আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর সামনে সিজদা করা কি জায়েজ?

 
প্রশ্ন: আমরা মুসলমান এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর সামনে আমাদের সিজদা করা উচিত নয়। কারণ, রুকু-সিজদা ইবাদতের নিদর্শন। তাহলে পবিত্র কুরআন অনুযায়ী, আল্লাহ কেনো হযরত আদম (আ.)কে সিজদা করার জন্য ফেরেস্তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন? পবিত্র কুরআনের অন্য জায়গায় এসেছে, আল্লাহর নবী হযরত ইউসুফ (আ.)এর সামনে তার পিতা-মাতা ও ভাইয়েরা সিজদা করেন। এ ধরনের সিজদা আল্লাহর ইবাদতের জন্য অসঙ্গতিপূর্ণ নয় কি?  
 
উত্তর: সিজদা শব্দের শাব্দিক অর্থ নম্রতা ও বিনয়; আল্লাহর ইবাদত বা বন্দেগি করা নয়। (মোয়াজ্জামু মোকায়েসি ৩খ., ১৩৩পৃ. কামুস কুরআন, ৩ খ., পৃ. ২৩৫, সিজদা অধ্যায়) পবিত্র কুরআনে হযরত আদম (আ.)এর সামনে ফেরেশতাদের এবং হযরত ইউসুফ (আ.)এর সামনে তার ভাইদের যে সিজদা করার কথা বলা হয়েছে, তা ছিল সিজদা’র শাব্দিক অর্থ। অর্থাত নম্রতা ও বিনয় প্রকাশের জন্য হযরত ইউসুফ (আ.)এর ভাইয়েরা তাকে সিজদা করেছিল। এখানে বিনয় প্রকাশের অর্থ এ নয় যে নামাজের মত তারা হযরত ইউসুফ (আ.)কে সিজদা করেছিল বা এর মাধ্যমে তারা হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ করেছেন। কারণ, কাজটি হারাম হলে পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে ইতিবাচক বর্ণনা আসত না।
 
হযরত আদম (আ.)এর সামনে ফেরেশতারা যে সিজদা করেছিল সেটাও ছিল এরকম অর্থেই। অর্থাত নম্রতা ও বিনয় প্রকাশের জন্য এবং দুনিয়াতে মানুষকে আল্লাহর খলিফা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য তারা সে সিজদা করেছিল। এছাড়া, পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতে বলা হয়েছে, সৃষ্টির সবকিছু আল্লাহর সামনে সিজদা করে। যেমন বলা হয়েছে, ওয়ালিল্লাহি ইয়াসজুদু মান ফিসসামা ওয়াতি অল আরদ” অর্থাত্‌ “আসমান-জমীনে যা কিছু আছে তার সবই আল্লাহকে সিজদা করে।” এ আয়াতে সিজদার অর্থ হল বিনয়ের সঙ্গে আল্লাহর সেই বিধিবিধানের আনুগত্য করা যা তিনি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এ আয়াতে সিজদা বলতে আভিধানিক অর্থে কপাল মাটিতে ঠেকিয়ে আল্লাহর সামনে নত হওয়াকে বোঝানো হয়নি। বরং বলা হয়েছে, আসমান ও জমিনের সব সৃষ্টি তার আনুগত্য ও নিয়মকানুন সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছে।(রেডিও তেহরান)