সাহিত্য একটি জাতির মন-মানসিকতা প্রকাশকারী দর্পণ

একটি জাতির মন-মানসিকতা ও ধ্যান-ধারণা বিশ্লেষণ করার সর্বোত্তম পন্থা সেই জাতির চিন্তামূলক কর্মসমূহ এবং বংশ পরম্পরায় কথিত ও বর্ণিত গল্প ও কাহিনীসমূহ। কোন জাতি, গোষ্ঠী বা জনপদের সাহিত্য-কর্ম তথা কবিতা, গল্প ও উপকথাসমূহ তাদের চিন্তা ও ধ্যান-ধারণার প্রতিচ্ছবি, কৃষ্টি ও সভ্যতার মাপকাঠি এবং তাদের চিন্তা-পদ্ধতির ওপর আলোকপাতকারী। প্রতিটি জাতির সাহিত্যকর্মসমূহ যেন অংকিত চিত্রের ন্যায় যা পারিবারিক জীবন এবং কতগুলো কোলাহলপূর্ণ প্রাকৃতিক ও সামাজিক দৃশ্য অথবা যুদ্ধ-বিগ্রহের চিত্র বর্ণনা করে।

আরবদের কাব্য এবং তাদের মাঝে প্রচলিত প্রবচনসমূহ অন্য সব কিছুর চেয়ে বেশি তাদের ইতিহাসের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচন করে। যে ঐতিহাসিক কোন জাতির মন-মানসিকতা এবং ধ্যান-ধারণার সাথে সম্পূর্ণরূপে পরিচিত হতে আগ্রহী তার উচিত যতদূর সম্ভব ঐ জাতির বিভিন্ন চিন্তামূলক কর্ম ও নিদর্শন, যেমন কাব্য, গদ্য, প্রবাদবাক্য, গল্প, লোককাহিনী ও উপকথার প্রতি সবিশেষ দৃষ্টি দেয়া। সৌভাগ্যক্রমে মুসলিম পণ্ডিত ও মনীষিগণ জাহেলী যুগের আরবী সাহিত্য যথাসাধ্য সংরক্ষণ করেছেন।

আবু তাম্মাম হাবিব ইবনে আওস (মৃত্যু ২৩১ হিজরী) যিনি একজন শিয়া সাহিত্যিক হিসাবে গণ্য এবং শিয়া মাজহাবের ইমামদের প্রশংসায় অনেক কবিতা রচনা করেছেন তিনি নিম্নোক্ত দশটি অধ্যায় বা শিরোনামে জাহেলী যুগের আরবী সাহিত্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছিলেন। অধ্যায় ও শিরোনামসমূহ হলো :

১. বীরত্ব ও বীরত্বগাথা;

২. শোকগাথা;

৩. গদ্য;

৪. যৌবন উদ্রিক্তকারী গজল (প্রেম ও গীতি কবিতা);

৫. ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোত্রের তিরস্কার ও নিন্দা;

৬. আপ্যায়ন এবং দানশীলতার উপযোগী কাব্য ও কবিতা;

৭. প্রশংসা গীতি;

৮. জীবনী;

৯. কৌতুক ও সূক্ষ্ম রসাত্মক ঘটনা ও রম্য কথাসমূহ এবং

১০. নারীদের প্রতি নিন্দাসূচক কাব্য।

মুসলিম জ্ঞানী, পণ্ডিত ও সাহিত্যিকগণ সংগৃহীত উক্ত কাব্যসমূহের রচয়িতাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং ব্যবহৃত শব্দসমূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যাসম্বলিত প্রভূত গ্রন্থ রচনা করছেন। আর আবু তাম্মাম হাবিব ইবনে আওস কর্তৃক সংকলিত ও সংগৃহীত কাব্যগ্রন্থটিও বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে যার একটি অংশ সংবাদপত্র ও প্রকাশিত বিষয়াদির অভিধানে উল্লিখিত হয়েছে।