আল হাসানাইন (আ.)

‘ইমাম হোসাইন (আ.) মযলুম ছিলেন’- এ বাক্যটির অর্থ কী?

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

ন্যায় বিচারের বিপরীতে যুলুমের অর্থ হলো উপযুক্ত কোন ব্যক্তির অধিকার দান না করা। ইমাম হোসাইন (আ.) এ দৃষ্টিকোণ থেকে মযলুম যে,তাঁর ঐশী বেলায়াত বা মুসলমানদের ওপর আল্লাহপ্রদত্ত কর্তৃত্বের অধিকার তাঁর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া মুসলমানদের ওপর তাঁর সর্বজনীন যে অধিকারগুলো ছিল যার অন্যতম হলো রাসূলের উম্মতের পক্ষ থেকে তাঁর ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার (সূরা শুরার ২৩ নং আয়াত যেখানে মুমিনদের ওপর মহানবীর আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসাকে ফরয করা হয়েছে),সেগুলো থেকে তাঁকে বঞ্চিত করা হয়েছে। দুঃখজনকভাবে অপপ্রচারের কারণে বেহেশতের যুবকদের নেতা হিসেবে তাঁর আধ্যাত্মিক ও পার্থিব মর্যাদা তাঁকে দেওয়া হয় নি। মূর্খতা,হিংসা ও বিশ্বাসঘাতকতার অন্ধকারের পর্দা দিয়ে তাঁর উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ফেরেশতার মতো চেহারাকে ঢেকে ফেলা হয়েছে এবং তাঁকে পরিপূর্ণভাবে তাঁর ঐশীরূপে প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয় নি।

মুসলমানদের নেতা হিসেবে শহীদদের নেতা ইমাম হোসাইনকে স্বীকৃতি দান না করা এবং তাঁর প্রকৃত মর্যাদাকে গোপন করা- এ দু’টি অপরাধের বিপরীতে তাঁর শাহাদাত সামান্য বলেই গণ্য; যদিও তাঁকে হত্যার অপরাধ হত্যাকারীদের অনন্তকালীন শাস্তির জন্য যথেষ্ট।(সূরা নিসার ৯৩ নং আয়াত যেখানে সাধারণ কোন নিরপরাধ মুমিনকে হত্যার শাস্তি আল্লাহর ক্রোধে পতিত হওয়া, তাঁর অভিশাপ বর্ষিত হওয়া এবং চিরন্তন মর্মন্তুদ শাস্তি বলা হয়েছে। সেখানে রাসূলের প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র যাঁকে আল্লাহ বেহেশতের যুবকদের নেতা মনোনীত করেছেন, তাঁকে হত্যার শাস্তি কী হতে পারে!) কিন্তু মযলুম অবস্থায় তাঁকে হত্যা করার চেয়ে বড় অপরাধ হলো তাঁকে তাঁর মর্যাদা সহকারে না চেনা,তাঁকে তাঁর অধিকার না দেওয়া এবং অন্যদের সামনে তাঁর মহান পরিচয় তুলে না ধরা; এ দু’টিই হল মানবজাতির ইতিহাসে তাঁর প্রতি সবচেয়ে বড় অপরাধ এবং এখন পর্যন্ত এ অপরাধ অব্যাহত রয়েছে। (তার বিপরীতে ইয়াযীদের মতো নরপিশাচকে মুসলমানদের প্রকৃত খলিফা বলে তার ক্ষমতাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে)

লক্ষ্য করা আবশ্যক যে,আরবি ভাষায় ‘মাযলুম’ শব্দটি ‘মুনযালাম’ শব্দ থেকে ভিন্ন। মুনজালাম শব্দটির অর্থ হলো যে ব্যক্তি অন্যায়কে বরণ করে নেয় এবং কোন প্রতিবাদই করে না; কিন্তু মাযলুম ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যার প্রতি অন্যায় করা হয় এবং এর বিপরীতে সে প্রতিবাদ করে ও সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রতিহত করে। ইসলামী সংস্কৃতিতে অন্যায়কে বরণ করা অনাকাঙ্ক্ষিত ও বর্জিত কর্ম হিসেবে ধরা হয়েছে কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদ করাকে কাঙ্ক্ষিত ও পছন্দনীয় ধরা হয়েছে।

 

 

 

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)