নও-মুসলিম আব্দুল্লাহ আরমাদা বা কেভিন কম্বস

ইসলাম এমন এক ঐশী ধর্ম যা মানুষের জন্য ইহকাল ও পরকালের সর্বোচ্চ কল্যাণ ও সৌভাগ্য নিশ্চিত করে। এ ধর্ম সর্বশেষ খোদায়ী ধর্ম এবং পূর্ণাঙ্গ বিধি-বিধানে সমৃদ্ধ। মানুষের পরিপূর্ণতম বিকাশের মাধ্যম এই ধর্মের বিধি-বিধান ও শিক্ষাগুলো তাদের প্রকৃতি এবং বিবেকের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তাই ইসলাম সত্য-সন্ধানী যে কোনো মানুষকেই আকৃষ্ট করে।
 
নও-মুসলিম আবদুল্লাহ আরমাদা অনেক চিন্তা ও গবেষণার পর ইসলামকে ধর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তিনি তার মনে জেগে ওঠা অনেক প্রশ্নের সদুত্তর পেয়েছেন এ ধর্মের মধ্যে। আরমাদা বলেছেন:
 
“আমি সব সময়ই ভাবতাম মানুষের জীবনের চূড়ান্ত অর্থ ও লক্ষ্য কী? কিন্তু এসবের কোনো সদুত্তর পাচ্ছিলাম না। মানুষ মনে করে, দর্শন ও ধর্ম তো এইসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ারই চেষ্টা করে। কিন্তু বিশ্বে আজ কত ধর্ম ও কত দর্শন বা মতাদর্শ রয়েছে! এসবের মধ্য হিন্দু ধর্মের মত প্রাচীন ধর্মও রয়েছে এবং  রয়েছে অল্প কিছুকাল আগে আবির্ভূত ধর্মও। ধর্ম ও মতবাদের এত বৈচিত্র্য আমার মত অনেক সত্য-সন্ধানীর জন্য সৃষ্টি করতে পারে কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা। কিন্তু কেউ যদি সত্য-অনুসন্ধান অব্যাহত রাখে এবং আজকের বড় বড় ধর্মগুলোর চেহারা থেকে শত শত বছরের কদর্যতা, পচন, গোঁড়ামি ও কুপ্রথা দূর করতে পারে তাহলে সে ইসলামেই উপনীত হবে।  ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা মানুষের সৃষ্ট  হস্তক্ষেপ ও বিকৃতির হাত থেকে নিরাপদ রয়েছে এবং সব প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর দেয়।”
 
নও-মুসলিম আবদুল্লাহ আরমাদা ইসলামকে ধর্ম হিসেবে বেছে নেয়ার কাহিনী তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন, একটি ক্যাথলিক খ্রিস্টান পরিবারে তার জন্ম হয়েছিল। ক্যাথলিকদের ধর্মীয় ক্লাসে নিয়মিতে যোগ দিতেন তিনি। এইসব ক্লাসে যোগ দিয়ে তিনি বুঝতে পারেন যে খ্রিস্ট ধর্ম তার কোনো কাজে আসবে না। ফলে তিনি স্বাধীনভাবে নানা ধর্মের সংস্পর্শে আসার চেষ্টা করেন।
 
নও-মুসলিম আবদুল্লাহ আরমাদা জীবন সম্পর্কে নানা দৃষ্টিভঙ্গি বা মতবাদের কথাগুলো পরীক্ষা করে দেখেন। কিন্তু এইসব মতবাদ বা ধর্মমতের কোনোটিরই অগ্রহণযোগ্যতা তার কাছে এক বছরের বেশি সময় ধরে অস্পষ্ট থাকেনি। ইসলাম ধর্মের আগে সর্বশেষ যে ধর্ম নিয়ে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন তা হল বৌদ্ধ ধর্ম।
 
ইসলাম সৃষ্টিকুল নিয়ে ও এমনকি নিজের বিষয়ে চিন্তা ও গবেষণার আহ্বান জানায় যাতে আল্লাহর নিদর্শন বা মহিমাগুলো সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করতে পারে। যেমন, সুরা আলে ইমরানের ১৯০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: “নিশ্চয়ই আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে।”
 
মানুষ যখন আল্লাহর অশেষ মহত্ত্বের সামান্য ঔজ্জ্বল্যও খানিকটা উপলব্ধি করতে পারে তখন আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছুই তার কাছে তুচ্ছ মনে হবে। প্রকৃতিতে ছড়িয়ে থাকা মহান আল্লাহর নিদর্শনগুলো আবদুল্লাহ আরমাদার চিন্তা-চেতনাকেও প্রবলভাবে দোলা দিয়েছে। তিনি বলেছেন, “ খোদ খোদাকে নিয়েই চিন্তা শুরু করেছিলাম আল্লাহ বলতে আসলেই কিছু আছে কিনা। বিবেক বলছিল যে আল্লাহ’র অস্তিত্ব রয়েছে। এই সুন্দর বিশ্ব ও বসন্তে  মৃত প্রকৃতির জেগে ওঠা-এসব স্রস্টার অস্তিত্ব ছাড়া ঘটা অসম্ভব। আল্লাহর সবচেয়ে সুন্দর বর্ণনা ও সংজ্ঞা রয়েছে ইসলামে। এ ধর্মের সব শিক্ষাই শক্তিশালী এবং ক্ষমতাধর ও এক আল্লাহর অস্তিত্বই প্রমাণ করছে।”
 
প্রখ্যাত মার্কিন বিজ্ঞানী জন এডলফ বুইহলার বলেছেন:
“মানুষ প্রকৃতি সম্পর্কে অজানা নানা তথ্য ও অস্পষ্টতা উপলব্ধি করতে সক্ষম, কিন্তু প্রকৃতির বিধান তৈরি করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহই প্রকৃতির বিধান তৈরি করেন, মানুষ তার রহস্য উদঘাটনের ও তার ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করে মাত্র। মানুষ যখনই কোনো সূত্র আবিষ্কার করে তখন সে আল্লাহর দিকে এক কদম এগিয়ে যায় এবং আল্লাহকে আগের চেয়েও কিছুটা ভালভাবে বুঝতে পারে। এভাবে আল্লাহ নিজেকে মানুষের কাছে তুলে ধরেন। কিন্তু এটাই তাঁর ঔজ্জ্বল্যের একমাত্র মাধ্যম নয়। কারণ, মহান আল্লাহ নবী-রাসূল ও ধর্মগ্রন্থের মাধ্যমে মানুষের কাছে নিজের পরিচয় দিয়েছেন। আর এ বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
 
ধর্ম সম্পর্কে অতীতেও আবদুল্লাহ আরমাদার কিছু ধারণা ছিল। তিনি বলেছেন,“কয়েক বছর আগে স্কুলে বিশ্বের নানা ধর্ম সম্পর্কে একটি প্রামাণ্য ছায়াছবি দেখেছিলাম। মুসলমানদের নামাজের দৃশ্য, বিশেষ  করে তাদের সিজদার দৃশ্যটি আমার খুব ভাল লেগেছিল। কিন্তু মনে মনে এও বলেছিলাম যে খ্রিস্ট ধর্ম নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। তারপরও বহুদিন দিক-দর্শন যন্ত্র নিয়ে মক্কার অবস্থানটি বের করতাম ও কিবলামুখি হয়ে দাঁড়াতাম। আর এভাবে আমি প্রশান্তি অনুভব করতাম। মুসলমানদের সিজদার দৃশ্য ও আল্লাহর সামনে তাদের বিনম্রতার কথা মনে করে আমি সত্য অনুসন্ধানের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হই। ইসলামের প্রতি গভীর আগ্রহের ফলে এ নিয়ে আমি ব্যাপক গবেষণা করতে থাকি। ইসলামের পূর্ণাঙ্গ পরিচিতি সম্পর্কে কয়েকটি বই পড়ার পর এ ধর্ম সম্পর্কে আমার বহু ভুল ধারণা ভেঙ্গে গেল। নানা বই পড়ার পর পবিত্র কুরআন পড়ার মিষ্টতা অনুভব করি। ফলে ইসলামের প্রতি আমার ভালবাসা দিনকে দিন বাড়তেই লাগল। এভাবে আল্লাহকে খুঁজে পাওয়ার পর  চিন্তা ও গবেষণার মাধ্যমে প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে জানতে সক্ষম হই।  এ অবস্থায় সত্যের ব্যাপারে আর নীরব থাকতে পারছিলাম না। অবশেষে পরিপূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে ইসলাম ধর্মের মূল মন্ত্রের বাক্য দুটি বা কলেমায়ে শাহাদাতাইন উচ্চারণ করলাম। মুসলমান হওয়াটা ছিল আমার জীবনের সর্বোত্তম নির্বাচন।”
 
আবদুল্লাহ আরমাদা আরো বলেছেন:
“প্রতি দিনই আল্লাহর কাছে শোকর করি যে  তিনি আমাকে চিন্তার এতটা স্বাধীনতা দিয়েছেন যে তার মাধ্যমে আমি ইসলামকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করতে পেরেছি।  আমার প্রতি ইসলামের অনুগ্রহ ও কল্যাণকামীতা আমার ধারণার চেয়েও বেশি মাত্রায় পেয়েছি। আমার অবস্থা প্রতি দিনই আগের দিনটির চেয়ে ভাল হচ্ছে। মহান আল্লাহ আমার জীবনের সব কিছুই উজ্জ্বল করেছেন এবং মনে হয় যেন  তিনি তাঁর দয়ার সবচেয়ে আন্তরিক ও উষ্ণতম (কুদরতের) হাতটি আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছেন। আজ আমি নিশ্চিত বিশ্বাস নিয়ে বলছি, সত্যকে খোঁজার যে প্রচেষ্টা আমি শুরু করেছিলাম তা প্রত্যাশিত ফল দিয়েছে। কারণ, এই অনুসন্ধানের সর্বোচ্চ পর্যায় ও সামগ্রিক বাস্তবতাকে কেবল একটি বাক্যে তুলে ধরা যায়। বাক্যটি হল:
 
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ও আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। অর্থাত, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য বা খোদা নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) হচ্ছেন তাঁর রাসূল।
(রেডিও তেহরান)