মহানবী (সা.)-এর জীবনের শেষ দিনগুলো

মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে নিয়ে বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। তিনি হচ্ছেন,বিশ্বের সকল কবি,সাহিত্যিক,শিল্পী,বিজ্ঞানী এবং লেখকদের লেখনীর উৎস। যাকে নিয়ে লেখার অন্ত নেই,রচনার শেষ নেই। সব দেশের সব ভাষাতেই মহানবী (সা.) কে নিয়ে এত বিপুল সংখ্যক বই-পুস্তক রচিত হয়েছে যে,এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী রেকর্ড ও বিষ্ময়! কিন্তু চৌদ্দ শতাধিক বছরের এই ক্রমাগত আলোচনার পরও মনে হয়,মহানবী (সা.) নিয়ে এতদিনের এই আলোচনা যেন মূল আলোচনার একটি ভূমিকা মাত্র। প্রকৃত আলোচনা এখনও শুরুই হয়নি। এই মহা মানবের মৃত্যু বার্ষিকীতে সবাইকে জানাই আন্তরিক শোক ও সমবেদনা।

মহানবী (সা.)-এর জীবনের শেষ দিনগুলো ইসলামের ইতিহাসের অত্যন্ত সংবেদনশীল অধ্যায়সমূহের অন্তর্গত। ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ্ ঐ দিনগুলোয় অত্যন্ত বেদনাদায়ক মুহূর্ত অতিবাহিত করছিল। উসামাহ্ ইবনে যাইদের নেতৃত্বে সেনাদলে অংশগ্রহণের ব্যাপারে কতিপয় সাহাবীর প্রকাশ্য বিরোধিতা ও অবাধ্যতা তাদের কতকগুলো গোপন তৎপরতা এবং মহানবীর ওফাতের পর প্রশাসন (রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা),নেতৃত্ব ও ইসলামের রাজনৈতিক বিষয়াদি কুক্ষিগত করা এবং মহানবীর আনুষ্ঠানিক উত্তরাধিকারী,যিনি গাদীরে খুমের দিবসে নিযুক্ত হয়েছেন,তাঁকে পিছু হটিয়ে দেয়ার ব্যাপারে তাদের দৃঢ় সিদ্ধান্তের কথাই ব্যক্ত করে।

মহানবীও সার্বিকভাবে তাদের দুরভিসন্ধির ব্যাপারে জ্ঞাত ছিলেন। এ কারণেই তাদের অপতৎপরতা প্রশমিত করার জন্য তিনি উসামার সেনাদলে সকল সাহাবী যোগদান করে রোমানদের সাথে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মদীনা ত্যাগ করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করছিলেন। তবে যারা রাজনীতির মঞ্চের অভিনেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল তারা তাদের নীলনকশা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অজুহাত সৃষ্টি করে উসামার সেনাবাহিনীতে যোগদানের ক্ষেত্রে অপারগতা প্রকাশ করেছিল। এমনকি মহানবী (সা.) যেদিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন,সেদিন পর্যন্ত তারা সেনাবাহিনীর যাত্রাও ঠেকিয়ে রেখেছিল। অবশেষে ১৬ দিন যাত্রাবিরতি ও বেকার বসে থাকার পর মহানবী (সা.)-এর ওফাতের সংবাদ প্রচারিত হবার ফলে পুনরায় তারা মদীনায় ফিরে আসে। মহানবীর মূল লক্ষ্য ছিল,তাঁর ওফাতের দিনে মদীনা নগরী ঐসব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও অসুবিধা সৃষ্টিকারী লোক থেকে খালি হয়ে যাবে,যারা তাঁর প্রত্যক্ষ উত্তরাধিকারী ও স্থলবর্তীর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক তৎপরতায় লিপ্ত হতে পারে। অথচ তাঁর এ লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয় নি। তারা শুধু মদীনা নগরীতেই অবস্থান করে নি;বরং তারা মহানবীর প্রত্যক্ষ ওয়াসী আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.)-এর অবস্থান দৃঢ়ীকরণ সংক্রান্ত যে কোন ধরনের উদ্যোগে বাধা দেয়া এবং বিভিন্ন উপায়ে মহানবীকে এ ব্যাপারে কথা বলা থেকে বিরত রাখারও চেষ্টা করেছে।

মহানবী (সা.),তাঁদের কতিপয় কন্যা,যাঁরা তাঁর স্ত্রীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন,তাঁদের ঘৃণ্য ও গোপন তৎপরতা সম্পর্কে অবগত হলে প্রচণ্ড জ্বর নিয়েই মসজিদে উপস্থিত হন এবং মিম্বারের পাশে দাঁড়িয়ে এতটা উচ্চকণ্ঠে জনগণের উদ্দেশে কথা বলতে থাকেন যে,তাঁর কণ্ঠস্বর মসজিদের বাইরে থেকেও শোনা যাচ্ছিল। তিনি তখন বলছিলেন :

أيّها النّاس سعرت النّار، و أقبلت الفتن كقطع الليل المظلم و إنّى و الله ما تمسكون عَلَىَّ بشىء، إنّى لم اُحلّ إلّا ما اَحلّ القرآن و لم اُحرّم إلّا ما حرّم القرآن

“হে লোকসকল! (ফিতনার) অগ্নি প্রজ্বলিত হয়েছে;ফিতনা আঁধার রাতের বলয়গুলোর মতো আবির্ভূত হয়েছে এবং আমার বিপক্ষে তোমাদের কোন প্রমাণ নেই। নিশ্চয়ই পবিত্র কুরআন যা হালাল করেছে,তা ছাড়া আর কিছুই আমি হালাল করি নি এবং পবিত্র কুরআন যা হারাম করেছে,তা ছাড়া আর কিছুই আমি হারাম করি নি।”

এ বাক্যগুলো তাঁর ওফাতের পর ইসলাম ধর্মের ভবিষ্যতের ব্যাপারে তাঁর তীব্র উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার কথাই ব্যক্ত করে। (ফিতনার) যে অগ্নি প্রজ্বলিত হবার কথা তিনি বলেছেন,তার অর্থ কী? তা কি অনৈক্যের আগুন নয়,যা মুসলমানদের জন্য ওঁৎ পেতে বসেছিল এবং মহানবীর ওফাতের পর প্রজ্বলিত হয়েছিল এবং এখনো তার স্ফুলিঙ্গগুলো নিভে তো যায়ই নি;বরং প্রজ্বলিতই রয়ে গেছে?

‘দোয়াত ও কলম নিয়ে এসো,যাতে আমি তোমাদের জন্য একটি পত্র লিখে দিতে পারি’

খিলাফত কুক্ষিগত করার জন্য তাঁর ঘরের বাইরে যে সব তৎপরতা চলছিল,সে ব্যাপারে মহানবী (সা.) সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিলেন। এ কারণে তিনি মতবিরোধের উদ্ভব ঠেকানো এবং তাঁর মূল ধারা থেকে বিচ্যুতি ঘটার আগেই তা রোধ করার জন্য সিদ্ধান্ত নিলেন,তিনি আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) এবং তাঁর আহলে বাইতের খিলাফতের ভিত্তি লিখিত আকারে মজবুত করবেন এবং খিলাফত প্রসঙ্গে একখানা জীবন্ত দলিল রেখে যাবেন।

এ কারণেই যেদিন নেতৃত্বাস্থানীয় সাহাবীগণ তাঁকে দেখার জন্য আসেন,সেদিন তিনি মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। অতঃপর তিনি তাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন : “আমার জন্য কাগজ ও দোয়াত নিয়ে এসো,যাতে আমি তোমাদের জন্য কিছু বিষয় লিখে দিতে পারি যে,এরপর তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না।”

ইবনে আব্বাস এ ঘটনা বর্ণনা করার পর বলেন : “এটাই ছিল ইসলামের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ যে একদল সাহাবীর মত-পার্থক্য ও ঝগড়া-বিবাদ মহানবী (সা.)-এর কাঙ্ক্ষিত পত্র লেখার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ালো।”

বলার অপেক্ষাই রাখে না যে,এর অর্থ ছিল তিনি পত্রের বিষয়বস্তু মুখে বলবেন এবং তাঁর একজন লেখক তা লিপিবদ্ধ করবেন। আর তা না হলে মহানবী (সা.) তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কখনো কলম হাতে নেন নি এবং এক লাইনও লিখেন নি।

এ ঐতিহাসিক ঘটনা একদল সুন্নী ও শিয়া হাদীসবিদ ও ঐতিহাসিক বর্ণনা করেছেন এবং হাদীসবিদ্যার নীতিমালার দৃষ্টিকোণ থেকে তা নির্ভরযোগ্য ও সহীহ বর্ণনাসমূহের অন্তর্ভুক্ত। একটি বিষয় আছে। আর তা হলো,আহলে সুন্নাতের মুহাদ্দিসগণ প্রধানত হযরত উমরের উক্তি অর্থগতভাবে উদ্ধৃত করেছেন অর্থাৎ তাঁরা তাঁর ধৃষ্টতামূলক উক্তির মূল পাঠ ব্যক্ত করেন নি। বলার অপেক্ষা রাখে না,হযরত উমরের উক্তি উদ্ধৃত করা থেকে বিরত থাকা এজন্য নয় যে,ধৃষ্টতার কথা উল্লেখ করা আসলে মহানবী (সা.)-এর প্রতি এক ধরনের ধৃষ্টতা প্রদর্শন;বরং দ্বিতীয় খলীফার মর্যাদা রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই তাঁর উক্তিতে হাত দেয়া হয়েছে এবং পরিবর্তন করা হয়েছে,পাছে যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁর অবমাননাকর উক্তি শুনে তাঁর ব্যাপারে হতাশ না হয় (এবং কুধারণা পোষণ না করে)।

এ দৃষ্টিকোণ থেকেই ‘আস সাকীফাহ্’গ্রন্থের রচয়িতা আবূ বকর জওহারী যখন তাঁর গ্রন্থে এ অধ্যায়ে উপনীত হন,তখন তিনি হযরত উমরের উক্তিটি এভাবে বর্ণনা করেন :

و قال عمر كلمة معناها أنّ الوجع قد غلب علي رسول الله

 “এবং হযরত উমর একটি কথা বলেন,যার অর্থ হচ্ছে,রাসূলুল্লাহর ওপর রোগ-যন্ত্রণা প্রবল হয়েছে।”

তবে আহলে সুন্নাতের হাদীসবেত্তাদের মধ্য থেকে যখন কেউ কেউ দ্বিতীয় খলীফার উক্তির মূল পাঠ হুবহু উদ্ধৃত করতে চান,তখন তাঁরা তাঁর সম্মান রক্ষার উদ্দেশ্যে তাঁর নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ থেকে বিরত থাকেন এবং এতটুকু লিখেন : فقالوا هجر رسول الله “অতঃপর তারা বলল : রাসূলুল্লাহ্ রোগের কারণে প্রলাপ বকেছেন।”

নিশ্চিতভাবে এ ধরনের অশালীন ও জঘন্য উক্তি যে কোন ব্যক্তিরই হয়ে থাকুক না কেন,তা কখনো ক্ষমার যোগ্য নয়। কারণ পবিত্র কুরআনের দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য অনুসারে মহানবী (সা.) সব ধরনের ভুল-ভ্রান্তি থেকে সংরক্ষিত এবং তিনি ওহী ছাড়া কোন কথা বলেন না।

নিষ্পাপ নবীর সান্নিধ্যে সাহাবীদের বিবাদ এতটা বিরক্তিকর ও মনোকষ্টের কারণ হয়েছিল যে,রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর কয়েকজন স্ত্রী পর্দার অন্তরাল থেকে প্রতিবাদ করে বলেছিলেন : “কেন আপনারা মহানবীর নির্দেশ অমান্য করছেন?” দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর তাঁদেরকে চুপ করানোর জন্য বলেছিলেন : “আপনারা হযরত ইউসুফের সঙ্গীদের স্ত্রীদের সদৃশ। যখন মহানবী অসুস্থ হন,তখন আপনারা তাঁর জন্য নিজেদের নয়নগুলোয় চাপ দেন (অশ্রুপাত করেন) এবং যখন তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন,তখন আপনারা তাঁর ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।”

কতিপয় গোঁড়া ব্যক্তি বাহ্যত দ্বিতীয় খলীফার বিরুদ্ধাচরণের পক্ষে কিছু অজুহাত দাঁড় করিয়েছেন। তবে যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে আসলে তাঁরা তাঁকে এ কাজের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করে ফেলেছেন এবং حسبنا كتاب الله (মহান আল্লাহর কিতাব অর্থাৎ পবিত্র কুরআনই আমাদের জন্য যথেষ্ট)- তাঁর এ উক্তিকে তাঁরা অসার গণ্য করেছেন এবং সবাই স্বীকার করেছেন,ইসলাম ধর্মের দ্বিতীয় মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে মহানবী (সা.)-এর সুন্নাত এবং পবিত্র কুরআন কখনোই উম্মতকে মহানবীর হাদীস ও বাণীসমূহের ব্যাপারে অমুখাপেক্ষী করে নি।

তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে,‘মুহাম্মদের জীবনী’গ্রন্থের রচয়িতা ড. হাসানাইন হাইকাল ইশারা-ইঙ্গিতে দ্বিতীয় খলীফার এ কাজ সমর্থন করে লিখেছেন : “এ ঘটনার পর ইবনে আব্বাস বিশ্বাস করতেন,মহানবী (সা.) যে বিষয়টি লিখে দিতে চাচ্ছিলেন,তা লেখার ক্ষেত্রে বাধা দান করে মুসলমানরা আসলেই একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসকে হারিয়েছে। কিন্তু হযরত উমর তাঁর বিশ্বাসের ওপর বহাল থেকেছেন। কারণ মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেছেন :

ما فرّطنا فِى الكتاب من شىء “আমরা পবিত্র কুরআনে কোন কিছুই উপেক্ষা করি নি (অর্থাৎ সবকিছু এ গ্রন্থে বর্ণনা করেছি)।”

তিনি যদি এ আয়াতের আগের ও পরের অংশের দিকে দৃষ্টি দিতেন,তা হলে তিনি কখনোই এ আয়াতের এ রকম অপব্যাখ্যা করতেন না এবং নিষ্পাপ মহানবীর বিপরীতে হযরত উমরের এ কাজ সমর্থন করতেন না। কারণ আয়াতে উল্লিখিত কিতাব বা গ্রন্থের অর্থ বলতে গ্রন্থবৎ প্রকৃতিজগৎ এবং অস্তিত্বের পত্রসমূহকে বোঝানো হয়েছে। আর এ অস্তিত্বজগতের প্রতিটি সৃষ্টি আসলে সৃষ্টিগ্রন্থের এক একটি পৃষ্ঠা এবং সমগ্র সৃষ্টি এ সৃষ্টিগ্রন্থের সমুদয় পৃষ্ঠাতুল্য।

و ما من دابّة فِى الأرض و لا طائر يطير بجناحيه الّا أمم أمثالكم ما فرّطنا فِى الكتاب من شىء ثمّ الى ربّهم يُحشرون

“পৃথিবীতে (বিচরণকারী) প্রতিটি জীব-জন্তু এবং (আকাশে) স্বীয় ডানা মেলে উড্ডয়নকারী প্রতিটি বিহঙ্গ তোমাদের মতোই এক একটা প্রজাতি (أمم),আমরা (সৃষ্টি) গ্রন্থে কোন কিছুই উপেক্ষা করি নি (অর্থাৎ আমরা এ সৃষ্টিলোকে যা যা সৃষ্টি করা সম্ভব,সেগুলো সবই সৃষ্টি করেছি) এবং সব কিছুই তাদের প্রভুর কাছে প্রত্যাবর্তন করবে।” (সূরা আনআম : ৩৮)

যেহেতু ‘আমরা এ গ্রন্থের মধ্যে কোন কিছুই উপেক্ষা করি নি’-এ বাক্যের আগের বাক্য ‘জীবকূল ও পক্ষীকূল’সৃষ্টি করার সাথে সংশ্লিষ্ট এবং এর পরের বাক্য কিয়ামত দিবসে পুনরুজ্জীবিত করণ প্রক্রিয়া বা হাশরের সাথে সম্পর্কিত,সেহেতু নিশ্চিত করে বলা যায়,আয়াতে উল্লিখিত ‘গ্রন্থ’যার মধ্যে কোন কিছুই উপেক্ষা করা হয় নি,তা বলতে গ্রন্থবৎ প্রকৃতিজগৎ (সৃষ্টিগ্রন্থ) এবং অস্তিত্বের পত্রকেই বোঝানো হয়েছে।

অধিকন্তু আমরা যদি মেনেও নিই যে,আয়াতের ‘গ্রন্থ’শব্দ আসলে পবিত্র কুরআন,তা হলে পবিত্র কুরআনের স্পষ্ট উক্তি অনুসারে এ গ্রন্থ বোঝার জন্য মহানবী (সা.)-এর ব্যাখ্যা ও দিক-নির্দেশনা আবশ্যক।

و أنزلنا إليك الذّكر لتبيّن للنّاس ما نزل إليهم

“আর আমরা আপনার কাছে এ ‘স্মরণ’অর্থাৎ পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করেছি যাতে আপনি জনগণের কাছে তাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে,তা ব্যাখ্যা করেন।” (সূরা নাহল : ৪৪)

এক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে এই যে,মহান আল্লাহ্ এ আয়াতে لتقرأ অর্থাৎ ‘যাতে আপনি পাঠ করেন’বলেন নি,বরং তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন لتبيّن অর্থাৎ ‘যাতে আপনি ব্যাখ্যা করেন’। সুতরাং মহান আল্লাহর গ্রন্থই যদি মুসলিম উম্মাহর জন্য যথেষ্ট হয়ে থাকে,তবুও মহানবী (সা.) প্রদত্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রতি এ গ্রন্থের তীব্র প্রয়োজন রয়েছে।

উম্মত যদি এ ধরনের দিক-নির্দেশনা সম্বলিত পত্রের মুখাপেক্ষী না-ই হতো,তা হলে যখন ইসলাম ধর্মের প্রখ্যাত বিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব ইবনে আব্বাস (রা.)-এর গণ্ডদেশ বেয়ে মুক্তার মতো অশ্রুবিন্দু ঝরতে থাকত,তখন কেন তিনি বলতেন :

يوم الخميس و ما يوم الخميس ثمّ جعل تسيل دموعه حتّي رؤيت علي خدّيه كأنها نظام اللؤلؤ قال رسول الله : ايتونِى بالكتف و الدّواة أو اللوح و الدّواة اكتب لكم كتاباً لن تضلّوا بعده ابداً فقالوا...

“হায় বৃহস্পতিবার! হায় বৃহস্পতিবার! এরপর তাঁর অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল;আর তাঁর গণ্ডদেশদ্বয়ের উপর তা মুক্তার মতো দেখা যাচ্ছিল। তিনি বললেন : মহানবী (সা.) বলেছেন : আমার কাছে তোমরা কাঁধের হাড় ও দোয়াত বা কাগজ ও দোয়াত নিয়ে এসো। তা হলে আমি তোমাদের জন্য এমন একটি পত্র (নির্দেশনামা) লিখে দেব যে,এরপর তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। অতঃপর একদল লোক বলল : রাসূলুল্লাহ্ (সা.)” ১০...

এ ধরনের তীব্র শোক যা ইবনে আব্বাস প্রকাশ করেছেন,তা সত্বেও এবং মহানবী (সা.) নিজেই যে তাকীদ দিয়েছেন তার ভিত্তিতে কিভাবে এ কথা বলা সম্ভব যে,পবিত্র কুরআন মহানবী (সা.)-এর এ পত্রের প্রতি মুসলিম উম্মাহকে অমুখাপেক্ষী করেছে?

এখন যখন মহানবী (সা.) এ ধরনের একটি নির্দেশনামা লিপিবদ্ধ করাতে পারলেন না,তখন অকাট্য সাক্ষ্য-প্রমাণ ও দলিলের ভিত্তিতে কি ধারণা করা সম্ভব যে,এ নির্দেশনা লেখানোর পেছনে মহানবীর কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে?

এ পত্রের বিষয়বস্তু ও উদ্দেশ্য কী ছিল?

পবিত্র কুরআন তাফসীর করার ক্ষেত্রে নতুন অথচ দৃঢ় পদ্ধতি,-যা বর্তমানে সকল গবেষক ও আলেমের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে,-হচ্ছে কোন একটি বিষয়ে অবতীর্ণ আয়াতের দ্ব্যর্থবোধকতা ও সংক্ষিপ্ততা ঐ একই বিষয়ে অবতীর্ণ অপর কোন আয়াতের মাধ্যমে দূর করা হয়,যা অর্থ নির্দেশের ক্ষেত্রে প্রথমটির চেয়ে অধিকতর স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন। আর পারিভাষিক অর্থে আমরা এভাবে পবিত্র কুরআনের আয়াতকে অপর এক আয়াতের সাহায্যে তাফসীর (ব্যাখ্যা) করি।

এ পদ্ধতি পবিত্র কুরআনের আয়াতসমূহ ব্যাখ্যার সাথেই একান্তভাবে শুধু সংশ্লিষ্ট নয়,বরং হাদীসসমূহের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য। তাই এক হাদীসের সাহায্যে অনুরূপ আরেক হাদীসের সংক্ষিপ্ততা ও দ্ব্যর্থবোধকতা দূর করা যায়। কারণ আমাদের মহান ইমামগণ সংবেদনশীল ও দৃষ্টি আকর্ষণীয় বিষয়াদির ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপকারী ও পুনরাবৃত্তিমূলক অনেক বক্তব্য ও ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন,যার সবই অর্থ ও লক্ষ্য নির্দেশের ক্ষেত্রে একই ধাঁচের ও একই পর্যায়ের নয়;কখনো কখনো সেসব অর্থ ও লক্ষ্য নির্দেশ করার ক্ষেত্রে পরিষ্কার;আবার কখনো কখনো পরিবেশ-পরিস্থতির কারণে কাঙ্ক্ষিত অর্থ ও লক্ষ্য ইশারা-ইঙ্গিতে বর্ণনা করতে হয়েছে।

বলা হয়েছে,মহানবী (সা.) রোগশয্যায় শায়িতাবস্থায় একটি বিষয় লিখে দেয়ার জন্য সাহাবীগণকে কাগজ-কলম আনার নির্দেশ দেন এবং তিনি তাঁদের স্মরণ করিয়েও দেন,এ নির্দেশনামার কারণে তারা কখনো পথভ্রষ্টতা ও বিচ্যুতির মধ্যে পড়বে না।১১ অতঃপর মহানবীর সান্নিধ্যে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে তিনি ঐ চিঠি বা প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা সম্বলিত পত্র লেখানো থেকে বিরত থাকেন।

এ ক্ষেত্রে কেউ হয় তো প্রশ্ন করতে পারে,যে পত্র মহানবী (সা.) লেখাতে চেয়েছিলেন,তা কী প্রসঙ্গে ছিল। এ প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট। কারণ আলোচনার শুরুতে আমরা যে মূলনীতি উল্লেখ করেছি,তার আলোকে অবশ্যই বলা যায়,আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর ওয়াসায়াত এবং খিলাফত দৃঢ়ীকরণ এবং তাঁর আহলে বাইতকে অনুসরণ করার অপরিহার্যতা তুলে ধরা ছাড়া মহানবীর আর কোন উদ্দেশ্য ছিল না। আর এ বিষয় হাদীসে সাকালাইন বিবেচনায় আনলে স্পষ্ট হয়ে যায়। উল্লেখ্য,হাদীসে সাকালাইনের ব্যাপারে শিয়া-সুন্নী সকল হাদীসবিশারদের মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে। কারণ মহানবী (সা.) যে পত্র লিখাতে চেয়েছিলেন,সে ব্যাপারে বলেছেন : “যাতে তোমরা আমার পরে পথভ্রষ্ট না হও,সেজন্য আমি এ পত্রটি লিখাচ্ছি।” আর হাদীসে সাকালাইনেও তিনি হুবহু এ বাক্যই (অর্থাৎ আমার পরে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না) বলেছেন এবং কিতাব ও তাঁর আহলে বাইতকে অনুসরণ করার কারণ তিনি এটাই বিবেচনা করেছেন যে,এ দুই মূল্যবান ও ভারী বিষয়ের অনুসরণই হচ্ছে পথভ্রষ্ট না হবার কারণ।

انّى تارك فيكم الثّقلين ما ان تمسّكتم بِهما لن تضلّوا : كتاب الله و عترتى اهل بيتِى

“নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে দু’টি অতি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতদিন পর্যন্ত এ দু’টি তোমরা আঁকড়ে ধরে রাখবে,ততদিন পর্যন্ত তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। এ দুই অতি মূল্যবান জিনিস হচ্ছে : মহান আল্লাহর কিতাব এবং আমার বংশধর (ইতরাত)।”

এ দুই হাদীসের১২ শব্দমালা এবং এদের মধ্যে বিদ্যমান সাদৃশ্য বিবেচনায় আনলে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করা সম্ভব নয় কি যে,কাগজ ও কলম চাওয়ার পেছনে মহানবীর উদ্দেশ্য ছিল হাদীসে সাকালাইনের অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তু বা এর অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তুর চেয়েও উন্নত কিছু লিপিবদ্ধ করা;আর তা ছিল মহানবীর প্রত্যক্ষ ওয়াসী ও উত্তরাধিকারীর বেলায়েত (নেতৃত্ব) এবং ওয়াসায়াত দৃঢ়ীকরণ যা ১৮ যিলহজ্ব ইরাক,মিশর ও হিজাযের হাজীগণের পৃথক হবার স্থান গাদীরে খুমের মহাসমাবেশে মৌখিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল?

এছাড়াও যে ব্যক্তি মহানবীর ওফাতের পরপর সাকীফায়ে বনী সায়েদায় খিলাফতের জন্য শূরা বা পরামর্শসভার আয়োজন করে নিজের পুরনো বন্ধুকে বিশেষ অবস্থার মধ্য দিয়ে খিলাফতের জন্য প্রার্থী করেছিলেন এবং তাঁর বন্ধু নিজের মৃত্যুকালে তাঁকে তাঁর সেবার নগদ পুরস্কারও দিয়েছিলেন এবং তাঁকে সকল মূলনীতির বিপরীতে খিলাফতের জন্য মনোনীত করেছিলেন,সেই ব্যক্তির দুর্দমনীয় বিরোধিতা এ বিষয়ের সাক্ষী যে,মহানবী (সা.)-এর কথাবার্তা এবং তাঁর কাছে সাহাবীগণের এ সমাবেশে এমন কিছু প্রমাণ বিদ্যমান ছিল,যা থেকে প্রতীয়মান হয়,মহানবী (সা.) খিলাফত ও মুসলিম উম্মাহর সার্বিক বিষয় পরিচালনার দায়িত্বভারের ব্যাপারে কিছু কথা লিখাতে চাচ্ছেন। এ কারণেই তিনি (হযরত উমর) কাগজ-কলম আনার ব্যাপারে বিরোধিতা করেন। আর তা না হলে এতটা জবরদস্তির কোন কারণ থাকত না।

মহানবী (সা.) কেন এ পত্র লেখার ব্যাপারে আর তাকীদ দিলেন না?

মহানবী (সা.) যিনি তাদের বিরোধিতা সত্বেও নিজ সচিবকে ডেকে এ পত্র লেখাতে পারতেন,তিনি কেন (ঐ পত্র লেখানোর ক্ষেত্রে) শক্তি প্রয়োগ থেকে বিরত থাকলেন?

এ প্রশ্নের উত্তরও সুস্পষ্ট। কারণ মহানবী (সা.) যদি এ পত্র লেখার ব্যাপারে পীড়াপীড়ি করতেন,তা হলে যারা বলেছিলেন যে,‘রোগযন্ত্রণা মহানবীর ওপর প্রবল হয়েছে’,তারাই মহানবীর সাথে আরো বেয়াদবীর চরম স্পর্ধা প্রদর্শন করত এবং তাদের সমর্থকরাও জনগণের মধ্যে তা রটনা করে তাদের দাবী প্রমাণ করার চেষ্টা করত। এ অবস্থায় মহানবীর শানে বেয়াদবীপূর্ণ আচরণের মাত্রা যেমন বৃদ্ধি পেত ও অব্যাহত থাকত,তেমনি মহানবীর পত্রের কার্যকারিতাও আর থাকত না। এ কারণেই কেউ কেউ যখন তাদের বেয়াদবী ও মন্দ আচরণ লাঘব করার জন্য মহানবীর কাছে বলেছিলেন : “আপনি কি ইচ্ছা করেন যে,আমরা কাগজ-কলম নিয়ে আসি?” তখন তাঁর চেহারা প্রচণ্ড উষ্মায় ফেটে পড়ছিল,তা রক্তিম হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি তাদের বলেছিলেন : “এতসব কথা-বার্তার পর তোমরা কাগজ-কলম আনতে চাচ্ছ? কেবল এতটুকু তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি যে,আমার বংশধরদের সাথে সদাচরণ করবে।” এ কথা বলে তিনি উপস্থিত ব্যক্তিদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন এবং আলী,আব্বাস ও ফযল ব্যতীত তারা সবাই সেখান থেকে উঠে চলে যায়।১৩

অন্তিম পত্র লিখতে না পারার ক্ষতিপূরণ প্রচেষ্টা

কতিপয় সাহাবীর প্রকাশ্য বিরোধিতা যদিও মহানবীকে পত্র লেখার অভিপ্রায় পরিত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল,তবুও তিনি ভিন্ন এক পদ্ধতিতে তাঁর উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছিলেন এবং ইতিহাসের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মহানবী (সা.) রোগযন্ত্রণায় প্রচণ্ড কষ্ট পাওয়া সত্বেও এক হাত আলীর কাঁধে এবং অন্য হাত মায়মুনার কাঁধের উপর রেখে মসজিদের দিকে গমন করেন এবং প্রাণশক্তি নিঃশেষকারী তীব্র কষ্ট সহ্য করেও তিনি মিম্বারে আরোহণ করেন। জনতার নয়ন অশ্রুজলে ভিজে গিয়েছিল এবং মসজিদে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সুমসাম নীরবতা বিরাজ করছিল। জনতা তখন মহানবীর সর্বশেষ বাণী ও উপদেশাবলী শোনার অপেক্ষা করছিল। মহানবী (সা.) সভাস্থলের নীরবতা ভঙ্গ করে বললেন : “আমি তোমাদের মাঝে দু’টি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি।” ঐ সময় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল : “ঐ দুই মূল্যবান জিনিস কী?” (উষ্মায়) মহানবীর মুখমণ্ডল প্রজ্বলিত হয়ে উঠল এবং তিনি বললেন : “আমি নিজেই এর ব্যাখ্যা দেব;তাই প্রশ্ন করার কোন কারণ নেই।” অতঃপর তিনি বললেন : “এক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং অন্যটি আমার বংশধর।”১৪

ইবনে হাজর আসকালানী ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আরেকভাবে বর্ণনা করেছেন এবং এ দু’টি বর্ণনাই১৫  সহীহ হওয়ার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা নেই। তিনি লিখেছেন : “মহানবী (সা.) যখন অসুস্থ তখন কোন একদিন যখন সাহাবীগণ তাঁর বিছানার চারপাশ ঘিরে রেখেছিলেন,তখন তিনি তাঁদের দিকে মুখ করে বলেছিলেন : হে লোকসকল! আমার অন্তিম মুহূর্ত ঘনিয়ে এসেছে এবং খুব শীঘ্রই আমি তোমাদের মধ্য থেকে বিদায় নেব। তোমরা জেনে রাখ,আমি তোমাদের মধ্যে মহান আল্লাহর কিতাব এবং আমার বংশধরদের রেখে যাচ্ছি। এরপর তিনি হযরত আলীর হাত ধরে তা উঁচুতে তুলে বললেন :

هذا علىّ مع القرآن و القرآن مع علىّ لا يفترقان

-এই আলী পবিত্র কুরআনের সাথে এবং পবিত্র কুরআন আলীর সাথে আছে। এরা কিয়ামত দিবস পর্যন্ত কখনো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না।”১৬

মহানবী (সা.) যদিও তাঁর অসুস্থ হওয়ার আগে একাধিক উপলক্ষে১৭  হাদীসে সাকালাইন বিভিন্ন আঙ্গিক ও ভাষাগত অবয়বে বর্ণনা করেছিলেন এবং এ দুই অতি মূল্যবান বিষয়ের প্রতি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন,তবু যেহেতু তিনি রোগশয্যায় শায়িত হয়ে আবারও পবিত্র কুরআন ও তাঁর বংশধরদের (ইতরাত) আঁকড়ে ধরে থাকার ব্যাপারে বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করেছেন এবং যেসব ব্যক্তি তাঁর অন্তিম পত্র লেখার ব্যাপারে বিরোধিতা করেছিল,তাদেরই উপস্থিতিতে তিনি পবিত্র কুরআন ও ইতরাতের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন,সেহেতু ধারণা করা যায়,হাদীসে সাকালাইনের পুনরাবৃত্তিই ছিল ঐ অন্তিম পত্রের শূন্যতা পূরণ করা,যা তিনি লিখতে পারেন নি।

দীনার বণ্টন

‘বাইতুল মাল’সংক্রান্ত মহানবী (সা.)-এর নীতি ও পদ্ধতি এই ছিল যে,উপযুক্ত সময় ও সুযোগে প্রথমেই তিনি বাইতুল মালের সম্পদ দুঃস্থ,অভাবীদের মধ্যে বণ্টন করে দিতেন এবং বাইতুল মালে দীর্ঘদিন সম্পদ পুঞ্জীভূত করে রাখার পক্ষপাতী ছিলেন না। এ কারণেই রোগশয্যায় শায়িত অবস্থায় তাঁর এক স্ত্রীর কাছে কিছু দীনার গচ্ছিত থাকার কথা তাঁর স্মরণে আসামাত্রই তিনি তাঁর সামনে সেগুলো নিয়ে আসার নির্দেশ দেন। দীনারগুলো তাঁর সামনে রাখা হলে তিনি সেগুলো হাতে নিয়ে বলেছিলেন : ما ظنّ محمّد بالله لو لقى الله و هذه عنده “মহান আল্লাহ্ সম্পর্কে মুহাম্মদ কী ভাবছে,যখন সে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছে,অথচ তার কাছে এগুলো এখনও রয়ে গেছে?” এরপর তিনি আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-কে ঐ দীনারগুলো দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। ১৮

ঔষধ সেবন করানোর জন্য মহানবী (সা.)-এর তীব্র অসন্তোষ

আসমা বিনতে উমাইস মহানবী (সা.)-এর স্ত্রী মাইমুনার একজন নিকটাত্মীয় ছিলেন। হাবাশায় (আবিসিনিয়া) অবস্থানকালে তিনি কয়েকটি উদ্ভিদের নির্যাস থেকে এক ধরনের ঔষধ প্রস্তুত করার পদ্ধতি শিখেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন,মহানবীর অসুস্থতা ফুসফুস ও বক্ষগহ্বরের আবরক ঝিল্লীর প্রদাহ-ঘটিত ব্যাধি (অর্থাৎ তিনি প্লুরিসি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন) এবং হাবাশায় এ ধরনের রোগের জন্য এ ঔষধ ব্যবহার করা হতো। আসমা মহানবীর অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন দেখতে পান এবং মহানবী তীব্র বেদনায় অচেতন হয়ে পড়লে তিনি ঐ ঔষধ বা সিরাপের কিছু অংশ মহানবীর মুখে ঢেলে দেন। জ্ঞান ফেরার পর মহানবী (সা.) ব্যাপারটি বুঝতে পারেন এবং রাগান্বিত হয়ে বলেন : “মহান আল্লাহ কখনোই তাঁর রাসূলকে এ ধরনের রোগে আক্রান্ত করেন না।”১৯

সাহাবীগণের সাথে শেষ বিদায়

মহানবী (সা.) অসুস্থাবস্থায় কখনো কখনো মসজিদে যেতেন এবং মুসল্লীগণের সাথে নামায আদায় করতেন ও তাদেরকে কতিপয় বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতেন।

তাঁর অসুস্থতার কোন একদিন মাথায় একটি কাপড় দিয়ে পট্টি বাঁধা অবস্থায় আলী (আ.) ও ফযল ইবনে আব্বাস তাঁর বগলদ্বয়ের নিম্নদেশ ধরে রেখেছিলেন এবং তাঁর পদদ্বয় মাটির উপর দিয়ে হেঁচড়ে যাচ্ছিল। ঐ অবস্থায় তিনি মসজিদে প্রবেশ করে মিম্বারে আরোহণ করেন এবং ভাষণ শুরু করেন : হে লোকসকল! তোমাদের মধ্য থেকে আমার যাবার সময় চলে এসেছে। আমি যদি কাউকে কোন অঙ্গীকার করে থাকি,তা হলে তা পালন করার ব্যাপারে আমি প্রস্তুত। আর আমার কাছে যদি কারো পাওনা থেকে থাকে,তা হলে সে যেন তা আমাকে বলে এবং আমি তা প্রদান করব। ঐ সময় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল : কিছু দিন আগে আপনি আমাকে প্রতিহকেতি দিয়েছিলেন,আমি যদি বিয়ে করি,তা হলে আপনি আমাকে কিছু পরিমাণ অর্থ সাহায্য করবেন। মহানবী (সা.) তৎক্ষণাৎ ফযলকে ঐ ব্যক্তির কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ অর্থ প্রদানের নির্দেশ দিলেন এবং মিম্বার থেকে নেমে ঘরে চলে গেলেন। এরপর মৃত্যুর তিন দিন পূর্বে শুক্রবার মহানবী (সা.) মসজিদে এসে ভাষণ দিলেন। তিনি ভাষণের মাঝে বললেন : আমার ওপর যদি কারো কোন হক (অধিকার) থেকে থাকে,তা হলে সে দাঁড়িয়ে তা প্রকাশ্যে ব্যক্ত করুক। কারণ এ পৃথিবীতে কিসাস (প্রতিশোধ) গ্রহণ আমার কাছে আখেরাতে কিসাস গ্রহণের চেয়ে অধিকতর প্রিয় القصاص فِى دار الدّنيا احبّ الَىّ من القصاص فِى دار الآخرة

এ সময় সাওয়াদাহ্ ইবনে কাইস দাঁড়িয়ে বলল : “তায়েফের জিহাদ থেকে ফেরার পথে আপনি একটি উটের পিঠে সওয়ার ছিলেন। ঐ সময় আপনার হাতের চাবুক উটের উপর আঘাত করার জন্য উঠিয়েছিলেন,কিন্তু হঠাৎ করে আমার পেটে ঐ চাবুকের আঘাত লেগেছিল। আমি এখন আমার কিসাস নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।”

মহানবী (সা.)-এর আহ্বান নিছক ভদ্রতামূলক সৌজন্য ছিল না,বরং তিনি এমনকি এ ধরনের অধিকারগুলো,যা কখনো জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করে না২০ সেগুলো পর্যন্ত আদায় করার ক্ষেত্রে আন্তরিক ইচ্ছা পোষণ করতেন। মহানবী (সা.) তাঁর পরণের জামা উঠালেন যাতে করে সাওয়াদাহ্ তার কিসাস গ্রহণ করে। মহানবীর সাহাবীগণ দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে ও অশ্রুসজল চোখে,কাঁধ প্রসারিত করে এবং প্রাণ বিদীর্ণকারী কান্না বিজড়িত কণ্ঠে প্রতীক্ষা করছিলেন,এ ঘটনা কোথায় গিয়ে সমাপ্ত হয়! আসলেই কি সাওয়াদাহ্ প্রতিশোধ (কিসাস) গ্রহণ করবে? হঠাৎ সবাই দেখতে পেল,সাওয়াদাহ্ অনিচ্ছাকৃতভাবে মন্ত্রমুগ্ধের মতো মহানবী (সা.)-এর পেট ও বক্ষদেশ চুম্বন করছে। এ সময় মহানবী (সা.) সাওয়াদার জন্য দুআ করে বললেন : “হে আল্লাহ্! সাওয়াদাহ্ যেভাবে নবীকে ক্ষমা করে দিয়েছে সেভাবে তাকে আপনিও ক্ষমা করে দিন।”২১

জীবনের শেষ শিখা

অস্থিরতা ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সমগ্র মদীনা নগরীকে গ্রাস করেছিল। মহানবী (সা.)-এর সাহাবীগণ অশ্রুসজল নয়নে এবং দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে মহানবীর অসুস্থতার পরিণতি সম্পর্কে জানার জন্য তাঁর ঘরের চারপাশে সমবেত হয়েছিলেন। ঘরের ভেতর থেকে বাইরে আসা খবর মহানবীর স্বাস্থ্যের অবনতি ও সংকটজনক অবস্থার কথাই ব্যক্ত করছিল এবং তাঁর স্বাস্থ্যের উন্নতি ও আরোগ্য সংক্রান্ত সব ধরনের আশা মিটিয়ে দিচ্ছিল এবং নিশ্চিত করছিল,মহানবীর জীবন প্রদীপের সর্বশেষ শিখা নির্বাপিত হবার আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা অবশিষ্ট আছে।

মহানবী (সা.)-এর একদল সাহাবী নিকট থেকে তাঁদের মহান নেতাকে দেখা ও তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকলে যে কক্ষের মধ্যে তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন,সেখানে তাঁর আহলে বাইত ব্যতীত আর কারো পক্ষে যাতায়াত করা সম্ভব ছিল না।

মহানবী (সা.)-এর একমাত্র কন্যাসন্তান হযরত ফাতিমা (আ.) পিতার শয্যার পাশে বসেছিলেন এবং তাঁর উজ্জ্বল মুখমণ্ডলের দিকে তাকাচ্ছিলেন। তিনি যখন পিতার কপাল ও মুখমণ্ডলের উপর মুক্তার দানার মতো মৃত্যু-ঘামের বারিবিন্দুসমূহ ঝরে পড়তে দেখলেন,তখন তিনি ভগ্ন হৃদয়ে,অশ্রুসিক্ত নয়নে এবং রুদ্ধকণ্ঠে মহানবী (সা.)-এর শানে হযরত আবূ তালিব রচিত এ কবিতাংশ মৃদু স্বরে আবৃত্তি করছিলেন :

و ابيض يستسقى الغمام بوجهه     ثمال اليتامي عصمة للارامل

“ঐ উজ্জ্বল মুখমণ্ডল,যাঁর মর্যাদার উসীলায় মেঘমালার বারিবিন্দুর জন্য প্রার্থনা করা হয়;তিনি অনাথদের আশ্রয়স্থল এবং বিধবা নারীদের রক্ষক।”

এ সময় মহানবী (সা.) চোখ মেলে তাকালেন এবং নিচু স্বরে কন্যার উদ্দেশে বললেন :

“এ কবিতা আবূ তালিব আমার শানে আবৃত্তি করেছেন। তবে এর স্থলে পবিত্র কুরআনের এ আয়াত তেলাওয়াত উত্তম২২  :

و ما محمّد إلّا رسول قد خلت من قبله الرسل أفأن مات أو قُتل انقلبتم علي أعقابكم و من ينقلب علي عقبيه فلن يضرّ الله شيئا و سيجزى الله الشاكرين

-মুহাম্মদ শুধু আল্লাহর রাসূল,তাঁর আগে রাসূলগণ প্রস্থান করেছেন। অতএব,যদি তিনি ইন্তেকাল করেন বা নিহত (শহীদ) হন,তা হলে কি তোমরা তোমাদের পেছন দিকে (পূর্বপুরুষদের ধর্মের দিকে) প্রত্যাবর্তন করবে? আর যারা তাদের দিকে ফিরে যাবে,তারা কখনোই মহান আল্লাহর ন্যূনতম ক্ষতিও করতে পারবে না। আর তিনি কৃতজ্ঞ বান্দাদের পুরস্কৃত করবেন।” (সূরা আলে ইমরান : ১৪৪)

হযরত ফাতিমা (আ.)-এর সাথে মহানবী (সা.)-এর কথোপকথন

অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়,নিজ সন্তানদের প্রতি বড় বড় মনীষী ও ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্বদের আবেগ-অনুভূতি অধিক চিন্তা-ভাবনা ও কর্মব্যস্ততার দরুন নিস্প্রভ হয়ে পড়ে। কারণ মহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং সর্বজনীন চিন্তা- ভাবনা তাঁদেরকে এতটা আত্মমগ্ন করে রাখে যে,এর ফলে সন্তানের প্রতি ভালোবাসা ও আবেগ-অনুভূতি তাঁদের মাঝে বিকশিত হতে পারে না। তবে মহান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিবর্গ এ নিয়মের ব্যতিক্রম। সবচেয়ে মহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং বিশ্বজনীন ধ্যান-ধারণা ও আদর্শের অধিকারী হওয়া সত্বেও তাঁরা প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী এবং তাঁদের অন্তরাত্মা মহান। আর এ কারণেই জীবনের একটি দিকে ব্যস্ত হওয়া কখনো তাঁদেরকে জীবনের অপর দিক থেকে নির্লিপ্ত করে না।

একমাত্র কন্যাসন্তানের প্রতি মহানবী (সা.)-এর প্রগাঢ় টান ও ভালোবাসা প্রকৃতপক্ষে মানবীয় আবেগ-অনুভূতির সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ। তাই মহানবী কন্যার কাছ থেকে বিদায় না নিয়ে কখনোই সফরে বের হতেন না এবং সফর থেকে ফিরে এসে সর্বাগ্রে তিনি তাঁর সাথে দেখা করার জন্য ছুটে যেতেন। নিজের স্ত্রীগণের সামনে তাঁকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতেন এবং সাহাবীগণকে বলতেন : “ফাতেমা আমার দেহের টুকরা। যা তাকে সন্তুষ্ট করে,তা আমাকেও সন্তুষ্ট করে;আর তার ক্রোধ ও অসন্তুষ্টি আমারই ক্রোধ ও অসন্তুষ্টি।”২৩

হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.)-এর সাক্ষাৎ মহানবী (সা.)-কে বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্রা ও মমতাময়ী নারী হযরত খাদীজার কথা স্মরণ করিয়ে দিত,যিনি তাঁর স্বামীর পবিত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের পথে বিস্ময়কর সব দুঃখ-কষ্ট বরণ করে নিয়েছিলেন এবং এ পথে তাঁর যাবতীয় সম্পত্তি ব্যয় করেছিলেন।

যে কয়েকটি দিন মহানবী (সা.) শয্যাশায়ী ছিলেন,সে ক’টি দিন হযরত ফাতিমা (আ.) পিতার শয্যা পাশে বসে থাকতেন এবং এক মুহূর্তের জন্যও পিতার কাছে থেকে দূরে সরেন নি। হঠাৎ মহানবী (সা.) ইঙ্গিতে বোঝালেন,তিনি তাঁর সাথে কথা বলবেন। নবীকন্যা একটু ঋজু হয়ে মহানবীর কাছে মাথা নিয়ে গেলেন। তখন মহানবী (সা.) তাঁর সাথে আস্তে আস্তে কথা বললেন। যাঁরা তাঁর শয্যাপাশে উপস্থিত ছিলেন,তাঁদের কেউ মহানবী ও তাঁর কন্যার কথোপকথনের বিষয় সম্পর্কে বিন্দুমাত্র অবগত হতে পারেন নি। মহানবী কথা বলা শেষ করলে হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.) কাঁদলেন এবং তাঁর দু’চোখ বেয়ে বন্যার স্রোতের মতো অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল। এ অবস্থায় মহানবী (সা.) তাঁকে আবার ইশারা করে কাছে ডেকে তাঁর সাথে আস্তে আস্তে কথা বললেন। এবার হযরত যাহরা (আ.) হাসিমুখে মাথা উঠালেন। একই সময় পরস্পর বিপরীত এ দুই আচরণ উপস্থিত ব্যক্তিবর্গকে বিস্মিত করেছিল। তাঁরা নবীকন্যার কাছে অনুরোধ করলেন যেন তিনি তাঁর সাথে মহানবীর যে কথা হয়েছে,তা তাঁদের জানান এবং এ দুই অবস্থার উদ্ভবের কারণও তাঁদের কাছে ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু যাহরা (আ.) বললেন : “আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর রহস্য ফাঁস করব না।”

মহানবী (সা.)-এর ওফাতের পর হযরত যাহরা (আ.) হযরত আয়েশার পীড়াপীড়িতে তাঁদেরকে ঘটনার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবগত করেন এবং বলেন : “আমার পিতা প্রথমে তাঁর ইন্তেকালের কথা জানিয়ে বলেন : আমি এ অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভ করব না। এ কারণেই আমার তখন কান্না পেয়েছিল। তবে পরে তিনি আমাকে বললেন : আমার আহলে বাইতের মধ্য থেকে তুমিই প্রথম,যে আমার সাথে মিলিত হবে। এ সংবাদ আমাকে আনন্দিত করল এবং আমিও বুঝতে পারলাম,অল্প কিছুদিন পরেই আমি পিতার সাথে মিলিত হব।”২৪

দাঁত মুবারক মিসওয়াক

মহানবী (সা.) রাতের বেলা ঘুমানোর আগে এবং ঘুম থেকে জাগার পর মিসওয়াক করতেন। মহানবীর মিসওয়াক আরাক কাঠের ছিল,যা দাঁতের মাড়ি মজবুত করা এবং ময়লা ও খাদ্যকণা পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। একদিন হযরত আয়েশার ভাই আবদুর রহমান একটি সবুজ ও তাজা ডাল হাতে নিয়ে মহানবী (সা.)-কে দেখতে আসেন। হযরত আয়েশা মহানবীকে ঐ ডালটির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বুঝতে পারলেন,তিনি ডালটি দিয়ে মিসওয়াক করতে চাচ্ছেন। তাই তিনি তা নিয়ে মহানবীর হাতে রাখলেন। আর তখন মহানবী খুব যত্নের সাথে দাঁত মিসওয়াক করলেন।২৫

মহানবী (সা.)-এর অন্তিম ওসিয়ত

মহানবী (সা.) অসুস্থ থাকার দিনগুলোয় প্রয়োজনীয় বিষয়াদি স্মরণ করিয়ে দেয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন এবং তাঁর অসুস্থতার শেষ দিনগুলোয় নামায এবং দাস-দাসীদের সাথে সদাচরণ করার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি নির্দেশ দিতেন এবং বলতেন : “তোমরা দাস-দাসীদের সাথে সদাচরণ করবে,তাদের খাবার ও পোশাক-পরিচ্ছদের দিকে খেয়াল রাখবে,তাদের সাথে কোমল ভাষায় কথা বলবে এবং মানুষের সাথে সুন্দরভাবে মেলামেশা ও জীবন যাপন করবে।”

একদিন কা’ব আল আহ্বার দ্বিতীয় খলীফাকে জিজ্ঞেস করলেন : “মহানবী (সা.) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার অবস্থায় কী বলেছিলেন?” দ্বিতীয় খলীফা সভায় উপস্থিত আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর দিকে ইঙ্গিত করে বললেন : “আপনি তাঁকে জিজ্ঞেস করুন।” আলী (আ.) বললেন : “মহানবী (সা.)-এর মাথা যখন আমার কাঁধের উপর রাখা ছিল,তখন তিনি বলছিলেন: (الصّلوة الصّلوة) নামায,নামায।” এ সময় কা’ব বললেন : “পূর্ববর্তী নবীগণও এ পদ্ধতির ওপর বহাল ছিলেন (অর্থাৎ তাঁরাও ওফাতকালে নামাযের ব্যাপারেই তাঁদের উম্মতকে নির্দেশ দিয়েছিলেন)।”২৬

জীবনের অন্তিম মুহূর্তগুলোয় মহনবী (সা.) চোখ খুলে বললেন : “আমার ভাইকে ডাক যাতে সে এসে আমার শয্যার পাশে বসে।” সবাই বুঝতে পারলেন,তাঁর এ কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছেন আলী। আলী (আ.) তাঁর শয্যার পাশে এসে বসলেন। তিনি অনুভব করলেন,মহানবী (সা.) বিছানা থেকে উঠতে চাচ্ছেন। আলী (আ.) মহানবীকে বিছানা থেকে উঠালেন এবং নিজের বুকের সাথে তাঁকে হেলান দিয়ে ধরে রাখলেন।২৭

আর ঠিক তখনই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার লক্ষণগুলো মহানবী (সা.)-এর পবিত্র দেহে প্রকাশ পেল। এক ব্যক্তি ইবনে আব্বাসকে জিজ্ঞেস করেছিল : “মহানবী (সা.) কার বুকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন?” তখন ইবনে আব্বাস বলেছিলেন : “মহানবী (সা.) আলীর কোলে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।” ঐ লোকটি আবার বলল : “হযরত আয়েশা দাবী করেন,মহানবী তাঁর বুকে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।” ইবনে আব্বাস হযরত আয়েশার কথা প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন : “মহানবী (সা.) হযরত আলীর কোলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। আর আলী ও আমার ভাই ফযল তাঁকে গোসল দিয়েছেন।”২৮

আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) তাঁর এক ভাষণে এ বিষয় স্পষ্ট করে দিয়ে বলেছেন :

و لقد قُبض رسول الله و إنّ رأسه لعلي صدرى... و لقد ولّيت غسله و الملائكة أعوانِى

“মহানবী (সা.) আমার বুকে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন... আমি তাঁকে গোসল দিয়েছি এবং ঐ অবস্থায় ফেরেশতারা আমাকে সাহায্য করেছেন।”২৯

কতিপয় মুহাদ্দিস বর্ণনা করেছেন,মহানবী (সা.) তাঁর জীবনের অন্তিম মুহূর্তে সর্বশেষ যে কথা বলেছিলেন,তা ছিল لا، مع الرّفيق الأعلي (না,বরং সবচেয়ে মহান বন্ধুর সাথে) যেন ওহীর ফেরেশতা তাঁর রূহ কবজ করার সময় তাঁকে রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করে এ পার্থিব জগতে প্রত্যাবর্তন বা ফেরেশতা কর্তৃক তাঁর রূহ কবজ করা ও অন্য জগতে (বারযাখে) দ্রুত চলে আসার মধ্যে যে কোন একটি বেছে নেয়ার এখতিয়ার দিলে তিনি এ বাক্য বলে ফেরেশতাকে জানিয়েছিলেন,তিনি মৃত্যুপরবর্তী জগতে চলে যেতে এবং সেখানে নিম্নোক্ত আয়াতে উল্লিখিত ব্যক্তিদের সাথে বসবাস করতে চান।

 

فأولئك مع الّذين أنعم الله عليهم من النّبيّين و الصّدّيقين و الشّهداء و الصّالحين و حسن أولئك رفيقا

“তাঁরা ঐ ব্যক্তিদের সাথে আছেন যাঁদের ওপর মহান আল্লাহ্ অনুগ্রহ করেছেন;আর এসব অনুগ্রহপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ হচ্ছেন নবী,পরম সত্যবাদী,শহীদ ও সৎকর্মশীল বান্দাগণ এবং তাঁরা কত (উত্তম) ভালো বন্ধু!”৩০

মহানবী (সা.) এ বাক্য বললেন এবং সাথে সাথে তাঁর দু’চোখ ও ওষ্ঠ বন্ধ হয়ে গেল।৩১

মহানবী (সা.)-এর ওফাত দিবস

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র মহান আত্মা ২৮ সফর সোমবার দুপুর বেলা চিরস্থায়ী আবাসস্থলের দিকে উড়ে যায়। তখন তাঁর পবিত্র দেহ একটি ইয়েমেনী চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় এবং অল্প সময়ের জন্য কক্ষের এক কোণে রেখে দেয়া হয়। মহানবী (সা.)-এর স্ত্রীগণের বিলাপ এবং নিকটাত্মীয়গণের ক্রন্দনধ্বনি শুনে বাইরে অবস্থানরত জনতা নিশ্চিত হন যে,মহানবী (সা.) ইন্তেকাল করেছেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই মহানবী (সা.)-এর ওফাতের সংবাদ সমগ্র মদীনা নগরীতে ছড়িয়ে পড়ে।

দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর কতিপয় কারণবশত ঘরের বাইরে চিৎকার করে বলেছিলেন : “মহানবী (সা.) মৃত্যুবরণ করেন নি এবং তিনি মূসা (আ.)-এর মতো মহান আল্লাহর কাছে গেছেন” এবং এ ব্যাপারে তিনি মাত্রাতিরিক্ত তাকীদ দিতে লাগলেন এবং তিনি একদল জনতাকে তাঁর অভিমতের সমর্থকও প্রায় বানিয়ে ফেলেছিলেন। ইত্যবসরে মহানবী (সা.)-এর একদল সাহাবী৩২ নিম্নোক্ত আয়াত হযরত উমরকে পাঠ করে শোনালেন৩৩  :

و ما محمّد إلّا رسول قد خلت من قبله الرسل أفأن مات أو قُتل انقلبتم علي أعقابكم

“মুহাম্মদ কেবল আল্লাহর রাসূল;তাঁর আগে রাসূলগণ গত হয়ে গেছেন। যদি তিনি ইন্তেকাল করেন বা নিহত হন,তা হলে কি তোমরা তোমাদের পেছনে ফিরে যাবে?”

আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) মহানবী (সা.)-এর পবিত্র দেহ মুবারক গোসল দেন এবং কাফন পরান। কারণ মহানবী (সা.) বলেছিলেন : “আমার সবচেয়ে নিকটতম ব্যক্তি আমাকে গোসল দেবে।”৩৪ আর এ ব্যক্তি আলী ব্যতীত আর কেউ ছিলেন না। যা হোক,এরপর তিনি মহানবীর পবিত্র মুখমণ্ডল উন্মুক্ত করলেন। তখন তাঁর দু’নয়ন বেয়ে প্লাবনের মতো অশ্রু ঝরছিল। তিনি তখন এ কথাসমূহ বলছিলেন : “আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোন। আপনার ওফাতের মাধ্যমে নবুওয়াতের সূত্র ছিন্ন এবং মহান আল্লাহর ওহী ও আকাশের (ঊর্ধ্ব জগতের) খবরা-খবর বন্ধ হয়ে গেল,যা অন্য কারো মৃত্যুতে কখনো বন্ধ হয় নি। আপনি যদি আমাদের অপ্রীতিকর অবস্থায় ধৈর্যধারণ করার আহ্বান না জানাতেন,তা হলে আমি আপনার বিচ্ছেদে এতটা কাঁদতাম ও অশ্রু ঝরাতাম যে,এর ফলে আমি অশ্রুর উৎসই শুষ্ক করে ফেলতাম। তবে এ পথে আমাদের দুঃখ ও শোক সর্বদা বিদ্যমান থাকবে। আপনার পথে এ পরিমাণ শোক আসলে নগণ্য এবং এছাড়া আর কোন উপায়ও নেই। আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোন। আমাদেরকে আপনি পরলোকে স্মরণ করুন এবং স্মরণে রাখুন।”৩৫

সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি মহানবী (সা.)-এর জানাযার নামায আদায় করেন,তিনি আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)। অতঃপর মহানবী (সা.)-এর সাহাবীগণ দলে দলে এসে তাঁর জানাযার নামায আদায় করলেন। আর এ অনুষ্ঠান মঙ্গলবারের দুপুর পর্যন্ত চলতে থাকে। অতঃপর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো,মহানবী (সা.) যে কক্ষে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন,সেখানেই তাঁকে দাফন করা হবে। তাঁর কবর আবূ উবাইদাহ্ ইবনে র্জারাহ্ এবং যাইদ ইবনে সাহল প্রস্তুত করেছিলেন। হযরত আলী (আ.),ফযল ও আব্বাসের সহায়তায় রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর দাফন কাজ সম্পন্ন করেন।

পরিণামে,যে ব্যক্তিত্ব তাঁর নিরলস আত্মত্যাগের মাধ্যমে মানব জাতির ভাগ্যে পরিবর্তন এনেছিলেন এবং তাদের সামনে সভ্যতার এক নতুন ও উজ্জ্বল অধ্যায়ের অবতারণা করেছিলেন,তাঁর ইহজীবন-সূর্য অস্ত গেল। তাঁর ওফাতের সাথে সাথে তাঁর মহতী রিসালতী মিশন অব্যাহত রাখা এবং তাঁর মহান লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথে অনেক বাধা ও সমস্যার উদ্ভব হয়,যেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রকট সমস্যা ছিল খিলাফত ও মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব বিষয়ক সমস্যা। মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকালের আগেই মুসলমানদের মধ্যে মতবিরোধ ও বিভক্তির লক্ষণগুলো স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

ইসলামের ইতিহাসের অত্যন্ত সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ এ অধ্যায়৩৬  আমাদের এ আলোচনার বিষয়বস্তুর [ইসলামের আজীমুশ্শান নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনচরিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ] গণ্ডির বাইরে। তাই আমাদের আলোচনা এখানেই শেষ করছি এবং এ মহান নেয়ামতের জন্য মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

তথ্যসূত্র:

১. সীরাতে ইবনে হিশাম,২য় খণ্ড,পৃ. ৬৫৪ এবং আত তাবাকাতুল কুবরা,২য় খণ্ড,পৃ. ২১৬

২. ايتونِى بدواة و صحيفة اكتب لكم كتابا لا تضلّون بعده

৩. সহীহ বুখারী,১ম খণ্ড,পৃ. ২২ এবং ২য় খণ্ড,পৃ. ১৪;সহীহ মুসলিম,২য় খণ্ড,পৃ. ১৪;মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ৩২৫ এবং আত তাবাকাতুল কুবরা,২য় খণ্ড,পৃ. ২৪৪

৪.ইবনে আবীল হাদীদ প্রণীত শারহু নাহজিল বালাগাহ্,২য় খণ্ড,পৃ. ২০

৫.সহীহ মুসলিম,১ম খণ্ড,পৃ. ১৪ এবং মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ৩৫৫

৬.কানযুল উম্মাল,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৩৮ এবং আত তাবাকাতুল কুবরা,২য় খণ্ড,পৃ. ২৪৪

৭.মরহুম মুজাহিদ আল্লামা সাইয়্যেদ শারাফুদ্দীন তাঁর ‘আল মুরাজায়াত’গ্রন্থে তাঁদের সকল অজুহাত উল্লেখ করে সেগুলো আকর্ষণীয়ভাবে খণ্ডন করেছেন।

৮.মুহাম্মদের জীবনী,পৃ. ৪৭৫

৯.মহানবী (সা.) প্রদত্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রতি পবিত্র কুরআনের মুখাপেক্ষিতার সীমা বর্ণনা করা আমাদের এ আলোচনার গণ্ডির বাইরে। আমরা ‘পবিত্র কুরআনের জটিল আয়াতসমূহের সঠিক ব্যাখ্যা’এবং মানসূরে জভীদ গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে এ সংক্রান্ত আলোচনা করেছি।

১০.মুসনাদে আহমাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ৩৫৫

১১. اكتب لكم كتاباً لن تضلّوا بعده ابداً আমি তোমাদের একটি পত্র লিখে দেব যার পরে তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। আপনারা যদি লক্ষ্য করেন,তা হলে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে,মহানবী (সা.) لن تضلّوا (তোমরা আর কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না)-এ বাক্যের দ্বারা তাঁর পত্র লেখার কারণ ব্যক্ত করেছেন।

১২.হাদীসে সাকালাইন ও কাগজ-কলমের হাদীস

১৩.বিহারুল আনওয়ার,২২তম খণ্ড,পৃ. ৪৬৯ এবং শেখ মুফীদ প্রণীত কিতাব আল ইরশাদ এবং তাবারসী প্রণীত আলামুল ওয়ারা

১৪.বিহারুল আনওয়ার,২২তম খণ্ড,পৃ. ৪৭৬

১৫.প্রথম বর্ণনা ও রেওয়ায়েত বিহারুল আনওয়ারের ২২তম খণ্ডের ৪৭৬ পৃ. থেকে উদ্ধৃত এবং দ্বিতীয় বর্ণনা ইবনে হাজর আসকালানী বর্ণিত।

১৬.আসসাওয়ায়েক আল মুহরিকাহ্,৯ম অধ্যায়,পৃ. ৫৭ এবং কাশফুল গাম্মাহ্,পৃ. ৪৩

১৭.হাদীসে সাকালাইন শিয়া-সুন্নী হাদীসবিদগণ যে সব হাদীস ও রেওয়ায়েতের ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন,সেসবের অন্তর্ভুক্ত। এ হাদীস ৬০টিরও অধিক সূত্রে মহানবী (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। ইবনে হাজার আসকালানী আস সাওয়ায়েক আল মুহরিকাহ্ গ্রন্থের ১৩৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন : “মহানবী (সা.) বিভিন্ন উপলক্ষ,যেমন আরাফাতের দিবসে,গাদীরে খুমের দিবসে,তায়েফ নগরী থেকে প্রত্যাবর্তনের পর,এমনকি রোগশয্যায় শায়িত অবস্থায়ও পবিত্র কুরআন ও তাঁর ইতরাতের সাথে সম্পর্ক রাখার ব্যাপারে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।”

মরহুম মীর হামেদ হুসাইন হিন্দী তাঁর গ্রন্থের একটি অংশে হাদীসে সাকালাইনের সনদসমূহ এবং এর অর্থের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা রেখেছেন এবং এসবের সমগ্র সম্প্রতি ৬ খণ্ডে ইসফাহান থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়েছে। মিশরের ‘দারুত তাকরীব’সংস্থার (ইসলামী মাযহাবসমূহকে নিকটবর্তী করার সংস্থা) পক্ষ থেকে ১৩৭৪ হিজরীতে এ হাদীস সংক্রান্ত একটি সন্দর্ভ প্রকাশ করা হয়েছিল। এ সন্দর্ভে সনদের দৃষ্টিকোণ থেকে এ হাদীসের গুরুত্ব এবং সকল শতকে এ হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসগণের বিশেষ দৃষ্টি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।

১৮.আত তাবাকাতুল কুবরা,২য় খণ্ড,পৃ. ২৩৮

১৯.প্রাগুক্ত,পৃ. ২৩৬

২০.এছাড়াও সাওয়াদার পেটে চাবুকের আঘাত ইচ্ছাপ্রণোদিত ছিল না,এ দৃষ্টিকোণে সাওয়াদার কিসাসের অধিকার ছিল না;বরং দিয়াহ্ দিয়ে দিলেই তা পূরণ হয়ে যেত। এ সত্বেও মহানবী (সা.) সাওয়াদার অভিমতের নিরাপত্তা বিধান করতে চেয়েছিলেন।

২১.মানাকিবে আলে আবী তালিব,১ম খণ্ড,পৃ. ১৬৪

২২.শেখ আল মুফীদ প্রণীত কিতাবুল ইরশাদ,পৃ. ৯৭

২৩.সহীহ বুখারী,৫ম খণ্ড,পৃ. ২১

২৪.আত তাবাকাতুল কুবরা,২য় খণ্ড,পৃ. ২৪৭ এবং আল কামিল ফীত তারিখ,২য় খণ্ড,পৃ. ২১৯

২৫.আত তাবাকাতুল কুবরা,২য় খণ্ড,পৃ. ২৩৪ এবং সীরাতে ইবনে হিশাম,২য় খণ্ড,পৃ. ৬৫৪

২৬.আত তাবাকাতুল কুবরা,২য় খণ্ড,পৃ. ২৫৪

২৭.প্রাগুক্ত,পৃ. ২৬৩

২৮.প্রাগুক্ত

২৯.নাহজুল বালাগাহ্

৩০.সূরা নিসা : ৬৯

৩১.আ’লামুল ওয়ারা,পৃ. ৮৩

৩২.বুখারীর বর্ণনামতে হযরত আবূ বকর ছিলেন।

৩৩.সীরাতে ইবনে হিশাম,২য় খণ্ড,পৃ. ৬৫৬

৩৪.আত তাবাকাতুল কুবরা,২য় খণ্ড,পৃ. ৫৭

৩৫.নাহজুল বালাগাহ্,খুতবা : ২৩

৩৬.রাসূলের ওফাতোত্তর খলীফাগণের যুগ

(এই প্রবন্ধটি চিরভাস্বর মহানবী (সা.)গ্রন্থ থেকে সংকলিত)