জাপানি নও-মুসলিম 'তাকেওচি'

সমাজ বিশেষজ্ঞ 'তাকেওচি' বহু বছর ধরে নানা ধর্ম নিয়ে গবেষণা করেছেন। গবেষণা করে তিনি এ সত্যে উপনীত হয়েছেন যে, মানুষের জন্য সুস্থ ও সৌভাগ্যময় জীবনের সবচেয়ে ভাল পথ দেখিয়েছে ইসলাম। তার মতে, ইসলাম মানুষের জীবনের সব দিকে দৃষ্টি দিয়েছে, আর এটাই ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ।
 
জাপানি নও-মুসলিম 'তাকেওচি' এ প্রসঙ্গে বলেছেন, " ইসলাম শরীর ও আত্মার মধ্যে কোনো বিভেদ বা দূরত্ব সৃষ্টি করেনি। কারণ, আধ্যাত্মিকতা ও বস্তুগত চাহিদা- এ দুইই মানুষের জীবনের অংশ।"
 
আসলে ইসলাম পরকাল ও ইহকাল এ দুই বিষয়ে ভারসাম্য রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলাম শুধু বস্তুবাদী হওয়া, আবার শুধুই বৈরাগ্যবাদ বা দুনিয়াত্যাগ- এ দুটোকেই সমর্থন করে না। তাই পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত মুসলমানদের প্রাত্যহিক বা বহুল প্রচলিত একটি দোয়ায় পরিণত হয়েছে। এই আয়াতে বলা হয়েছে: "হে আল্লাহ, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে রক্ষা কর দোযখের আগুন থেকে।"
 
জাপানি নও-মুসলিম 'তাকেওচি 'তাকেওচি' ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মা ও শরীরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রসঙ্গে বলেছেন, "
 
"ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের শরীর ও আত্মার মধ্যে রয়েছে সমন্বয়। ইসলাম জীবনের সব দিককে গুরুত্ব দেয়। ইসলাম ঘরকুনো হওয়া বা বৈরাগ্যবাদকে মুক্তি ও সাফল্যের পথ বলে মনে করে না। আমি বৌদ্ধ ধর্ম ও খৃস্ট ধর্ম সম্পর্কেও পড়াশুনা করেছি। এ দুই ধর্মই পার্থিব বা বস্তুগত জীবন ও আধ্যাত্মিক জীবনের প্রতি আগ্রহকে পরস্পর থেকে পৃথক করেছে এবং বৈরাগ্যবাদকে উতসাহ দেয়। বৌদ্ধদের কোনো কোনো গ্রুপ তাদের উপাসনালয়কে অত্যন্ত দূরে জনমানবহীন অঞ্চলে পাহাড়ের ওপর নির্মাণ করে, ফলে সাধারণ বৌদ্ধ জনগণকে অত্যন্ত কষ্ট করে এসব উপাসনালয়ে যেতে হয়। এভাবে তারা ধর্মীয় জীবনকে সাধারণ জীবন থেকে পৃথক করে ফেলেছে। কিন্তু মুসলমানদের মসজিদগুলো নির্মিত হয় সমাজেরই ভেতরে এবং সমাজের প্রাণ-কেন্দ্রে। মুসলমানরা সম্মিলিতভাবে ইবাদত-বন্দেগিতে ও প্রার্থনায় অংশ নেয় এবং এ ধরনের জামায়াত বা সম্মিলিত ইবাদতকে ইসলামে ব্যাপক উতসাহ দিয়ে থাকে।"
 
ইসলামের বিশ্বজনীনতা ও সার্বজনীনতা তথা বিশেষ কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে এ ধর্মের সীমিত না থাকার বিষয়টি জাপানি গবেষক 'তাকেওচি'-কে অভিভুত করেছে। এমনকি যারা ইসলামে বিশ্বাসী নয় তারাও জানেন যে, এই ধর্মের আহ্বান সার্বজনীন এবং তা বিশেষ কোনো অঞ্চল বা জাতির প্রতি সীমিত নয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ইরান, রোম, মিশর, আবিসিনিয়া (ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়া সংলগ্ন অঞ্চল), প্রাচীন সিরিয়া বা শাম অঞ্চল এবং আরব গোত্রপ্রধানদের কাছে চিঠি লিখে তাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন। ইসলাম যদি বিশ্বজনীন ও  সব অঞ্চলের মানুষের ধর্ম না হত তাহলে এভাবে সর্বত্র ইসলামের দাওয়াত পাঠাতেন না মহানবী (সা.) এবং এর ব্যতিক্রম হলে অন্য জাতিগুলোও এই ধর্ম গ্রহণ না করার জন্য এই অজুহাত দেখাত যে, এ ধর্ম তো কেবল বিশেষ অঞ্চল বা জাতির জন্য সীমিত। পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতে ইসলামকে সব যুগের মানুষদের ধর্ম বলা হয়েছে। কুরআনে সব মানুষের প্রতি আহ্বান রয়েছে। যেমন, বলা হয়েছে, হে মানব জাতি! বা হে আদম-সন্তানেরা! কুরআন নিজেকে সব মানুষের জন্য পথ-নির্দেশনা বলে উল্লেখ করেছে।
 
 
জাপানি বিশেষজ্ঞ 'তাকেওচি' আরো বলেছেন, "এ ছাড়াও পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতে সত্য ধর্ম হিসেবে ইসলাম বিশ্বের সব মতবাদকেন্দ্রীক রাষ্ট্রের ওপর বিজয়ী হবে বলে ওয়াদা দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, ইসলাম বিশ্বব্যাপী সুদৃঢ় সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।"
 
জাপানি নও-মুসলিম 'তাকেওচি'  ইসলামের সার্বজনীনতা ও বিশ্বজনীনতাকে এ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম দিক বলে মনে করেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, " ইসলাম বিশেষ কোনো সম্প্রদায়ের ধর্ম নয়।  আমার মতে এটি একটি আন্তর্জাতিক ও সার্বজনীন ধর্ম। পাকিস্তানী, ইউরোপীয়, চীনা কিংবা জাপানি – সবাইই ইসলামের বক্তব্যের শ্রোতা হতে পারেন সহজেই। সবাইই ইসলামের শিক্ষা উপলব্ধি করতে পারেন। শান্তিকামীতা, মানব-প্রেম বা মানব-কল্যাণ, ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, কল্যাণকামীতা, অন্যান্য ঐশী ধর্মের অনুসারীদের সঙ্গে সহনশীল হওয়া- এইসব বিষয় ইসলামে ব্যাপক গুরুত্ব পেয়েছে। ইসলামের শিক্ষাগুলো ১৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনো ধরনের বিকৃতি ছাড়াই টিকে আছে এবং ইসলামের জীবন্ত ও প্রাণবন্ত শিক্ষাগুলো নানা ক্ষেত্রে মানুষের চাহিদাগুলোর জবাব দিচ্ছে।"
 
পশ্চিমা মতাদর্শগুলো খোদার প্রতি বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতাকে ম্লান করেছে। তাদের কথিত মানবতাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা তথা বস্তুবাদ মানুষের জন্য স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের কথা বললেও বাস্তবে তা অর্জন করতে পারেনি। এইসব মতবাদে বিশ্বাসীরা বিজ্ঞানের কিছু অর্জনকে কাজে লাগিয়ে বিচিত্র পন্থায় ভোগবাদকে উস্কে দিলেও অর্থহীনতা থেকে মুক্তি পায়নি এবং তারা আত্মিক প্রশান্তি অর্জনেও ব্যর্থ হয়েছে। এর অন্যতম বড় কারণ হল তাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ধর্ম তথা খোদায়ী নির্দেশনার অনুপস্থিতি। তারা মানুষের কিছু বস্তুগত চাহিদা মেটাতে সক্ষম হলেও মানুষের আত্মিক ও চিন্তাগত চাহিদাগুলো মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে পশ্চিমা জনগণ অনুভব করছে শুণ্যতা। এভাবে আধুনিকতার নামে যান্ত্রিক বর্বরতার শিকার করা হয়েছে মানব জাতিকে। যান্ত্রিকতার দাসত্ব মানুষের মধ্যে বাড়িয়ে দিয়েছে হানাহানি, উত্তেজনা ও হতাশা। জাপানি নও-মুসলিম 'তাকেওচি' জাপানি জনগণের চাহিদা ও অনুভূতি তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন:
 
 
 "বর্তমান যুগে জাপান শিল্প-প্রযুক্তির দিক থেকে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। প্রযুক্তিগত বিপ্লবের প্রভাবে এখানকার মানুষ হয়ে পড়েছে বস্তুতান্ত্রিক। আমরা জাপানিরা এখন দিন-রাত কাজ করছি যাতে আয়-উপার্জন, বাণিজ্য ও শিল্প খাতের বর্তমান রমরমা অবস্থা ধরে রাখা যায়। বস্তুতান্ত্রিকতায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত জাপানি সমাজে আধ্যাত্মিকতা খুবই ম্লান হয়ে পড়েছে। আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে মাথা ঘামানোর মত যথেষ্ট সময় জাপানিদের নেই। এভাবে আমরা আত্মিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে দিনকে দিন দরিদ্র হয়ে পড়ছি। আমার নিশ্চিত বিশ্বাস এটা যে, এ অবস্থাই জাপানে ইসলাম প্রচারের জন্য সবচেয়ে ভাল সুযোগ। কারণ, বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশগুলো আধ্যাত্মিক শুণ্যতার মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছে।"
 
জাপানি নও-মুসলিম 'তাকেওচি' ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর নিজের জন্য মুহাম্মাদ সোলায়মান নামটি বেছে নিয়েছেন। তিনি দূর প্রাচ্যে ইসলামের ভবিষ্যত প্রসঙ্গে বলেছেন:
 
"ইসলাম অত্যন্ত জৌলুশ নিয়ে দূর প্রাচ্যে আবির্ভূত হবে। আর এটা হবে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য এক অতি মহান ও বিশাল নেয়ামত।"#