আল হাসানাইন (আ.)

সূরা হুদ;(৯ম পর্ব)

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

সূরা হুদ; আয়াত ৩৩-৩৭

সূরা হুদের ৩৩ ও ৩৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

قَالَ إِنَّمَا يَأْتِيكُمْ بِهِ اللَّهُ إِنْ شَاءَ وَمَا أَنْتُمْ بِمُعْجِزِينَ (33) وَلَا يَنْفَعُكُمْ نُصْحِي إِنْ أَرَدْتُ أَنْ أَنْصَحَ لَكُمْ إِنْ كَانَ اللَّهُ يُرِيدُ أَنْ يُغْوِيَكُمْ هُوَ رَبُّكُمْ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

"(অবিশ্বাসী কাফিরদেরকে হযরত) নূহ (আ.) বললেন, আল্লাহ ইচ্ছা করলে তিনিই তোমাদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করবেন এবং তা প্রতিহত করতে তোমরা অক্ষম।” (১১:৩৩)

“যদি আল্লাহ তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে চান তাহলে আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিতে চাইলেও আমার উপদেশ তোমাদের উপকারে আসবে না। তিনিই তোমাদের প্রতিপালক এবং তারই নিকট আমরা প্রত্যাবর্তন করব।”(১১:৩৪)

আগের পর্বে বলা হয়েছে, হযরত নূহ (আ.)এর সম্প্রদায় যখন যুক্তির সামনে টিকতে পারলো না তখন ঔদ্ধত্যের সাথে বলেছিল, আপনি সত্যবাদী হয়ে থাকলে দুনিয়াতেই ঐশী শাস্তির ব্যবস্থা করুন, আমরা দুনিয়াতেই ঐশী শাস্তির নমুনা দেখতে চাই। এর জবাবে হযরত নূহ (আ.) বললেন, শাস্তি বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ব্যবস্থা করা আমার হাতে নেই,এসব সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর হাতে। আমি শুধু তোমাদেরকে এই বলে সতর্ক করতে চাই যে, যদি সত্যিই আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন শাস্তি বা বিপর্যয় নেমে আসে তাহলে তা প্রতিহত করার সামান্য ক্ষমতাও মানুষের নেই। ফলে তাতে তোমাদের ধ্বংস অনিবার্য। তিনি আরো বলেন, পয়গম্বর হিসেবে আমার দায়িত্ব হচ্ছে, মানুষকে সৎ পথে আহ্বান করা এবং আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। দম্ভ বা খামখেয়ালীপনার কারণে মানুষ যদি সত্য দ্বীনকে গ্রহণ না করে, তাতে পয়গম্বরদের করার কিছু নেই।

এই দুই আয়াত থেকে আমরা দু’টি বিষয় উপলদ্ধি করতে পারি-

এক. পয়গম্বরগণ মানুষের মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করেন, তারা অত্যন্ত নম্র ও পরিশীলিত ভাষায় সত্যের দাওয়াত মানুষের কাছে তুলে ধরেন।

দুই. অবিশ্বাসী ও খোদাদ্রোহী কাফিররা বাহ্যত: এই ইহজগতে শাস্তি না পেলে এটা মনে করা ভুল হবে যে, তারা বেঁচে গেছে। বরং এটা মনে রাখা উচিত যে, পরকাল সামনে রয়েছে এবং সেদিন প্রত্যেককে আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে।

সূরা হুদের ৩৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ إِنِ افْتَرَيْتُهُ فَعَلَيَّ إِجْرَامِي وَأَنَا بَرِيءٌ مِمَّا تُجْرِمُونَ

“মুশরিকরা বলে, আপনি নিজে কুরআন রচনা করেছেন, আপনি বলে দিন! আমি যদি এটি রচনা করে থাকি তবে আমিই আমার অপরাধের জন্য দায়ী হব। তোমরা যে অপরাধ করছো তার জন্য আমি দায়ী নই।" (১১:৩৫)

প্রত্যেক নবী রাসূলকে নিজ নিজ যুগে কাফির মুশরিকদের বিরোধীতা ও প্রতিবন্ধকতা ভেদ করে কাজ করতে হয়েছে। কাফির-মুশরিকরা পয়গম্বরদের এত বেশী বিরোধীতা করতো যে, তারা নবীদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও প্রবঞ্চণার অভিযোগও খাড়া করতো। হযরত নূহ (আ.)ও এ ধরনের অপপ্রচারণার সম্মুখীন হয়েছিলেন।

তৎকালীন কাফিররা প্রচার করতো হযরত নূহ (আ.)আল্লাহর নামে যা প্রচার করছে প্রকৃতপক্ষে তা আল্লাহর বাণী নয়। এসবই তার রচিত বাণী। এই আয়াতে এসব অপপ্রচারের জবাবে বলা হয়েছে, পয়গম্বর সম্পর্কে এসব কটু কথা বলে, শিরক বা অংশীবাদকে জায়েজ করা যাবে না। যদি ধরে নেয়া হয় যে, হযরত নূহের দাবি অসত্য, তাহলে এর দায়-দায়িত্ব তারই। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, সত্য প্রত্যাখ্যানের জন্য কাফিরদেরকেই দায়ী থাকতে হবে। গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যানের জন্য পয়গম্বর দায়বদ্ধ নন।

সূরা হুদের ৩৬ ৩৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَأُوحِيَ إِلَى نُوحٍ أَنَّهُ لَنْ يُؤْمِنَ مِنْ قَوْمِكَ إِلَّا مَنْ قَدْ آَمَنَ فَلَا تَبْتَئِسْ بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ (36) وَاصْنَعِ الْفُلْكَ بِأَعْيُنِنَا وَوَحْيِنَا وَلَا تُخَاطِبْنِي فِي الَّذِينَ ظَلَمُوا إِنَّهُمْ مُغْرَقُونَ

"হযরত নূহের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছিল, যারা বিশ্বাস করেছে তারা ব্যতীত তোমার সম্প্রদায়ের অন্য কেউ কখনও বিশ্বাস করবে না। সুতরাং তারা যা করে তার জন্য তুমি দুঃখ করো না।”(১১:৩৬)

“তুমি আমার তত্ত্বাবধানে ও আমার প্রত্যাদেশ অনুযায়ী নৌকা নির্মাণ কর এবং যারা সীমালঙ্ঘন করেছে তাদের সম্পর্কে তুমি আমাকে কিছু বলো না।" (১১:৩৭)

পবিত্র কুরআনের আরো কয়েকটি আয়াত থেকে জানা যায় যে, হযরত নূহ (আ.) প্রায় এক হাজার বছর তার সম্প্রদায়কে একত্ববাদের দাওয়াত দেন। কিন্তু দীর্ঘ এক হাজার বছরে মুষ্টিমেয় কিছু লোক তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুসলমান হয়। এক পর্যায়ে হযরত নূহ (আ.) এর উপর প্রত্যাদেশ হয় যে, আর কেউ সত্য ধর্মের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করবে না এবং অচিরেই এই অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের উপর ঐশী শাস্তি নেমে আসবে। প্রলয়ঙ্করী ঝড় ও বন্যা পৃথিবীকে গ্রাস করবে, যারা হযরত নূহের তৈরি নৌকায় আশ্রয় নিবে তারাই শুধু রক্ষা পাবে। আর বাকীরা মহাপ্লাবনে নিমজ্জিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।

এই আয়াতে ঐ ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে, আল্লাহ পাক মুমিনদেরকে রক্ষার জন্য হযরত নূহকে বড় একটি নৌকা তৈরির জন্য নির্দেশ দিলেন। পাপ ও সত্য ত্যাগের ফলে ঐশী আযাব যখন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে তখন দোয়া আর কাজে আসে না। হযরত নূহ (আ.)এর সময়ও তাই হয়েছে। পাপ ও সত্য প্রত্যাখ্যানের কারণে শাস্তি যখন অনিবার্য হয়ে পড়ে তখন হযরত নূহকে আল্লাহপাক কাফিরদের জন্য দোয়া করতে বারণ করে দেন।

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)