নারীকুল শিরোমনী হযরত ফাতেমার (সা.আ.)

আরবি জমাদিউসসানী মাসের বিশ তারিখে রোজ শুক্রবার,মহানবী (সা.)-এর নবুওয়াত লাভের পঞ্চম বৎসরে,মক্কার প্রস্তরময় পর্বতের পাদদেশে,কা’বার সন্নিকটে,ওহী নাযিলের গৃহে,যে গৃহের অঙ্গন মহানবী (সা.)-এর খোদাপ্রেমিক মুখের পবিত্র ছটায় আলোকিত হতো,যে গৃহকে ফেরেশতারা ভাল করে চিনতো এবং সেখানে প্রতিনিয়ত আসা যাওয়া করতো,যেখানে সকাল সন্ধ্যায় রাসূলে খোদার নামাজের গুঞ্জরন প্রতিধ্বনিত হতো এবং গভীর রাত্রিতে তাঁর তিলাওয়াতের আধ্যাত্মিক ধ্বনিতে জমিনের সাথে আসমানের সংযোগ স্থাপিত হতো,ইয়াতিমদের আশার কেন্দ্র,নিঃস্ব মানুষের সাহায্যকারী,বন্দী ও নিপীড়িতদের আশ্রয়স্থল,সেই গৃহে পয়গম্বর (সা.) ও হযরত খাদিজার ঔরস্যে আল্লাহর রাসূলের দুহিতা,রিসালতের প্রথম ফল,নিষ্পাপত্বের প্রতিমূর্তি,সমগ্র মানবতা যে নারীর মধ্যে সমবেত হয়েছে,যিনি ভূপৃষ্ঠে আল্লাহর মনোনীত খলীফার স্ত্রী এবং তাঁর সমকক্ষ বলে গণ্য,পৃথিবীর বুকে নারীকুলের শ্রেষ্ঠ হযরত ফাতেমা (সা.আ.) জন্মগ্রহণ করেন।
এক নজরে হযরত ফাতেমা
নাম:ফাতেমা,সিদ্দীকা,মুবারিকাহ্,তাহিরাহ্,যাকিয়্যাহ্,রাযিয়্যাহ্,মারযিয়্যাহ্,মুহাদ্দিসাহ্,এবং যাহরা।
ডাক নাম : উম্মুল হাসান,উম্মুল হুসাইন,উম্মুল মুহ্সিন,উম্মুল আয়েম্মা এবং উম্মে আবিহা।
কিছু সুপরিচিত উপাধি : যাহরা,বাতুল,সিদ্দীকা,কুবরা,মুবারিকাহ্,আযরা,তাহিরা এবং সাইয়্যেদাতুন  নিসা।
পিতা : ইসলামের মহা সম্মানিত রাসূল (সা.) হযরত মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ্ (সা.)।
মাতা : ইসলাম গ্রহণকারী সর্বপ্রথম নারী,আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর সর্বপ্রথম স্ত্রী খাদীজাতুল কুবরা।
জন্ম : পবিত্র নগরী মক্কায়,নবুওয়াত লাভের পঞ্চম বছর।
শাহাদাত : পবিত্র মদীনা নগরী,হিজরী একাদশ বছর,রাসূলে খোদার  ইন্তেকালের আড়াই মাস পর।
মাজার : রাজনৈতিক এবং তাঁর অসিয়তের কারণে অন্ধকার রাত্রে গোপনে আমিরুল মু’মিনীন তাঁর দাফনকার্য সম্পন্ন করেন।  আজ অবধি তাঁর পবিত্র কবরের চিহ্ন উদঘাটিত হয় নি।
সন্তান : ইমাম হাসান মুজতাবা,ইমাম হুসাইন সাইয়্যেদুশ শুহাদা,জয়নাব আল কুবরা,উম্মে কুলসুম,মুহ্সিন (তাঁর গর্ভেই মারা যায়)।
হযরত ফাতেমার জন্মের ফলে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর গৃহ পূর্বের চেয়ে আরো অধিক দয়া ও স্নেহ-মমতার আধারে পরিণত হয়। যখন মহানবী (সা.) মক্কায় সীমাহীন কষ্টের মধ্যে জর্জরিত ছিলেন তখন হযরত ফাতেমার অবস্থান সকাল ও সন্ধ্যায় ক্লান্ত-শ্রান্ত পিতা-মাতার উপর শান্তির সুবাতাস বয়ে দিত আর রিসালতের কষ্টপূর্ণ দিনগুলোর ক্লেশকে আরামদায়ক করে তুলতো। এটা কতই না উদ্দীপনাময় বিষয় যে,একটি মেয়ে পিতার নিকট এতটা মর্যাদা লাভে সক্ষম হয় যে,তাঁর নিকট সৃষ্টি জগতের শ্রেষ্ঠ মানুষ মহানবী (সা.)-এর প্রশান্তি মেলে। আর তাঁর সম্পর্কে নবী (সা.) বলেন :
“ফাতেমা আমার প্রাণের সমতুল্য,তাঁর কাছ থেকে বেহেশতের সুঘ্রান পাই।”