আল হাসানাইন (আ.)

সূরা ইউনুস;(১৮তম পর্ব)

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

সূরা ইউনুস; আয়াত ৯৩-৯৭

সূরা ইউনুসের ৯৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন-

 وَلَقَدْ بَوَّأْنَا بَنِي إِسْرَائِيلَ مُبَوَّأَ صِدْقٍ وَرَزَقْنَاهُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ فَمَا اخْتَلَفُوا حَتَّى جَاءَهُمُ الْعِلْمُ إِنَّ رَبَّكَ يَقْضِي بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ (93(

"আর ইসরাইলের বংশধরদের আমরা উত্তম আবাসভূমিতে বসবাস করালাম। তাদেরকে আমরা উত্তম বিষয়বস্তু দিয়ে জীবিকা দান করালাম। আর তারা (ততক্ষণ পর্যন্ত) বিভেদ সৃষ্টি করেনি যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের কাছে জ্ঞান এলো। তারা যে বিষয়ে বিভেদ সৃষ্টি করেছিল, তোমার প্রতিপালক শেষ বিচারের দিন তার বিচার করবেন।” (১০:৯৩)

এই আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন সেদিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, আমি তাদের দীর্ঘ উদ্বাস্তু জীবনের অবসান ঘটালাম এবং তাদের জীবন যাপনের জন্য সিরিয়ার সবুজ শ্যামল এক প্রান্তর নির্ধারণ করে দিলাম। তারা কৃষি কাজের জন্য উর্বর জমির মালিক হলো। এর মাধ্যমে তাদের উত্তম জীবিকার ব্যবস্থা হলো। কিন্তু তারা এসবের জন্য সৃষ্টিকর্তার কৃতজ্ঞতায় মগ্ন না হয়ে আল্লাহর প্রেরিত প্রত্যাদেশ বাণীর ব্যাপারে বিতর্ক ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণায় লিপ্ত হয়। ফলে তারা যা করেছে সেজন্য তারা প্রতিপালকের কাছ থেকে প্রতিদান পাবে। মহান আল্লাহ তাদের প্রতিটি কাজের বিচার করবেন।

এই আয়াতে আমাদের জন্য দু’টি শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে-

এক. বিভেদ ও অনৈক্য -ধর্মের সাথে মানুষের দূরত্ব সৃষ্টি করে।

দুই. নবী রাসূলগণ শুধু মানুষের আত্মিক উতকর্ষতার জন্য কাজ করেননি। মানুষের বৈষয়িক বিষয়েও তাদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। মানুষ তাদের নির্দেশনা গ্রহণের মাধ্যমে ইহকাল ও পরকালে অফুরন্ত কল্যাণের অধিকারী হতে পারে।

সূরা ইউনুসের ৯৪ ও ৯৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

 فَإِنْ كُنْتَ فِي شَكٍّ مِمَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ فَاسْأَلِ الَّذِينَ يَقْرَءُونَ الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكَ لَقَدْ جَاءَكَ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكَ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِينَ (94) وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآَيَاتِ اللَّهِ فَتَكُونَ مِنَ الْخَاسِرِينَ (95(

"আমি তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি, ওতে তুমি যদি সন্দিগ্ধচিত্ত হও তবে তোমার পূর্বের গ্রন্থ যারা পাঠ করে তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, তোমার পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা এসেছে তা আলবত সত্য।

তুমি কখনো সন্দিগ্ধচিত্তের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।” (১০:৯৪)

“এবং যারা আল্লাহর নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করেছে তুমি কখনো তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না; হলে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।" (১০:৯৫)

বিশ্বনবী (সা.)-এর ব্যাপারে যাদের সন্দেহ রয়েছে তাদেরকে উদ্দেশ করে এই আয়াতে বলা হয়েছে, সর্বশেষ রাসূলের দাবি যদি তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে না হয়, এ ব্যাপারে যদি তাদের মনে সন্দেহ জাগে, তাহলে তারা এ ব্যাপারে পূর্ববর্তী ঐশী গ্রন্থ পড়ে দেখতে পারে। সেখানে সর্বশেষ নবীর আগমনের সুসংবাদ স্পষ্ট করেই দেয়া হয়েছে।

এছাড়া পবিত্র কুরআনে বহু প্রচীন সভ্যতা ও সম্প্রদায়ের ঘটনা ও জীবন বৃত্তান্তের বিবরণ রয়েছে।

ইসরাইলের বংশধরদের ব্যাপারেও এখান থেকে অনেক কিছু জানা যাবে। মোট কথা, কুরআনের সত্যতা তোমাদের কাছে প্রমাণিত হবে। এরপরও যদি তোমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আক্রান্তে হও এবং সন্দেহ নিয়েই বসে থাকো তাহলে ক্ষতি তোমাদেরই হবে, কারণ সত্য ও সঠিক পথ গ্রহণের সৌভাগ্য থেকে তোমরাই বঞ্চিত হলে।

দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও সন্দেহ মানুষের স্বাভাবিক প্রকৃতি, এটা হতেই পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই সন্দেহ দূর করার জন্য অধ্যয়ন করতে হবে এবং সন্দেহ দূর করার জন্য কেউ যদি সচেষ্ট না হয়, তাহলে সত্যের ব্যাপারে উদাসীনতা ও সত্য প্রত্যাখ্যান করা একই কথা।

সূরা ইউনুসের ৯৬ ও ৯৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,

  إِنَّ الَّذِينَ حَقَّتْ عَلَيْهِمْ كَلِمَةُ رَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ (96) وَلَوْ جَاءَتْهُمْ كُلُّ آَيَةٍ حَتَّى يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيمَ (97(

"যাদের ব্যাপারে তোমার প্রভূর বিচারফল সাব্যস্ত হয়ে গেছে তারা বিশ্বাস করবে না।” (১০:৯৬)

“তাদের নিকট যদি প্রতিটি ব্যাপারে মুজেযা বা নিদর্শন এসে যায় (তাহলেও তারা বিশ্বাস করবে না) যতক্ষণ না তারা মর্মন্তুদ শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে।" (১০:৯৭)

সত্য উপলব্ধি ও গ্রহণের ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়ার কারণে, মানুষকে তিনটি ভিন্ন দলে বিভক্ত করা হয়েছে। একদল সত্যকে জানে না এবং তা জানার ব্যাপারে সে মোটেও আগ্রহী নয়। আরেক দল সত্যকে না জানলেও সে ব্যাপারে জানার আগ্রহ তার মধ্যে রয়েছে। তৃতীয় আরেকটি দল রয়েছে যারা সত্যকে জানা বা বোঝার পরও তা গ্রহণ করতে আগ্রহী নয়। কেননা এতে করে তার পার্থিব ও বৈষয়িক স্বার্থ ক্ষুন্ন হবার আশঙ্কা রয়েছে।

এ আয়াতে তৃতীয় দলটির কথা বলা হয়েছে। যারা কিনা সত্যকে উপলব্ধির পরও শক্রতা ও বিদ্বেষের কারণে তা মেনে চলতে প্রস্তুত নয়। এদের অন্তর কলুষিত ও পাথরের মত কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে ঈমানের আলো কখনোই এদের প্রভাবিত করবে না। এ ধরনের লোকেরাই অভিশপ্ত এবং তারা ঐশী শাস্তি প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য করতে প্রস্তুত নয়। এদের সম্পর্কে যুক্তি-প্রমাণ বা অলৌকিক বিষয় যতই উপস্থাপন করা হোক না কেন সত্যকে গ্রহণ করার মন মানসিকতা তাদের নেই।

কাজেই আমাদের সমাজে কিছু লোককে যদি ঈমান আনতে না দেখি, তাতে ঐশীগ্রন্থ বা নবুওয়তের সত্যতার ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়ার কোন কারণ নেই। আমাদের বোঝা উচিত এসব লোক ওই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত যারা কিনা বুদ্ধি বিবেক হারিয়ে নির্বোধ হয়ে পড়েছে। কাজেই সত্য বাণী এদের মনের মধ্যে মোটেই রেখাপাত করে না।

পৃথিবীর সকল মানুষই যে সত্যকে গ্রহণ করার সৌভাগ্য লাভ করবে এমন আশা করা ঠিক নয়। কারণ অন্যায়, অবিচার ও নানাবিধ পাপের কারণে অনেক মানুষ সত্যকে গ্রহণ করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে।

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)