সূরা হিজর; (৮ম পর্ব)

সূরা হিজর; আয়াত ৪৫-৫৩

সূরা হিজরের ৪৫ থেকে ৪৮ আয়াতে বলা হয়েছে,

إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ (45) ادْخُلُوهَا بِسَلَامٍ آَمِنِينَ (46) وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِمْ مِنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَى سُرُرٍ مُتَقَابِلِينَ (47) لَا يَمَسُّهُمْ فِيهَا نَصَبٌ وَمَا هُمْ مِنْهَا بِمُخْرَجِينَ (48(

“নিশ্চয়ই পরহেজগাররা থাকবে প্রস্রবণ-বহুল জান্নাতে।” (১৫:৪৫)

“(তাদের বলা হবে) তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে এতে প্রবেশ কর।” (১৫:৪৬)

“আমি তাদের অন্তর হতে ঈর্ষা দূর করব, তারা একে অপরের ভাইয়ের মত পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসনে অবস্থান করবে।” (১৫:৪৭)

“সেখানে তাদের অবসাদ স্পর্শ করবে না এবং তারা সেখান হতে বহিষ্কৃতও হবে না।” (১৫:৪৮)

আগের আয়াতে পাপাচারীদের আসল গন্তব্য জাহান্নামের বর্ণনা দেয়ার পর এই আয়াতে সৎ পরহেজগারদের আবাসস্থল জান্নাতের বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, যারা এই পার্থিব জগতে পাপ থেকে দূরে থাকবে এবং তাকওয়া অবলম্বন করবে, আল্লাহ তালা তাদেরকে বেহেশতের অফুরন্ত নেয়ামত দান করবেন। সেখানে পুরুস্কার হিসেবে তারা নিরাপত্তা ও আত্মিক প্রশান্তি উপভোগ করবে।

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, বেহেশতে যারা প্রবেশ করবে তারা সব ধরনের ঈর্ষা বা হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকবে। হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কেউ বেহেশতে প্রবেশ করবে না। কারণ বেহেশত অত্যন্ত পবিত্র জায়গা, সেখানে ঝগড়া-ঝাটি কিংবা রেষা-রেষির কোন সুযোগ নেই। সবাই সেখানে অত্যন্ত নিরাপত্তা ও প্রশান্তির সাথে বসবাস করবে।

এই আয়াতে আমাদের জন্য শিক্ষণীয় হচ্ছে, এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে পাপ পরিহারের মাধ্যমে চিরস্থায়ী জীবনের সওগাত নিশ্চিত করা সম্ভব। ফলে পরকালীন জীবনকে ইহকালীন জীবনের সাথে বিনিময় করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

এই আয়াতে আরেকটি শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, হিংসা-বিদ্বেষ অত্যন্ত মন্দ একটি স্বভাব। এই স্বভাবের কোন মানুষ বেহেশতে যেতে পারবে না।

এ সূরার ৪৯ ও ৫০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,

نَبِّئْ عِبَادِي أَنِّي أَنَا الْغَفُورُ الرَّحِيمُ (49) وَأَنَّ عَذَابِي هُوَ الْعَذَابُ الْأَلِيمُ (50(

“(হে পয়গম্বর!) আমার বান্দাদের বলে দিন, আমি ক্ষমাশীল,দয়ালু” (১৫:৪৯)

“তবে আমার শাস্তিও অত্যন্ত মর্মন্তুদ।” (১৫:৫০)

ধর্মপ্রাণ পরহেজগারদের শেষ পরিণাম তুলে ধরার পর পাপাচারীদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, যদি অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করে সুপথে ফিরে আস তাহলে জেনে রাখ মহান আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু এবং ক্ষমাশীল। আর যদি পাপ-পঙ্কিলতার পথচলা অব্যাহত রাখ তাহলে জেনে রাখ আল্লাহর শাস্তি অত্যন্ত কঠিন এবং এ থেকে পালানোর কোন পথ নেই।

আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার প্রতি দয়ালু ও মেহেরবান, যদি বান্দা সঠিক পথে চলে, তা না হলে আল্লাহ শাস্তি দিতেও অত্যন্ত কঠোর। এটাই আল্লাহর নিয়ম।

এই সূরার ৫১ ও ৫৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَنَبِّئْهُمْ عَنْ ضَيْفِ إِبْرَاهِيمَ (51) إِذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلَامًا قَالَ إِنَّا مِنْكُمْ وَجِلُونَ (52) قَالُوا لَا تَوْجَلْ إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَامٍ عَلِيمٍ (53(

“আপনি তাদেরকে ইব্রাহীমের অতিথিদের কথা শুনিয়ে দিন।” (১৫:৫১)

“যখন তারা তার গৃহে আগমন করল এবং সালাম করল, ইব্রাহীম বললেন, আমরা আপনাদের ব্যাপারে ভীত।” (১৫:৫২)

“তারা বলল, ভয় করবেন না, আমরা আপনাকে একজন জ্ঞানবান পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি।” (১৫:৫৩)

একবার কয়েকজন ফেরেশতা মানুষের আকৃতি ধারণ করে হযবত ইব্রাহীম (আ.)এর কাছে হাজির হলো। হযরত ইব্রাহীম (আ.) তাদেরকে চিনতে না পেরে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন, তখন ফেরেশতারা তাদের পরিচয় দিয়ে বললেন, আমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট হয়ে আপনার জন্য সুসংবাদ নিয়ে এসেছি, আপনি এমন এক পুত্র সন্তান লাভ করবেন, যার বরকতে আপনার নাম ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবে, এই কয়টি আয়াতে সেই ঘটনার কথাই বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহীম (আ.)কে তাঁর দুই পুত্রের ব্যাপারেই সুসংবাদ প্রেরণ করেছিলেন। একবার হযরত ইসমাঈল (আ.) এবং আরেক বার হযরত ইসহাকের আগমন সম্পর্কে আগেই সুসংবাদ দিয়েছেলেন।

এই সুসংবাদ প্রেরণের তাৎপর্য হচ্ছে, বৃদ্ধ বয়সেও হযরত ইব্রাহীম (আ.)এর কোন সন্তান ছিল না। যে বয়সে মানুষের সন্তান লাভের আর কোন সম্ভাবনা থাকে না। সেই বয়সে হযরত ইব্রাহীমকে আল্লাহ পুত্র সন্তান লাভের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। এটা ছিল হযরত ইব্রাহীম (আ.)এর প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ।