হাদিসে সাকালাইন: মুসলমানরদের প্রতি বিশ্বনবী (সা.)'র অতি জরুরি বাণী

হাদিসে সাকালাইন: মুসলমানরদের প্রতি বিশ্বনবী (সা.)'র অতি জরুরি বাণী
এক. মুসলিম স্বীয় সহীহ গ্রন্থে যায়েদ ইবনে আরকাম হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসূল (স.) একদিন মদিনা ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থলে "খুম" নামক একটি জলাশয়ের কাছে খোতবা দান করেন। উক্ত খোতবায় তিনি আল্লাহর প্রশংসার পর লোকদেরকে নসিহত করে বলেন:
ألا أيّها الناس، فانّما أنا بشرٌ يوشک أن يأتی رسول ربّی فأجيب، و أنا تارکت فيکم ثقلين: أولهما کتاب الله فيه الهدی و النور، فخذوا بکتاب الله و استمسکوا به -فحث علی کتاب الله و رغّب فيه ثم قال: - و أهل بيتی، أذکرکم الله في أهل بيتی، أذکرکم الله فی اهل بيتی، أذکرکم الله فی اهل بيتی
হে লোকসকল! আমি একজন মানুষ। খুব শিগগিরি আমার প্রভুর নিযুক্ত ব্যক্তি (তথা মৃত্যুর ফেরেশতা) আমার কাছে আসবে এবং আমিও তাঁর আহ্বানে সাড়া দেব। আমি তোমাদের মাঝে দু'টি অতি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি; যার একটি হল আল্লাহর কিতাব; যাতে রয়েছে নূর এবং হেদায়েত। আল্লাহর কিতাবকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর। রাসূল (স.) আল্লাহর কিতাবের উপর আমল করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অত:পর বলেন: আর অপরটি হলো আমার আহলে বাইত। আমার আহলে বাইতের বিষয়ে তোমাদেরকে মহান আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি (অর্থাৎ মহান আল্লাহকে ভয় করে তাদেরকে অনুসরণ কর) এই বাক্যটিকে তিনি তিনবার উচ্চারণ করেন। সূত্র: সহীহ মুসলিম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ.১৮০৩।
দারেমি এই টেক্সট বা মাতন তথা হাদিসের মূলপাঠটি নিজ ‘সুনান'-শীর্ষক বইয়ে বর্ণনা করেছেন। সূত্র:সুনানে দারেমী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৩১-৪৩২।
দুই. তিরমিযি এই হাদিসটিতে ((وعترتی أهل بيتی)) শব্দগুলো বর্ণনা করেছেন। মূল হাদিসটি হলো:
إنی تارکت فيکم الثقلين ما ان تمسکتم به لن تضلّوا بعدی؛ أحدهما أعظم من الآخر: کتاب الله حبل ممدود من السماء إلی الأرض و عترتی اهل بيتی، لن يفترقا حتی يردا عليَّ الحوض، فانظروا کيف تخلفونی فيها.
"নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে দু'টি ভারী (মূল্যবান) জিনিস (আমানত হিসেবে) রেখে যাচ্ছি। যদি তা শক্তভাবে আঁকড়ে ধর তবে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। সেগুলো একটি অপরটির উপর প্রধান্য রাখে। ( সেগুলো হচ্ছে) আল্লাহর কিতাব যা আসমান হতে জমিন পর্যন্ত প্রসারিত (রহমতের) ঝুলন্ত রশির ন্যায় এবং অপরটি হলো আমার বংশধর; আমার আহলে বাইত। এরা হাউযে কাওসারে আমার সঙ্গে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত কখনও একে অপর হতে আলাদা হবে না। অতএব, তোমরা লক্ষ্য রেখ যে, আমার (ছেড়ে যাওয়া) আমানতের সঙ্গে কিরূপ আচরণ করো।'' (সূত্র: সুনানে তিরমিযি, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৬৬৩।)
 
বিভিন্ন বিষয়ে আরো কয়েকটি হাদিস:
 
১) রাসুলে খোদা (সা.) বলেছেন, উপহার বিনিময়ের মাধ্যমে মানুষের অন্তরের হিংসা-বিদ্বেষ ও পরশ্রীকাতরতা দূরীভূত হয়।

২) রাসুলে খোদা (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার পরিবারের জন্য হালাল পথে জীবিকা অর্জনের চেষ্টা করবে সে যেন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী ব্যক্তির সমতুল্য ।

৩) রাসুলে খোদা (সা.) বলেছেন: যখন কিছু লোক এক জায়গায় একত্রিত হবে তখন যদি সেখানে আল্লাহর স্মরণ এবং তার রাসুলের প্রতি দরুদ শরিফ পাঠ করা না হয়, সে বৈঠক তখন দুঃখ ও পরিতাপের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

৪) নবী করিম (সা.) এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন, পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিসের উপর গুরুত্ব দেবে। এই পাঁচটি জিনিস হচ্ছে, বার্ধ্যকের আগে যৌবনের, রোগের আগে সুস্হতার, দারিদ্র্যের পূর্বে সচ্ছলতার, ব্যস্ততার আগে অবসরকালের এবং মৃত্যূর আগে জীবনের।

৫) রাসুলে খোদা (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কেবল আল্লাহর জন্যই ভালবাসলো,আল্লাহর জন্যই কারো সাথে শত্রুতা করলো, আল্লাহর জন্যই কাউকে কিছু দান করলো এবং আল্লাহর জন্যই কাউকে দান করা থেকে বিরত থাকলো, সে তার ঈমানকে পূর্ণ করল।

৬) রাসুলে খোদা (সা.) বলেছেন, কোন মাতা-পিতা তার সন্তানদেরকে উত্তম চরিত্র শিক্ষাদানের চেয়ে আর ভাল কোন জিনিসই দিতে পারে না।

৭) রাসুলে খোদা (সা.) বলেছেন, বিপদে-আপদে ধৈর্য ধারণ করার মধ্যে অশেষ কল্যাণ নিহিত রয়েছে।

৮) নবী করিম (সা:) বলেছেন, বুদ্ধিমান হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে আত্মসমালোচনা ও আত্মযাচাই করতে অভ্যস্ত এবং মৃত্যূর পরের জীবনের জন্য কাজ করে। পক্ষান্তরে দুর্বল ও সাহসহীন সেই ব্যক্তি, যে নিজেকে প্রবৃত্তির লালসার দাস করে ফেলেছে এবং তা সত্বেও সে আল্লার কাছ থেকে অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে।

৯) রাসুলে খোদা (সা.) বলেছেন, আল্লাহ'তালা যাকে কল্যাণ দান করতে চান,তাকে তিনি দ্বীন সন্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান দান করেন।

১০) রাসুলে খোদা (সা.) বলেছেন, মানুষ যখন মরে যায়, তখন তার যাবতীয় কাজ-কর্মের সময় ও সুযোগ শেষ হয়ে যায়। অবশ্য তখনও তিন প্রকার কাজের ফল সে পেতে পারে। ১) সদকায়ে জারিয়া ২) এমন ইলম বা বিদ্যা, যার ফল সুদূরপ্রসারী হতে পারে ৩) সচ্চরিত্রবান সন্তান, যারা তার জন্য দোয়া করতে পারে।
১১) নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল লোক হচ্ছে তারা, যাদের চরিত্র তোমাদের সবার চেয়ে উত্তম।
১২) হযরত আলী (আ.) বলেছেন : যে ব্যক্তি তার অন্তরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করার জন্য সচেষ্ট হবে, মহান আল্লাহ তার বাহ্যিক দিককে পরিশীলিত করবেন। যে ব্যক্তি ধর্মের মূল নীতি মেনে চলবে, মহান স্রষ্টা তার পার্থিব বিষয়গুলো সহজ করে দেবেন আর যে ব্যক্তি তার স্রষ্টা ও মাবুদের সাথে নৈকট্য প্রতিষ্ঠা করবে, মহান আল্লাহ তার সঙ্গে অন্যদের সুসম্পর্ক সৃষ্টি করে দেবেন।
১৩) হযরত আলী (আ.) বলেছেন, অপরের ধন-সম্পদের ব্যাপারে নিরাসক্ততা ও নিস্পৃহতা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ঐশ্বর্য্য বা সন্পদ।
৪) হযরত আলী (আ.) বলেছেন, নম্র ও ভদ্র আচরণের অধিকারী ব্যক্তি সহজেই মানুষের ভালবাসা অর্জন করে।
১৫) হযরত আলী (আ.) বলেছেন, নির্বোধ ও অজ্ঞ লোকদের সাহচর্য মানুষের নৈতিকতা ও আচার -ব্যবহারকে ধ্বংস করে দেয়।
১৬) হযরত আলী (আ.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মহত্বপূর্ন ও উদার চরিত্রের অধিকারি তার জিবিকা এবং রুজি বৃদ্ধি পায়।
১৭) হযরত ফাতেমা (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ইবাদত এবং অন্যান্য সব কাজ কেবলমাত্র আল্লার সন্তুষ্টির জন্য করবে মহান আল্লাহ তার প্রতি বিশেষ রহমত ও অনু গ্রহের দ্বার উন্মুক্ত করে দেবেন।
১৮) ইমাম রেজা (আ.) বলেছেন, কৃপণ ব্যক্তি মহান আল্লাহ, বেহেশত এবং মানুষের কাছ থেকে বহু দূরে আর দোযখের কাছাকাছি অবস্থান করে।
১৯) ইমাম রেজা (আ.) বলেছেন, কৃপন ব্যক্তি মহান আল্লাহ ,বেহেশত এবং মানুষের কাছ থেকে বহু দূরে আর দোযখের কাছাকাছি অবস্থান করে।
২০) ইমাম সাদেক (আ.) বলেছেন, অলসতা এবং অসহিষ্ণুতা থেকে দূরে থাক কেননা এ দুটো তোমাকে দুনিয়া এবং আখিরাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করবে।