মার্কিন নও-মুসলিম নারী 'সিলভিয়া'

সিলভিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের অধিবাসী। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সুবাদে তিনি ইসলামের প্রতি আগ্রহী হন।
ইরানের ইসলামী বিপ্লব গোড়া থেকেই বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে এর সাম্রাজ্যবাদ ও জুলুম বিরোধী চরিত্র এবং পাশাপাশি মজলুম জাতিগুলোর প্রতি সহায়তার কারণে। মরহুম ইমাম খোমেনীর সংগ্রামী চরিত্র ও দৃঢ়তাও এ বিপ্লবকে  দিয়েছে অনন্য জনপ্রিয়তা। বিশ্বব্যাপী মুক্তিকামী ও অধিকারকামী জনগণের নজিরবিহীন ভালবাসা পেয়েছেন মরহুম ইমাম খোমেনী। হাজার বছরেও অন্য কোনো বিপ্লবের ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায় না।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে এই বিপ্লবের গভীর প্রভাব এটাই প্রমাণ করে যে ইসলামী বিপ্লব কোনো ভৌগলিক সীমারেখার গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়। ইসলাম সম্পর্কে যাদের কোনো ধারণাই ছিল না –এমন অনেক অমুসলমানও সত্য ও মুক্তিকামীতার প্রতি ভালবাসার টানে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সমর্থকে পরিণত হন এবং এই সুবাদে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হন। সিলভিয়া হচ্ছেন এমন সৌভাগ্যবানদেরই একজন।

সিলভিয়া পড়াশুনা করেছেন কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ বিষয়ে। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তিনি এই পবিত্র ধর্ম বিষয়ে আমেরিকা, কানাডা ও দক্ষিণ আমেরিকার মুসলমান ও খ্রিস্টানদের নানা প্রশ্নের জবাব দিয়ে থাকেন। সিলভিয়া এ প্রসঙ্গে বলেছেন,"আমি ইউরোপ ও আমেরিকার নাগরিকদের ইসলামের সঙ্গে পরিচিত করতে ভালবাসি। আর এ জন্য আমি নাটক ও থিয়েটারের মত নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। এ ছাড়াও আয়োজন করি নানা সমাবেশের যাতে যুব সমাজ ইসলামকে আরো ভালভাবে বুঝতে পারে এবং এ ধর্মের প্রতি আরো বেশি আকৃষ্ট হয়।"

মার্কিন নও-মুসলিম নারী সিলভিয়া ইসলামের সঙ্গে তার পরিচয় প্রসঙ্গে বলেছেন:
"আসলে আমি ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পরই এই ধর্মের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি। এর আগে নানা ধর্ম নিয়ে আমার পড়াশুনা থাকলেও ইসলামের প্রতি তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না। ইরানে যখন ইসলামী বিপ্লব বিজয়ী হল তখন আমি ইমাম খোমেনী (র.)'র ছবি প্রথমবারের মত টেলিভিশনে দেখেছিলাম। তাঁর আধ্যাত্মিক বা নুরানি চেহারা আমাকে খুবই আকৃষ্ট করেছিল। ইমামের মধ্যে এমন কিছু ছিল যে নিজের অজান্তেই এই মহান ইমামের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতাম, কিন্তু জানতাম না যে সে বিষয়টা কী? কখনও এটা ভাবিনি যে একদিন মুসলমান হব।  কেবল এটাই জানার চেষ্টা করতাম যে  এই মহান নেতার মধ্যে এমন কী আছে যে তা আমাকে আকৃষ্ট করছে? এ অবস্থায় আমি ইসলাম সম্পর্কে গবেষণার সিদ্ধান্ত নিলাম।"

মার্কিন নও-মুসলিম নারী সিলভিয়া এ প্রসঙ্গে আরো বলেছেন,
"এক বছর ধরে ইসলাম সম্পর্কে গবেষণার পর যা বুঝতে পারলাম তা হল, ইমাম খোমেনী (র.) যে পথে চলছেন তা হল আল্লাহ ও সত্যের পথ। আর তাই আমিও একই পথ বেছে নেই। এরপর পড়াশুনা আরো বিস্তৃত করি এবং শহীদ অধ্যাপক মুর্তাজা মুতাহহারির বইগুলো পড়ে বেশ উপকৃত হই। আমিরুল মুমিনিন আলী (আ.)'র ভাষণ ও চিঠিপত্রের সংস্করণ নাহজুল বালাগার ইংরেজি অনুবাদও পড়লাম। পবিত্র কুরআনের অনুবাদ পড়ার পর ইসলামের প্রতি আমার আগ্রহ অফুরন্ত হয়ে উঠে।"

 
ইরানের ইসলামী বিপ্লব বিশ্বে ইসলামী চিন্তাধারার পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছে। অথচ এর আগে বিশ্ব ধর্মনিরপেক্ষতার প্রভাবে ধর্মকে কোণঠাসা করে রেখেছিল। ধর্মকে বলা হত জনগণের জন্য আফিম। কিন্তু ইমাম খোমেনী (র.)'র নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লব বিশ্বে বড় ধরনের পরিবর্তন বয়ে আনে। আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস-ভিত্তিক এই বিপ্লবের সাফল্য বিশ্বের বহু মানুষকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করে এবং ইরানসহ বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর জনগণ এটা বুঝতে সক্ষম হন যে, ইসলাম ও এর মহাগ্রন্থ কুরআন তাদের সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে।

 
ইরানের ইসলামী বিপ্লব এটা প্রমাণ করেছে যে মজলুম জাতিগুলোর মূল্যবোধ ধ্বংসকারী প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের পরাশক্তিগুলোর আধিপত্য থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব এবং সম্ভব স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করা। এ বিপ্লব খাঁটি ইসলামের নীতিগুলোকে আবারও মানুষের সামনে জীবন্ত ও চাঙ্গা করে তুলেছে।

 
ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর মার্কিন নও-মুসলিম সিলভিয়া হাজেরা নামটি বেছে নেন নিজের জন্য। বিশ্বের সবার কাছে সাধ্যমত ইসলামের বাণী তুলে ধরার জন্য সফর করা তার একান্ত ইচ্ছা। তিনি কখনও ইরানে ও কখনও নিজ দেশে থাকছেন সন্তুষ্টচিত্তে।  সিলভিয়া জানান, তিনি প্রথমবারের মত যখন নামাজ শেখেন তখন তার নামাজের দৃশ্য দেখে একদল বন্ধু ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এ ধর্ম গ্রহণ করেন। ইসলাম আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে যারা নতুন ধর্মের অনুসন্ধান করছেন তাদের বেশিরভাগই মুসলমান হচ্ছেন।

হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)'র নেতৃত্বে কারবালার কালজয়ী বিপ্লব সিলভিয়ার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। তিনি ইমাম হুসাইন (আ.)'র পবিত্র ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বহু বছর ধরে পড়াশুনা করেছেন এবং এরপর ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ হন। তার মতে, যে ব্যক্তি ইমাম হুসাইন (আ.)'র কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে সে জীবনে কখনও বিভ্রান্ত হবে না। সিলভিয়া আরো বলেছেন,

"ইমাম হুসাইন (আ.) সম্পর্কে জানার পর বুঝতে পেরেছি যে ইসলাম ধর্মের মাধ্যমে খুব দ্রুত বাস্তবতা বা সত্যকে পাওয়া সম্ভব। ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর সঙ্গীরা খোদায়ী নানা লক্ষ্য অর্জনের জন্য আত্মত্যাগ ও কুরবানির সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। পবিত্র সেইসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাঁরা নিজের জীবনও বিসর্জন দিয়েছেন। আর এ জন্যই হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) সব যুগের সব মানুষের জন্যই হেদায়াতের প্রদীপ হয়ে আছেন। যারা ইহকাল ও পরকালে সম্মান এবং সৌভাগ্য চায় তাদের জন্য ইমাম হুসাইন (আ.) হলেন নাজাত বা পরিত্রাণের নৌকা। আমি নিজে ছিলাম একজন পথহারা ব্যক্তি। কিন্তু ইমাম হুসাইন (আ.)-কে জানার পর জীবনের চলার পথ খুঁজে পেয়েছি।" (রেডিও তেহরান)