ধৈর্য ও সহনশীলতা

‘সাবর’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো বাধা দেয়া, বিরত রাখা ও বেঁধে রাখা। আর পারিভাষিক অর্থ হলো- বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট, ক্ষুধা-তৃষ্ণা, অত্যাচার-অনাচার, অসুস্থতা, রোগ-ব্যাধি ও বিচ্ছেদের মতো সংকটগুলোর মোকাবেলায় বিচলিত ও অস্থির না হয়ে বিপদ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার চেষ্টা করা এবং আল্লাহর সাহায্যের অপেক্ষা করা। ধৈর্য হচ্ছে মানুষের এমন একটা গুন,যার কারণে সে অসুন্দর ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে। এটি মানুষের একটি অন্তর্গত শক্তি, যা দিয়ে সে নিজেকে সুস্থ ও সুরক্ষিত রাখতে পারে। হিজরি ১৩ শতাব্দীর বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মোল্লা আহমাদ নারাকি তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মিরাজুস সায়াদাত’এ লিখেছেন, ‘সবর বা ধৈর্য ধারণ হলো- ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তা। অস্থির না হওয়া। বালা-মুসিবতকে মোকাবিলা করা। আর বালা-মুসিবতকে এমনভাবে মোকাবিলা করা, যাতে এর ফলে ব্যক্তির অন্তর উদ্বেলিত না হয় এবং মানসিক প্রশান্তি বজায় থাকে।  পাশাপাশি নিজের জিহ্বাকে অভিযোগ-অনুযোগ করা থেকে বিরত রাখা এবং দেহের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে অস্বাভাবিক কাজ থেকে দূরে রাখা।’ ঈমান সম্পর্কে রাসূল (সা.)কে প্রশ্ন করা হলে তিনি এক কথায় বলেছিলেন, ‘ঈমান হচ্ছে ধৈর্য ধারণ।’  
 
পৃথিবীর জীবনে সমস্যা-সংকট ও বাধা-বিপত্তির অন্ত নেই। মানুষ তার ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমেই এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পায় এবং লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জনে সক্ষম হয়। এ কারণে ধৈর্যকে যে কোনো সাফল্যের চাবিকাঠি হিসেবে গণ্য করা হয়। পৃথিবীতে যারা সুন্দর জীবন গড়েছে, তারা ধৈর্যের মাধ্যমেই তা করতে পেরেছে। অনেকে ধৈর্যের মাধ্যমে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরেও আরোহণ করতে সক্ষম হয়েছে। এ ধরনের ব্যক্তি যেমন দুঃসময়ে ধৈর্য ধারণ করে, তেমনি সু-সময় এলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। ধৈর্য ধারণ করলে সুখ ও প্রশান্তি আসবেই। যেমনিভাবে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা তালাকের ৭ নম্বর আয়াতে বলেছেন, আল্লাহ শিগগিরই কষ্টের পর দেবেন স্বস্তি। এ আয়াতেও এটা স্পষ্ট যে, কষ্টের পর সুখ ও স্বস্তি আসবেই। কিন্তু কষ্টের সেই সময়টুকুতে ধৈর্য ধরতে পারলেই সুখ অর্জন করা সম্ভব হবে।
 
যে কোনো দুঃখ-দুর্দশার মধ্যদিয়ে মানুষের ধৈর্য শক্তি ও সহ্য ক্ষমতা বাড়ে। ধৈর্য ধারণ এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এটা ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভ সম্ভব হয় না। ধৈর্যশীলরা খারাপ কাজের জবাব দিতে পারে ভালো ভাবে এবং  সত পন্থায়। সূরা ফুসসিলাতের ৩৫ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ধৈর্যশীল ছাড়া এ গুণ আর কারো ভাগ্যে জোটে না এবং অতি ভাগ্যবান ছাড়া এ মর্যাদা আর কেউ লাভ করতে পারে না।’ ধৈর্যশীলদেরকে পুরস্কৃত করার বিষয়ে কুরআনে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। পবিত্র কুরআনের সুরা লুকমানের ১৭ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘হে আমার প্রিয় বৎস, নামাজ কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও, অসৎকাজে নিষেধ কর এবং তোমার ওপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্য ধারণ কর। নিশ্চয় এগুলো অন্যতম দৃঢ় সংকল্পের কাজ।’
 
ইহজগতে এমন কোনো কাজ নেই যা ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা ছাড়া সমাধান করা যেতে পারে। তাই মানবজীবনে ধৈর্যের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি মানবজাতির একটি মহৎ গুণ। মানুষ পৃথিবীতে ব্যক্তিগত,পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ছোটবড় বহু ধরনের দুঃখ-কষ্ট, বাধা-বিপত্তি, দ্বন্দ্ব-কলহ, বিবাদ-বিসংবাদের সম্মুখীন হয়। কিন্তু মানুষ ধৈর্য ধারণের মাধ্যমে এসব বাধা-বিপত্তি ও দুঃখ-কষ্ট অতিক্রম করে নিজের লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। বাধা-বিপত্তি ও দুঃখ-কষ্টে ভারাক্রান্ত না হয়ে সবাইকে ধৈর্যের মাধ্যমে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সচেষ্ট হতে হবে এবং বিপদ-আপদে ও বালা-মুসিবতে ধৈর্য ধারণের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে এ প্রার্থনা করতে হবে যে, ‘হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপিয়ে দিয়ো না-যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই।’ স্বয়ং আল্লাহই পবিত্র কুরআনে এ পথ বাতলে দিয়েছেন। ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করলে তিনি খুশি হন। মনে রাখতে হবে- সৎপথ পাওয়া মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। আর এ সত পথ পাওয়ার জন্য ধৈর্য দরকার। রাসুলুল্লাহ (সা.)’র গোটা জীবনই ছিল ধৈর্যের আদর্শ।
 
মহানবী (সা.) যখন আল্লাহর একত্ববাদ প্রচারে অটল,মক্কার বিধর্মীরা তখন দেখল যে প্রলোভন, ভীতি ও অকথ্য নির্যাতন তথা কোনো কিছুর মাধ্যমেই তাকে দমন করা যাচ্ছে না, বরং ইসলামের অনুসারীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, এ অবস্থায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে সামাজিকভাবে বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিলো। তারা মহানবী (সা.) ও তার অনুসারীদের সঙ্গে ওঠা-বসা, বেচাকেনা, লেনদেন এমনকি খাদ্য ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে অবরোধ আরোপ করলো। এ ধরনের দুর্দিনেও রাসুলুল্লাহ (সা.) ধৈর্য হারাননি, বরং তিনি আল্লাহর ওপর ভরসা করে সব সহ্য করে গেলেন। পরে কুরাইশরা নিজেদের ভুল বুঝে তাদের বর্জননীতি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।
 
তবে ধৈর্য ধারণ খুব সহজ কাজ নয়, সবার পক্ষে তা সম্ভব হয় না। এ জন্য ধৈর্যের অনুশীলন প্রয়োজন। অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষের এ গুনটি বিকশিত হয়। আল্লাহকে সঠিক ভাবে চিনতে পারলে এবং আল্লাহর ওপর বিশ্বাস সুদৃঢ় হলে ধৈর্য-শক্তি বাড়ে।
 
মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের অত্যন্ত ভালোবাসেন। এ প্রসঙ্গে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা তুলে ধরা যেতে পারে। ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন বিশ্বনবী (সা.)’র আহলে বাইতের সদস্য ইমাম জাফর সাদেক (আ.)।
 
ঘটনা এরকম। হঠাতই একদিন আল্লাহতায়ালা হজরত দাউদ (আ.)’র ওপর ওহি নাজিল  করলেন। দাউদ (আ.)কে আল্লাহ বললেন- ‘খালোদে’ নামের এক মহিলা আছে। আপনি তার কাছে গিয়ে এ সুসংবাদ পৌঁছে দিন যে, সে বেহেশতবাসী হবে এবং বেহেশতে তার স্থান হবে আপনার সঙ্গে। দাউদ (আ.) ওই মহিলার বাসায় গিয়ে দরজায় কড়া নাড়লেন। শব্দ শুনে তিনি বেরিয়ে এসে বললেন- কী ব্যাপার আপনি এখানে কেন? দাউদ(আ.) বললেন- আল্লাহ আমাকে ওহির মাধ্যমে জানিয়েছেন বেহেশতে আপনি আমার সঙ্গী হবেন। খালোদে নামের ওই মহিলা এ খবর শুনে বললেন- আপনার কথা উড়িয়ে দিচ্ছি না। কিন্তু আল্লাহর কসম-আমার ভেতর এ ধরনের যোগ্যতা নেই। তবে জানালেন যে, তিনি যে কোনো বিপদে-আপদে ধৈর্য ধারণ করেছেন। দুঃখ-কষ্ট মেনে নিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছেন।
মানুষের ধৈর্য-শক্তি বৃদ্ধির পেছনে ধর্মীয় জ্ঞান ও ঈমানি শক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ধৈর্যশক্তি মানুষের জন্য সত কাজের সুযোগ ও ক্ষেত্র সৃষ্টি করে। পাশাপাশি এর মাধ্যমে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা যায়। যারা ধৈর্যশীল হয়, তারা পরকালে পুরস্কারতো পায়ই, একইসঙ্গে ইহকালীন জীবনেও সাফল্য পায় এবং তাদের জীবন হয় প্রশান্তিময়। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে ধৈর্যশীলদের। এ ধরনের ব্যক্তিরা নিরর্থক অভিযোগ-অনুযোগ ও অন্যায় আচরণের মাধ্যমে অস্থির হয়ে ওঠে না বরং আল্লাহর সন্তুষ্টিকে গুরুত্ব দিয়ে নিজের প্রশান্তি নিশ্চিত করে। আল্লাহ যে কল্যাণকামী, সে বিষয়টি ধৈর্যশীল ব্যক্তিরা বিশ্বাস করেন এবং তিনি সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞানী, সবচেয়ে দয়াময়। এ কারণে এ ধরনের ব্যক্তিরা অনাকাঙ্খিত বিপদ-আপদের ধৈর্য হারায় না। দুঃখ-কষ্টের মাঝেও চূড়ান্ত কল্যাণ খোঁজার চেষ্টা চালায় এ ধরনের ব্যক্তিরা। এর ফলে সব ধরনের দুঃখ-কষ্টের মাঝেও শান্তভাব বজায় রাখে এবং অসদাচরণ থেকে বিরত থাকে।
 
বাংলা ভাষায় প্রচলিত একটি বাক্য হচ্ছে, ‘সবুরে মেওয়া ফলে।’ ইতিহাসের সফল ব্যক্তিদের জীবন পর্যালোচনা করলেও এটা স্পষ্ট হয় যে, তাদের বিজয়ের পেছনে ধৈর্য শক্তি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। যাদের ধৈর্যশক্তি নেই, তারা সামান্য বিপদেও ভেঙে পড়েন। কিন্তু ধৈর্যশীলরা একবার না পারিলে দেখো শতবার’-এই নীতিতে বিশ্বাস করেন। মার্কিন বিজ্ঞানী টমাস এডিসন  বৈদ্যুতিক বাতি তৈরির জন্য বারবার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। অবশেষে তিনি সফল হন। লেখক হেলেন কেলার অন্ধ হওয়ার পরও ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে লেখাপড়া শিখেছেন এবং মানুষের জন্য কাজ করেছেন। এমন অনেকেই ইতিহাস সৃষ্টি করতে পেরেছেন ধৈর্যশীল হওয়ার কারণেই। তবে ধৈর্য শক্তি ধরে রাখার জন্য কিছু বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। সাধারণত: আমাদের ওপর যখন একাধিক দায়িত্ব এসে বর্তায় অথবা যখন কঠিন কোনো কাজ এসে পড়ে, তখন আমরা ধৈর্যহারা হয়ে পড়ি।  এছাড়া যখন মানুষ তার শক্তি ও সামর্থের চেয়েও কঠিন কাজে হাত দেয়, তখন তাকে অবশ্যই তার কর্মসূচির বিষয়টি পরিবর্তনের চিন্তা করতে হবে। এ অবস্থায় কাজ ও দায়িত্ব এমনভাবে ভাগ করতে হবে- যাতে একই সময়ে একাধিক কাজের চাপ না থাকে। শক্তি ও সামর্থ অনুয়ায়ী সব কিছু করতে হবে।
 
অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করার প্রবণতা থেকে সরে আসতে হবে। ভুলভাবে তুলনা করার কারণে মানুষ ধৈর্যহীন হয়ে পড়ে। আপনার বন্ধু ও প্রতিবেশিদের মধ্যে কেউ যদি আপনার প্রত্যাশিত কোনো সাফল্যটিও অর্জন করে, তাহলে ভেবে নেবেন যে, তার অবস্থান ও পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে আপনার অবস্থান ও পরিবেশ-পরিস্থিতির পার্থক্য রয়েছে। অন্যের সাফল্য দেখে হতাশ ও ধৈর্যহারা হলে চলবে না।  ধৈর্য শক্তি বাড়ানোর আরেকটি পথ হলো- যেসব বিষয় আপনার মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করে, সেসব বিষয়কে চিহ্নিত করুন। অনেক সময় আমাদেরকে উদ্বেগ ও হতাশা কাবু করে ফেলে, এর পেছনেও অধৈর্য ও অস্থিরতা প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করে। আমাদের অজান্তেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে। অধৈর্য ও অসহিষ্ণুতা কমানোর জন্য এর পেছনের কারণ খুঁজে বের করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। ধৈর্যশীল হওয়ার জন্য দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তনও জরুরি। শান্তি ও স্বস্তি পাওয়ার পদ্ধতিও সঠিকভাবে রপ্ত করতে হবে।
 
যেমন ধরুন, ধৈর্যহারা হয়ে পড়লে কয়েক বার গভীর নিশ্বাস নিন। এরপর কয়েক মিনিটের জন্য সব ধরনের কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। মাথা থেকে দুঃশ্চিতা ঝেড়ে ফেলুন। এ সময়টায় টেলিভিশন দেখবেন না এবং কোনো কিছু পড়বেনও না। অন্য কোন কাজও করবেন না। প্রথম দিকে এ পদ্ধতিটি আপনার জন্য কঠিন হতে পারে। এক অথবা দুই মিনিট পার হওয়ার পর আপনার মধ্যে অধৈর্য ভাবটা আরো বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু আরো কিছু সময় শান্ত ও বিশ্রাম অবস্থায় কাটালেই আপনি আপনার ভেতরের জগতটাকে শান্ত করতে পারবেন। এই পদ্ধতিটি চিন্তার বিকাশ এবং ধৈর্য শক্তি বাড়াতে অত্যন্ত কার্যকর। দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো, সব সময় এটা স্মরণ রাখা উচিত যে, প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করার জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হয়। সময় ব্যয় করা ছাড়া কোনো কাজ করা সম্ভব নয়। ধৈর্যহারা ব্যক্তিরা সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ে কাজ সম্পন্ন করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন। তারা কোনো কাজের জন্যই সময় ব্যয় করতে চান না। কিন্তু এটা বুঝতে হবে যে, অনেক কাজই তাড়াহুড়োর মাধ্যমে করা সম্ভব নয়।
 
ধৈর্যশক্তি বাড়ানোর আরেকটি উপায় হলো- অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা। যে কোনো বিষয় আপনার ভাবনা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী না-ও এগোতে পাতে। আপনার প্রত্যাশা হতে হবে বাস্তবভিত্তিক। এমন হতে পারে যে, আপনার এক সন্তান অসাবধানতাবশত গ্লাসের জুস ফেলে কার্পেট বা ফ্লোর নষ্ট করে ফেললো। আপনাকে এ অবস্থায় চেচামেচি করলে চলবে না। আপনাকে এটা মেনে নিতে হবে যে, এ ধরনের ঘটনা শিশুদের মাধ্যমে ঘটতেই পারে। মানুষ ভুল-ভ্রান্তির উর্ধ্বে নয়। কোনো কিছু যদি অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটে যায়, তাহলে আপনি ধৈর্যহীন হয়ে পড়লে কোনো সমাধান আসবে না রবং আরো ক্ষতি হবে। এ কারণে যেসব বিষয় আপনার মাঝে অস্থিরতা বাড়িয়ে দেয়, চিন্তা ও চেতনাকে সেসব বিষয় কেন্দ্রীক করলে চলবে না। দয়া-মায়া, ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতার মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত ও পরিস্থিতিকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। সব সময় এটা মনে রাখতে হবে যে, যা প্রত্যাশা করছেন, আপনার প্রাপ্তি সেরকম না-ও হতে পারে। এ জন্য ধৈর্য ও স্থিতিশীলতা জরুরি।
 
ইসলাম ধর্মে বারবারই ধৈর্যের প্রভাব নিয়ে কথা বলা হয়েছে। ধৈর্য ও সাফল্য-একটির সঙ্গে আরেকটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। হজরত আলী (আ.) বলেছেন, দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হলেও ধৈর্যশীলরা জয় হাতছাড়া করে না। ধৈর্যশীল হলে অনেক পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে মানুষ। এমন মানুষ আল্লাহর ন্যায়বিচারের বিষয়ে নিরাশ হয় না। এ কারণে তাদের পুরস্কার অবসম্ভাবী। ধৈর্যের পুরস্কার অপরিসীম। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা হচ্ছে তিন ভাগে বিভক্ত। এক-বিপদের সময় ধৈর্য। দুই-আল্লাহর নির্দেশ পালনের ক্ষেত্রে ধৈর্য। তিন-ধৈর্যের মাধ্যমে পাপ করা থেকে বিরত থাকা। এ তিন ধরনের ধৈর্যের পুরস্কার প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেছেন, বিপদের সময় যে ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ তাকে আসমান ও জমিনের মধ্যকার দূরত্বের সমতুল্য মর্যাদা দান করেন। যে ধৈর্যের সঙ্গে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলবে অর্থাত ইবাদত-বন্দেগি করবে, আল্লাহ তাকে জমিনের তলদেশ থেকে আল্লাহর আরশ পর্যন্ত যে জায়গা, সে পরিমাণ মর্যাদা দেবেন। আর যে ব্যক্তি ধৈর্যের মাধ্যমে পাপ থেকে বিরত থাকবে, আল্লাহ তাকে জমিনের তলদেশ ও আরশের শেষ প্রান্তের মধ্যকার দূরত্বের সমতুল্য মর্যাদা দেবেন। কাজেই ধৈর্যের সঙ্গে পাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকার পুরস্কারই সর্বোচ্চ। (সংগৃহীত)