সূরা ইউসুফ; (২৬তম পর্ব)

সূরা ইউসুফ; আয়াত ৯৩-৯৫

সূরা ইউসুফের ৯৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

اذْهَبُوا بِقَمِيصِي هَذَا فَأَلْقُوهُ عَلَى وَجْهِ أَبِي يَأْتِ بَصِيرًا وَأْتُونِي بِأَهْلِكُمْ أَجْمَعِينَ

“তোমরা আমার এ জামাটি নিয়ে যাও এবং তা আমার পিতার মুখমণ্ডলের ওপর রেখো, তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন। এরপর তোমাদের পরিবারের সবাইকে আমার নিকট নিয়ে এসো।" (১২:৯৩)

আগের আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে যে, বৈমাত্রেয় ভাইয়েরা হযরত ইউসুফ (আ.) কে চিনতে পেরে তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। হযরত ইউসুফ (আ.) এবার প্রতিশোধ নিতে পারে এই আশঙ্কায় তারা ভীষণভাবে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু হযরত ইউসুফ (আ.) অত্যন্ত বিনম্রভাবে তাদের সঙ্গে আচরণ করলেন, তাদেরকে আলিঙ্গন করলেন এবং তাদের পাপ মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন।

হযরত ইউসুফের এমন আচরণে তারা বিমুগ্ধ এবং আশ্বস্ত হলো। এরপর তারা পিতার অবস্থা সম্পর্কে খুলে বলল। পিতা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন এটা শোনার পর হযরত ইউসুফ নিজের একটি জামা দিয়ে বললেন, এটা বাবার চোখের উপর রাখলে তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন। এরপর পরিবারের সবকে নিয়ে আসার জন্য তিনি ভাইদেরকে পাঠিয়ে দেন।

এখানে একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো,হযরত ইয়াকুব (আ.) নিজেও আল্লাহর নবী ছিলেন,সুস্থতার জন্য তার দোয়াই যথেষ্ট হতো কিন্তু এক্ষেত্রে তিনি হযরত ইউসুফ (আ.) এর জামার স্পর্শে আরোগ্য লাভ করলেন। এ থেকে বোঝা যায় যে,নবী-রাসূল এবং ওলী-আউলিয়ারা নিজেরা নিজেরা যেমন মানুষের জন্য কল্যাণকর, তেমনি তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্রও কল্যাণ ও মঙ্গল বয়ে আনতে পারে। কাজেই ওলি-আউলিয়াদের ব্যবহৃত কোনো জিনিস তাবার্‌রুক হিসেবে গ্রহণ করা অবৈধ কিছু নয়।

এই সূরার ৯৪ ও ৯৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَلَمَّا فَصَلَتِ الْعِيرُ قَالَ أَبُوهُمْ إِنِّي لَأَجِدُ رِيحَ يُوسُفَ لَوْلَا أَنْ تُفَنِّدُونِ (94) قَالُوا تَاللَّهِ إِنَّكَ لَفِي ضَلَالِكَ الْقَدِيمِ

“অতঃপর যাত্রীদল যখন ( মিশর থেকে ) বেরিয়ে পড়ল তখন তাদের পিতা বলল, তোমরা যদি আমাকে অপ্রকৃতিস্থ মনে না কর,তবে আমি বলব যে,আমি ইউসুফের ঘ্রাণ পাচ্ছি।” (১২:৯৪)

“উপস্থিত ব্যক্তিগণ বলল, আল্লাহর শপথ! আপনি তো আপনার পূর্ব বিভ্রান্তিতেই রয়েছেন।"  (১২:৯৫)

পিতা-পুত্রের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক এতো শক্তিশালী ছিল যে,হযরত ইউসুফের ভাইয়েরা যখন তার পরিধানের জামা সঙ্গে নিয়ে মিশর ত্যাগ করল,তখন সিরিয়ার কেনানে বসে হযরত ইয়াকুব (আ.) পরিবারের লোকজনকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন,তোমরা যদি আমাকে অপ্রকৃতিস্থ মনে না কর তাহলে আমি নিশ্চিত করে বলবো যে, আমি ইউসুফের ঘ্রাণ পাচ্ছি। স্বাভাবিকভাবেই লোকজন বলল, ইউসুফের মৃত্যুর এত বছর পর তার বেঁচে থাকার আশা করা বা তার ঘ্রাণ অনুভব করা স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়।

এখানে একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, হযরত ইউসুফকে যখন কুপে ফেলে দেয়া হয় কিংবা যখন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়,তখন হযরত ইয়াকুব (আ.) এর মনে এমন অনুভূতি কেন আসেনি?

এর জবাব হচ্ছে যে, কারো মনে অনুভূতি জাগ্রত হওয়া বা অদৃশ্য ইঙ্গিতে জ্ঞান লাভ করা এসবই হয়ে থাকে আল্লাহর ইচ্ছায়। এছাড়া এ ঘটনার পেছনে ঐশী উদ্দেশ্য ছিল হযরত ইউসুফ (আ.) কঠিন বাস্তবতার মুখে অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন,মিশরের মতো একটি সুসভ্য দেশ পরিচালনার জন্য নিজেকে যোগ্য করে তুলবেন। পাশাপাশি আল্লাহর ইচ্ছা ছিল, হযরত ইয়াকুব (আ.) কে ধৈর্যের কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ করা।