আশুরার ঘটনাবলীঃ হযরত আবুল ফজল আব্বাস (আ.) এর ত্যাগ ও শাহাদত

হোসাইন (আ.) পিপাসায় কাতর হয়ে তার ভাই আব্বাসকে সাথে নিয়ে ফোরাতের তীরে উপস্থিত হলেন। ইবনে সা’দের বাহিনী ঝাপিয়ে পড়ল দু’জনার উপর। তাদের পথ বন্ধ করল। বনি দারম গোত্রের এক দুরাচার আবুল ফজল আব্বাস (আ.) এর দিকে তীর নিক্ষেপ করলে তার পবিত্র মুখে বিদ্ধ হয়। ইমাম হোসাইনই (আ.) তা টেনে বের করে নেন তার হাত রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। রক্তগুলো ছুড়ে ফেলে বললেন-হে খোদা! এ জনগোষ্ঠী তোমার নবী নন্দিনীর সন্তানের উপর এ জুলুম চালাচ্ছে এদের বিরুদ্ধে তোমার দরবারে বিচার দিচ্ছি । ইবনে সা’দের বাহিনী মুহূর্তের মধ্যে ইমাম হোসাইন (আ.) থেকে হযরত আব্বাস (আ.) কে ছিনিয়ে নেয়। চতুর্মুখী আক্রমণ, তরবারীর সম্মিলিত আঘাতে হযরত আব্বাস (আ.) শাহাদাতের শরবত পান করেন। হোসাইন (আ.) তার শাহাদাতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কবি তাই তো বলেছেন-

কতই না উত্তম ব্যক্তি যার জন্য ইমাম হোসাইন (আ.) কারবালার এ কঠিন মুছিবতের সময়ও কেদেছেন। তিনি ছিলেন হোসাইনের ভাই তার বাবা ছিলেন আলী, তিনি তো আর কেও নন রক্তাক্ত বদন আবুল ফজল আব্বাস। তিনি ছিলেন ইমাম হোসাইনের সহমর্মী, কোন কিছুই তাকে এ পথ থেকে সরাতে পারেনি। প্রচণ্ড পিপাসা নিয়ে ফোরাতের তীরে পৌছেন কিন্তু হোসাইন যেহেতু পান করেন নি তিনিও তাই পানি মুখে নেননি।

অন্য কবি বলেন-

মুষ্ঠির মাঝে পানি লইলেন-মন ভরে পান করে নিবারিবেন তৃষ্ণা কিন্তু যখনই হোসাইনের পিপাসার কথা মনে পড়লো-হাতের মুটোয় পানিতে অশ্রু ফেলে ফিরে আসলেন।

হযরত আবুল ফজল আব্বাস (আ.) এর মহান আত্মত্যাগ সকল লেখক, চিন্তাশীলদের দৃষ্টিতেই গুরুত্বপূর্ণ।

আল্লামা মাজলিশী তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বিহারের’ মধ্যে লিখেন-হযরত আব্বাস ফোরাতের তীরে গেলেন। যখনই অঞ্জলী ভরে পানি পান করতে চাইলেন হটাৎ হোসাইন (আ.) ও তার আহলে বাইতের পানির পিপাসার যন্ত্রণার কথা মনে পড়ল। পানি ফোরাতেই ফেলে দিলেন পান করলেন না।

একজন আরবী কবি বলেন-

আবুল ফজল আব্বাস তার সবচেয়ে মূল্যবান প্রাণ হোসাইন (আ.) এর জন্যই উৎসর্গ করেছেন। হোসাইন (আ.) পান করার পূর্বে তিনি নিজে পান করলেন না মানুষের কর্মের সর্বোত্তম কর্ম ও মূল কাজই তিনি করলেন, আপনি তো গৌরবের দিবসে রাসূলের দুই নাতির ভাই আর আপনিই তো পানি পানের দিবসে করেছেন আত্মত্যাগ হে আবুল ফজল।

পানি টলটলায়মান-বাদশাহ তৃষ্ণায় ওষ্ঠাগত,

উদ্দম তার অন্তরে হাতে রয়েছে পানির মশক,

মুরতাজার সিংহ শাবকেরে হামলা করল এমনভাবে

এ যেন অগণিত নেকড়ের মাঝে এক বাঘ।

এমন একটি বদন কেউ দেখেনি

যাতে কয়েক হাজার তীর

এমন একটি ফুল কেউ দেখেনি

যাতে রয়েছে কয়েক হাজার কাটা।

(কারবালা ও হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ) এর শাহাদাত গ্রন্থ থেকে সংকলিত)#আল হাসানাইন