঠিক যেভাবে মদীনায় প্রচলিত ছিল সেভাবে ইসলামের সাথে পরিচিতি লাভ করতে পারেনি। অবশ্য রাসূলের ১১৩ জন সাহাবী এই এলাকা বিজয়ের সময় হয় অংশগ্রহণ করেছিলেন অথবা ধীরে ধীরে তাঁরা সেখানে বসতি গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু এ সকল ব্যক্তির জীবনী পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয় যে,গুটি কয়েক ব্যক্তি ব্যতীত অন্যরা খুব অল্প সময় রাসূলের সান্নিধ্য লাভ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। ফলে তাঁদের নিকট থেকে কেবল অল্প কয়েকটি হাদীসই বর্ণিত হয়েছে।

এ ছাড়াও তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তিই খলিফা হযরত উমর ও উসমানের খেলাফতকাল থেকে মুয়াবিয়ার শাসনামলের শুরুর সময়ের মধ্যে ইন্তেকাল করেছিলেন এবং ইমাম হোসাইনের বিপ্লবের সময় তাঁদের মধ্যে মাত্র ১১ ব্যক্তি জীবিত ছিলেন যাঁরা সিরিয়াতে বাস করতেন। তাঁরা সকলেই প্রায় ৭০/৮০ বছর বয়সের ছিলেন। তাঁরা সর্বদা জনগণের মাঝে থাকার চেয়ে ঘরের কোণে বসে থাকাকেই বেশি পছন্দ করতেন আর সাধারণ জনগণের ওপরও তাঁদের তেমন কোন প্রভাব ছিল না। যার ফলে সে সময়ের যুবকশ্রেণি প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানত না। তাদের দৃষ্টিতে ইসলাম ঠিক তেমনই একটি শাসনব্যবস্থা ছিল যেমনটি ইসলাম-পূর্ব সময়ে তাদের দেশে রোমানদের সময় ছিল। স্বেচ্ছাচরিতা ও স্বৈরাচার শাসকদের জন্য বৈধ এক কর্ম বলে পরিগণিত হত! আর মুয়াবিয়ার দরবারের ঐশ্বর্য,বিশাল অট্টালিকা তৈরি,বিরোধিতাকারীদেরকে হত্যা করা,বন্দি করে রাখা,নির্বাসন দেওয়া,সাধারণ জনগণের সম্পদের (বায়তুল মালের) আত্মসাৎ এবং সকলের কাছে একটি স্বাভাবিক ও সহনীয় বিষয় ছিল। কেননা,ইসলামের আগমনের অর্ধ শতাধিক বছর পূর্বেও তাদের এই ধরনের শাসনের অভিজ্ঞতা ছিল তাই মুয়াবিয়ার শাসনের ব্যাপারে তাদের কোন আপত্তি ছিল না। জনগণের এই বিশ্বাস ছিল যে,রাসূল (সা.)-এর যুগে মদীনাতেও ঠিক এরকম শাসনব্যবস্থাই ছিল।

মুয়াবিয়া প্রায় ৪২ বছর ধরে সিরিয়াতে শাসন করেছিল আর এই সময়টি তুলনামূলকভাবে অনেক দীর্ঘ একটি সময়। সিরিয়ার জনগণকে সে এমনভাবে গড়ে তুলেছিল যাতে তারা সত্য সম্পর্কে অনবহিত ও দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে এবং তার চাওয়া-পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রশ্ন ছাড়াই সবকিছুকে মেনে নেয়। মুয়াবিয়া এত দীর্ঘ সময় ধরে সিরিয়ার জনগণকে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে স্বীয় আধিপত্যে রাখার কারণে ঐসব এলাকার মানুষ চিন্তা-চেতনা ও মাযহাবগত বিষয়ে অন্ধ ও বোবা এবং পথভ্রষ্ট ছিল আর সে কারণেই যা কিছু সে ইসলামের শিক্ষা নামে তাদের নিকট তুলে ধরত সেগুলোকে কোন প্রকার আপত্তি ছাড়াই জনগণ গ্রহণ করে নিত।

উমাইয়া বংশের জঘন্য ও নোংরা শাসনব্যবস্থার বিষাক্ত ও হিংসাত্মক প্রচার-প্রপাগাণ্ডা রাসূলের পবিত্র বংশধরকে সিরিয়ার জনগণের সামনে অত্যন্ত ঘৃণিত হিসেবে তুলে ধরেছিল,অপরদিকে উমাইয়া বংশকে রাসূলের আত্মীয় ও অতি নিকটতম হিসেবে পরিচয় করিয়েছিল। আব্বাসী খলিফা আবুল আব্বাস সাফ্ফাহ- এর শাসন প্রতিষ্ঠার পর সিরিয়ার ১০ জন দায়িত্বশীল কর্মচারী তার নিকট যায় এবং সকলেই কসম খেয়ে বলে- ‘আমরা দ্বিতীয় মারওয়ানের (উমাইয়া খলিফা) মৃত্যুকাল পর্যন্ত জানতাম না যে,আল্লাহর রাসূলের বনি উমাইয়া ব্যতীত অন্য কোন আত্মীয় ছিল যারা তাঁর উত্তরাধিকারী। আপনি আমীর হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমরা কিছুই জানতাম না।’

সুতরাং এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই,যখন ‘মাকাতিল’ গ্রন্থে পড়ি : দামেশ্কে (সিরিয়ার রাজধানীতে) যখন কারবালার যুদ্ধবন্দিদেরকে (ইমাম হোসাইনের বংশধরদেরকে) নিয়ে আসা হয়েছিল তখন এক ব্যক্তি ইমাম হোসাইনের পুত্র যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলতে লাগল : ‘সেই আল্লাহর প্রশংসা করি যে আল্লাহ তোমাদেরকে (তোমাদের আত্মীয়-স্বজনদেরকে) হত্যা ও ধ্বংস করেছেন এবং জনগণকে তোমাদের অকল্যাণ থেকে মুক্তি দিয়েছেন!’ ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) একটুখানি ধৈর্যধারণ করলেন যাতে ঐ লোকটির মনে যা কিছু আছে তা বলে শেষ করতে পারে। অতঃপর তিনি কোরআনের এই আয়াতটি-

)إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا(

অর্থাৎ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ চান যে কোন ধরনের অপবিত্রতা হতে তোমরা আহলে বাইতকে দূরে রাখতে ও তোমাদের সর্বোতভাবে পবিত্র করতে’ পাঠ করলেন ও বললেন : ‘আয়াতটি আমাদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।’ তারপর ঐ ব্যক্তিটি বুঝতে পারল যে,এতদিন যা কিছু এই যুদ্ধবন্দিদের সম্পর্কে শুনেছে তা সঠিক নয়। তাঁরা অপরিচিত বিদ্রোহী নন; বরং রাসূল (সা.)-এর সন্তান। আর যা কিছু সে বলেছে তার জন্য অনুতপ্ত হলো এবং পরিশেষে তওবা করল।

সুতরাং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর পরিবার-পরিজনের জ্বালাময়ী ভাষণসমূহ এবং হযরত যায়নাব ও ইমাম সাজ্জাদের অসত্যের পর্দা উন্মোচনকারী বক্তব্যগুলো বনি উমাইয়াদের কয়েক দশকের বিকৃত বিষয়গুলোকে,এমনকি শত্রুদের খেলাফতের প্রাণকেন্দ্র সিরিয়াতেও অকার্যকর করে দিয়েছিল।

তিন. অত্যাচারীদের মুখোশ উন্মোচন

ইমাম হোসাইনের পরিবার-পরিজনের উপস্থিতির কারণসমূহের অন্য একটি দিক হচ্ছে রক্তপিপাসু,নিষ্ঠুর ও অমানুষ ইয়াযীদের এবং তার শাসনব্যবস্থার জঘন্য রূপকে জনগণের সামনে তুলে ধরা। যেসব কারণে জনগণ অধিক প্রভাবিত হয়েছিল তার অন্যতম হচ্ছে আহলে বাইতের নির্যাতিত হওয়ার বিষয়টি।

এ কারণেই কিছু কিছু রাজনৈতিক দল ও উপদল সাধারণ জনগণের চিন্তা-চেতনায় স্থান করে নেওয়ার জন্য প্রচারাভিযানের সময় নিজেদেরকে নিপীড়িত ও নির্যাতিত দেখানোর চেষ্টা করে। কেননা,মানুষ সত্তাগতভাবেই যুলুম-নিপীড়ন ও অত্যাচারীদের প্রতি অসন্তষ্ট,অপর দিকে নিপীড়িতদেরকে অত্যন্ত ভালোবাসে ও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে থাকে।

তবে কারবালার ঘটনার ক্ষেত্রে বিষয়টি এমন ছিল না; সেখানে নির্যাতিত বা নিপীড়িত হিসেবে দেখানোর বিষয়টি ছিল না; বরং প্রকৃত নির্যাতিত হওয়ার বিষয়টি আহলে বাইতের আত্মত্যাগের সাথে মিশ্রিত হয়ে গিয়েছিল এবং শহীদদের নেতা ও তাঁর সঙ্গী-সাথিদের উদ্দেশ্যকে সর্বোত্তমরূপে সবার নিকট পৌঁছে দিয়েছিল- এমনভাবে তা পৌঁছে দিয়েছিল যে,আজও তাঁদের বাণী মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়ে জাগিয়ে দেয়।

শিশু ও নারিগণ,যাঁদের না ছিল যুদ্ধাস্ত্র আর না ছিল যুদ্ধ করার মতো শক্তি,তারপরেও তাঁরা অত্যন্ত কঠিন অবস্থায় আঘাত,নির্যাতন,অপদস্থ ও মানসিক কষ্টের শিকার হয়েছেন। ছয় মাসের কচি শিশু তৃষ্ণার্ত অবস্থায় শুষ্ক ঠোঁট নিয়ে জলে ভরা ফোরাত নদীর তীরে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে; ছোট্ট কন্যা পিতার রক্তাক্ত,টুকরো টুকরো লাশের পাশে নির্যাতনের শিকার হয়েছে,তাঁদের তাঁবুগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে... এ সকল কারণ বাণী প্রচার ও ইয়াযীদের শাসনব্যবস্থার প্রকৃত রূপ প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ঐ সঙ্গী-সাথিদের শাহাদাত ও আহত হওয়ার চেয়ে কোন অংশেই কম ছিল না। ইমাম হোসাইনের কচি শিশুর ঐ তৃষ্ণার্ত আওয়াজ আর সাদা কাপড়ে মুড়ানো ছোট্ট শিশু আলী আসগারের মৃতদেহ- এগুলোই ঐ তরবারি চালানো ও ঐ নিপতিত রক্তগুলোকে আজও জীবন্ত করে রেখেছে।

তাই ইমাম সাজ্জাদ (আ.) শামে বনি উমাইয়ার শাসকগোষ্ঠীর কুৎসিত রূপকে তুলে ধরতে গিয়ে বলেন : ‘আমার শ্রদ্ধেয় পিতা ইমাম হোসাইনকে ঐভাবে টুকরো টুকরো করে শহীদ করা হয়েছে যেভাবে খাঁচায় বন্দি একটি পাখির ডানা ভেঙে দেওয়া হয় যাতে সে মারা যায়।’

এখানে যদি ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এভাবে না বলে এভাবে বলতেন যে : ‘আমার পিতাকে শহীদ করা হয়েছে’,তাহলে সিরিয়ার লোকজনের চোখে- যারা আহলে বাইত সম্পর্কে তেমন কিছু জানত না,তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে হতো না; কেননা,তারা মনে করত যে,যুদ্ধে তো অনেক লোক বা অনেকেরই পিতা মারা গেছে,তার মধ্যে একজন হচ্ছেন ইমাম হোসাইন।

কিন্তু ইমাম সাজ্জাদ (আ.) সেভাবে বলেননি। তাঁর এভাবে বলার উদ্দেশ্য হলো এই যে,ধরে নিলাম তোমরা তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিলে,কিন্তু এভাবে কেন হত্যা করলে? কেন পাখির মতো তার শরীরটাকে টুকরো টুকরো করলে? কেন পানিভরা নদীর তীরে তাকে পানি না দিয়ে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় হত্যা করলে? কেন তাঁর তাঁবুগুলোতে হামলা করলে? কেন তাঁর শিশুদেরকে হত্যা করলে? এই কথাগুলো জনগণের মনে এমনই আঁচড় কেটেছিল যে,গোটা সিরিয়াতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল এবং উমাইয়াদের বিরুদ্ধে একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল।

শেষকথা হলো,ইয়াযীদ চেয়েছিল পুরুষদেরকে হত্যা ও আহলে বাইতের সদস্যদেরকে বন্দি করার মাধ্যমে সকল প্রকার বিপ্লবী উদ্যোগকে অঙ্কুরেই বিনাশ করতে- এমনভাবে বিনাশ করতে যেন সকলেই এ ধরনের পরিণতি দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে আর সে ক্ষমতার সিংহাসনে আরামে বসে থাকতে পারে। কিন্তু ইমাম হোসাইনের সম্মানজনক উত্থান ও তাঁর নির্যাতিত পরিবারের প্রচারাভিযান এবং বনি উমাইয়ার মুখোশ উন্মোচনের কাজ সেই ঘৃণ্য চক্রান্তকে সফল হতে দেয়নি। ইমাম হোসাইন (আ.)-এর পবিত্র রক্তের প্রতিশোধ গ্রহণ,বনি উমাইয়ার অত্যাচারীদের শিকড় উৎপাটন এবং তাদেরকে নিঃশেষ করার জন্য ইসলামী ভূখণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় এ আন্দোলনের অনুসরণে আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছিল।

তথ্যসূত্র:

১. বিহারুল আনওয়ার, ৪৪তম খণ্ড, পৃ. ৩৬৪।

২. খ্রিস্টানদের ভ্রান্ত ধারণা এই যে, আদমই (পুরুষই) কেবল মৌলিকত্বের অধিকারী আর হাওয়া শুধু অনুসরণকারী। কিন্তু কোরআন এ চিন্তার কঠোর বিরোধী। এ সম্পর্কে ওস্তাদ আয়াতুল্লাহ শহীদ মোতাহ্হারী বিশদভাবে আলোচনা করেছেন। দেখুন : হামাসায়ে হোসাইনী,১ম খণ্ড ।

৩. হামাসায়ে হোসাইনী, ১ম খণ্ড,

৪. শাহিদী, সাইয়্যেদ জাফর, কিয়ামে ইমাম হোসাঈন (আ.) , পৃ. ১৮৫।

৫. আয়াতী, মুহাম্মদ ইবরাহীম, বাররাসীয়ে তারীখে আশুরা, পৃ. ৪৭।

৬. ইবনে আবীল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগা, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১৫৯।

৭. সূরা আহযাব, আয়াত : ৩৩।

৮. আখতাব খাওয়ারেজমী, মাকতালুল হোসাইন (আ.), ২য় খণ্ড, পৃ. ৬১, আল-লুহুফ, পৃ.৭৪।

(এ প্রবন্ধটি ‘আশুরা ও কারবালা বিষয়ক প্রশ্নোত্তর’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত)