সর্বযুগের নেতা হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর যুগোপযোগিতা

সময়ের পরিবর্তনের সাথে সমাজ সভ্যতার পরিবর্তন হয়। তাই আল্লাহ তার সৃষ্টি এ মানুষের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন ভাষায় নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। সময়ের পরিবর্তনের সাথে বিধি-বিধানের ও পরিবর্তন করেছেন। যেমন, নূহ (আঃ) এর অনুসারীরা এতই শক্তিশালী ছিল যে, তাদেও আক্রমনাত্মক মেজায নিয়ন্ত্রের জন্য আল্লাহ তাদেরকে সর্বদা রোজা রাখতে নির্দেশ করেছেন। পক্ষান্তরে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর অনুসারীরা ছিল তুলনামূলকভাবে দূর্বল, সে জন্য তাদের মন কঠিন নিয়ম অনুসরণের প্রয়োজন ছিলনা। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর পূর্বে কোন জাতিকে যুদ্ধের গনীমতি দ্রব্য দখলে অনুমতি দেয়া হয়নি। কিন্তু হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর সমসাময়িকদের জন্যে আল্লাহ তা বৈধ বলে নির্দেশ প্রদান করেন।

তাই আমরা সময়ের এ পরিবর্তনকে অস্বীকার করতে পারি না, পারি না এগুলোকে ঠেকিয়ে রাখতে। রাসূল (সাঃ) শেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, ইসলাম সর্বশেষ ধর্ম। যে সময়ে, যে পরিবেশে রাসূল দুনিয়াতে এসেছিলেন সময়টা ছিল “আইয়ামে জায়েলিয়াত”। বিভিন্ন রকমের কুসংস্কার, গোড়ামী, নোংরামী, বর্বরতা, আরব জাতির মধ্যে প্রবেশ করেছিল। এরূপে এক পরিবেশে রাসূল (সাঃ) কে ইসলাম প্রচার করতে হয়। এ ক্ষেত্রে অবস্থা ও পরিবেশ অনুযায়ী অনেক সময়, অনেক বিধি নিষেধ জারি করতে হয়, অনেক বেশী ভয়-ভীতি ও আইনের কড়াকড়ি করতে হয়। তা না হলে বর্বর ও অসত্য মানুষকে ইসলামে আনা সম্ভব ছিলনা।

উদারহণ স্বরূপে, মূর্তিপূজা ত্যাগ করে সদ্য ইসলাম গ্রহণ কারি মুসলমানরা প্রথম প্রথম বেশ অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছিল। তারা মুসলমান হবার পরও ঘরের দরজার উপর ছোট ছোট মূর্তি রেখে নামাজ পড়তো। রাসূল (সাঃ) জানতে পেরে বললেন, “যে ঘরে দেব-দেবী ও মানুষের মূর্তি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেস্তা আসে না। ফলে মূর্তি রাখা যদিও বন্ধ হলো, তখন তারা এসবের ছবি এঁকে রাখা শুরু করলো। এবার রাসূল বললেন, “যারা মানুষ ও জীব-জন্তুর ছবি অংকন করে তাদের জন্য দোজখে কঠোর শাস্তি রয়েছে।” এ ধরনের আর একটা উদারহণ হলো, রাসূল (সাঃ) এর আর্বিভাবের পূর্বে সেখানে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। তৎকালিন মানবতাহীন ও বর্বর এ সমস্যা রোধে তিনি ঘোষণা করেন, “যার ৩টি কন্যা অথবা ৩টি বোন বা ২টি কন্যা বা ২টি বোন থাকে আর সে তাদের প্রতি স্নেহ যতœ করে তাদের হক সম্পর্কে আল্লাহ কে ভয় করে তার জন্য বেহশত অনিবার্য।”
এভাবে ইসলামের অনেক কিছু সময় অবস্থা ও পরিবেশ অনুযায়ী প্রকাশ হয়েছে। আজ বর্তমান এ সভ্যতার যুগে এগুলো হুবহু প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে চিন্তা ভাবনা করা দরকার। কারণ, এতে সমাজ ও সভ্যতার সাথে ধর্মের দ্বন্দ্ব দেখা দিচ্ছে।

বর্তমান আলেম সমাজ আদি ধ্যান-ধারনায় বর্তমানকে বিচার করে থাকেন। তারা পুঁথিগত জ্ঞানকে লব্ধ করে পারিপার্শ্বিক সমস্যার সমাধানের কথা বলেন। যা ঠিক নয়। সময় ও যুগের তাড়নাকে তারা ভুলে যান। রাসূল (সাঃ) খুবই দূরদর্শী ছিলেন। তিনি নিজেই তাঁর জীভনের প্রাথমিক দিকে ও শেষভাগে মানুষের যে পরিবর্তন দেখেছিলেন তাতেই উপলব্ধি করেছিলেন যে, ইসলামকে যুগোপযোগী না করলে দ্বীন হিসাবে রোজ কেয়ামত পর্যন্ত এটা টিকে থাকবে না। এই নিজে বহু সংস্কার করে গেছেন এবং ভবিষ্যতের প্রয়োজনে এর নির্দেশ ও দিয়ে গেছেন। তাই, যুগোপযোগীতা রাসূল (সাঃ) এর আদর্শ। তাই তিনি সর্বযুগের নবী ও নেতা অনুসরণীয় আদর্শ।

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “বস্তুত: তোমরা এমন এক যুগে আছ যখন তোমাদের কেউ যদি যা নির্দেশ করা হয়েছে তার এক দশমাংশও ছেড়ে দেয় তার ধ্বংস অনিবার্য। কিন্তু এর পর এমণ এক যুগ আসবে তখন তোমাদের কেউ যদি যা নির্দেশ করা হয়েছে তার এক দশমাংশও পালন করে, সে নিশ্চয়ই মুক্তি পাবে।” জিজ্ঞেস করি সেযুগ কি আসে নাই/ তাঁর আর একটা হাদীস, “নগরবাসীর বিরুদ্ধে পল্লীবাসীর স্বাক্ষাৎ গ্রহণীয় নয়।” এখানেও তিনি অসাধারণ সমাজ সচেতনার পরিচয় দিয়েছেন।

আজ আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যা আখেরী জামানা মানুষের বাঁচার সংগ্রাম আজ বড় কঠিন, সময়ের দাম ও খুব বেশী। লোকসংখ্যা বৃদ্ধি, যুদ্ধ, রোগ শোক, অভাব-অরটন, ফেতুনা-ফ্যাসাদ আজ মানুষকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলছে। ধর্মের খুঁটিনাটি সব মেনে চলা সম্ভব হচ্ছেন। তাই আমাদের চিন্তা-ভাবনা করতে হবে মানুষের এ যুগসংকটে ধর্মকে কিভাবে মানুষের কল্যানে কাজে লাগানো যায়। কারণ মানুষের জন্যই তো ধর্ম। কুষ্টিয়ার সূফী সাধক হযরত শাহ সূফী মীর মাস্উদ হেলাল (রঃ) তাই বলেছিলেন, “ইমাম মাহদী (আঃ) বোধ হয় এ জন্যই আসবেন। ধর্মকে যুগোপযোগী করতে। বহুদলে বিভক্ত মুসলমানকে এক পতাকা তুলে আনতে। ইসলামে প্রাণ সঞ্চার করতে ও মানুষকে শান্তি ও মুক্তির পথ দেখাতে।” (ইন্টারনেট)