আশুরার ঘটনাবলীঃ ইমাম হোসাইন (আ.) এর তাবুতে হোর ইবনে ইয়াজিদের আগমন

ওমর বিন সাদ যখন ইমাম হোসাইনের তাবু লক্ষ করে  তীর নিক্ষেপ করল তখন হোর বিন ইয়াজিদ রিয়াহী ওমর বিন সাদকে লক্ষ্য করে বললেন-

“হোসাইনের সাথে যুদ্ধ করতে চাও?” ওমর জবাব দেয়-

হ্যাঁ, আল্লাহর শপথ এমন যুদ্ধ করব যাতে সহজেই শরীর থেকে মাথাগুলো বিচ্ছিন্ন করা যায় আর হাতগুলো ধড় থেকে পৃথক করা যায়।

এ কথাগুলো শোনার পর হোর তার সাথীদের কাতার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এ সময় তার শরীর কাপছিল। মুহাজির বিন আউস বলল-হে হোর, তোমার আচরণ সন্দেহজনক। আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় কুফার মধ্যে সবচেয়ে বড় বীর কে? তোমাকে বাদ দিয়ে আমি অন্য কারো নাম নেব না, কেন কাপছো? হোর বলল, আল্লাহর কসম আমি নিজেকে বেহেশত ও দোজখের মাঝামাঝি দেখছি । তবে খোদার শপথ বেহেশত থেকে অন্য কিছুকে প্রাধান্য দেব না। এতে যদি আামর শরীর টুকরা টুকরা হয় বা জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করা হয়। এরপর হাক মেরে অশ্বের উপর সওয়ার হয়ে হোসাইন (আ.) এর দিকে অগ্রসর হন। দু’হাত মাথায় রেখে বলতে শুরু করেন-

 أللّهُمّ إنّى تُبْتُ إليْك فتُبْ عليّ، فقدْ أرْعبْتُ قُلُوب أوْليائك و أوْلاد بنْت نبيّك

হে আল্লাহ! তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি আমার তওবা কবুল কর; আমি তো তোমার বন্ধুদের এবং তোমার নবী নন্দিনীর সন্তানদের ভয় দেখিয়েছি।

ইমাম হোসাইন (আ.) কে লক্ষ্য করে আরজ করলেন-“আমার জীবন আপনার জন্য উৎসর্গীত। আমি তো সেই ব্যক্তি যে আপনার সাথে কঠোর ব্যবহার করেছে আপনাকে মদিনা যেতে দেয়নি। আমি ভাবতেই পারিনি এরা পরিস্থিতি এ পর্যায়ে নিয়ে আসবে। আমি তওবা করেছি, আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছি। আমার তওবা কি গৃহীত হবে? ইমাম হোসাইন (আ.) বললেন “এসো, আল্লাহ তোমার তওব কবুল করবেন। নেমে এসো।”

হোর বলল, “নেমে আসার চেয়ে আপনার পথে আরোহণ অবস্থায় যুদ্ধ করা অনেক উত্তম বলে মনে করি। শেষ পর্যন্ত তো অশ্ব থেকে পড়ে যেতেই হবে। আমি যেহেতু প্রথম ব্যক্তি যে আপনার পথ রুদ্ধ করেছিলাম অনুমতি দিন আমিই প্রথম ব্যক্তি হতে চাই, যে আপনার পথে প্রথম শহীদ হবো। এমন ব্যক্তি হতে চাই কেয়ামত দিবসে আপনার নানা মুহাম্মদ (সা.) এর সাথে করমর্দন (মুসাহাফা) করব।

লিখকের মতে, হোরের উদ্দেশ্য ছিল প্রথম অবস্থায় শাহাদত বরণ করা। কেননা এর পূর্বেও একটি দল নিহত হয়। বর্ণিত হয়েছে একদল লোকের শাহাদতের পরই ইমাম হোসাইন (আ.) তাকে যুদ্ধের অনুমতি দিলেন। হোর বীরের মত দুশমনের উপর ঝাপিয়ে পড়ল। বেশ কিছুসংখ্যক বীরকে ধরাশায়ী করে নিজে শাহাদতের শরবত পান করেন। তার দেহ ইমাম হোসাইন (আ.) এর কাছে আনা হল-ইমাম তার মুখমণ্ডল থেকে ধুলাবালি সরাচ্ছিলেন আর বলছিলেন-

 أنْت الْحُرُّ - كما سمّتْك أُمُّك حُرّا- فى الدُّنْيا والاّْخرة

তুমি সত্যই হোর বা মুক্ত যেমন তোমার মা তোমার নাম রেখেছে হোর (মুক্ত) তুমি দুনিয়া ও আখেরাতেও মুক্ত।

(কারবালা ও হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ) এর শাহাদাত গ্রন্থ থেকে সংকলিত)#আল হাসানাইন