আল হাসানাইন (আ.)

সূরা ইউনুস;(৪র্থ পর্ব)

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

সূরা ইউনুস; আয়াত ১৫-১৮

সূরা ইউনুসের ১৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন-

وَإِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ آَيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ قَالَ الَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَاءَنَا ائْتِ بِقُرْآَنٍ غَيْرِ هَذَا أَوْ بَدِّلْهُ قُلْ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أُبَدِّلَهُ مِنْ تِلْقَاءِ نَفْسِي إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَى إِلَيَّ إِنِّي أَخَافُ إِنْ عَصَيْتُ رَبِّي عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ

"যখন আমার সুস্পষ্ট বাণী তাদের কাছে পাঠ করা হয় তখন যারা কেয়ামতের দিন আমার সাক্ষাতের ভয় করে না; তারা বলে, এটি ছাড়া অন্য এক কুরআন আনো বা এতে কিছু পরিবর্তন করো। (হে পয়গম্বর) আপনি বলুন, এতে পরিবর্তন আনার অধিকার আমার নেই, আমার প্রতি যা প্রত্যাদেশ হয় আমি তারই অনুসরণ করি। আমি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করলে মহা দিনের শাস্তির আশঙ্কা করি।" (১০:১৫)

আল্লাহর রাসূল (সা.) যখন মক্কার মূর্তিপূজক বা পৌত্তলিকদের একত্ববাদের দিকে ফিরে আসার আহ্বান জানান, তখন তারা মূর্তিপূজা এবং কুসংস্কার ত্যাগ করতে রাজি না হয়ে আল্লাহর রাসূলকে উদ্ভট প্রস্তাব দিতে থাকে। তারা একবার বলে-এই কুরআন বাদ দিয়ে অন্য এমন এক কুরআন উপস্থাপন করুন, যেখানে মূর্তিপূজা পরিহারের কথা থাকবে না। অথবা মূর্তিপূজা পরিহার সংক্রান্ত কথাগুলো এই কুরআন থেকে বাদ দিন। যদি এটা করা হয়-তাহলেই কেবল আমরা আপনাকে গ্রহণ করব।

তাদের এসব কথার পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যাদেশ বাণী বা ওহী অবতীর্ণ হয় এবং নবী করিম (সা.) স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন যে, কুরআনের কোন কিছু পরিবর্তন করার অধিকার আমার নেই।

আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে সুপথে পরিচালিত করা ও সত্যের আলোয় মানব সমাজকে উদ্ভাসিত করা। দল ভারী করা পয়গম্বরদের উদ্দেশ্য নয়। নিজেদের অনুসারী বাড়ানোর উদ্দেশ্যে পয়গম্বররা মানুষের অযৌক্তিক ও অবৈধ আবেদন গ্রহণ করতে পারেন না।

এই আয়াত থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, ঐশীগ্রন্থে কোন পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করার অধিকার কারো নেই। পয়গম্বররাও তা করতে পারেন না। নবী-রাসূলরা হলেন বার্তাবাহক, তারা আল্লাহর বাণী মানুষকে অবহিত করেন এবং তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন।

সূরা ইউনুসের ১৬ ও ১৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

قُلْ لَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا تَلَوْتُهُ عَلَيْكُمْ وَلَا أَدْرَاكُمْ بِهِ فَقَدْ لَبِثْتُ فِيكُمْ عُمُرًا مِنْ قَبْلِهِ أَفَلَا تَعْقِلُونَ (16) فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِآَيَاتِهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْمُجْرِمُونَ

“(হে রাসূল! আপনি) বলুন, আল্লাহর সে রকম ইচ্ছে হলে আমি তোমাদের কাছে এ (কুরআন) পাঠ করতাম না এবং তিনি তোমাদেরকে এ বিষয়ে অবহিত করতেন না। আমি তো এর পূর্বে তোমাদের মধ্যে দীর্ঘকাল অবস্থান করেছি, তবুও কি তোমরা বুঝতে পারো না?” (১০:১৬)

“যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে, অথবা আল্লাহর নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে তার চেয়ে জালিম আর কে হতে পারে? অপরাধীরা সফলকাম হয় না।"(১০:১৭)

কুরআনে রদবদল বা সংস্কার আনার ব্যাপারে মুশরিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর রাসূল নবুয়্যত লাভের আগে ৪০ বছর এই সমাজেই বাস করেছেন। কুরআনের বিধান যদি তার নিজের বক্তব্যই হতো, তাহলে তিনি এর আগেও এ ধরনের কথা বলতেন। এ ছাড়া, তিনি কোন ব্যক্তির কাছে বা কোন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে লেখাপড়া শেখেননি। তাই পবিত্র কুরআনকে আল্লাহর রাসূলের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির ফসল বলা যায় না। কাজেই যারা নতুন কুরআন উপস্থাপন করতে বা কুরআনে সংস্কার আনার কথা বলে তারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর বাণীকেই প্রত্যাখ্যান করে। এটা আল্লাহর প্রতি, তার রাসূলের প্রতি এবং কুরআনের প্রতি বড় অবিচার।

পবিত্র কুরআন হচ্ছে সর্বশেষ ঐশীগ্রন্থ। আল্লাহতায়ালা তার বাণী-ওহী আকারে তাঁর রাসূলের কাছে পাঠিয়েছেন। ঐশী বিধান রচনায় নবী-রাসূলদের কোন ভূমিকা নেই, পয়গম্বরা যা প্রত্যাদিষ্ট হন হুবহু তাই মানুষের সামনে উপস্থাপন করেন।

এই সূরার ১৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللَّهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ

"তারা আল্লাহ ছাড়া যার উপাসনা করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। (এই অন্যায় কাজের কৈফিয়ত হিসেবে) ওরা বলে এই প্রতিমাগুলো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী। বলুন, তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দেবে যা তিনি জানেন না। তিনি মহান, পবিত্র এবং তারা যাকে অংশী করে তা থেকে তিনি উর্ধ্বে।"(১০:১৮)

মানুষের হাতে গড়া মাটির তৈরী প্রতিমা বা মূর্তির যে কোনো ক্ষমতা নেই-তা এই আয়াতে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে- এসব প্রতিমা মানুষের যেমন ক্ষতি করতে পারে না তেমনি উপকার করারও কোন ক্ষমতা এসবের নেই। কাজেই মূর্তিপূজার বা প্রতিমাকে বন্দনা করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

তবে মুশরিকরা বলে থাকে, সৃষ্টি ও স্রষ্টার মধ্যে মধ্যস্থতাকারী বা সুপারিশকারী হিসেবে আমরা মূর্তি পূজা করি। দেব-দেবীর প্রতিমা বানিয়ে তার পূজা অর্চনা করি। কুরআন এই যুক্তিও প্রত্যাখ্যান করে। কারণ সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ-কোন দেব-দেবীকে এ ধরনের সুপারিশকারী হিসেবে নিযুক্ত করেননি এবং তাদের উপাসনার অনুমতিও প্রদান করেননি।

পৌত্তলিকরা দেব-দেবীকে সৃষ্টিকর্তার কাছে মানুষের পক্ষে সুপারিশকারী হিসেবে মনে করেন। কিন্তু ইসলাম তা প্রত্যাখ্যান করে। ইসলাম এই শিক্ষা দেয় যে, মহান সৃষ্টিকর্তা এক এবং অদ্বিতীয়, তার সমকক্ষ কেউ নেই। তার কোন সাহায্যকারীর প্রয়োজন নেই। তিনি বস্তুগত সব প্রয়োজনের উর্ধ্বে। কোন কিছুকেই তার সমকক্ষ হিসেবে কল্পনা করা যায় না। কোনো দেব-দেবীকে তিনি সুপারিশকারী হিসেবে নিযুক্ত করেননি। তার অনুমতি ছাড়া কেউ শাফায়াত বা সুপারিশ করার ক্ষমতা রাখে না।

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)