সূরা ইব্রাহীম;(৫ম পর্ব)

সূরা ইব্রাহীম; আয়াত ১৫-১৮

সূরা ইব্রাহীমের ১৫ ও ১৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

وَاسْتَفْتَحُوا وَخَابَ كُلُّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ (15) مِنْ وَرَائِهِ جَهَنَّمُ وَيُسْقَى مِنْ مَاءٍ صَدِيدٍ

"তাঁরা (আল্লাহর কাছে) বিজয় কামনা করল আর জালিম ও দুরাচার ব্যক্তিরা হতাশ এবং ব্যর্থ মনোরথ হলো।” (১৪:১৫)

“তাদের প্রত্যেকের পরিণামে রয়েছে জাহান্নাম এবং তাদেরকে দূষিত-দুর্গন্ধময় পানীয় পান করানো হবে।" (১৪:১৬)

এর আগের আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছিল, মহান আল্লাহ মুমিন মুসলমানদেরকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছেন, বিরুদ্ধবাদী-কাফেরদের হুমকির কোন মূল্য নেই। তাদের ওপরই ঐশী শাস্তি নেমে আসবে এবং তারা নাস্তানাবুদ হবে। এই আয়াতে বলা হচ্ছে, আল্লাহর দেয়া নিশ্চয়তা বা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়েছে এবং কাফেরদের মনোবাসনা পূর্ণ হয়নি বরং তারা সব কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এটা হচ্ছে ইহকালে তাদের শাস্তি আর পরকালে তাদের জন্য আরো কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি তাদেরকে যখন শাস্তির আগুনে দহন করা হবে তখন তাদেরকে ঠান্ডা পানির পরিবর্তে দূষিত দুর্গন্ধময় পানি পান করতে দেয়া হবে।

পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে দেখা যায়, পয়গম্বরগণ মুমিনদেরকে আল্লাহর অদৃশ্য সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। পয়গম্বরদের সেই আশ্বাস বা প্রতিশ্রুতি এখনো বজায় রয়েছে। কারণ সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দ্বে এখনো চূড়ান্ত বিজয় হাসিল হয়নি। এই বিজয় অর্জিত হবে ঈমাম মাহদী নামে শেষ জামানায় আগমনকারী আল্লাহর এক বিশেষ প্রতিনিধির হাতে। প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীরা এই মহামানবের আগমনের জন্য অপেক্ষমান যুগ যুগ ধরে।

এই আয়াতের শিক্ষা হচ্ছে, প্রকৃত মুমিন কখনো হতাশ হয় না। তারা জুলুম-অত্যাচারের অপসারণ এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বিরামহীন সংগ্রামে লিপ্ত থাকে । আর যারা অন্যায় কাজে লিপ্ত হবে এবং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে অবিশ্বাস করবে তারা পরকালে তাদের পরিণাম ভোগ করবেই। এ থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার কোন পথ তাদের নেই।

এই সূরার ১৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে,

يَتَجَرَّعُهُ وَلَا يَكَادُ يُسِيغُهُ وَيَأْتِيهِ الْمَوْتُ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ وَمِنْ وَرَائِهِ عَذَابٌ غَلِيظٌ

“(দূষিত বা পুঁজযুক্ত পানি) সে অতি কষ্টে গলাধঃকরণ করবে এবং তা গলাধঃকরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে। সব দিক হতে তার নিকট মৃত্যু যন্ত্রণা আসবে কিন্তু তার মৃত্যু ঘটবে না এবং সে কঠোর শাস্তি ভোগ করতেই থাকবে।” (১৪:১৭)

এই আয়াতে জাহান্নামে কাফেরদের অবস্থার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। সেখানে এই সব কাফের- অবিশ্বাসীরা তৃষ্ণা নিবারণের জন্য ঢক ঢক করে দুর্গন্ধযুক্ত দূষিত পানি পান করবে। যারা দুনিয়ায় মদ্যপান করে এবং সৎ ও মুমিন মানুষকে নিয়ে উপহাস করে পরকালে তাদেরকে এমন পরিণতিই ভোগ করতে হবে। এছাড়া জাহান্নামে এত কঠিন অবস্থা বিরাজ করবে যে প্রতি মুহূর্তে মনে হবে মরে যাচ্ছে কিন্তু সেখানে কারো মৃত্যু হবে না । এই কঠিন অবস্থা সেখানে অব্যাহতভাবে চলতে থাকবে।

এই আয়াত থেকে বুঝা যায়, জাহান্নামে শাস্তি কখনো লাঘব করা হবে না। বরং শাস্তি এবং যন্ত্রণা দিন দিন বাড়তে থাকবে। আর সেই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির কারণে কারো মৃত্যু হবে না। কারণ পরকালে কারো মৃত্যু হবে না।

এই সূরার ১৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

مَثَلُ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ أَعْمَالُهُمْ كَرَمَادٍ اشْتَدَّتْ بِهِ الرِّيحُ فِي يَوْمٍ عَاصِفٍ لَا يَقْدِرُونَ مِمَّا كَسَبُوا عَلَى شَيْءٍ ذَلِكَ هُوَ الضَّلَالُ الْبَعِيدُ

"যারা স্বীয় প্রতিপালককে অস্বীকার করে তাদের অবস্থা এই যে, তাদের কর্মসমূহ ছাইভস্মের মত। যার ওপর দিয়ে প্রবল বাতাস বয়ে যায় ধুলিঝড়ের দিন। তাদের উপার্জনের কোন অংশই তাদের হস্তগত হবে না। এটাই ঘোর বিভ্রান্তি।" (১৪:১৮)

পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে অবিশ্বাসী কাফেরদের কাজ-কর্মকে মূল্যহীন বলা হয়েছে। বাতাসে যেমন ধূলাবালি উড়ে কিংবা আগুনের উপর যেমন ভস্মীভূত ছাই বাতাসে উড়ে যায়। তেমনি কাফেরদের ভালো কাজও মন্দ কাজের তোড়ে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু সৎ ও ঈমানদারদের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঈমানদাররা কখনো ভুল করে পরে যদি তাওবা বা অনুশোচনা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থী হয় তাহলে আল্লাহ তা মাফ করে দেন এবং অনুশোচিত হওয়ার জন্য তার মন্দ কাজগুলোকে সৎকাজে রূপান্তরিত করে দেন।

কাফেরদের মন যেহেতু অপবিত্র সেহেতু তাদের কোন কোন কাজ বাহ্যত ভালো মনে হলেও তা গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের এই সব কাজ আগুনের ওপর ভস্মীভূত ছাইয়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।