সূরা হিজর; (১২তম পর্ব)

সূরা হিজর; আয়াত ৮৫-৮৯

সূরা হিজরের ৮৫ ও ৮৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,

وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا إِلَّا بِالْحَقِّ وَإِنَّ السَّاعَةَ لَآَتِيَةٌ فَاصْفَحِ الصَّفْحَ الْجَمِيلَ (85) إِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيمُ (86(

“আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এ দু’এর মধ্যবর্তী কোন কিছুই আমি অযথা সৃষ্টি করিনি এবং কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী। সুতরাং আপনি পরম উদাসীনতার সাথে তাদের (গর্হিত কার্যকলাপ) উপেক্ষা করুন।” (১৫:৮৫)

“নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক মহাস্রষ্টা ও মহাজ্ঞানী।" (১৫:৮৬)

এই সূরার আগের কয়েকটি আয়াতে লুত ও সামুদ জাতির মত ঔদ্ধত্য সম্প্রদায়গুলোর পরিণতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। ৮৫ নম্বর আয়াত থেকে নবী করিম (দ.) এবং মুসলমানদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যে,তারা যেন অতীত জাতিগুলোর পরিণতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং ঐশী বিধানের বিরুদ্ধাচারণ বা অসম্মান করা থেকে বিরত থাকে। এছাড়া, অমুসলিমদের সাথে মেলামেশা বা আচরণের ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ ও উপযুক্ত পন্থাটিই বেছে নেয়।

সৃষ্টি জগতের সব কিছুই যে আল্লাহর হাতে এই আয়াতে তা উল্লেখ করা হয়েছে এবং বিরোধী পক্ষকে ক্ষমা করে দেয়া বা তাদের অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ উপেক্ষা করতে ঈমানদারদেরকে উপদেশ দেয়া হয়েছে।

এই আয়াত থেকে আমরা বুঝে নিতে পারি যে, আল্লাহ তায়ালা এমনিতেই বিশ্ব জগত সৃষ্টি করেননি, বরং এই সৃষ্টির পেছনে কোন উদ্দেশ্য আছে।

সৃষ্টি জগতের সব কিছুই মহান আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে এবং কেয়ামত অবধারিত এই বিশ্বাস ঈমানদার মুসলমানদেরকে সহিষ্ণু ও ক্ষমাপরায়ণ হতে উৎসাহিত করে, কারণ যারা কেয়ামতে বিশ্বাসী তারা অন্যের অশোভন আচরণ এই ভেবে উপেক্ষা করতে পারেন যে, একদিন তাদের এই অশোভন কাজের বিচার হবেই।

এই সূরার ৮৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَلَقَدْ آَتَيْنَاكَ سَبْعًا مِنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْآَنَ الْعَظِيمَ (87(

"আমি আপনাকে (সূরা ফাতিহা) সাতটি আয়াত যা বার বার আবৃত্ত হয় এবং মহা কুরআন প্রদান করেছি।" (১৫:৮৭)

আকাশমণ্ডলী এবং পৃথিবী সৃষ্টি এবং প্রকৃতিতে বেঁধে দেয়া নিয়ম-শৃঙ্খলার বর্ণনা দেয়ার পর এই আয়াতে মানব জাতির জন্য সর্বোত্তম জীবন বিধান কুরআন শরীফের কথা বলা হয়েছে।

এই আয়াতে উল্লেখিত 'সাবয়াম মিনাল মাসানি' অর্থাৎ সূরায়ে ফাতিহা যা দুই বার অবতীর্ণ হয়েছে এবং প্রত্যেক নামাজে তা বার বার পঠিত হয়। এ ছাড়া এই সূরাটি দুই ভাগে বিভক্ত, প্রথম ভাগে আল্লাহর প্রশংসা করা হয়েছে আর দ্বিতীয় ভাগে মহান স্রষ্টার কাছে মানুষের আবেদন প্রকাশ পেয়েছে।

এই আয়াত থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে,যেই স্রষ্টা বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছেন, তিনিই মানব জাতির জন্য উত্তম জীবণ বিধান প্রদান করতে পারেন।

এই সূরার ৮৮ ও ৮৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَى مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِينَ (88) وَقُلْ إِنِّي أَنَا النَّذِيرُ الْمُبِينُ (89(

“আমি সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের কোন কোন ব্যক্তিকে ভোগ করার জন্য যা দিয়েছি আপনি তা লক্ষ্য করবেন না, তারা বিশ্বাসী না হওয়ার জন্য আপনি দুঃখিতও হবেন না, আপনি বিশ্বাসীদের প্রতি বিনয়ী হবেন।” (১৫:৮৮)

“বলে দিন, নিশ্চয়ই আমি প্রকাশ্য সতর্ককারী।" (১৫:৮৯)

এই আয়াতে পয়গম্বর (দ.)কে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, অবিশ্বাসী কাফেরদের বৈষয়িক সাফল্য দেখে আপনি দুঃখবোধ করবেন না। পয়গম্বর (দ.)কে উদ্দেশ্য করে এটা বলার অর্থ এই নয় যে, তিনি দুঃখবোধ করছিলেন। বরং এর মাধ্যমে মুসলমানদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে।