কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে শিশু পরিচর্যা

ইসলামী নিয়ম-কানুনের প্রধান দুটি উৎস হলো আল-কুরআন এবং সুন্নাহ। আল্লাহ তাআলার সুস্পষ্ট বিধান আল-কুরআনে বিধৃত। মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ এই পবিত্র কুরআনের ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে। তাই মহানবীর সুন্নাতে কুরআনবিরোধী বা কুরআনের সাথে সামঞ্জস্যহীন কোন কিছু পাওয়া যায় না। তাই মানব জাতির জন্য আল-কুরআন সকল শিক্ষার উৎস। আল-কুরআনের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের জীবনযাপনের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও আইন-কানুন শিক্ষা দেয়া, ব্যক্তি ও সমাজের অধিকার ও দায়িত্ব সুরক্ষিত করা, সমাজের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, সকলে মিলে মিশে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করতে উৎসাহ দেয়া এবং খোদাভীরুতা ও ধার্মিকতার মাপকাঠিতে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নিরূপণ করা।

ঠিক তেমনি মহানবী (সা.) যা করেছেন, করতে বলেছেন বা সমর্থন দিয়েছেন তাকেই সুন্নাহ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। সুন্নাহকে হাদীসও বলা হয়। আল-কুরআনের যথার্থ ব্যাখ্যা হলো সুন্নাহ। মানব জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে যেমন কুরআন ও সুন্নায় আলোচনা এসেছে তেমনি শিশু পরিচর্যার ব্যাপারেও নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে।

হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, নিজের পোষ্যদের প্রতি অবহেলা করার মতো পাপ আর নেই। শিশু রক্ষা ও পরিচর্যার ওপর ইসলামে সুন্দর ও উৎকৃষ্ট নির্দেশিকা ও পন্থা রয়েছে। যেমন পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে : ‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না।’ (সূরা নিসা : ২৯)

‘দারিদ্র্যের কারণে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না।’ (সূরা আনআম : ১৫১)

‘নরহত্যা বা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করার কারণ ছাড়া কোন ব্যক্তি কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষকেই হত্যা করল।’ (সূরা মায়িদা : ৩২)

ইসলামী আদর্শ অনুযায়ী মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি বা খলিফা। যেমন পাক কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘আমি পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি সৃষ্টি করব।’ (সূরা বাকারা : ৩০)

আল্লাহর এই প্রতিনিধিত্বকে যথাযথভাবে পালন করার জন্য মানুষ দায়িত্বশীল। নিজেকে রক্ষার জন্য এবং মানবজাতির অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য মানুষের মাঝে একটি সহজাত প্রবৃত্তি আল্লাহ দান করেছেন। তদুপরি পৃথিবীতে সমাজ বিকাশের জন্য আল্লাহ মানুষকে জ্ঞানদান করেছেন এবং সকল প্রাণীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।

মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির অন্যতম হলো আত্মসংরক্ষণ প্রবণতা, ঠিক এভাবে শিশু রক্ষা ও প্রতিপালন মানব সমাজের সাধারণ প্রবণতা। এ প্রবণতাকে দায়িত্বের মধ্যে আবদ্ধ করে ইসলাম সুস্থ ও সমৃদ্ধ মানবিক গুণাবলি অর্জনের জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। এ কারণে শিশু-সন্তানকে লালন-পালন করা, তাকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলাকে একজন আদর্শ মুসলমান ধর্মীয় দায়িত্ব বলেই মনে করে। একজন সুস্থ-সবল শিশুই কেবল লেখাপড়ায় ভালো করতে পারে এবং তার আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক মানসিকতা ভেতরে বিকাশ লাভ করতে পারে। এ কারণে ইসলামে স্বাস্থ্যরক্ষার প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যেমন হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে- কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বান্দার কাজের হিসাব নেয়ার সময় জিজ্ঞেস করবেন, ‘আমি কি তোমাকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করিনি?’

অর্থাৎ মানুষকে আল্লাহ যে যৌবন ও স্বাস্থ্য দান করেন তা সে কী কাজে লাগিয়েছে তার হিসাব নেবেন আল্লাহ।

তাই আল্লাহ তাআলা আল-কুরআনে বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর অগ্নি থেকে যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।’ (সূরা তাহরীম : ৬)

উপরিউক্ত আয়াত থেকেই বোঝা যায় নিজেদেরকে যেমন রক্ষা করতে হবে তেমনি পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করতে হবে। এই রক্ষা করাটা ব্যাপক অর্থে এসেছে। শিশুদেরকে ছোট বেলা থেকে ইসলামী আদর্শমতো গড়ে তুললেই সেই শিশু বড় হয়ে আদর্শ মানুষ হতে পারবে। সব অকল্যাণ থেকে রক্ষা পাবে- দোযখের অগ্নি থেকেও। যে রকম আদর্শ মানুষ আল্লাহর চান এ ধরনের আদর্শ মানুষই ইসলামের পরিভাষায় মুমিন। তাই একজন সত্যিকারের মুমিন শিশুকালে মাতা-পিতা থেকে, পরিবার থেকে ও চারপাশের পরিবেশ থেকে আদর্শ শিক্ষা ও যত্ন পেয়েই বড় হয়ে ওঠেন। তখন তিনি সমাজে সৎকাজ করেন, মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকেন, আল্লাহর ইবাদত করেন এবং ইসলামী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে পৃথিবীর বুকে আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের মহান দায়িত্ব সম্পাদন করেন। (সূত্র: কাওসার বিডি)