ঈদুল আজহা

বছর ঘুরে আসে ঈদ, আসে ঈদুল আজহা। মুসলিম সমাজে ধর্মীয় উৎসবগুলোর অন্যতম হলো ঈদুল আজহা। প্রতিবছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখ এ উৎসব পালিত হয়। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে গোটা বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান আনন্দঘন পরিবেশে ঈদুল আজহা উদযাপন করে। এদিন মুসলমানরা আনন্দ ও খুশির এক মোহনায় এসে মিলিত হয়। তারা আল্লাহর আদেশ পালনের মাধ্যমে আনন্দ ও পরিতৃপ্তি লাভ করে। ঈদুল আজহার দিন মুসলমানরা একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করে এবং নামাজ শেষে পশু কোরবানি করে। এভাবে ঈদের নামাজ আদায় ও কোরবানির মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুটি লাভের প্রয়াস পায়। ঈদুল ফিতরের আমেজ কাটতে না কাটতেই আমাদের দরজায় এসে কড়া নাড়ে ঈদুল আজহার সওগাত। এই ঈদের বড় কাজ হলো কোরবানি করা।

কোরবানির ফজিলত : নেক আমলগুলোর মধ্যে কোরবানি একটি বিশেষ আমল। এর সঙ্গে জড়িত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অনুভূতি। আল্লাহর ভয়ে এবং ভালোবাসা অর্জনে মুসলমানরা তাঁর এই আদেশ পালন করে। উল্লেখ্য, কোরবানির পশু জবাই করা আল্লাহর মূল চাওয়া নয়, বরং আল্লাহভীতি ও প্রীতিই এখানে মুখ্য বিষয়। আল্লাহ তায়ালা এ প্রসঙ্গে বলেন, 'আল্লাহর কাছে এর গোশত ও রক্ত পৌঁছায় না, পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।' (সুরা হজ, আয়াত ৩৭)। যে কোরবানির সঙ্গে তাকওয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আবেগ জড়িত নেই, আল্লাহর দৃষ্টিতে সেই কোরবানির কোনো মূল্য নেই। তাই আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন, 'অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকিদের কোরবানি কবুল করেন।' (সুরা মায়িদা, আয়াত ২৭)

কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হজরত জায়েদ ইবনে আকরাম (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, 'সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এ কোরবানি কী ? তিনি বললেন, এটা তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত। সাহাবায়ে কেরাম আবার বললেন, এতে আমাদের কী কল্যাণ নিহিত আছে ? তিনি বললেন, এর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে। তাঁরা আবারও জিজ্ঞেস করলেন, বকরির পশমও কি তাই ? জবাবে তিনি বললেন, বকরির প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকি আছে।'

অন্য এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, 'যে মুমিন ব্যক্তি প্রশস্ত হৃদয়ে খুশিমনে সাওয়াবের আশায় কোরবানি করবে, আল্লাহ তায়ালা তার এ কোরবানিকে জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষার জন্য ঢালস্বরূপ বানিয়ে দেবেন। (ইবনে মাজাহ)

কোরবানির শিক্ষা : পবিত্র ঈদুল আজহা প্রতিবছর আমাদের কাছে ঘুরেফিরে আসে। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ পশু কোরবানির মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রত্যাশা করে। এই কোরবানির শিক্ষা কী, তা আমাদের জানা দরকার। মনে রাখতে হবে, কোরবানি কেবল পশু জবেহ করা নয়, কোরবানি হলো নিজের ভেতরের পশুসত্তাকে জবেহ করা। তার মানে মনের সব কুপ্রবৃত্তিকে খতম করা। কোরবানির গোশত পেয়ে গরিব-দুঃখী মানুষ খুশি হয়। কোরবানি করার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর আনুগত্য ও নির্দেশ মানার শিক্ষা গ্রহণ করে। কোরবানির দিন মুসলমানরা একে অপরের সঙ্গে মহামিলনে মিলিত হয়। এদিন ধনী-দরিদ্র কোনো ভেদাভেদ থাকে না। সবাই সাম্য ঐক্য সম্প্রীতি ও সহানুভূতির মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসে। এতে সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও সহমর্মিতার পরিবেশ তৈরি হয়। তাই সবার দরকার কোরবানির যাবতীয় আহকাম মেনে তাকওয়ার মানসিকতা নিয়ে কোরবানি করা। এতে আশা করা যায়, আল্লাহর দরবারে আমাদের কোরবানি কবুল হবে। ফলে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে সমর্থ্য হব।