আল হাসানাইন (আ.)

সূরা হিজর; (১০ম পর্ব)

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

সূরা হিজর; আয়াত ৬৫-৭৩

সূরা হিজরের ৬৫ ও ৬৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

فَأَسْرِ بِأَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِنَ اللَّيْلِ وَاتَّبِعْ أَدْبَارَهُمْ وَلَا يَلْتَفِتْ مِنْكُمْ أَحَدٌ وَامْضُوا حَيْثُ تُؤْمَرُونَ (65) وَقَضَيْنَا إِلَيْهِ ذَلِكَ الْأَمْرَ أَنَّ دَابِرَ هَؤُلَاءِ مَقْطُوعٌ مُصْبِحِينَ (66(

“(হে লুত) আপনি রাত্রির কোন এক সময়ে আপনার পরিবারবর্গসহ বেরিয়ে পড়ুন এবং তাদের পশ্চাদনুসরণ করুন এবং আপনাদের মধ্যে কেউ যেন পিছন দিকে ফিরে না তাকায়, আপনারা যেখানে আদেশ প্রাপ্ত হচ্ছেন সেখানে চলে যান।” (১৫:৬৫)

“আমি লুতকে প্রত্যাদেশ মারফত জানিয়ে দিলাম যে, সকাল হলেই তাদের সকলকে সমূলে বিনাশ করা হবে।” (১৬:৬৬)

আগের আয়াতে বলা হয়েছে, আগন্তুক ফেরেশতারা প্রথমে হযরত ইব্রাহীম (আ.)কে আল্লাহর ফরমান সম্পর্কে অবহিত করেন এরপর তাঁরা হযরত লুত (আ.)এর কাছে গমন করেন এবং তাকে তার সম্প্রদায়ের পরিণতি সম্পর্কে জানিয়ে দেন। এই দুই আয়াতে বলা হচ্ছে, হযরত লুত (আ.)ও তার সম্প্রদায়ের ঈমানদার ব্যক্তিরা কোন সময়ে এবং কিভাবে নগর ত্যাগ করবে ফেরেশতারা তা জানিয়ে দেয় এবং কওমে লুতের অনিবার্য ধ্বংসের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা তারা হযরত লুত (আ.)কে অবহিত করেন। পাপাচারী ও ঔদ্ধত্য সম্প্রদায়ের পরিণতি এমনটাই হওয়া স্বাভাবিক।

এই আয়াত থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, পাপ এবং অনাচার যখন কোন সমাজকে গ্রাস করে তখন সেই সমাজের ওপর অনিবার্যভাবে ঐশী শাস্তি নেমে আসে।

এই সূরার ৬৭,৬৮ ও ৬৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَجَاءَ أَهْلُ الْمَدِينَةِ يَسْتَبْشِرُونَ (67) قَالَ إِنَّ هَؤُلَاءِ ضَيْفِي فَلَا تَفْضَحُونِ (68) وَاتَّقُوا اللَّهَ وَلَا تُخْزُونِ (69(

“নগরবাসীরা উল্লসিত হয়ে (হযরত লুতের বাড়ীর সামনে) উপস্থিত হলো।” (১৫:৬৭)

“লুত বললেন, তারা আমার অতিথি। অতএব তাদের সমনে আমাকে লাঞ্ছিত কর না।” (১৫:৬৮)

“তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে হেয় কর না।” (১৫:৬৯)

হযরত লুত (আ.) এর স্ত্রী ঈমানদার ছিল না বরং সে ছিল অবিশ্বাসীদের সহযোগী। কাজেই ফেরেশতার যখন সুন্দর যুবকের বেশে হযরত লুতের বাড়িতে প্রবেশ করে তখন হযরত লুতের স্ত্রী এই খবর নগরবাসীকে জানিয়ে দেয়। ফলে তারা তাদের বিকৃত লালসা পূরণের উদ্দেশ্যে হযরত লুত (আ.) এর বাড়ীর সামনে ভীড় জমায়।

হযরত লুত তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, এরা আমার অতিথি। কাজেই এমন কোন কথা বা কাজ কর না যাতে আমাকে লজ্জিত হতে হয়।

মানুষ যখন সীমালঙ্ঘন করতে থাকে এবং আদ্যোপান্ত পাপে লিপ্ত হয়ে পড়ে তখন ভালো কথা বা নীতি কথা তাদের মনে কোন প্রভাব ফেলে না। লুত সম্প্রদায়ের অবস্থাও হয়েছিল এমনি। কাজেই ঐশী শাস্তি তাদের জন্য অবধারিত হয়ে পড়েছিল।

এই সূরার ৭০ ও ৭১ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে,

قَالُوا أَوَلَمْ نَنْهَكَ عَنِ الْعَالَمِينَ (70) قَالَ هَؤُلَاءِ بَنَاتِي إِنْ كُنْتُمْ فَاعِلِينَ (71(

“তারা বলল, হে লুত! আমরা কি জগৎদ্বাসীকে অতিথি করতে নিষেধ করিনি!” (১৫:৭০)

“লুত বললেন, একান্তই যদি তোমরা (বৈধ ভাবে) কিছু করতে চাও তাহলে আমার এই কন্যাগণ রয়েছে।” (১৫:৭১)

আগন্তুক মেহমানদের সাথে অনাচার করা থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে হযরত লুতের আহ্বানের জবাবে তারা বলল, আমরা কি আপনাকে বলিনি ওদেরকে মেহমান না করতে, কাজেই ওদেরকে আপনি ঘর থেকে বের করে দিন এবং আমাদের কাছে সোপর্দ করে দিন।

হযরত লুত তাদের কুমতলব সম্পর্কে অবহিত ছিলেন, কাজেই তিনি বললেন আমার মেহমানদের ওপর যদি তোমাদের কুদৃষ্টি পরে থাকে তাহলে তা হবে জঘন্য পাপাচার। তোমাদের এমন কোন প্রয়োজন হলে আমার কন্যাদেরকে বিয়ে করতে পার, এর ফলে তোমরা পাপের কঠোর শাস্তি থেকেও রেহাই পাবে। কিন্তু পাপে নিমজ্জিত জনগোষ্ঠি আল্লাহর নবীর কথায় কর্ণপাত করল না। তারা জঘন্য পাপে লিপ্ত হতে উদ্যত হলো।

ঐশী জীবন ব্যাবস্থায় মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি দমনে উদ্বুদ্ধ করে না। বরং মানুষকে বৈধ উপায়ে তা নিবারণের পথ প্রদর্শন করা হয়। কাজেই মানুষকে ভুল পথ থেকে ফিরেয়ে আনতে হলে তার সামনে প্রথমে সঠিক পথ তুলে ধরতে হবে।

এই আয়াত থেকে আমরা এই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।

সূরা হিজরের ৭২ ও ৭৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

لَعَمْرُكَ إِنَّهُمْ لَفِي سَكْرَتِهِمْ يَعْمَهُونَ (72) فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُشْرِقِينَ (73(

“(হে পয়গম্বর!) আপনার জীবনের শপথ! তারা মত্ততায় বিমূঢ় হয়েছে।” (১৫:৭২)

“অতঃএব সূর্যোদয়ের সাথে সাথে মহানাদ আঘাত করল।” (১৫:৭৩)

হযরত লুত (আ.) তাদেরকে বৈধ রাস্তা প্রদর্শন করেও ব্যর্থ হলেন, পাপ চিন্তায় তারা এতটাই উন্মত্ত হয়ে ওঠলো সুপথে ফিরে আসা তাদের পক্ষে সম্ভব হলো না। এই অবস্থায় আল্লাহর ইচ্ছায় তাদের ওপর ঐশী শাস্তি নেমে আসল। প্রলয়ংকর ভূমিকম্পে তারা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেল এবং এই ঘটনা আজীবনের জন্য মানব জাতির সামনে বড় শিক্ষা হয়ে রয়ে গেল।

এই আয়াত থেকে বুঝা যায় পাপ হচ্ছে এক ধরনের উন্মত্ততা। এর ফলে মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি অসার হয়ে পড়ে। মানুষ তখন আর সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে না।

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)