আল হাসানাইন (আ.)

সূরা ইউসুফ; (১২তম পর্ব)

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

সূরা ইউসুফ; আয়াত ৩৭-৪০

সূরা ইউসুফের ৩৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,

قَالَ لَا يَأْتِيكُمَا طَعَامٌ تُرْزَقَانِهِ إِلَّا نَبَّأْتُكُمَا بِتَأْوِيلِهِ قَبْلَ أَنْ يَأْتِيَكُمَا ذَلِكُمَا مِمَّا عَلَّمَنِي رَبِّي إِنِّي تَرَكْتُ مِلَّةَ قَوْمٍ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَهُمْ بِالْآَخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ

“ইউসুফ বলল,তোমাদের যে খাদ্য দেয়া হয় তা আসার পূর্বে আমি তোমাদের স্বপ্নে জানিয়ে দেব৷ আমি যা তোমাদের বলবো তা আমার প্রতিপালক আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে বলবো ৷ যে সম্প্রদায় আল্লাহকে বিশ্বাস করে না ও পরকালে অবিশ্বাসী আমি অবশ্যই তাদের মতবাদ বর্জন করেছি।” (১২:৩৭)

এর আগের আয়াতে বলা হয়েছে যে, ইউসুফের সঙ্গে রাজ দরবারের অপর দুই কর্মচারীও ভিন্ন অপরাধে কারান্তরিত হয় ৷ ঐ দুই যুবক দু’টি স্বপ্ন দেখে এবং হযরত ইউসুফের কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চায়৷ এই আয়াতে বলা হচ্ছে, হযরত ইউসুফ যুবকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বপ্নের যথার্থ ব্যাখ্যা দেয়ার আস্বাস দেন৷ এরপর তিনি আল্লাহর একত্ববাদ এবং শিরক ও কুফ্‌রের বিষয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ৷ তিনি বলেন, সৃষ্টিকর্তা আমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেয়ার যে যোগ্যতা দিয়েছেন তা এজন্য যে,আমি আমার সম্প্রদায়ের ধর্ম বিশ্বাস অর্থাৎ মুর্তি পুজা পরিত্যাগ করে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং তারই এবাদত ও উপাসনা করি৷ এখানে লক্ষ্য করার মত বিষয় হচ্ছে, হযরত ইউসুফ(আ.) জানতেন যে এই যুবকও একত্ববাদী নয় তারা ও মুশরিক বা অংশীবাদী৷ এরপরও তিনি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন নি যে, আল্লাহর উপর তোমাদের ঈমান নেই৷ তিনি বলেছেন, আমি আমার সম্প্রদায়ের ধর্মমত পরিত্যাগ করেছি৷ অংশীবাদ বা শিরক ও কুফরী মানুষের অন্তরে কালো প্রলেপ তৈরি করে যা আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে কাজ করে৷ আর যে ব্যক্তি প্রকৃতই শিরক ও কুফর থেকে মুক্ত হতে সক্ষম হয় তার অন্তর আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠে৷ এ অবস্থায় তার দিব্য দৃষ্টি খুলে যায় ৷ সে তখন অতীন্দ্রিয় বিষয়াদি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় ৷

এই সূরার ৩৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَاتَّبَعْتُ مِلَّةَ آَبَائِي إِبْرَاهِيمَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ مَا كَانَ لَنَا أَنْ نُشْرِكَ بِاللَّهِ مِنْ شَيْءٍ ذَلِكَ مِنْ فَضْلِ اللَّهِ عَلَيْنَا وَعَلَى النَّاسِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُونَ

"আমি আমার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম, ইসহাক এবং ইয়াকুবের মতবাদ অনুসরণ করি, আল্লাহর সঙ্গে কোনো বস্তুকে অংশী করা আমাদের কাজ নয়, এটা আমাদের ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।" (১২:৩৮)

হযরত ইউসুফ(আ.) বললেন, আমি আমার ইচছার বশবর্তী হয়ে বা আবেগ তাড়িত হয়ে পৈতৃক ধর্মমত পরিত্যাগ করিনি বরং আমি হযরত ইব্রাহীম, ইসহাকের মত মহান পয়গম্বরদের অনুসৃত পথ অনুসরণ করেছি মাত্র ৷ এই পয়গম্বররা হচ্ছেন আমার পূর্ব পুরুষ৷ কাজেই তাদের অনুসৃত সত্যপথ বর্জন করে সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পৌত্তলিক হওয়া আমার পক্ষে শোভা পায় না ৷ এই পয়গম্বরগণ এবং তাদের রেখে যাওয়া আদর্শ সমগ্র মানব জাতির জন্য আদর্শ, অথচ অনেকেই তা উপলব্ধি করে না ৷ পয়গম্বরগণ মানুষকে সত্য ও সরল পথ প্রদর্শন করেছেন ৷ মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে পরিপূর্ণতার দিকে পরিচালিত করেছেন, কাজেই পয়গম্বরগণ হচ্ছেন আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব জাতির জন্য বিশেষ অনুগ্রহ । যারা পয়গম্বরদের আদর্শ ও অনুসৃত পথ অবলম্বন করতে সক্ষম হয়েছেন, তারাই সফলকাম ও সৌভাগ্যবান ৷

এই সূরার ৩৯ ও ৪০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ أَأَرْبَابٌ مُتَفَرِّقُونَ خَيْرٌ أَمِ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ (39) مَا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِهِ إِلَّا أَسْمَاءً سَمَّيْتُمُوهَا أَنْتُمْ وَآَبَاؤُكُمْ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ

"হে কারা সঙ্গীদ্বয়! ভিন্ন ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয়, নাকি এক পরাক্রমশালী আল্লাহ?(১২:৩৯)

“তাকে ছেড়ে তোমরা কতগুলো নামের উপাসনা করছো- যা তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষ নাম করণ করেছ৷ এগুলোর কোনো প্রমাণ আল্লাহ পাঠাননি, বিধান দেবার অধিকার কেবল আল্লাহরই ৷ তিনি আদেশ দিয়েছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা না করতে, এটাই সরল ধর্ম কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা অবগত নয়৷" (১২:৪০)

এরপর হযরত ইউসুফ (আ.) তার ওই দুই কারা সঙ্গীকে বললেন, তোমরা নিজেরাই তাওহীদ ও শিরক অর্থাৎ একত্ববাদ ও বহুত্বের মধ্যে তুলনা করে দেখ ৷ বহুত্ববাদীরা একেক বিষয়ের জন্য একেক দেবতার আরাধনা করছে ৷ আর ঈমানদাররা একজন পরাক্রমশালী আল্লাহর উপাসনা করছে ৷ তারই সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করছে-এর মধ্যে কোনোটা উত্তম? মুশরিকরা পানির দেবতা, বাতাসের দেবতা, বৃষ্টির দেবতা এ ধরনের বহু দেবতার উপাসনা করে৷ আসলে এসবের কোনো ভিত্তি নেই, নাম সর্বস্ব এসব দেবতা কাল্পনিক এবং মানুষেরই সৃষ্টি৷ ঐশী বিধানে বলা হয়েছে,একমাত্র আল্লাহই হচ্ছেন সৃষ্টিকর্তা এবং বিশ্ব প্রতিপালক৷ মানুষ কেবল তারই উপাসনা করবে এবং তারই সামনে মাথা নত করবে৷ ধর্মীয় বিশ্বাস যুক্তি নির্ভর এবং তা জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত ৷ পূর্ব পুরুষের অনুসরণ ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তি হতে পারে না ৷

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)