গিবনের চোখে কুরআন, বিশ্বনবী, আলী ও হুসাইন (আ) এবং ইহুদি-নৃশংসতা

প্রখ্যাত ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ও সংসদ সদস্য এডওয়ার্ড গিবন

আজ হতে ২৮০ বছর আগে ১৭৩৭ সালের ২৭ই এপ্রিল প্রখ্যাত ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ও সংসদ সদস্য এডওয়ার্ড গিবন জন্ম নিয়েছিলেন।
গিবনের লেখা ‘রোমান সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতনের ইতিহাস’ শীর্ষক বইটি প্রামাণ্য তথ্য, নিরপেক্ষতা ও চমৎকার ভাষার জন্য ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। এ বইয়ে তিনি প্রচলিত তথা বিকৃত হয়ে-পড়া খ্রিস্ট ও ইহুদি ধর্মের তীব্র সমালোচনা করেছেন। গিবন রোমান সভ্যতার উত্থান ও পতনের প্রেক্ষাপটে পশ্চিমা সভ্যতা, ইসলামের বিস্তার এবং মোঙ্গলদের হামলার গতিধারার এক আকর্ষণীয় চিত্রময় বর্ণনা তুলে ধরেছেন তার এ বইয়ে।
গিবন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) সম্পর্কে লিখেছেন:
"তিনি বিশ্বাসীদের মধ্যে দানশীনতা ও বন্ধুত্বের প্রেরণা জাগিয়ে তুলেছিলেন এবং তাদের মধ্যে সামাজিক নানা গুণ চর্চার ওপর জোর দেন আর প্রতিশোধের আগুন জ্বালানোর এবং বিধবা ও এতিমদের নিপীড়নের প্রথা দূর করেন।”
নবীর (সা) যুগ থেকে পবিত্র কুরআনের অবিকৃত থাকার অলৌকিক ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে গিবন বলেন: "এটা মুহাম্মাদের ধর্মের প্রচারণা নয়, বরং তার ধর্মের স্থায়িত্বের নিদর্শন যা আমাদের বিস্মিত হতে বাধ্য করে যে যা তিনি মক্কা ও মদীনায় লিপিবদ্ধ করিয়ে রেখেছিলেন তা ১২০০ বছর পরও পুরোপুরি অবিকৃত রয়েছে ভারতীয় ও আফ্রিকান এবং তুরস্কের ধর্মান্তরিত মানুষের মাধ্যমে। ”
হযরত আলী (আ) সম্পর্কে গিবন লিখেছেন,'আলীর গুণ ও উদ্দীপনাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি অন্য কোনো মুসলমান। তাঁর মধ্যে ছিল কবি, সৈনিক, সাধক বা দরবেশের সমন্বয়। তাঁর প্রজ্ঞা আজও নৈতিক ও ধর্মীয় উপদেশমালার বইয়ে অমর হয়ে আছে। কথার অথবা তরবারির যুদ্ধে প্রত্যেক শত্রু তাঁর বাগ্মিতা ও বীরত্বের কাছে নতজানু হয়েছে। ইসলাম প্রচারের প্রথম ঘণ্টাটি থেকে রাসুলকে দাফনের শেষ পর্বটি সম্পন্ন করা পর্যন্ত তিনি কখনও রাসুলের সঙ্গ পরিত্যাগ করেননি, আর এই মহানুভব বন্ধুকে নিজের ভাই, প্রতিনিধি বা উত্তরসূরি এবং তাঁকে মুসা নবীর ভাইয়ের মতই নিজের ক্ষেত্রেও আরেক হারুন বলে সম্বোধন করতে মহা-আনন্দ বা পুলক অনুভব করতেন রাসুল।'
কারবালার মর্ম-বিদারী ঘটনা সম্পর্কে গিবন লিখেছেন, 'সেই সুদূর অতীতের সেই পরিবেশে ইমাম হুসাইনের মৃত্যুর করুণ দৃশ্য পাষাণতম পাঠকের হৃদয়েও জাগিয়ে তোলে সহানুভূতি।'
খ্রিস্ট ধর্মের সমালোচনা করে তিনি লিখেছেন, ‘খ্রিস্ট ধর্ম যেমন পৌত্তলিকতাকে জয় করেছে, তেমনি এটাও সমান সত্য যে এ ধর্ম পথভ্রষ্ট হয়েছে পৌত্তলিকতার মাধ্যমে।’
ইহুদিদের সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি আরও খোলাখুলিভাবে লিখেছেন, ‘ইহুদিদের বীভৎস নৃশংসতার বিবরণ শুনে মানবতা মর্মাহত ও শোকাহত হয়। তারা মিশরে, সাইপ্রাসে এবং সাইরেনের শহরগুলোতে যেসব বর্বর আচরণ করেছে তা সেইসব নৃশংসতার অংশ। এইসব শহরে স্থানীয় নিরপরাধ অধিবাসীদের সঙ্গে বন্ধুত্বের ভান করেই তারা বসবাস করত।'
গিবন তার বইয়ের পাদটীকায় লিখেছেন, ‘সাইরিনে ইহুদিরা হত্যা করেছিল দুই লাখ গ্রিককে। সাইপ্রাসে ইহুদিরা হত্যা করেছিল দুই লাখ ৪০ হাজার ব্যক্তিকে। মিশরেও তারা হত্যা করেছিল বিপুল সংখ্যক মানুষকে। বিজয়-মদমত্ত ইহুদিরা খেয়েছে মানুষের মাংস, চুষেছে রক্ত এবং মানুষের নাড়িভুঁড়িকে মালার মত করে শরীরে ঝুলিয়েছে।’ (সূত্র:পার্সটুডে)