আদাবুস সুলূক (আধ্যাত্মিক পথ পরিক্রমার নিয়মাবলী)-২য় পর্ব

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

দ্বিতীয় অধ্যায়

আধ্যাত্মিক সফরের নীতিমালা প্রসঙ্গে

জেনে রাখুন,আল্লাহ তায়ালার পানে এ পথপরিক্রমার জন্য কতগুলো সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি মেনে চলা অপরিহার্য। এর মধ্যে কতগুলো নিয়মনীতি বাহ্যিক বিষয়ের সাথে জড়িত এবং কতগুলো অন্তর্নিহিত বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

এক

বাহ্যিক দিকের সাথে সম্পর্কযুক্ত প্রথম মূলনীতি হচ্ছে,সালেককে বস্তুগত ধন-সম্পদ ও উপায়-উপকরণ পরিত্যাগ করতে হবে এবং পার্থিব কর্মব্যস্ততা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিতে হবে। স্বীয় রবের দাসত্ব করা,তাঁর আনুগত্য করা ও তাঁর স্মরণ করা ছাড়া তার আর কোনরূপ পার্থিব ব্যস্ততা থাকা চলবে না। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,

واذكر اسم ربِّك و تبتّل إليه تبتيلا

‘আর তোমার রবের নামের যিকর কর এবং (সবকিছু থেকে) বিচ্ছিন্ন হয়ে (একনিষ্ঠভাবে) তাঁর দিকে অগ্রসর হও ঠিক যেরূপ অগ্রসর হওয়া উচিত।’ (সূরা আল-মুয্যাম্মিল : ৮)

দুই

দ্বিতীয় মূলনীতি হচ্ছে একাকিত্ব ও মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্নতা,বিশেষ করে যারা আল্লাহর পানে অগ্রসর হবার পথে বাধা তাদের প্রত্যেকের নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-কে এরশাদ করেছেন,‘তাদের কাছ থেকে দূরে থাক এবং যারা আল্লাহ্ ছাড়া আর সবকিছুকেই ডাকে তাদের এড়িয়ে চল।’

তিন

তৃতীয় মূলনীতি হচ্ছে,সালেককে তার শরীরের সাতটি অঙ্গকে আল্লাহ তায়ালার অসন্তোষ উদ্রেগকারী সকল কাজ থেকে বিরত ও সংরক্ষিত রাখতে হবে। এ অঙ্গগুলোকে যে সব কাজ থেকে বিরত ও সংরক্ষিত রাখতে হবে তা হচ্ছে :

যা কিছু দেখা নিষিদ্ধ এবং যা দেখার মধ্যে ব্যক্তির জন্য কল্যাণ নিহিত নেই তা দেখা থেকে চোখকে বন্ধ রাখতে হবে। কানকে মিথ্যা অপবাদ,পরনিন্দা,অশ্লীল ও এ জাতীয় অন্যান্য কথাবার্তা শোনা থেকে বিরত রাখতে হবে। জিহ্বাকে একই ধরনের ভুল কাজ থেকে রক্ষা করতে হবে এবং যে কথায় কোন ফায়দা নেই তা বলা থেকে মুখকে বন্ধ রাখতে হবে।

কোন কোন আরেফ ব্যক্তি বলেছেন,‘ব্যক্তি যখন কথা বলবে তখন সে আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে কথা বলবে,সে যখন নীরব থাকবে তখন সে চিন্তা করার চেষ্টা করবে,যখন কোন কিছুর দিকে তাকাবে তখন তা থেকে কিছু জানার উদ্দেশ্যে তাকাবে।’

এ ছাড়া সালেক তার পেটকে হারাম ও সন্দেহযুক্ত খাদ্যবস্তু থেকে রক্ষা করবে,এমনকি হালাল খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রেও এমন লোভাতুরভাবে গ্রহণ করবে না যা তাকে আল্লাহর স্মরণ থেকে ভুলিয়ে দিতে পারে;বরং খাদ্য গ্রহণের সময় তাকে আল্লাহ তায়ালার উপস্থিতি সম্বন্ধে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। একইভাবে তার হাত,পা ও যৌনাঙ্গকে হারাম ও অপছন্দনীয় (মাকরূহ) কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

চার

চতুর্থ মূলনীতি হচ্ছে,সালেককে তার পাপপ্রবণ নাফস (নাফসে আম্মারাহ)-এর বিরোধিতা করতে হবে। অর্থাৎ নাফসে আম্মারাহ্ ভাল খাদ্য,ভাল পানীয়,ভাল পোশাক-পরিচ্ছদ,সুখানুভূতিমূলক কাজ কর্ম এবং যাতায়াতের জন্য ভাল বাহন ইত্যাদি দাবি করে;সালেককে নাফসের এ সব দাবির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। বস্তুত এরই নাম ‘জিহাদে আকবার’ অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ জিহাদ। মানব প্রজাতির অবিসংবাদিত নেতা রাসূলে আকরাম হযরত মুহাম্মদ (সা.) এ সম্পর্কে এরশাদ করেন,‘তোমরা ক্ষুদ্রতর জিহাদ (জিহাদে আসগার) থেকে বৃহত্তর জিহাদে (জিহাদে আকবার) প্রত্যাবর্তন করেছো।’

আর কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের চেয়ে এ জিহাদ অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ এবং এর ফলাফলও ব্যাপকতর। কারণ সশস্ত্র যুদ্ধে কাফিররা পার্থিব ধনসম্পদ লাভ করার চেষ্টা করে এবং তাদের নাফসে আম্মারাহ্ কামনার দাসত্ব করে যা তাদের চিরস্থায়ী জাহান্নাম ও চিরন্তন বঞ্চনার দিকে ঠেলে দেয়। আরেফগণের মতে নাফসের দাসত্ব হচ্ছে অগ্নিকুণ্ডে কাষ্ঠ নিক্ষেপের ন্যায়,তাই তালেব (মুক্তিসন্ধানী) ও সালেকের জন্য তার নাফসের হাত থেকে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে তার ভেতরে প্রজ্বলিত এ অগ্নিকুণ্ডকে নিভিয়ে ফেলতে হবে।

 

পাঁচ

পঞ্চম মূলনীতি হচ্ছে,সালেককে একজন সচেতন,কামেল ও জ্ঞানী শেখকে খুঁজে বের করতে হবে যিনি তাকে মহাসত্য (হক) লাভ করার জন্য অপরিহার্য পূর্ণতা অর্জনের পথে পরিচালিত করতে পারেন। কারণ মুক্তি সন্ধানী ব্যক্তির অবস্থা হচ্ছে এমন একজন রোগীর ন্যায় যে বহু ধরনের রোগব্যাধি ও ক্ষতির দ্বারা আক্রান্ত। সালেক এগুলো সম্বন্ধে জ্ঞাত নয়,এমনকি সে যদি এ সব সম্বন্ধে জ্ঞাত হয়েও থাকে তথাপি সে জানে না কিভাবে এ সব থেকে মুক্তি পাবে ও আরোগ্য লাভ করবে। সুতরাং তার জন্য এরূপ এক দয়ালু ও বন্ধুবৎসল চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই যিনি সঠিকভাবে তার রোগ নির্ণয় করবেন এবং এ সব রোগব্যাধি ও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি ও আরোগ্য লাভের জন্য তাকে সাহায্য করবেন। অন্য কথায় সালেক হচ্ছে এমন মুসাফিরের ন্যায় যে এক বিপদসঙ্কুল মরুভূমি পাড়ি দিচ্ছে,তাই স্বীয় লক্ষ্যস্থলে পৌঁছতে সহায়তা করার জন্য একজন পথ-প্রদর্শক খুঁজে বের করে তার সাহায্য নেয়া ছাড়া তার গত্যন্তর নেই।

ছয়

ষষ্ঠ মূলনীতি হচ্ছে,সালেক যেন নিজেকে এলোমেলোভাবে বিভিন্ন ধরনের যিকির-আযকার ও নফল ইবাদাতে মশগুল না রাখে;বরং সে যেন একটি সুনির্দিষ্ট ধরনের যিকর করে এবং সকল ফরয ও সুন্নাত ইবাদাত ভালভাবে সম্পাদন করে এরপরেই কেবল তার নিজেকে আল্লাহর যিকরে (স্মরণে) নিমজ্জিত রাখতে হবে।

বর্ণিত হয়েছে,যিকর হচ্ছে আলমে গায়ব (গুপ্তজগত)-এর চাবি এবং অন্তর্লোকের আলোকবর্তিকা। চাবি ছাড়া কারো পক্ষে কোন তালাবদ্ধ গৃহে প্রবেশ করা সম্ভব নয় এবং বাতি ছাড়া কোন অন্ধকার গৃহকে আলোকিত করাও সম্ভব নয়। সুতরাং একজন প্রেমিক যেভাবে তার প্রিয়তমকে স্মরণ করে একজন সালেকের জন্য ঠিক সেভাবেই আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করা অপরিহার্য;সে যেন মুহূর্তের জন্যও তাঁর স্মরণ থেকে বিরত না থাকে। তাই তাকে এমনভাবে আল্লাহর স্মরণে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে,আল্লাহর স্মরণ যেন তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয় এবং তার অন্তর মুহূর্তের জন্যও আল্লাহর যিকিরশূন্য না হয়। সে যখন এ যিকর অব্যাহত রাখবে তখন এক পর্যায়ে গিয়ে তার মানবিক যিকর বেহেশতী ও পবিত্র যিকরে (যিকরে কুদসী) পরিণত হবে।

মানবিক যিকর বা স্মরণ হচ্ছে তা-ই যা শ্রবণযোগ্য শব্দ ও অক্ষরের সাহায্যে করা হয় এবং তার সংখ্যা গণনা করা যায়। কিন্তু যিকরে কুদসী হচ্ছে এমনভাবে আল্লাহকে স্মরণ করা যা শ্রবণযোগ্য শব্দ ও অক্ষর থেকে মুক্ত এবং গণনা করা যায় না।

এ স্তরের পরে যাকের (যিকরকারী) স্বীয় পরিচিতি হারিয়ে ফেলে এবং যিকরের ভেতরে পুরোপুরি নিমজ্জিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় সে বুঝতে পারে না যে,সে যিকর করে চলেছে;তেমনি স্বীয় অস্তিত্বের কথাও তার স্মরণ থাকে না।

যিকরের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। এর মধ্যে কোন কোন স্তরের যিকর অপরাপর স্তরের যিকর থেকে উন্নততর স্তরের যা শুরু করাই বেশ কঠিন। কিন্তু তা সত্ত্বেও পর্যায়ক্রমে কাঠিন্য ও আয়াশ দূরীভূত হয়ে যায় এবং যিকর সালেকের স্বভাব-প্রকৃতি ও অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।

সাত

সপ্তম মূলনীতি হচ্ছে,একাদিক্রমে রোযা রাখা। কারণ রোযা হচ্ছে নাফসে আম্মারার বিরোধিতা ও তাকে দমন করার প্রতীক। এই নাফসে আম্মারাই সকল পর্দার মূল কারণ এবং হক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ও দূরে ছিটকে পড়ার জন্য এই পর্দাসমূহই দায়ী।

তাই সালেক যদি ক্রমান্বয়ে তার খাদ্যের পরিমাণ কমিয়ে আনে তাহলে তা বৈধ হবে। সূফী মাশায়েখের অনেকে এ পন্থা অনুসরণ করেছেন। মধ্যম পন্থা অনুসরণ করাও যথাযথ;অর্থাৎ ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। রাসূলে আকরাম হযরত মুহাম্মদ (সা.) এরশাদ করেছেন,‘তোমার নিজেকে (নাফসকে) সুস্থ রাখ,কারণ তা-ই তোমাকে বহন করে নিয়ে যায়।’ মহানবী আরো এরশাদ করেন,‘যে ব্যক্তি নিজের জন্য চরম কৃচ্ছ্রতায় বিশ্বাসী তার নাফস তাকে পরাজিত করে এবং তাকে গোলাম বানিয়ে নেয়।’

তাই অনেক সময় মেহমানদের সন্তুষ্ট করার জন্য অথবা স্বীয় আধ্যাত্মিক পথ-প্রদর্শকের ইঙ্গিতে সালেককে নফল রোযা ভাঙ্গতে বা ছেড়ে দিতে হয়। তবে নাফস যেন রোযা ভাঙ্গা বা না রাখা থেকে পরিপূর্ণ ভোগ ও তৃপ্তি গ্রহণ করতে না পারে সে ব্যাপারে তাকে সতর্ক থাকতে হবে এবং তাকে ন্যূনতম পরিমাণে খাবার গ্রহণ করতে হবে যা হবে তার রোযা রাখার দিনগুলোতে ইফতার বা সাহরীতে গৃহীত খাবারের তুলনায় কম পরিমাণে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বীয় নাফসকে দু’ধরনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত রাখা। (একটি হচ্ছে রোযা ভাঙ্গা বা না রাখার আনন্দ অর্থাৎ রোযার বাধ্যবাধকতা ও কষ্ট থেকে মুক্ত থাকার আনন্দ,দ্বিতীয়টি হচ্ছে মনের তৃপ্তি মিটিয়ে খাদ্য গ্রহণের আনন্দ।) এ ছাড়া তার জন্য সব সময় ব্যঞ্জন বা কোন উপকরণসহ রুটি খাওয়া উচিত নয় (বরং মাঝে মাঝে খালি রুটি খেয়েই সন্তুষ্ট থাকা উচিত)। বিশেষ করে গোশত সহযোগে তৈরি ব্যঞ্জন পরিহার করা সূফী মাশায়েখের জন্য অপরিহার্য বলে গণ্য করা হয়।

আট

অষ্টম মূলনীতি হচ্ছে,শারীরিক পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার প্রতি মনোযোগী হওয়া। কারণ শারীরিক পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা মুমিনের জন্য একটি হাতিয়ারস্বরূপ এবং তা অন্তর আলোকিতকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এরশাদ করেছেন,‘ওযূর পর ওযূ (অর্থাৎ ওযূ ভেঙ্গে গেলে সাথে সাথে পুনরায় ওযূ করা তথা সর্বক্ষণ ওযূর সাথে থাকা) কিয়ামতের দিন নূরের নূরে পরিণত হবে।’

 

নয়

নবম মূলনীতি হচ্ছে,রাত্রি জাগরণ করা। এ কাজটি সালেকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। আল্লাহ তায়ালা তাঁর পুণ্যবান বান্দাদের প্রশংসা করতে গিয়ে এরশাদ করেন,

كانوا قليلا من الّيل ما يهجعون

‘তারা রাত্রিকালে খুব কম সময়ের জন্যই শয়ন করত।’ (সূরা আয্-যারিয়াত : ১৭)

এর মানে হচ্ছে,তাঁরা রাতে খুব সামান্যই নিদ্রা যান। বস্তুত আল্লাহর ওয়ালী ও পুতপবিত্র লোকদের জন্য রাত হচ্ছে দোয়ার সময়।

দশ

দশম মূলনীতি হচ্ছে,সালেককে জীবন ধারণের জন্য হালাল জীবিকা অবলম্বনের সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,

يأيّها الذين آمنوا كلوا من طيبات ما رزقناكم ...

‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের যে পবিত্র রিযিক প্রদান করেছি তোমরা তা থেকে ভক্ষণ কর।’ (সূরা আল-বাকারাহ্ : ১৭২)

রাসূলে আকরাম (সা.) এরশাদ করেন,‘ফরয কাজসমূহ সম্পাদনের পর হালাল জীবিকার সন্ধান করা ফরয।’ অর্থাৎ ঈমানের দাবিস্বরূপ অপরিহার্য কর্তব্যসমূহ (ফরয কাজসমূহ) সম্পাদনের পর অন্য সমস্ত অপরিহার্য কাজের মধ্যে এটি হচ্ছে সর্বাধিক অপরিহার্য।

হালাল উপার্জন মানুষের অন্তরকে আলোকিত করে এবং হারাম উপার্জন হৃদয়কে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দেয়। আরেফগণ বলেছেন,‘যে ব্যক্তি একাদিক্রমে চল্লিশ দিন যাবত হালাল পন্থায় অর্জিত খাদ্য ভক্ষণ করবে আল্লাহ্ তার অন্তরকে আলোকিত করে দেবেন। আর উপার্জিত অর্থ,সম্পদ বা বস্তুর বৈশিষ্ট্য সন্দেহপূর্ণ হবার কারণে যদি নিরঙ্কুশভাবে হালাল উপার্জন সম্ভব না হয় তাহলে তাকে অপেক্ষাকৃত কম সন্দেহজনক খাদ্য গ্রহণ করতে হবে এবং তা-ও কেবল বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম পরিমাণে খেতে হবে,তার পুরো প্রয়োজন পরিমাণ নয় বা তৃপ্তি মিটিয়ে নয়। তালেব যদি এ ব্যাপারে অসাবধানতা বা উদাসীনতার পরিচয় দেয় তাহলে তার পক্ষে আধ্যাত্মিক-বৃক্ষের ফলের স্বাদ গ্রহণ করা সম্ভব হবে না।’

এই লেখকের (আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করুন) মতে ইরফানের একজন শিষ্যের (মুরীদের) জন্য এমনকি চরম কঠিন অবস্থায় এবং প্রয়োজন সত্ত্বেও সন্দেহপূর্ণ একটা তিলের দানাও ভক্ষণ করা অনুচিত। স্বাভাবিক ও অপেক্ষাকৃত সহজ পরিস্থিতিতে এরূপ জিনিস গ্রহণ করার তো প্রশ্নই ওঠে না।

বস্তুত দুনিয়ার মানুষের অন্যায়-অনাচার ও দুর্নীতির মূল কারণ হচ্ছে এ ব্যাপারে উদাসীনতা এবং হারাম ও সন্দেহপূর্ণ খাদ্য থেকে বিরত না থাকা। রাসূলে আকরাম (সা.) এরশাদ করেন,‘দীনের মানদণ্ড হচ্ছে নেক আমল ও আল্লাহ্-ভীতি (তাকওয়া),আর লোভের কারণে ঈমান কলুষিত হয়ে যায়।’

একজন সালেকের জন্য অনুসরণীয় বাহ্যিক নিয়ম-রীতিসমূহের আলোচনা এখানেই শেষ হলো।

পাদটীকা:

১. এর মানে এ নয় যে,সালেক ঘর-সংসার ও সমাজ ছেড়ে বনে-জঙ্গলে বা পাহাড়-পর্বতে চলে যাবে এবং কোনরূপ সামাজিক কর্মকাণ্ডে শরীক হবে না। বরং এর অর্থ হচ্ছে,সালেককে এমনভাবে জীবন যাপন করতে হবে,সে যা কিছুই করবে তা আল্লাহ তায়ালার জন্যই করবে। সে যে কোন পেশাই অবলম্বন করুক এবং যে কোন কাজই করুক না কেন তা আল্লাহ তায়ালার নৈকট্যের উপায়স্বরূপ হতে হবে। এ অবস্থায় ব্যক্তির কাজকর্ম ও পেশা বাহ্যত পার্থিব হলেও প্রকৃতপক্ষে তা হবে পরকালীন জীবনের জন্য,অর্থাৎ এ জগতের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর জগতের জন্য। কবি অত্যন্ত চমৎকারভাবে এ সত্যটি তুলে ধরেছেন এভাবে :

‘সেই পার্থিব জীবন কি যার মানে আল্লাহ থেকে উদাসীন হওয়া?

তা নয় আসবাবপত্র,বাড়িঘর,সন্তান ও স্ত্রী।’

২. এখানে একাকিত্ব ও বিচ্ছিন্নতা মানে মানসিকভাবে বিচ্ছিন্নতা। অন্যথায় পরিবার,সমাজ ও সমাজের মানুষের প্রতি ব্যক্তির যে দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে তা তাকে অবশ্যই পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আসক্তিহীনভাবে কর্তব্য পালনের অনুভূতি সহকারে কাজ করতে হবে ও প্রয়োজনীয় সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে।-অনুবাদক

(জ্যোতি, বর্ষ ২, সংখ্যা ১)