সূরা ইউসুফ; (২০তম পর্ব)

সূরা ইউসুফ; আয়াত ৬৯-৭৩

সূরা ইউসুফের ৬৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَلَمَّا دَخَلُوا عَلَى يُوسُفَ آَوَى إِلَيْهِ أَخَاهُ قَالَ إِنِّي أَنَا أَخُوكَ فَلَا تَبْتَئِسْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

“যখন তারা ইউসুফের কাছে উপস্থিত হলো তখন ইউসুফ তার সহোদরকে (বেনইয়ামিন) নিজের কাছে রাখলো এবং বলল, আমিই তোমার সহোদর। সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য দুঃখ করো না।" (১২:৬৯)

হযরত ইয়াকুব (আ.) শেষ পর্যন্ত ছেলেদের প্রস্তাব মেনে নেন এবং কনিষ্ঠ পুত্র বেনইয়ামিনকে খাদ্য সংগ্রহের জন্য বৈমাত্রেয় ভাইদের সঙ্গে মিশরে পাঠাতে সম্মত হন। আগের পর্বে এ পর্যন্ত আলোচনা হয়েছে।

৬৯ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে, মিশরে পৌঁছার পর সব ভাইয়েরা যখন হযরত ইউসুফ (আ.) এর দরবারে উপস্থিত হলো তখন তিনি কৌশলে বেনইয়ামিনকে ভাইদের কাছ থেকে আলাদা করলেন এবং নিজের পরিচয় দিলেন। তিনি বেনইয়ামিনকে অভয় দিয়ে বললেন, আমিই তোমার সহোদর ভাই ইউসুফ। কাজেই এখন থেকে তোমার আর কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তিনি বেনইয়ামিনকে নিজের সঙ্গে রাখার সিদ্ধান্ত নেন, বেনইয়ামিনও সানন্দে হযরত ইউসুফের এই প্রস্তাবে সম্মত হন।

ঐশী ধর্মে মিথ্যাচারকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাই বলে সব সত্যই যে ব্যক্ত করা জরুরি এমনটিও নয়। ইউসুফ (আ.) এর এই ঘটনায় আমরা দেখতে পাই তিনি ভাইদের কাছে নিজের পরিচয় গোপন রাখলেন এবং নির্দিষ্ট সময়ে নিজের পরিচয় প্রকাশ করলেন।

এ সূরার ৭০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

فَلَمَّا جَهَّزَهُمْ بِجَهَازِهِمْ جَعَلَ السِّقَايَةَ فِي رَحْلِ أَخِيهِ ثُمَّ أَذَّنَ مُؤَذِّنٌ أَيَّتُهَا الْعِيرُ إِنَّكُمْ لَسَارِقُونَ

"অতএব, হযরত ইউসুফ যখন তাদের রসদপত্র প্রস্তুত করে দিলেন, তখন (মূল্যবান) পানপাত্র আপন ভাইয়ের (বেনইয়ামিন) রসদের মধ্যে রেখে দিলেন। অতঃপর এক ঘোষক ডেকে বলল, হে যাত্রীদল ! তোমরা নিশ্চয়ই চোর।" (১২:৭০)

হযরত ইউসুফ (আ.) ছোট ভাই বেনইয়ামিনকে নিজের কাছে রেখে দেয়ার জন্য পরিকল্পনা আঁটলেন, যাতে তার বৈমাত্রেয় ভাইয়েরা পরবর্তী বছর বাবা ও পরিবারের অন্যদেরকে নিয়ে আসতে বাধ্য হয়। তিনি এই পরিকল্পনার কথা সঙ্গোপনে বেনইয়ামিনকেও অবহিত করলেন এবং আগের বারের মত গমের মূল্যও ভাইদের রসদের মধ্যে রেখে দিলেন। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী দরবারের মূল্যবান পানপাত্র বেনইয়ামিনের রসদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন। রাজ কর্মচারীরা এই রহস্যের কারণ সম্পর্কে অবহিত ছিল না, তাই পানপাত্র খোয়া যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা আগন্তুক যাত্রীদলের রসদের মধ্যে তার অনুসন্ধান শুরু করে এবং বেনইয়ামিনের রসদের মধ্যে তা পাওয়া যাওয়ার পর তারা তাকে চোর হিসেবে সাব্যস্ত করে।

কোনো মহৎ কাজের জন্য কৃত্রিম পরিস্থিতি বা নাটকীয় পরিকল্পনা তৈরি করা অবৈধ নয় তবে লক্ষ্য রাখতে হবে এতে কেউ যেন অন্যায় আচরণের শিকার না হয়।

এ সূরার ৭১ ও ৭২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

قَالُوا وَأَقْبَلُوا عَلَيْهِمْ مَاذَا تَفْقِدُونَ (71) قَالُوا نَفْقِدُ صُوَاعَ الْمَلِكِ وَلِمَنْ جَاءَ بِهِ حِمْلُ بَعِيرٍ وَأَنَا بِهِ زَعِيمٌ

“তারা তাদের দিকে (রাজ কর্মচারীদের) চেয়ে বলল, তোমরা কি হারিয়েছো?” (১২:৭১)

“তারা বলল, আমরা রাজার পানপাত্র হারিয়েছি। রাজা বলেছেন, যে তা এনে দেবে সে এক উট বোঝাই মাল পাবে এবং আমি তার জামিন।" (১২:৭২)

রাজ কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারলো, পান পাত্রটি পাওয়া যাচ্ছে না তখনই তারা আগন্তুকদের মালপত্রে তল্লাশী শুরু করল। হযরত ইউসুফও তাদেরকে এ কাজে উৎসাহিত করার জন্য বললেন, যে তা খুঁজে পাবে তাকে এক উট বোঝাই মাল উপহার দেয়া হবে।

এই সূরার ৭৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

قَالُوا تَاللَّهِ لَقَدْ عَلِمْتُمْ مَا جِئْنَا لِنُفْسِدَ فِي الْأَرْضِ وَمَا كُنَّا سَارِقِينَ

"তারা বলল, আল্লাহর শপথ! তোমরা তো জানো, আমরা এদেশে দুষ্কৃতি করতে আসিনি এবং আমরা কখনো চোর ছিলাম না।" (১২:৭৩)

হযরত ইউসুফের ভাইয়েরা যখন রাজ কর্মচারিদের চাহনি দেখে বুঝতে পারলো যে, তাদেরকে চোর ভাবা হচ্ছে, তখন তারা আত্ম-রক্ষার্থে বলতে লাগলো যে, তোমরা বিশ্বাস কর, আমরা এটা করিনি। আমরা তো এর আগেও মিশরে এসেছি কিন্তু এ ধরনের কাজ তো আমাদের দ্বারা সংঘটিত হয়নি।