জ্ঞানীদের দৃষ্টিতে বিশ্বনবী (সা.)

পবিত্র কুরআনে সুরা আম্বিয়ার ১০৭ নম্বর আয়াতে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত বা মহাকরুণা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও সুরা আহজাবের ৫৬ নম্বর আয়াতেমহান আল্লাহ বলেছেন, "আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরুদ পাঠান। হেমুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালামপাঠাও।"
 
এ থেকে বোঝা যায়  মহানবী (সা.) মানব জাতিরজন্য মহান আল্লাহর সবচেয়ে বড় উপহার। নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে অভ্যস্ত কোনো অমুসলিম পণ্ডিতও কখনও বিশ্বনবী (সা.)'র অতুল ব্যক্তিত্বের অনন্য প্রভাব, মহত্তম মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠ গুণগুলোর কথা অস্বীকার করতে সক্ষম নন। কারণ, মানবসভ্যতার সবচেয়ে সমৃদ্ধ পর্যায়গুলোর প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বনবী (সা.)'রঅতুলনীয় মহত্ত্ব ও গুণের ছাপস্পষ্ট।
 
সুরা আহজাবের ৪৫ ও ৪৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,  "হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছিএবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী ও প্রদীপরূপে (প্রেরিত হয়েছি)।"
 
এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের সংযোগ-স্থলেমধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে ৫ জন ঐশী প্রেরিতপুরুষ বা রাসূল আবির্ভূত হয়েছেন যাঁরা রাসূলদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় বা "উলুল আয্‌ম" হিসেবে খ্যাত।  তাঁরা সবাই নানা পদ্ধতিতে একই বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন মানব-জাতির কাছে এবং তাদের লক্ষ্যও ছিল অভিন্ন। তাঁদের বক্তব্যে ছিল এক আল্লাহর প্রশংসা এবং  জুলুম ও অজ্ঞতার আঁধারে ছেয়ে যাওয়া বিশ্বে  ন্যায়-বিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠার কথা।
 
প্রলয়ংকরী ঝড় ও বন্যার পর যখন হযরত নূহ (আ.)'র কিশতি জুদি পাহাড়ে নোঙ্গর করে তখন এই মহান রাসূল ও তাঁর অল্প সংখ্যক অনুসারী বিশ্বকে নতুন করে গড়ে তোলার তথা মানব জাতির নতুন সভ্যতার ইতিহাস গড়ার কাজ শুরু করেন।
হযরত নুহ (আ.)'র পর বাবেল অঞ্চলে একত্ববাদ ও এক খোদার ইবাদতের আহ্বান জানিয়েছেন হযরত ইব্রাহিম (আ.)।
 
এরপর হযরত মূসা (আ.) তাঁর অলৌকিক লাঠি নিয়ে নিজ জাতিকে রক্তপিপাসু ও খোদাদ্রোহী সম্রাট ফেরাউনের হাত থেকে উদ্ধারের জন্য ততপর হন। ফেরাউন নিজেকে খোদা বলে দাবী করত এবং জনগণকে নিজের দাস করতে চেয়েছিল। এরপর আসলেন হযরত ঈসা (আ.)। তিনি দাসের মালিক ও  ক্রন্দনরত বঞ্চিত বা দুর্বলদের মধ্যে শোনালেন মহান আল্লাহর অশেষ দয়ার বাণী এবং দিয়েছেন সর্বশেষ রাসূল (সা.)'র আবির্ভাবের সুসংবাদ।
 
এরপর বিশ্বের জাতিগুলো যখন নানা ধরনের মনগড়া খোদা বা মূর্তির পূজা করছিল এবং অজ্ঞতা, উদাসীনতা ও কুসংস্কার সর্বত্র জেঁকে বসে তখন মক্কা শহরে ইসলামের চির-উজ্জ্বল মশাল নিয়ে আবির্ভূত হন বিশ্বনবী (সা.)। তিনি মানবীয় মর্যাদা, মানবাধিকার ও স্বাধীনতার বিষয়ে উপহার দেন সবচেয়ে সুন্দর এবং সর্বোত্তম বক্তব্য। এভাবে তিনি মানবজাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষকের অক্ষয় আসনে সমাসীন হন।
 
বিশ্বনবী(সা.)'র  মধ্যে সব নবী-রাসূল ও আওলিয়ার গুণের সমাবেশ ঘটেছে, তিনি  উচ্চতর সেইসব গুণাবলীর পরিপূর্ণ ওপরিপক্ক সংস্করণ-যেসব গুণ যুগে যুগে নবী-রাসূল ও আওলিয়ার মধ্যে দেখা গেছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিলউজমা খামেনেয়ির ভাষায়, " যখন মহানবী (সা.)'র পবিত্র নাম মুখে আনি, এর অর্থ যেন হযরত ইব্রাহিম (আ.), নুহ (আ.), মুসা (আ.), হযরত ঈসা (আ.), হযরত লোকমান (আ.) এবং সব সালেহ বা সত ও  খ্যাতনামা মহত  ব্যক্তিদের ব্যক্তিত্ব  বিশ্বনবী (সা.)'র মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে সমন্বিত, প্রতিফলিত ও প্রকাশিতহয়েছে।"
 
আজকের এই সভ্যতার যুগে ইসলাম ধর্ম ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি প্রতিক্রিয়াশীল এবং যুক্তি ও সত্যের অন্ধ-বিদ্বেষী মহলগুলো ঐশী ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে। তারা এলক্ষ্যে নানা ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে ও ষড়যন্ত্র করছে। ২০০৬ সালে এ ধরনেরই এক পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের আওতায় ডেনমার্কের "জিইল্যান্ড-পস্টেন"নামের একটি দৈনিক বিশ্বনবী  (সা.)'র প্রতি অবমাননাকর কিছু কার্টুন ছাপে।২০১১ সালে উগ্রবাদী মার্কিন পাদ্রি টেরি জোন্স পবিত্র কুরআন পোড়ানোর হুমকিদিয়ে ধর্ম-অবমাননার আরো এক জঘন্য নজীর প্রতিষ্ঠা করে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বনবী(সা.)'র প্রতি অবমাননাকর ছায়াছবি নির্মাণ ঐশী-ধর্মগুলোসহ ইসলামী ও উন্নত নৈতিক মূল্যবোধগুলোর বিরুদ্ধে এইসব  অন্ধ ও অশুভ চক্রের ক্রুসেড অব্যাহত রাখার জোর অপচেষ্টাই তুলে ধরছে।
 
অবশ্য বিশ্বনবী(সা.)'র পবিত্র চেহারা এতবেশী উন্নত, সুন্দর ও পছন্দনীয় গুণাবলীতে ভরপুর যে এইসব অন্ধ ও গোঁড়াচক্রের অবমাননায় তাঁর চির-উজ্জ্বল চেহারা বা সম্মানের বিন্দুমাত্র হানিঘটবে না। যাদের মধ্যে জ্ঞানের বিন্দুমাত্র প্রভাব নেই এবং  যারা অজ্ঞতা ওঅন্ধ-বিদ্বেষের দাস কেবল তারাই এই মহামানবকে নিয়ে ঠাট্টা ও উপহাস করতে পারেন। আর ইতিহাসই এর জ্বলন্ত সাক্ষ্য।
 
প্রামাণ্য ছায়াছবি নির্মাতা আব্বাসলা-জাওয়ার্দি কিছুকাল আগে " কোন্ স্বাধীনতা" শীর্ষক একটি ছায়াছবি নির্মাণেরজন্য পশ্চিমা দেশগুলো সফর করেছিলেন। তিনি নিরাপত্তা প্রহরীদের কড়াকড়ি সত্ত্বেও কুখ্যাত পাদ্রি টেরি জোন্স ও ডেনমার্কের কার্টুনিস্ট কুর্টওয়েস্টগার্ডের সাক্ষাতকার নিতে সক্ষম হন।  তিনি তাদেরকে প্রশ্ন করেন:আপনারা কি কুরআন পড়েছেন? তারা দু'জনই উত্তর দেয় যে, কখনও তারা এই মহাগ্রন্থ পড়েনি এবং কুরআন না পড়েই তারা মহানবী (সা.) ও কুরআন-অবমাননার পদক্ষেপ নিয়েছে।
অধ্যাপক হরপ্রাসাদ শাস্ত্রী বলেছেন, "যখন ইউরোপ কুরুচি ও মূর্খতার গভীর গহ্বরে নিমজ্জিত ছিল, যখনই উরোপীয় রাজধানীতে ডাইনী সন্দেহ করে নারীদের জীবন্ত পোড়ান হত, জ্ঞানার্জনকে ঘৃণার চোখে দেখা হত, তখন মুসলমানেরা স্পেনের প্রতিটি গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করে এবং শিল্প, বিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন ও  শিক্ষা বিলি করছিল।"
 
স্যার উইলিয়াম মূর বলেছেন, "সর্বশ্রেণীর ঐতিহাসিকরা একবাক্যে হযরত মুহাম্মদের যৌবনকালীন স্বভাবের শিষ্টতা ও আচার ব্যবহারের পবিত্রতা স্বীকার করেছেন। এরকম গুণাবলী সে সময় মক্কাবাসীর মাঝে বিরল ছিল। এই সরল প্রকৃতির যুবকের সুন্দর চরিত্র, সদাচরণ তার স্বদেশবাসীর প্রশংসা অর্জন করে এবং তিনি সর্বসম্মতিক্রমে "আল-আমিন"বা বিশ্বাসী উপাধি পান।"
 
বাসওয়ার্থ স্মিথ বলেছেন,
"হযরত মুহাম্মাদ একাধারে সিজারের মত শাসনতন্ত্রের শীর্ষভাগে ছিলেন আবার পোপের মত ধর্ম মন্দিরের উচ্চ আসনেও সমাসীন ছিলেন। কিন্তু তাঁর পোপের মত জাঁকজমক ও সিজারের মত সেনাবল ছিলনা। বেতনভোগী সেনা, দেহরক্ষী সেনা, রাজকীয় প্রাসাদ ও নির্ধারিত রাজস্ব ছাড়া স্বর্গীয় অধিকারবলে রাজত্ব দাবী করার একমাত্র দাবীদার কেবল হযরত মুহাম্মাদই। কারণ ক্ষমতার উপকরণ ও আশ্রয় ছাড়াই তিনি সব ধরনের ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন।"
জন ডেভেনপোর্ট বলেছেন,
"ইসলাম কখনো অন্য কোন ধর্মমতে হস্তক্ষেপ করেনি। কখনো ধর্মের জন্য নির্যাতন, ধর্মমত বিরোধীদের দণ্ডের ব্যবস্থা কিংবাদীক্ষা ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগ করেনি।ইসলাম তার মত বা বক্তব্য জগতের সবার সামনেতুলে ধরেছে কিন্তু কখনো কাউকে তাঁর মত গ্রহণে বাধ্য করেনি। ইসলাম আশপাশের দেশগুলোতে তৎকালে প্রচলিত শিশুহত্যা ও আরবের দাসত্ব প্রথা তিরোহিত করেছে। ইসলাম কেবল এর অনুসারীদের উপরই নয়, বাহুবলে বিজিত সবার উপরই সমভাবে নিরপেক্ষ বিচার স্থাপন করেছে।"
তাইতো কুরআনে আল্লাহ বলেছেন,
"আমি তো তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না (সুরা সাবা: ২৮ আয়াত)
দুই
পবিত্র কুরআনে সুরা আম্বিয়ার ১০৭ নম্বর আয়াতে বিশ্বনবী হযরত  মুহাম্মাদ (সা.)-কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত বা মহাকরুণাহিসেবে  উল্লেখ করে বলা হয়েছে:
আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত হিসেবেই পাঠিয়েছি।
 
সূর্য যেমন বিশ্বকে আলোকিত করে তেমনি নবী-রাসূলরা আলোকিত করেন মানুষের মন, চিন্তা ও আচরণ। মানব-সভ্যতা মূলত তাদের মাধ্যমেই এগিয়ে যাচ্ছে পূর্ণতার দিকে। মানব সভ্যতার বিকাশ, সমৃদ্ধি ও মানুষের জ্ঞানগত উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র রেখে যাওয়া আলোকিত ঐশী-শিক্ষা। তাঁর মহতী ও আলোকিত শিক্ষার গুণে  কুসংস্কারাচ্ছন্ন, বেদুইন এবং রুক্ষ প্রকৃতির আরব জাতি সভ্য, উদার, দয়ালু ও শিক্ষানুরাগী জাতিতে পরিণত হয়।
কোনো এক যুদ্ধে একদল আহত মুসলমান পিপাসা-কাতর অবস্থায় মাটিতে পড়েছিল।  কোনো এক মুজাহিদ আহত সহযোদ্ধাদের জন্যপানি নিয়ে আসলে প্রত্যেকেই পানি পান করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ওই পানি অন্য কোনো আহত ভাইকে দিতে বলে। ফলে তাদের সবাই তৃষ্ণার্ত অবস্থায় শহীদ হন।
 
ইসলাম জ্ঞান চর্চার ওপর অশেষ গুরুত্বদেয়ায় মুসলমানরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে শীর্ষ স্থান অধিকার করেছিল। ইসলামের সেই সোনালী সভ্যতা নির্মাণে ইরানের  মুসলিম জ্ঞানী-গুণীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। পূর্ব ও দক্ষিণ ইউরোপও মুসলিম বিজয়ের সুবাদে  উচ্চতর জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোকিত কেন্দ্রে পরিণত হয়। বিশ্বনবী (সা.)’র আলোকিত শিক্ষায় ও পবিত্র কুরআনে জ্ঞান শিক্ষার ওপর ব্যাপক গুরুত্ব আরোপের কারণেই ওই সোনালী সভ্যতা গড়া সম্ভব হয়েছিল।
 
অথচ মানবতার মুক্তির দূত ও মানবীয় চরিত্রের সর্বোত্তম আদর্শ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র অবমাননার ঘটনা ও ঘটতে দেখা গেছে যুগে যুগে।  কিন্তু অজ্ঞতা ও অন্ধকারের শক্তিগুলোর শতবিরোধিতা ও ষড়যন্ত্র সত্ত্বে বিশ্বনবী (সা.)’র খ্যাতি ও মর্যাদা  দিনকে দিন বাড়ছে এবং তাঁর চির-উজ্জ্বল গুণগুলোর প্রভাবও মানুষের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে।
এমনকি নিরপেক্ষ অমুসলিম বিশ্লেষক, বিশেষজ্ঞ ও পণ্ডিতরাও একবাক্যে বিশ্বনবী (সা.)’র অতুল মহত্ত্বের কথা দ্বিধাহীন ভাবে ও মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেছেন যুগে যুগে।
ঊনবিংশ শতকের বিশিষ্ট জার্মান লেখক, কবি ও রাজনীতিবিদ গ্যাটে বিশ্বনবী (সা.)’র অসাধারণ নানা সাফল্য ও মর্যাদার প্রাচুর্যে বিমুগ্ধ হয়ে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেছেন,
 
“আমরা ইউরোপীয়রা আমাদের সব ধ্যান-ধারণা নিয়েও এখনও সেইসব বিষয় অর্জন করতে পারিনি যা অর্জন করেছেন মুহাম্মাদ এবং কেউই তাঁকে কখনও  অতিক্রম করতে পারবে না। আমি ইতিহাসে অনুকরণীয় মানুষের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত খুঁজতে গিয়ে  এ ক্ষেত্রে কেবল নবী মুহাম্মাদকেই খুঁজে পেয়েছি; আর এভাবেই সত্য অবশ্যই বিজয়ী হবে ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসন গ্রহণ করবে, কারণ, মুহাম্মাদ সারা বিশ্বকে বশ করেছেন স্বর্গীয় বা ঐশী একত্ববাদের বাণীর মাধ্যমে । ”
 
পাশ্চাত্যের বিশিষ্ট খ্রিস্টান ঐতিহাসিক আর.এফ বুদলি বিশ্বনবী (সা.)’র প্রতি একদল  ব্যক্তির নানা অপবাদের নিন্দা জানিয়ে“ মুহাম্মাদ (সা.)’র জীবনী” শীর্ষক বইয়ে লিখেছেন,
“এটা বর্তমান যুগের  অন্যতম অদ্ভুত ব্যাপার যে কোনো যুক্তি বা কারণ ছাড়াই বিশ্বের একদল মানুষ মুহাম্মাদ (সা.)সম্পর্কে একই ধরনের কিছু নেতিবাচক সন্দেহ পোষণ করছেন। অথচ মুহাম্মাদ (সা.)’র জীবন খুবই স্পষ্টও স্বচ্ছ। আমি মুহাম্মাদ (সা.)-কে নিয়ে লিখিত একটি বই পড়েছি যেখানে তাঁর বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য লেখা হয়েছে। লেখক বইটির বেশ কিছু পৃষ্ঠায় অযৌক্তিক ও অবান্তর বক্তব্য রেখে সেই পৃষ্ঠাগুলোকে কালিমালিপ্ত করেছেন। অথচ তিনি আমাদেরকে এ ব্যাপারে কী ব্যাখ্যা দেবেন যে এমন একজন মানুষ কিভাবে মানুষের উন্নতির জন্য এমন উন্নত ও  কার্যকর বিধান আনতে পেরেছেন? কিভাবে তিনি একদল মানুষকে এমনভাবে প্রশিক্ষিত করতে পেরেছেন যে তারা খুব কম সময়ের মধ্যেই এমন বিশাল ও গৌরবময় ইসলামী সভ্যতার ভিত্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হন এবং প্রাথমিক কিছু পদক্ষেপের সুবাদেই বড় বড় জাতিগুলোকে এই সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হয়?”
 
পাশ্চাত্যের বিশিষ্ট খ্রিস্টান ঐতিহাসিক আর.এফ বুদলি আরো বলেছেন, “মরুচারী আরবদেরকে অনুগত করা ছিল মুহাম্মাদ (সা.)’র বড় ধরনের সাফল্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাঁর এই সাফল্যকে সবচেয়ে বড় অলৌকিক ঘটনাগুলোর সমতুল্য বলা যায়। তিনি এইসব গোত্র ও জাতির মধ্যে বিস্ময়কর একতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। মুহাম্মাদ (সা.)’র জীবনী নিয়ে চিন্তা করতেগেলে মানুষ তাঁর প্রজ্ঞা বা দূরদৃষ্টি ও বিচক্ষণতা সম্পর্কে অভিভূত হয় এবংতারা মুহাম্মাদ (সা.)-কে এমন এক জীবন্ত মানুষ বলে মনে করেন যাঁর মৃত্যুহবে না কোনো যুগেই ।”
ব্রিটেনের বিখ্যাত ঐতিহাসিক থমাস কার্লাইল মুহাম্মাদ (সা.)’র পবিত্রতা সম্পর্কে একদল গোঁড়া বা  অন্ধ-বিদ্বেষীব্যক্তির অবমাননাকে তাদের যুক্তির দুর্বলতার ফসল বলে মনে করেন। কার্লাইল বলেছেন,
 
“আজকের যুগের সভ্য মানুষের জন্য এটা খুব বড় রকমের বিচ্যুতি যে, মুহাম্মাদ (সা.) প্রতারক ছিলেন-এমন কথা বিশ্বাস করা। এ ধরনের লজ্জাজনক ও অর্থহীন কথার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার সময় হয়েছে আজ ।কারণ, তিনি যে বাণী ও ধর্ম এনেছেন তা শত শত বছর ধরে অত্যুজ্জ্বল প্রদীপেরমত আলো বিকিরণ করছে। আমার প্রিয় ভায়েরা! আপনাদের কেউ কি কখনও দেখেছেন একজন মিথ্যাবাদী এমন পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ ধর্ম গড়তে এবং তা সারা বিশ্বে ছড়িয়েদিতে সক্ষম। স্রষ্টার শপথ করে বলছি এ ধরনের অভিযোগ খুবই অদ্ভুত। কারণ, একজন অজ্ঞ ব্যক্তি একটি ঘর নির্মাণেরই ক্ষমতা রাখেন না। আর এমন ব্যক্তি কিভাবে ইসলামের মত একটি ধর্ম মানব সমাজের কাছে উপহার দিতে পারেন?”
কার্লাইল আরো লিখেছেন,
 
“এটা খুবই বড় ধরনের সমস্যা ও যন্ত্রণাদায়ক ব্যাপার যে বিশ্বের জাতিগুলো যুক্তি ও বুদ্ধিমত্তার ওপর ভর না করেই এধরনের বোকামীপূর্ণ অভিযোগ মেনে নিচ্ছেন! আমি বলব, এটা অসম্ভব যে এই মহান ব্যক্তি তথা মুহাম্মাদ (সা.) অবাস্তব কোনো কথা বলেছেন। তাঁর জীবন ইতিহাস থেকেই জানা যায়  তিনি যৌবনকালেই জ্ঞানী ও চিন্তাশীল ছিলেন। মুহাম্মাদের (সা.) জীবনের ভিত্তি ও তাঁর সব কাজ এবং পছন্দনীয় গুণগুলো সত্য ও পবিত্রতা-ভিত্তিক। আপনারা তাঁর বক্তব্যগুলো লক্ষ্য করুন, তাতে কি ঐশী বাণী ও অলৌকিকতা দেখা যায় না? এই মানুষ অস্তিত্বের অসীম উতস (তথা আল্লাহর কাছ)থেকে মানুষের জন্য বাণী বয়ে এনেছেন।  মহান আল্লাহই এই মহান ব্যক্তিকে জ্ঞানও প্রজ্ঞা শিখিয়েছেন।”