মার্কিন নও মুসলিম ম্যালিসা-কার্টার

আল হোসাইন (আ.)সম্প্রতি ভ্যাটিকানের গির্জা জানিয়েছে, বিশ্বের মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। পশ্চিমা সরকারগুলোর মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে খারাপ ধারণা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা সেখানকার জনগণকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার অন্যতম কারণ। এভাবে শত বাধা সত্ত্বেও ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়ছে অন্য ধর্মাবলম্বীদের মাঝে দ্রুত গতিতে। মার্কিন নও-মুসলিম ম্যালিসা কার্টার এইসব সৌভাগ্যবানদের মধ্যে অন্যতম।  কার্টার এ প্রসঙ্গে বলেছেন,"বর্তমানে ইসলাম খুব দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। লক্ষণীয় বিষয় হল, যারা উচ্চ শিক্ষিত ও বিশেষজ্ঞ তারাই এ ধর্মের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছেন। কারণ, ইসলামে জ্ঞান অর্জন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানকে ব্যাপক গুরুত্ব দেয়া হয় এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান ও  ইসলামের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই। পশ্চিমারা ইসলাম সম্পর্কে যেসব মিথ্যাচার বা প্রচারণা চালাচ্ছে বাস্তব অবস্থা তার পুরোপুরি বিপরীত। পশ্চিমাদের দাবীর বিপরীতে মুসলমানদের চিন্তাধারা খুবই উন্নত। ইসলামের যে আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও সম্পদ রয়েছে তা এ ধর্মের বিস্তার এবং প্রচার-প্রসারের পথ খুলতে সক্ষম।"
 
নও-মুসলিম ম্যালিসা কার্টার হলিউডের গবেষক এবং চলচ্চিত্র পরিচালক। ফার্সি ভাষার প্রতি আকর্ষণ তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে এবং এর ফলে তিনি ইসলামকে জানতে পেরেছেন। ম্যালিসা এ প্রসঙ্গে বলেছেন,"মুসলমান হওয়ার আগে আমি ফার্সি ভাষা সম্পর্কে পড়াশুনা করছিলেন। ইরান ও এর সংস্কৃতির দিকে আমি দারুণভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলাম। আমি শেখ সাদী, মাওলানা রুমী ও হাফিজের বই পড়তাম। এই মহান ব্যক্তিদের কবিতাগুলোর সুবাদে ইসলাম সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা অর্জন করেছিলাম। এরপর থেকে ইসলামের ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক বইগুলো পড়ে এ ধর্ম সম্পর্কে আরো জানতে সক্ষম হই। পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যাগুলো আমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় ও অসাধারণ। আমেরিকায় আমাদের কাছে এমন উন্নত ও পূর্ণাঙ্গ আদর্শস্থানীয় কিছু নেই যা মানুষকে উদ্দীপ্ত করে এবং মানুষের আত্মাকে ঔজ্জ্বল্য দান করে। এরপর ইরানে এলাম। সেখানে অনেক ভাল ও আকর্ষণীয় বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হলাম। অনেকেই আমাকে কয়েক ঘণ্টা ধরে খুব ভালভাবে সেইসব বইয়ের বক্তব্যের ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। এভাবে ইসলামকে খুবই মহান ও উচ্চতর শিক্ষায় ভরপুর ধর্ম হিসেবে দেখতে পেলাম। এমন উচ্চতর শিক্ষা ও মহত্ত্ব অন্য কোনো ধর্মে দেখতে পাইনি। তাই ইসলামকেই আমার ধর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছি।"
 
 মুসলমান হওয়ার পর মার্কিন নও-মুসলিম ম্যালিসা কার্টার তার বন্ধু ও পরিচিত সমাজের অনেকেরই বিরাগভাজন হন। কিন্তু তার পরিবার একটি ধর্মীয় পরিবার হওয়ায় ও তার বাবা একজন সত খ্রিস্টান পাদ্রি হওয়ায় ম্যালিসাকে পরিবারের বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়নি। বরং তার বাবা পবিত্র কুরআন পড়ে দেখেন। কুরআন পড়ে তিনি বলেছিলেন, "আমি আমার ধর্মীয় বিশ্বাস ও ইসলামের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখছি না এবং আমাদের মধ্যে কোনো সংঘাত বা দ্বন্দ্বের অবকাশ নেই।"
 
 আযানের মধুর সুর ও এর তৌহিদি আহ্বানের উচ্চ মানের অর্থ দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে ম্যালিসাকে। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন,
"দুবাই সফরে এসে প্রথম যখন আযান শুনি তখন আমার চোখ অশ্রুতে ভরে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল আমার আত্মার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে স্বর্গীয় আলো। সেই দিনটিতে সারাক্ষণ আমি আল্লাহকে স্মরণ করেছি, তাঁকে নিয়ে ভেবেছি। আযান ও নামাজ ভুলো-মনা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় স্রস্টার কথা। আল্লাহ তো তার সৃষ্টিকে চেনেন, তিনি জানেন আমাদের কি দরকার। তাই যা যা আমাদের তথা মানুষের দরকার তার সব ব্যবস্থা তিনি রেখেছেন ইসলামের মধ্যে যাতে আমরা সঠিক পথে অগ্রসর হই।"
 
ইসলাম সবচেয়ে জ্ঞান-বান্ধব ধর্ম। জ্ঞান অর্জনের জন্য একমাত্র এ ধর্মই মানুষকে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দিয়েছে। ইসলাম মনে করে মানুষের জ্ঞান যত বেশি বাড়বে ততই সে আল্লাহ সম্পর্কে বেশি সচেতন হবে। ইসলাম ধর্ম ও জ্ঞানের মধ্যে গভীর সম্পর্কের কথা বুঝতে পেরে অভিভূত হয়েছেন মার্কিন নওমুসলিম ম্যালিসা কার্টার। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন,
 
"ইসলাম জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ধর্ম। ইসলামের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগে আমি ভাবতাম ধর্ম মানে কেবলই আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখা। কিন্তু ইসলামের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর আমার সামনে এক নতুন জগত খুলে গেল। সব কিছুই এমনকি পদার্থ বিদ্যা,রসায়ন ও জীববিদ্যা-এসবই আমার কাছে ধর্মের রঙ্গে ফুটে উঠল। আমার দৃষ্টিতে ইসলাম খুবই যুক্তি-ভিত্তিক ধর্ম এবং তা মানুষের জীবনের সব দিক ও বিভাগের দিক নির্দেশনা দেয়। ইসলাম সম্পর্কে একটা বড় ভুল ও অসত্য যে ধারণা ইসলাম-বিদ্বেষী মহল যুগে যুগে প্রচারের চেষ্টা করেছে, তা হল এ ধর্ম তরবারির জোরে প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু  সত্য-পিয়াসি মার্কিন জনগণসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের অমুসলিম জনগণের মধ্যে যারা সত্য-সন্ধানী তাদের কাছে ইসলামের সার্বজনীন আবেদনের সৌন্দর্য আর ঢাকা থাকছে না। তারা কিছুটা জ্ঞান-গবেষণা ও ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি করেই এটা বুঝতে পারছেন যে, ইসলাম তরবারির জোরে প্রচারিত হয়নি,বরং ইসলামের উচ্চমানের শিক্ষা ও বিপ্লবী চিন্তা-চেতনাই মানুষকে এ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করছে।"
 
মার্কিন নও মুসলিম ম্যালিসা কার্টারের মতে, ইসলাম যৌক্তিক ধর্ম হওয়ায় এ ধর্মের বক্তব্যগুলো যদি যথাযথভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরা হয় তাহলে মানুষ খুব সহজেই এ ধর্ম গ্রহণ করবে। তিনি বলেছেন,"আমার এক বন্ধু ছিল যে ইসলাম সম্পর্কে বিষাক্ত প্রচারণায় মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। ফলে সে ইসলামের প্রতি প্রবল ঘৃণা উদগীরণ করে কথা বলত। আমি তার কাছে হযরত আলী (আ.)'র বক্তৃতা ও চিঠির সংকলন হিসেবে খ্যাত বই নাহজুল বালাঘা পড়তে দিলে সে কিছু দিন পরে এসে আমার কাছে মন্তব্য করে যে, আলী এমন এক মহান ব্যক্তিত্ব যে তাঁর কোনো তুলনা হয় না এবং তাঁর সঙ্গে তুলনা করার মত কেউ নেই।"
 
যে কোনো সমাজের অগ্রগতির জন্য একজন আদর্শ ও সত নেতা প্রয়োজন। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বর্তমান নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানার পর তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে মার্কিন নওমুসলিম ম্যালিসা কার্টার বলেছেন,   
 
 আমি ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে খুব শ্রদ্ধা করি। তিনি জনগণকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যপানে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করছেন ও ওই লক্ষ্যের ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করছেন। বর্তমানে ইসলামী আন্দোলনগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল-স্ট্রিট আন্দোলনের সমস্যা হল, ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতার মত কোনো নেতা তাদের নেই যিনি এ আন্দোলনগুলোকে পথনির্দেশনা দিতে সক্ষম।
 
 মার্কিন নও মুসলিম ম্যালিসা কার্টারের স্বপ্ন হল মৃত্যুর আগে কিছু ভাল ছায়াছবি নির্মাণ করে যাওয়া যার মাধ্যমে ইসলামকে মানুষের কাছে যথাযথভাবে তুলে ধরা যায় ও এভাবে ইসলামের প্রচার-প্রসার ঘটানো যায়। ইসলামের চিন্তাধারা যে অনেক উন্নত তা তুলে ধরে তিনি ইসলামের বিরুদ্ধে হলিউডের আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে চান।