পবিত্র কোরআন অবমাননা এবং চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবী মহল

বিভিন্ন জাতির পবিত্র বিষয়গুলোর অবমাননা বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী মহলের অন্যতম নোংরা কৌশল। ধর্মীয় নেতা, পবিত্র গ্রন্থ, পবিত্র স্থান এবং মুসলিম চিন্তাবিদদের হত্যা বা তাদের চরিত্র হননের চেষ্টা ঐতিহাসিক বিচার-বিশ্লেষণের দাবি রাখে। কারণ, যুগে যুগে এসব হামলা বার বার ঘটেছে এবং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)'র নেতৃত্বে সর্বশেষ খোদায়ি ধর্ম ইসলামের আবির্ভাবের পর থেকেই এ মহান ধর্মের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে।
১৯৮৯ সালে মুর্তাদ বৃটিশ লেখক সালমান রুশদীর "স্যাটানিক ভার্সেস" বা "শয়তানের পদাবলী" শীর্ষক উপন্যাস বের হওয়ার ঘটনা কোনো এক ব্যক্তির কাজ ছিল না। এর সাথে জড়িত ছিল ইঙ্গ-মার্কিন ও ইহুদিবাদী মহলসহ ইসলাম বিরোধী নানা মহল। সভ্যতা ও আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে টেরি জোন্স নামের একজন মার্কিন পাদ্রি সম্প্রতি পবিত্র কোরআন অবমাননার আরও একটি নোংরা কাজে জড়িত হয়েছে। যখন বিশ্বের জনগণের মধ্যে চলছে রাজনৈতিক ও সামাজিক জাগরণ তখন এ ধরনের একটি অশুভ ঘটনা জাতিগুলোর বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর হতাশা বা ক্ষোভকেই তুলে ধরছে।
পবিত্র কোরআন ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)'র প্রতি অবমাননা আসলে সকল খোদায়ী বা ঐশী ধর্মের অবমাননার শামিল। কারণ, অন্য নবী-রসুল ও ধর্মগ্রন্থের ধারাবাহিকতার নিদর্শন হলেন সর্বশেষ রসূল বিশ্বনবী (সাঃ) এবং পবিত্র মহাগ্রন্থ আল কোরআন। তাই সব বিবেকবান মানুষই এ ধরনের অবমাননার নিন্দা করছেন। ইসলামী ইরানের সংসদের আর্মেনিয় খৃষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি রবার্ট বেইগালরিয়ান পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, "পবিত্র কোরআনের আয়াতে হযরত ঈসা (আঃ) ও হযরত মরিয়ম (সাঃ)'র মর্যাদা সম্পর্কে বক্তব্য রয়েছে। তাই কোরআন অবমাননার ফলে হযরত ঈসা (আঃ) ও হযরত মরিয়ম (সাঃ)'রও অবমাননা করা হয়েছে বলে বিশ্বের সব খৃষ্টানই দুঃখিত। " ইরানের সংসদের অ্যাসিরিয় খৃষ্টান প্রতিনিধি বলেছেন, "কোরআন অবমাননার হোতা ও পৃষ্ঠপোষকরা বই পোড়ানোর মত অজ্ঞতার যুগে ফিরে গেছে এবং তারা এভাবে হযরত ঈসা (আঃ)'র অবমাননা করেছে।"
গির্যার ওই পাদ্রিরা হয়ত জানেন না, পবিত্র কোরআনের যুক্তিকে আগুনে পোড়ানো সম্ভব নয়। বরং এতে ওই অবমাননাকারীদের আত্মপরিচিতিই দগ্ধ হয়েছে। বিশ্ববিবেকের কাছে এইসব গোষ্ঠী চিরকালই নিন্দার পাত্র এবং ওইসব অশুভ শক্তি ধর্ম অবমাননা করে যা পেতে চেয়েছিল ঠিক তার বিপরীত ফলই তারা পেয়েছে। এর আগে ইসলাম বিরোধী সাম্রাজ্যবাদী মহল ১১ ই সেপ্টেম্বরের ঘটনাকে মুসলমানদের কাজ বলে প্রচার করায় পাশ্চাত্যে বহু শিক্ষিত মানুষ ও ছাত্ররা ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়েছে এবং ওই হামলার এক বছর পর পবিত্র কোরআন ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধিক বিক্রিত বই হিসেবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তি, গবেষক ও সত্য-পিপাসুরা বুঝতে পেরেছেন যে পবিত্র কোরআন শান্তি ও রহমত বা দয়ার ধর্ম এবং এ ধর্ম মানুষ হত্যার বিরোধী।
মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক রিক সানচেজ পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনা প্রসঙ্গে বলেছেন,"আমরা সব সময়ই শিশুদেরকে শেখাই কিভাবে তাদের মতভেদ শান্তিপূর্ণ পন্থায় নিরসন করা যায়, কিন্তু ট্যারি জোন্সের মত কিছু মার্কিন পাদ্রি এখনও সেটা শিখতে পারেননি। আমি যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি তখন এ প্রশ্ন আমার মধ্যে জেগেছে যে, মুসলমানরাও যদি খৃষ্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থ পোড়ায় তাহলে কি ঘটবে? নিঃসন্দেহে জোন্সের ওই কাজটি পুরোপুরি নির্বুদ্ধিতাসুলভ এবং এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও মার্কিন নাগরিকদের শোচনীয় পরিণতি ভোগ করতে হবে।"
জার্মানির ইসলামী পরিষদের সদস্য বোরহান উদ্দিন দাগ্ব বলেছেন, "প্রত্যেক দেশের সংবিধানে মানুষের মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। মানুষের ধর্ম বিশ্বাস ও মূল্যবোধ তার মর্যাদার নানা দিকের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। তাই পবিত্র কোরআন অবমাননা মানবাধিকার লংঘন এবং বিশ্ব মানবাধিকার ঘোষণার লংঘন।"
কলম্বিয়ার ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রধান জুলিন আর্থার জাপাতা পাশ্চাত্যে বাক স্বাধীনতা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে যৌন, সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রসহ নানা ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারী তৎপরতা চালু করতে দেয়ার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারের এইসব অবাধ লাইসেন্স পেয়েই একদল উগ্রবাদী মানুষ আরো বেশি ঔদ্ধত্য দেখিয়ে ধর্ম এবং নবী-রসুলের অবমাননা করছে বলে তিনি মনে করেন। জনাব জাপাতা পবিত্র কোরআন ও বাইবেল বা ইঞ্জিলের মত পবিত্র গ্রন্থগুলোকে মানব সভ্যতা বা ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানান। তিনি ধর্মীয় গ্রন্থগুলোকে রক্ষার জন্য সমন্বিত ও বৈশ্বিক পদক্ষেপ নিতে এবং এইসব গ্রন্থের অবমাননা রোধ করতে জাতিসংঘের বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর প্রতি আহ্বান জানান।
পবিত্র কোরআন অসীম জ্ঞানের অধিকারী মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। মানুষের জন্য সৌভাগ্য ও মুক্তির পথ দেখানো হয়েছে এ মহাগ্রন্থে। অজ্ঞ ও ধর্ম-বিদ্বেষী লোকদের শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও পবিত্র কোরআন কখনও বিকৃত হয়নি। মহান আল্লাহ নিজেই এ মহাগ্রন্থ রক্ষার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি সুরা হিজরের নয় নম্বর আয়াতে বলেছেন, "আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ পাঠিয়েছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।"
সুরা ফুসিলাতের ৪১ ও ৪২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, "নিশ্চয় যারা কোরআন আসার পর তা অস্বীকার করে, তাদের মধ্যে চিন্তা-ভাবনার অভাব রয়েছে। এটা অবশ্যই এক সম্মানিত বা অপরাজেয় গ্রন্থ। এতে মিথ্যার প্রভাব নেই, অতীতেও ছিল না ও ভবিষ্যতেও থাকবে না। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।"
মহানবী (সাঃ)'র হিজরতের ৫৩ বছর আগে আবরাহার নেতৃত্বে ইয়েমেনের খৃষ্টান বাহিনী কাবা ঘর ধ্বংস করতে এসেছিল। তারা আবদুল মোত্তালিবের ২০০ উট আটক করায় তিনি সেসব উট ছেড়ে দেয়ার জন্য ওই বাহিনীর কাছে আবেদন করেন। এ খবর শুনে আবরাহা বিস্মিত হন এবং কাবাঘরের সংরক্ষক বা খাদেম হিসেবে এ ঘরের ধ্বংস ঠেকানোর জন্য চিন্তা না করে কেন উটের চিন্তা করছেন এ প্রশ্ন করা হলে আবদুল মোত্তালিব বলেছেন, আমি হলাম উটের মালিক। আর এ ঘরের মালিক হলেন আল্লাহ, তিনি নিজেই জানেন এ ঘর কিভাবে রক্ষা করতে হবে!
মহান আল্লাহ কিভাবে আবরাহা ও তার হস্তি বাহিনীকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন তা মক্কাবাসীসহ ঐ অঞ্চলের সবাই প্রত্যক্ষ করেছে। পবিত্র কোরআনেও উল্লেখিত হয়েছে ওই ঘটনা।
গর্ভস্থ শিশু ও ভ্রুণ বিষয়ের বিখ্যাত বিশেষজ্ঞ ডক্টর কিট মুর পবিত্র কোরআনের এ সংক্রান্ত আয়াত অধ্যয়নের পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ওইসব আয়াতই প্রমাণ করে যে পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর গ্রন্থ এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রসূল, তা না হলে ১৪০০ বছর আগে মানুষের রচিত কোনো গ্রন্থ এত নিখুঁত ও উন্নত এবং বিজ্ঞানসম্মত তথ্য পরিবেশন করতে পারে না।(রেডিও তেহরান)