আল হাসানাইন (আ.)

মদিনা হতে ইমাম হোসাইনের (আ.) হিজরত

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

মুআবিয়া হিজরী ৬০ সালের রজব মাসে মারা যাওয়ার পর ইয়াজিদ মদীনার তৎকালীন গভর্ণর ওলিদ ইবনে ওতবার কাছে এক পত্র লিখে তাকে নির্দেশ দিল যে, আমার আনুগত্যের পক্ষে মদীনার সব লোক বিশেষ করে হোসাইনের কাছ থেকে বাইআত গ্রহণ কর । হোসাইন যদি বাইআত করতে অস্বীকার করে তাহলে তার গর্দান উড়িয়ে দাও এবং আমার কাছে পাঠিয়ে দাও । ওলিদ মারওয়ানকে দরবারে ডেকে পাঠায় এবং এ ব্যাপারে তার পরামর্শ জানতে চায় । মারওয়ান বলল যে, হোসাইন (আ.) শির নত করবে না এবং কিছুতেই ইয়াজিদের হাতে বাইআত করবে না । তবে আমি যদি তোমার স্থানে থাকতাম এবং তোমার মত ক্ষমতার অধিকারী হতাম তাহলে কালবিলম্ব না করে হোসাইনকে হত্যা করতাম । যদি এমন হয় তাহলে আমার কামনা হল, এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার চাইতে দুনিয়াতে আমার না আসাই ভাল ছিল। কেননা, এত বড় বদনামীর বোঝা মাথায় নেয়ার চাইতে সেটাই উত্তম হত ।

ওয়ালিদ সরকারী দূত মারফত হযরত হোসাইনকে (আ.) নিজের ঘরে ডেকে পাঠাল । হোসাইন (আ.) তার পরিবার ও বন্ধুদের মধ্য থেকে ৩০ জন সঙ্গী সাথে নিয়ে ওয়ালিদের কাছে আসলেন । ওয়ালিদ মুয়াবিয়ার মৃত্যুর খবর তাকে জানাল আর ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত করার অনুরোধ জানাল । হোসাইন (আ.) বললেন, আমার বাইয়াত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তা গোপনে ও লোকচক্ষুর অন্তরালে সম্পন্ন হতে পারে না । তবে কাল সকালে জনসাধারণকে যখন বাইয়াতের জন্য আহবান করবে তখন আমাকেও অবহিত করবে । মারওয়ান বলল –হোসাইনের কথায় কর্ণপাত করো না এবং তার অজুহাত গ্রহণ করতে যেওনা । যদি বাইয়াত করতে অস্বীকার করে তবে প্রাণে বাচিয়ে রেখো না । হোসাইন (আ.) অত্যন্ত রাগান্বিত হলেন এবং বললেন – তুমি ধ্বংস হও । হে নষ্টা মেয়ের ছেলে । তুমি কি আমাকে হত্যার আদেশ দিচ্ছ ? আল্লাহর কসম, তুমি মিথ্যা বলেছ । এ কথা বলে তুমি নিজেকে হেয় ও অপমানিত করেছ । এরপর তিনি ওয়ালিদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন – হে আমির! আমরা নবুওতের ঘরের আহলে বাইত, আমরাই রেসালতের খনি । ফেরেশতারা আমাদের ঘরেই আনাগোনা করেন । আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্যই মানুষের দিকে তার রহমতের দরজা খুলে দিয়েছেন । এই রহমতের সমাপ্তি হবে আমাদের নামেই । আর ইয়াজিদ হল একটা মদখোর ফাসেক, খুনী এবং প্রকাশ্যে শরীয়ত লংঘনকারী লোক । আমার মত কোন লোক ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত করবে না । তবে কাল ভোর হোক । এ সময়ের মধ্যে আপনিও ভেবে চিন্তে দেখেন । আমিও চিন্তা ভাবনা করে দেখব যে, আমাদের মধ্যে কে খেলাফতের জন্য অধিকতর যোগ্য । এ কথা বলার সাথে সাথে তিনি ওয়ালিদের ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন ।

সে রাত কেটে গেল । খুব ভোরে হোসাইন (আ.) ঘর থেকে বেরিয়ে নতুন কোন খবরের অপেক্ষা করছিলেন । মারওয়ান তাকে দেখতে পেল এবং বলল – হে আবু আব্দুল্লাহ, আমি তোমার হিতাকাংখী; তুমি আমার উপদেশ শ্রবণ কর, তাহলে কল্যাণ লাভ করতে পারবে। হোসাইন (আ.) জিজ্ঞেস করলেন তোমার উপদেশ কি ? বল দেখি। বলল- আমি তোমাকে আদেশ করছি যে, তুমি অবশ্যই ইয়াজিদ ইবনে মুআবিয়ার হাতে বাইয়াত কর । কেননা তোমার দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য এ কাজ মঙ্গলজনক হবে । হোসাইন (আ.) বললেন-

انّا لله و انّ الیه راجعون (ইন্নানিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন) যদি তাই হয় আমাকে দ্বীন ইসলাম থেকে বিদায় নিতে হবে । কেননা নবী (সা.) এর উম্মত ইয়াজিদের খেলাফত রাজত্বের হাতে বন্দী হয়ে পড়েছে । আমি আমার নানা আল্লাহর রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি যে, আবু সুফিয়ানের বংশধরদের জন্য খেলাফত হারাম । ইত্যবসরে হোসাইন (আ.) ও মারওয়ানের মধ্যে এ মর্মে বহু কথা কাটাকাটি হয় । শেষ পর্যন্ত ক্রুদ্ধাবস্থায় মারওয়ান চলে গেল ।

ওয়ালিদ ও মারওয়ানের সাথে সাক্ষাতের পরবর্তী ঘটনা সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণ লিখেছেন- ঐদিন ভোরে অর্থাৎ ৬০ হিজরীর ৩রা শাবান ইমাম হোসাইন (আ.) মক্কার দিকে রওয়ানা হন । আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর তার খেদমতে উপস্থিত হন । তারা বলেন যে, আপনি মক্কাতেই অবস্থান করুন । তিনি বললেন- রাসূলে খোদার (সা.) তরফ থেকে আমার উপর যে নির্দেশ আছে তা আমাকে পালন করতেই হবে । ইবনে আব্বাস ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলেন । পথে তিনি বলছিলেন- হায় হোসাইন ! এরপর আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আসেন এবং বললেন- এখানকার পথহারা লোকদের সংশোধন করাই উত্তম হবে । যুদ্ধের পদক্ষেপ নিবেন না । তিনি বললেন-

“আপনি কি জানেন না, দুনিয়া এতখানি নিকৃষ্ট যে, ইয়াহিয়া ইবনে যাকারিয়া (আ.) এর মাথা বানি ইসরাইলের এক অবাধ্যের কাছে হাদিয়া হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । আপনার কি জানা নেই যে বনি ইসরাইল সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত ৭০ জন নবীকে হত্যা করে । এরপর বাজারে এসে তারা কেনা কাটায় মশগুল হয় । অর্থাৎ যেন কোন ঘটনাই ঘটেনি । তবুও মহান আল্লাহ তাআলা তাদের আযাব ত্বরান্বিত করেননি । তাদেরকে অবকাশ দেন । আর অবকাশ দানের পরই চরম প্রতিশোধ গ্রহণ করেন । হে আব্দুল্লাহ ! মহান আল্লাহর ক্রোধ ও আযাবকে ভয় করুন এবং আমার সাহায্য থেকে পিছপা হবেন না ।”

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)