আল্লাহ সর্বশক্তিমান

আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। অসীম ক্ষমতাধর প্রভু তিনি। তিনি যা ইচ্ছা করতে পারেন। তাঁর ক্ষমতার পরিমাপ করা সম্ভব নয় কারো পক্ষে। তিনি পরম পরাক্রমশালী। অপারগতা তাঁর সত্তা থেকে বহুদূরে। সকল কিছুই তাঁর জন্যে সম্ভব। তবে বস্তুর গুণগত অপারগতা ও সসীমতার কারণে সে বস্তুর বাস্তব অস্তিত্বের অনুপস্থিতি আল্লাহর অপারগতা প্রমাণ করে না। যেমন ধরুন,কেউ যদি বলে,আল্লাহ কি সমস্ত পৃথিবীকে একটা মুরগীর ডিমের ভিতর স্থাপন করতে পারবেন যে ডিমের আয়তনও বড় হবে না আবার পৃথিবীও আয়তনে ক্ষুদ্র হবে না? এর উত্তরে বলতে হয়,আল্লাহর জন্যে সব কিছু সম্ভব। আমাদের ধারণা মতে এর চেয়েও বৃহৎ ও কঠিন বলে স্বীকৃত যত কিছু হতে পারে,তারও অস্তিত্ব লাভ আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনরূপ কঠিন কাজ নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলোঃ ডিমের কি পৃথিবী ধারণ করার ক্ষমতা আছে? আর পৃথিবী কি তার স্বীয় বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রেখে ডিমের ন্যায় কোন ক্ষুদ্র আকৃতির বস্তুর ভিতর প্রবেশ ক্ষমতা রাখে? এ সবই হচ্ছে ডিম বা পৃথিবীর গুণগত অপারগতা। দার্শনিক নীতি অনুসারে কোন বস্তুর অস্তিত্বে আগমণের প্রয়োজনীয় উপকরণ সম্মিলিত না হলে কখনো ঐ বস্তু অস্তিত্বমান হতে পারে না। দর্শনের পরিভাষায় এ ধরনের বস্তুকে অসম্ভব বস্তুগত সত্তা বলা হয়। মহান আল্লাহ্ এ ধরণের কোন অসম্ভব বস্তুগত সত্তার সৃষ্টি করতে পারেন না।

প্রশ্ন হতে পারে,‘আল্লাহ কি অন্য আরেকটি আল্লাহ সৃষ্টি করতে পারেন?’ মূলত : এ ধরণের প্রশ্নের অবতারণা বিভিন্ন ভুল চিন্তা-চেতনা থেকে করা হয়ে থাকে। এ ধরনের প্রশ্নই ভুল। আল্লাহর জন্যে কোন কিছু অসম্ভব নয়। তবে অসম্ভব বস্তুর সৃষ্টিহীনতার জন্যে ঐ বস্তুর সত্তাহীনতাই দায়ী। এতে আল্লাহর শক্তির মান ও পরিমাপের স্বল্পতা প্রামাণিত হয় না। যেমন ধরুন আপনি একজন বিখ্যাত চিত্রকরকে অনুরোধ করলেন বঙ্গোপসাগরের মাঝে পানির উপরিভাগে একটি সুন্দর ও আকর্ষণীয় চিত্র অংকন করে দিতে। সঙ্গে সঙ্গে চিত্রশিল্পী ভদ্রলোকটি নিশ্চয়ই বলবেন,‘এটা একটা অসম্ভব কাজ।’ তাহলে ‘আপনি চিত্র অংকন করতে পারেন না।’ কথাটি ব্যক্ত করতে পারবেন? আপনার উপলব্ধি ক্ষমতা নিশ্চয়ই এধরণের বক্তব্যে সায় দিবে না। আর তখন যদি আপনি ভাবেন,তিনি একজন মিথ্যাবাদী,তাহলে আপনার ধারণা কি সঠিক হবে? চিত্র অংকনের সকল অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ও উপকরণ প্রস্তুত থাকার পরও ভদ্রলোকটি কেন পানির উপরে ছবি অংকন করতে পারলেন না? এটা কি তার অপারগতা বলে আপনি চিহ্নিত করতে পারেন? কখনো কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এ ধরণের অপবাদ দিতে পারে না। আসলে বিষয়টি হচ্ছে,চিত্র ধারণ ক্ষমতা পানির নেই। পানির পক্ষে কোন চিত্র তার বুকে ধারণ করে রাখা অসম্ভব। এটি পানিরই অযোগ্যতা ও অপারগতা। এর জন্যে চিত্রকরকে কোনক্রমে দায়ী করা যাবে না।

তদ্রূপ সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ও সব কিছু করতে পারেন। কিন্তু কোন বস্তুর সত্তাহীনতা ও সম্ভাব্য বস্তুতে পরিণত হতে অপারগতা এবং অসম্ভাব্য অস্তিত্বে পরিণত হওয়া থেকে আল্লাহর অক্ষমতা ও অযোগ্যতার পরিচয় ফুটে উঠেনা কিছুতেই।

পবিত্র আল্ কোরআনে আল্লাহ বলেন,

(وَمَا كَانَ اللَّـهُ لِيُعْجِزَهُ مِن شَيْءٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ ۚ إِنَّهُ كَانَ عَلِيمًا قَدِيرًا)

অর্থাৎ,পৃথিবী ও আসমানসমূহে কোন কিছুই আল্লাহর জন্যে অসম্ভব নয়। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞানী ও সর্বশক্তিমান।(ফাতের,আয়াত নং ৪৪)

আল্লাহ যদি অন্য কোন আল্লাহ্ সৃষ্টি করেন তাহলে তিনি (কাল্পনিক দ্বিতীয় আল্লাহ্) তো সৃষ্টি বস্তুতে পরিণত হয়ে যাবেন। কেননা,তার অস্তিত্ব অর্জনে অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছে। অতএব,এই সৃষ্টি সত্তা (দ্বিতীয় কাল্পনিক আল্লাহ) স্রষ্টার আসন থেকে পদচ্যুত হয়ে পড়বেন। কারণ,আমরা এমন এক স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী যিনি স্বয়ংসৃষ্ট ও অপরিহার্য সত্তা। সত্তাহীনতা তার জন্যে কল্পনাও করা যায় না। সুতরাং এ ধরণের কাল্পনিক অস্তিত্বের সৃষ্টি,সৃষ্ট বস্তুরই নামান্তর আর তা কক্ষনো আল্লাহ্ হতে পারে না।