সূরা নাহল;(১৪তম পর্ব)

সূরা নাহল; আয়াত ৬২-৬৫

সূরা নাহলের ৬২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,

وَيَجْعَلُونَ لِلَّهِ مَا يَكْرَهُونَ وَتَصِفُ أَلْسِنَتُهُمُ الْكَذِبَ أَنَّ لَهُمُ الْحُسْنَى لَا جَرَمَ أَنَّ لَهُمُ النَّارَ وَأَنَّهُمْ مُفْرَطُونَ

“তারা নিজেদের জন্য (মুশরিকরা) যা অপছন্দ করে তাই তারা আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করে এবং তাদের জিহ্বা মিথ্যা দাবি করে যে,কল্যাণ তাদেরই জন্যে রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তাদের জন্যে রয়েছে আগুন এবং তাদেরকেই সবার আগে সেখানে নিক্ষেপ করা হবে।” (১৬:৬২)

অবিশ্বাসী মুশরিকরা যে নানা ভ্রান্ত বিশ্বাস ও কুসংস্কারে নিমজ্জিত ছিল সে বিষয়ে এর আগে আলোচনা হয়েছে। এ আয়াতে বলা হচ্ছে, মুশরিকরা ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা মনে করত, ফলে এখানে বলা হয়েছে, যারা এত বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে তারাই আবার নিজেদেরকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করে!

এই সূরার ৬৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,

تَاللَّهِ لَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَى أُمَمٍ مِنْ قَبْلِكَ فَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَهُوَ وَلِيُّهُمُ الْيَوْمَ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

“শপথ আল্লাহর, আমি তোমাদের পূর্বেও বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি কিন্তু শয়তান ঐ সব জাতির কার্যকলাপ তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল। সুতরাং শয়তান আজ তাদের অভিভাবক এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।” (১৬:৬৩)

মুশরিকরা নবী করিম (দ.)এর সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করত,সত্যের প্রতি দয়ার নবীর আহ্বানে তারা কর্ণপাত করত না, ফলে এক পৎর্যায়ে নবী করিম (দ.) অত্যন্ত ব্যথিত হলেন,এই পরিস্থিতিতে আল্লাহ তার প্রিয় রাসূলকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য এই আয়াত নাজিল করেন। এতে বলা হয়েছে, অতীতের সকল নবী-রাসূলের সাথেও এক শ্রেণীর মানুষ একই ধরনের আচরণ করেছে,কাজেই তারা যদি আপনার কথায় কান না দেয় তাহলে তাদের কাজের জন্য আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না।

তবে এখানে একটি কথা উল্লেখ করা হয়েছে যা সকল মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়েছে, শয়তান মানুষের সামনে তাদের খারাপ কাজগুলো খুবই শোভন করে তুলে ধরে।

এ আয়াত থেকে আমরা জানতে পারলাম, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক জাতির জন্যই পয়গম্বর পাঠিয়েছেন, আর শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য তার মন্দ কাজগুলো শোভনীয় করে মানুষের সামনে উপস্থাপন করে থাকে।

এ সূরার ৬৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَمَا أَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ إِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِي اخْتَلَفُوا فِيهِ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ

“আমি তো আপনার নিকট এ গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছি- যারা এ বিষয়ে মতভেদ করে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য এবং ঈমানদারদের জন্য পথ নির্দেশ ও দয়াস্বরূপ।” (১৬:৬৪)

যারা আল্লাহর কিতাব বা ঐশী গ্রন্থকে নিজেদের জন্য জীবন বিধান হিসেবে গ্রহণ করে তারাই সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারে, ঈমানের আলোই তাদের সামনে সত্য পথকে প্রতিভাত করে তোলে। ফলে তাদের জন্যই ইহকাল ও পরকালে আল্লাহর বিশেষ পুরস্কার নির্ধারিত রয়েছে।

এ আয়াত থেকে বুঝা গেল যে, ঐশী কল্যাণ লাভের শর্ত হচ্ছে- আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস বা ঈমান। ঈমানদার না হতে পারলে ঐশী কল্যাণ লাভের আশা করা যায় না।

৬৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَاللَّهُ أَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَةً لِقَوْمٍ يَسْمَعُونَ

“আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, তা দিয়ে ভূমিকে তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করেন। নিশ্চয় এতে তাদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে,যারা কথা শোনে।” (১৬:৬৫)

এ আয়াতে বলা হয়েছে- আল্লাহ তায়ালা বৃষ্টি বর্ষণের মাধ্যমে মৃত প্রায় ভূমিকে পুনরুজ্জীবিত করেন,পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হওয়া যেন আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণের মতই। বৃষ্টি মৃত ভূমিকে যেমন পুনরায় উর্বর ও সতেজ করে তোলে তেমনি পবিত্র কুরআন নাজিল হয়ে বিভ্রান্ত ও দিশেহারা মানব জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে।