সূরা হুদ;(২৫তম পর্ব)

সূরা হুদ; আয়াত ১০৮-১১০

সূরা হুদের ১০৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَأَمَّا الَّذِينَ سُعِدُوا فَفِي الْجَنَّةِ خَالِدِينَ فِيهَا مَا دَامَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ إِلَّا مَا شَاءَ رَبُّكَ عَطَاءً غَيْرَ مَجْذُوذٍ

"এবং যারা ভাগ্যবান তারা থাকবে স্বর্গে, সেখানে তারা স্থায়ী হবে ততদিন পর্যন্ত যতদিন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে, যদি না তোমার প্রতিপালক অন্যরূপ ইচ্ছা করেন এক নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।" (১১:১০৮)

এর আগে আলোচনায় এসেছে, আল্লাহতালা মানুষকে দুই দলে বিভক্ত করেছেন। একদল সৌভাগ্যবান আর অপর দলটি হতভাগ্যদের। বলা হয়েছে, সৌভাগ্যবান তারাই যারা বেহেশত বা স্বর্গের অধিবাসী হবে, আর হতভাগাদের ঠিকানা হবে নরক বা জাহান্নাম। একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করলে প্রযোজ্য হবে। আল্লাহতালা ইচ্ছে করলে কোন জাহান্নামীকে নরক থেকে বের করে স্বর্গে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারেন। আবার কোন বেহেশতবাসীকেও নরকের অধিবাসী করতে পারেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ যেটা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা হচ্ছে বেহেশত বা স্বর্গ হবে মুমিনদের অনন্তকালীন আবাস। সেখান থেকে কাউকে কখনো বহিষ্কার করা হবে না। স্বর্গ বা বেহেশত মানুষের প্রাপ্য বা অধিকার নয়। এটি সৎ মানুষের প্রতি মহান আল্লাহর অনুগ্রহ মাত্র। তিনি শুধু তার পছন্দের মানুষকেই বেহেশতে প্রবেশের অনুমতি দিবেন।

সূরা হুদের ১০৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

فَلَا تَكُ فِي مِرْيَةٍ مِمَّا يَعْبُدُ هَؤُلَاءِ مَا يَعْبُدُونَ إِلَّا كَمَا يَعْبُدُ آَبَاؤُهُمْ مِنْ قَبْلُ وَإِنَّا لَمُوَفُّوهُمْ نَصِيبَهُمْ غَيْرَ مَنْقُوصٍ

"সুতরাং (হে পয়গম্বর) তারা যাদের উপাসনা করে আপনি তাদের সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত হবেন না। পূর্বে তাদের পিতৃপুরুষেরা যাদের উপাসনা করতো তারা তাদেরই উপাসনা করে। আমি অবশ্য তাদের প্রাপ্য (শাস্তি) তাদেরকে পুরোপুরিভাবেই দেব-কিছুমাত্র কম দেব না।" (১১:১০৯)

সংশয়, আত্মবিশ্বাস, দোদুল্যমানতা এসব মানুষের স্বভাবজাত বা প্রকৃতিগত অভ্যাস। এই স্বভাবজাত কারণে মুমিন বিশ্বাসীরা অনেক সময় পরিবেশ-পারিপার্শ্বিক অবস্থার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন, তাদের মনে নিজের বিশ্বাস ও অনুসৃত পথ সম্পর্কে সংশয় সৃষ্টি হতে পারে। পরিণতিতে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের ব্যাপারে এক ধরনের উদাসীনতা দেখা দিতে পারে। এ বিষয়টির উল্লেখ করে এই আয়াতে বলা হয়েছে, মুশরিক-কাফিররা যে ভুল পথে রয়েছে সে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করা উচিত নয়।

এখানে পয়গম্বরকে উদ্দেশ্য করে বলার অর্থ মুসলমানদেরকে শিক্ষা দেয়া। পয়গম্বরদের মনে এ ধরনের কোনো সংশয় সৃষ্টি হয় না। তাদের সামনে সত্য সবসময় উজ্জ্বল। তবে, আকিদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রে মানুষের মনে একবার দু'বার সন্দেহ বা সংশয়ের উদ্রেক হতে পারে। এটা ভালো এবং স্বাভাবিক। এ ধরনের সংশয় তৈরি হলে তা দ্রুত অপসারণ করে স্থির বিশ্বাসে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। যখন তার কাছে বিষয়টি স্বচ্ছ বা স্পষ্ট হয়ে উঠবে তখন সেটিকে দৃঢ় মনে গ্রহণ করা উচিত। কোনো বিষয়ে সারাজীবন সংশয়ী বা দোদুল্যমান থাকা ঠিক নয়। সব ক্ষেত্রে পূর্ব পুরুষদেরকে অনুসরণ করা ঠিক নয়। প্রত্যেক মানুষই বিবেক-বুদ্ধির অধিকারী। ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে নিজের বিবেক-বুদ্ধির মাধ্যমে সঠিক পথ বেছে নিতে হবে।

এই সূরার ১১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন-

وَلَقَدْ آَتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ فَاخْتُلِفَ فِيهِ وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِنْ رَبِّكَ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ وَإِنَّهُمْ لَفِي شَكٍّ مِنْهُ مُرِيبٍ

“আমি মুসা (আ.)কে গ্রন্থ দিয়েছিলাম অতঃপর এতে মতভেদ ঘটেছিল। (কাফিরদেরকে সুযোগ দেয়ার বিষয়ে) তোমার প্রতিপালকের নিয়ম যদি পূর্ব নির্ধারিত না হত তাহলে (পৃথিবীতেই) তাদের চূড়ান্ত ফয়সালা হয়ে যেত। তারা অবশ্যই এর সম্বন্ধে বিভ্রান্তিকর সন্দেহে ছিল।” (১১:১১০)

মুমিন বিশ্বাসীদেরকে সত্যের ব্যাপারে অহেতুক বা অযৌক্তিক সন্দেহ না করার আহ্বান জানানোর পর এই আয়াতে বলা হয়েছে, পবিত্র কুরআনের সত্যতার ব্যাপারে যেমন অযৌক্তিক সন্দেহের সৃষ্টি করা হচ্ছে। তেমনি হযরত মুসা (আ.)এর কিছু অনুসারী তাওরাতের সত্যতার ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হয়ে পড়েছিল। তবে যৌক্তিক পন্থায় কোন বিষয়ে সন্দেহ সংশয় পোষণ করা খারাপ কিছু নয়, যদি সত্যকে আবিস্কারের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে।

যাইহোক, ঐশী গ্রন্থ বা ঐশী বিধানের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি করা মহাপাপ, এর শাস্তি অত্যন্ত কঠিন। আল্লাহতালা এ ধরনের পাপের শাস্তি পরকালের জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন এবং সাধারণত এ জন্য পার্থিব জগতে কোন শাস্তি দেন না।