হযরত আলী (আ.) এর বিচারকার্য

আল কাফি গ্রন্থে  হযরত ইমাম সাদেক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত আলী (আ.)এর খেলাফত কালে এক ব্যক্তি জাবাল থেকে আল্লাহর ঘর যিয়ারাতের  উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন তাঁর সাথে তার গোলামও ছিলো। গোলামটি ভুল করায় মালিক তাকে মারধর করলে সে অন্যায়ভাবে তার প্রভুকে বললো, আমি তোমার গোলাম নই বরং তুমি আমার গোলাম। এই বিবাদ এমন পর্যায়ে পৌঁছালো যে তারা পরস্পরকে হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছিলো। এভাবে তারা কুফায় পৌঁছালে সুষ্ঠু বিচারের আশায় হযরত  আলী(আ.) এর নিকটে গেল এবং মালিকটি  হযরত আলীকে বললেন ঃ হে আমীরুল মুমেনিন এই গোলামটি আমার, সে অন্যায় করায় আমি তাকে শাস্তি দিয়েছি। এখন সে বলে আমি তোমার গোলাম না। গোলাম কছম খেয়ে বললো সে আমার গোলাম, আমার বাবা হজ্জ্ব সম্পর্কে জ্ঞান দেয়ার জন্য তার সাথে আমাকে পাঠিয়েছেন, এখন সে অন্যায়ভাবে বলছে তুমি আমার গোলাম। তার উদ্দেশ্য হলো আমার ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা। মালিক কছম খেয়ে বললো, সে যা বলছে মিথ্যা বলছে। হযরত আমীরুল মুমেনিন তাদেরকে বললেন, এখন তোমরা বাড়ী যাও। আগামীকাল এসো বিচার করে দিবো । সকল বিভেদ ত্যাগ করে সত্য কথা বলবে। লোকজন বলাবলি করছিলো বিষয়টা বেশ জটিল, এ রকম সমস্যা কখনো দেখিনি, দেখা যাক হযরত আলী (আ.) কেমন করে সমাধান করেন। ঐ দুই ব্যক্তি চলে যাওয়ার পর হযরত আলী (আ.) কাম্বারকে নির্দেশ দিলেন নিকটবর্তী একটি দেয়ালের গায়ে মাথা পরিমাণ মাপের দুটি ছিদ্র করতে। সকাল হলে হযরত আলী (আঃ) কাম্বারকে বললেন, আমার তরবারিটা তোল যখন বলবো গোলামের মাথাটা কেটে ফেলো । মারার জন্য উদ্বুদ্ধ হবে  কিন্ত  মারবেনা শুধু ভয় দেখাবে। লোকজনও ধীরে ধীরে ঐ স্থানে জমা হতে লাগলো । এরপর ঐ দুই ব্যক্তি ঐ স্থানে উপস্থিত হলে আলী (আ.) তাদের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলেন তারা দুজনই নিজ নিজ কথার উপর অটল রয়েছে । তাই তিনি বললেন, আমি দেখতে পাচ্ছি তোমরা দুজনই মিথ্যা বলছো । অতএব তোমরা দুজনই ঐ ছিদ্রের মধ্যে মাথা  ঢুকাও। উভয়েই যখন তাদের মাথা দেয়ালের ছিদ্রে ঢুকিয়ে দিল তখন হযরত আলী (আ.) কাম্বারকে নির্দেশ দিলেন ঃ  কাম্বার গোলামের মাথাটা কেটে দু’ভাগ করে দাও। একথা শোনার সাথে সাথেই প্রকৃত গোলামটি দ্রুত তার মাথাটি ছিদ্র থেকে বের করে নিল । অতঃপর হযরত আলী (আ.) গোলামকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি বলোনি আমি গোলাম না ? গোলাম বললো : জ্বি! হে আমিরুল মুমেনিন, কারণ সে আমাকে প্রচুর প্রহার করেছিল, তাই আমি অস্বীকার করেছিলাম আমার প্রভুকে । এরপর হযরত আলী  (আ.) গোলামকে মালিকের হাতে তুলে দিতে নির্দেশ দিলেন।