আল হাসানাইন (আ.)

ইমামীয়া জাফরী মাজহাব-পর্ব-৩

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

ইমামীয়া জাফরী মাজহাবের আকিদা বিশ্বাস :

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

(২১) জাফরী শিয়ারা নামাজ পড়েন,রোজা রাখেন,তাদের সম্পদের জাকাত ও খোমস দেন,মক্কায় আল্লাহর ঘরে গিয়ে হজ করেন,সারা জীবনে একবার হজের মানাসিক (আচারসমূহ) পালন করা ওয়াজিব এবং একাধিকবার পালন মুস্তাহাব মনে করেন। তারা সৎকাজের আদেশ করেন,অসৎকাজে নিষেধ করেন,আল্লাহর ও তাঁর রাসুলের (সা.) বন্ধুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও তাঁদের উভয়ের শত্রুদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করেন,যে সকল কাফের ও মুশরিক ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও উম্মতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাদের বিরুদ্ধে জাফরী শিয়ারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে,তারা অর্থনৈতিক,সামাজিকও পারস্পরিক কর্মকাণ্ড যেমন ব্যবসায়,ভাড়া,বিবাহ,তালাক,উত্তরাধিকার আইন,অভিভাবকত্বের নীতিমালা,দুগ্ধপান জনিত সম্পর্কের নীতিমালা,পর্দা সম্পর্কিত বিধান প্রভৃতি সকল আইন ইসলামের সঠিক নীতিমালা ও বিধিবিধান হতে গ্রহণ করে থাকে। তারা এ সকল বিধিবিধান তাদের খোদাভীরু পরহেজগার ফকীহগণ হতে- যারা কোরআন ও বিশুদ্ধ সুন্নত,আহলে বাইত হতে বর্ণিত নির্ভরযোগ্য হাদিস,আকল (বুদ্ধিবৃত্তি) ও ইজমার (কোন বিষয়ে ইমামদের বাহ্যিক উপস্থিতির নিকটবর্তী সময়ের আলেমদের ঐকমত্যের) উৎস হতে ইজতিহাদের মাধ্যমে বিধিবিধানসমূহ বের করেন- গ্রহণ করে থাকে।

(২২) তাদের মতে প্রতিদিনের ফরজ নামাজসমূহের জন্য নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। পাঞ্জেগানা নামাজের অর্থাৎ ফজর,জোহর,আসর,মাগরিব,এশা প্রতিটি নামাজ আদায়ের নির্দিষ্ট সময়ে তা আদায় করা সর্বোত্তম। কিন্তু তারা জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে এবং মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে আদায় করে। কারণ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থতা,অজুহাত,সফর বা বৃষ্টিজনিত কোন কারণ ছাড়াই এ নামাজগুলি একসঙ্গে আদায় করেছেন উম্মতের জন্য বিষয়টি সহজ করার উদ্দেশ্যে। সহীহ মুসলিমে এ বিষয়টি উল্লেখিত হয়েছে। এরূপ একত্রীকরণের সুবিধাটি বর্তমান যুগে সহজেই পরিদৃষ্ট ও স্বাভাবিক বলে পরিগণ্য।

২৩) তারা অন্যান্য মুসলমানদের মতই আজান দেয়। তবে তাদের আজানের মধ্যে পার্থক্য হল তারা হাইয়া আলাল ফালাহ দু’বার বলার পর হাইয়া আলা খাইরিল আমাল (সর্বোত্তম কর্মের জন্য এসো) বলে। কারণ রাসুলুল্লাহর (সা.) সময় আজানে এটি প্রচলিত ছিল কিন্তু খলিফা উমর ইবনে খাত্তাব নিজ ইজতিহাদে এটিকে জিহাদের অন্তরায় অর্থাৎ তা মুসলমানদের জিহাদ হতে ফিরিয়ে রাখে মনে করে আজান হতে বাদ দেন। কারণ নামাজ যে শ্রেষ্ঠ কর্ম মুসলমানরা তা স্বাভাবিকভাবেই জানেন (এ ঘটনাটি আল্লামা আল কুশজী আল আশআরি তার শারহে তাজরিদুল ইতিকাদ গ্রন্থে,আলকিন্দী তার আল মুসান্নাফ গ্রন্থে,আল-মুত্তাকী আল হিন্দী তার কানজুল উম্মাল গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,সুন্নী সূত্রের অন্যান্য গ্রন্থেও তা বর্ণিত হয়েছে। খলিফা উমর ইবনে খাত্তাব ফজরের আজানে আস সালাতু খাইরুম মিনান নাওম (নামাজ নিদ্রা অপেক্ষা উত্তম) বাক্যটি সংযোজন করেন যা মহানবীর (সা.) সময় আজানের অংশ ছিল না (এ বিষয়ে জানতে হাদিস ও ইতিহাস গ্রন্থসমূহ দেখুন)।

যেহেতু ইসলামে ইবাদত ও তার প্রস্তুতিমূলক বিষয়সমূহ পবিত্র শরীয়তের (তাঁর প্রণেতা ও প্রবক্তা) নির্দেশ ও অনুমতির অনুবর্তী এ অর্থে যে তার প্রতিটি বিধিবিধান অবশ্যই কোরআন ও সুন্নাহর সার্বিক অথবা নির্দিষ্ট দলিল ও সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে হতে হবে নতুবা তা প্রত্যাখ্যাত বিদআত বলে পরিগণিত যা তার (বিদআতের) উদগাতার দিকেই প্রত্যাবর্তন করে... একারণেই ইবাদতের বিষয়সমূহে কম-বেশী করার সুযোগ নেই। শুধু ইবাদতের ক্ষেত্রেই নয় শরীয়তের প্রতিটি বিষয়েই ব্যক্তিগত মত উপেক্ষীয় ও অগ্রহণযোগ্য।

কিন্তু জাফরী শিয়াগণ যে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ বলার পর ‘আশহাদু আন্না আলীয়ান ওয়ালিউল্লাহ’ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আলী আল্লাহর ওয়ালী) বলে তা রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের সদস্যদের হতে বর্ণিত এ হাদিসের ভিত্তিতে যে জান্নাতের কোন দরজাতেই ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ বাক্যটি স্বতন্ত্রভাবে নেই বরং তার পাশে অবশ্যই ‘আলীয়ুন ওয়ালিউল্লাহ’ (আলী আল্লাহর ওয়ালী) বাক্যটি সংযুক্ত রয়েছে। এ বাক্যটির মাধ্যমে শিয়ারা ঘোষণা করতে চায় তারা আলীর (আ.) নবুওয়াতে বিশ্বাসী নয়। তাঁর উপাস্য বা প্রতিপালক হওয়ার বিষয়টি (নাউজুবিল্লাহ) আসার তো সুযোগই নেই।

শিয়া জাফরী ফিকাহর অনুসারী অধিকাংশ প্রসিদ্ধ আলেম উপরোক্ত কারণে এ মত দিয়েছেন যে,এ বিষয়টি আল্লাহর নিকট কাঙ্ক্ষিত ও তাঁর সন্তুষ্টির কারণ মনে করে ‘শাহাদাতাইন’ বলার পর যদি তা আজানের অংশ বা আজানের ওয়াজিব মনে না করে বলা হয় তবে জায়েয।

তাই এই অতিরিক্ত অংশ যা আজানের অংশ মনে করে বলা হয় না (যেমনটি আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি) সেসব বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত নয় যার আদৌ কোন শারয়ী (শরীয়তগত) ভিত্তি নেই ফলে এটি বিদআত বলে পরিগণিত হবে না।

(২৪) শিয়াগণ হাদিসের অনুসরণে মাটি,পাথর,নুড়ি প্রভৃতি ভূমির অংশ বলে পরিগণিত বস্তু এবং ভূমি হতে উদ্ভূত বস্তুতে (যেমন উদ্ভিদজাত চাটাই ও মাদুর) সিজদা করে কিন্তু কার্পেট,কাপড়,পরিধেয়,অলংকার ও সাজসজ্জার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার্য বস্তুতে সিজদা করা জায়েয মনে করে না। এ বিষয়ে শিয়া-সুন্নী উভয় সূত্রে অসংখ্য হাদিস রয়েছে যে,রাসুল (সা.) সবসময় ভূমি বা মৃত্তিকার উপর সিজদা করতেন এমনকি মুসলমানদেরও তা করার নির্দেশ দিতেন। একারণেই একদিন সাহাবী বেলালকে (রা.) মাটির উত্তপ্ততার কারণে পাগড়ির একাংশে সিজদা করতে দেখে তিনি নিজ হাতে তার কপাল হতে পাগড়ির কাপড় সরিয়ে দিয়ে বলেন,‘হে বেলাল,তোমার ললাটকে ধূলায়িত কর বা ধূলায় আবৃত হতে দাও।’

রিবাহ এবং সাহিবের প্রতিও তিনি এরূপ কথা বলেছেন যেমন-‘হে সাহিব,তোমার মুখমণ্ডলকে ধূলায়িত হতে দাও’ বা ‘হে রিবাহ,তোমার মুখমণ্ডলকে ধূলায়িত কর’ (এ বর্ণনাসমূহ সহীহ বুখারী,কানজুল উম্মাল,আব্দুর রাজ্জাক রচিত মুসান্নাফ এবং কাশেফুল গিতা রচিত ‘আস সুজুদ আলাল আরদ’ গ্রন্থে রয়েছে।)

এরূপ করার অন্যতম দলিল হল এ হাদিসটি যা সহীহ বুখারী ও অন্যান্য গ্রন্থে মহানবী (সা.) হতে বর্ণিত হয়েছে :

جعلت لی الارض مسجدا و طهورا

“আমার জন্য পৃথিবীকে (ভূ-পৃষ্ঠ) মসজিদ ও পবিত্রকরণের উপকরণ করা হয়েছে।”

তদুপরি মাটির উপর সিজদা বা সিজদার জন্য মাটির উপর কপাল রাখা আল্লাহর সামনে সিজদার সর্বোত্তম রূপ,উপাস্যের সামনে উপাসকের ক্ষুদ্রতা প্রকাশ ও আত্মসমর্পণের চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত এবং বিনয় ও নম্রতার সবচেয়ে নিকটবর্তী। এ বিষয়টি মানুষকে তার মূল উৎসের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মহান আল্লাহ কি একথাই বলেননি,

مِنها خَلَقنَاکُم وَفِيها نُعِيدُکُم وَ مِنها نُخرجُکُم تارَةً اُخری

“আমরা তোমাদের তা (মৃত্তিকা) হতেই সৃষ্টি করেছি,তাতেই তোমাদের ফিরিয়ে আনব। পুনরায় (কিয়ামতের দিন) তোমাদের তা হতে বের করে আনব।”

নিশ্চয়ই সিজদা হল বিনয়ের চূড়ান্ত প্রকাশ। বিনয়ের চূড়ান্ত রূপের প্রকাশ জায়নামাজ,কার্পেট,বস্ত্র বা মূল্যবান অলংকারের উপর ঘটে না। এ রূপটি তখনই প্রকাশ পায় যখন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান অংশ মানুষের ললাট সবচেয়ে মূল্যহীন বস্তু অর্থাৎ মৃত্তিকার উপর রাখা হয়। (এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন দশম হিজরী শতাব্দীর আলেম আশ শারানী  আনসারী আল মিসরী রচিত আল ইয়াকিত ওয়াল জাওয়াহির গ্রন্থটি)

হ্যাঁ,অবশ্যই সিজদার মাটি পবিত্র হতে হবে,আর এজন্যই তার পবিত্রতার কথা চিন্তা করে শিয়ারা তাদের সঙ্গে একখণ্ড মাটির টুকরা (যা বিভিন্ন মাটির মিশ্রনে প্রস্তুত) বহন করে। কখনও কখনও এ সিজদার মাটি বরকত লাভের উদ্দেশ্যে পবিত্র কোন স্থান হতে নেয়া হয়ে থাকে যেমন কারবালা যেখানে মহানবীর (সা.) পবিত্র দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (আ.) শহীদ হয়েছিলেন। মহানবীর (সা.) কোন কোন সাহাবা বরকত লাভের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কানগরীতে সফরের সময় সেখান হতে পাথর ও নুড়ি সিজদার জন্য বহন করে নিয়ে যেতেন। (এবিষয়টি সানআনির মুসান্নিফ গ্রন্থে এসেছে)

কিন্তু জাফরী শিয়ারা এরূপ করতেই হবে এবং সবসময় এমনটিই হতে হবে তা অপরিহার্য মনে করে না বরং যে কোন পরিস্কার ও পবিত্র পাথরে সিজদা করা জায়েয মনে করে। যেমন পবিত্র মসজিদে নববী ও মসজিদে হারামের মেঝে যেরূপ পাথরে প্রস্তুত হয়েছে তাতেও সিজদা করাতে কোন অসুবিধা নেই।

নামাজের মধ্যে তারা বাম হাতের উপর ডান হাত রাখে না (হাত বাঁধে না) কারণ মহানবী (সা.) এমনটি করতেন না এবং কোন অকাট্য ও সুস্পষ্ট দলিল এর সপক্ষে নেই। একারণেই মালেকী মাজহাবের অনুসারীরাও তা করে না (বুখারী,মুসলিম ও বায়হাকী দ্রষ্টব্য,মালেকী মাজহাবের মত সম্পর্কে জানতে দেখুন ইবনে রুশদ আল কুরতুবী রচিত বেদায়াতুল মুজতাহিদ সহ অন্যান্য গ্রন্থ)।

(২৫) জাফরী শিয়ারা ওজুর সময় কনুই হতে শুরু করে হাতের অঙ্গুলী পর্যন্ত অর্থাৎ উপর হতে নীচের দিকে ধৌত করে। নীচে থেকে উপর দিকে বা হাতের অঙ্গুলী হতে শুরু করে কনুই ধোয় না। কারণ তারা ওজুর পদ্ধতি আহলে বাইতের পবিত্র ইমামদের হতে গ্রহণ করেছে যাঁরা রাসুল (সা.) হতে তা গ্রহণ করেছেন। নবীর (সা.) আহলে বাইতের ইমামগণ তাদের প্রপিতার সুন্নাত সম্পর্কে অধিকতর অবহিত। তাই নিশ্চয়ই রাসুল (সা.) ওজুর ক্ষেত্রে এরূপ করতেন এবং ইমামগণ সূরা মায়েদার ওজুর আয়াতটিতে (৬নং আয়াত) (الی) শব্দটিকে (مع) অর্থে তাফসীর করেছেন। শাফেয়ী আসসাগীর তার নেহায়াতুল মুহতাজ’ গ্রন্থে এরূপ বলেছেন।

অন্যদিকে একই কারণে তারা তাদের মাথা ও পা মাসেহ করে,ধৌত করে না। যেমন ইবনে আব্বাস বলেছেন: ওজু হল দু’টি ধৌতকরন এবং দু’টি মাসেহ (আস সুনান ওয়াল মাসানিদ,আল্লামা ফখরুদ্দীন রাজীর তাফসীরে কাবীর গ্রন্থের উপরোক্ত আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)।

(২৬) তারা মুতা বিবাহে (অস্থায়ী বিবাহ) বিশ্বাসী যা পবিত্র কোরআন সুস্পষ্টরূপে বৈধ ঘোষণা করেছে এ আয়াতে যে,

فَما استَمتَعتُم بِهِ مِنهُنَّ فَأتُوهُنَّ اُجُورَهُنَّ

“নারীদের মধ্য হতে যাদের থেকে সে সময় তোমরা উপকৃত হবে (অস্থায়ীভাবে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করবে) তাদেরকে তাদের মোহরানা পরিশোধ কর।”

তাছাড়া রাসুলের জীবদ্দশায় মুসলমানগণ এরূপ বিবাহ করতেন যা খলিফা উমর ইবনে খাত্তাবের শাসনকালের অর্ধেক সময় পর্যন্ত তাদের মধ্যে প্রচলিত ছিল এবং সাহাবারা তা করতেন। এ বিবাহ শরীয়ত সম্মত এবং স্থায়ী বিবাহের সঙ্গে কয়েকটি বিষয়ে তার সাদৃশ্য রয়েছে :

প্রথমতঃ এ বিবাহের আওতাভুক্ত নারীকে (পাত্রী) অবশ্যই স্বামীহীন হতে হবে অর্থাৎ তার স্বামী থাকা চলবে না। এ বিবাহের জন্য যে সিগাহ (বিবাহের আকদ) পড়ানো হবে তার ইজাবের পক্ষ হল নারী এবং কবুলের পক্ষ হল পুরুষ।

দ্বিতীয়তঃ অবশ্যই ঐ নারীকে স্থায়ী বিবাহের ন্যায় মোহরানা দিতে হবে যদিও এ বিবাহের ক্ষেত্রে তাকে বিনিময় অর্থ বলা হয়ে থাকে। এ বিষয়টি আল কোরআনের উপরে উল্লেখিত আয়াতে বলা হয়েছে।

তৃতীয়তঃ বিচ্ছেদের পর নারীকে অবশ্যই ইদ্দত পালন করতে হবে (যা দু’মাসিকের বা ৪৫ দিনের সমান)।

চতুর্থতঃ অস্থায়ী বিবাহকালীন সময়ে নারী একের অধিক পুরুষের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না এবং এই দম্পতির সন্তান তাদের পিতার ঔরসজাত বলে গণ্য হবে।

পঞ্চমতঃ পিতা ও সন্তান এবং মাতা ও সন্তানের মধ্যে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে নিয়ম স্থায়ী বিবাহের অনুরূপ।

স্থায়ী বিবাহের সঙ্গে এই বিবাহের কয়েকটি ক্ষেত্রে অমিল রয়েছে যেমন ভরণপোষণ অপরিহার্য নয়,স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষার অপ্রয়োজনীয়তা,স্বামী স্ত্রী একে অপরের উত্তরাধিকারী না হওয়া,বিবাহের সময়সীমা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই বিচ্ছিন্ন হওয়া অপরিহার্য বিধায় তালাকের কোন প্রয়োজন নেই। আবার আকদে উল্লেখিত সময় হতে বাকী থাকলেও যদি অবশিষ্ট সময় স্বামী স্ত্রীকে প্রদান করে বা তার অধিকারকে পরিত্যাগ করে অর্থাৎ তার হতে হাত গুটিয়ে নেয় তবেও তা বিচ্ছেদের জন্য যথেষ্ট।

এ ধরনের বিবাহ নীতি প্রণয়নের উদ্দেশ্য হল যেসকল নারী-পুরুষ স্থায়ী বিবাহের প্রয়োজনীয় উপকরণ ও সরঞ্জাম সংগ্রহে অপারগ হবে এবং স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যু জনিত বা অন্য কোন কারণে যে সকল পুরুষ ও নারী বৈবাহিক জীবন হতে বঞ্চিত তারা যেন তাদের জৈবিক চাহিদা বৈধ উপায়ে পূরণ করতে পারে এবং সম্মানের সাথে সমাজে বাস করতে পারে।

সুতরাং মুতা বা অস্থায়ী বিবাহ প্রধানত সামাজিক সংকট ও নৈতিক বিপর্যয় রোধ এবং ইসলামী সমাজকে বিচ্যুতি,বিশৃংখলা,যেমন খুশী চলা (গুনাহের প্রতি উপেক্ষার ভাব দেখানো) প্রভৃতি হতে রক্ষা করা।

কখনও কখনও অস্থায়ী বিবাহের মাধ্যমে নারী পুরুষ একে অপরকে বৈধভাবে চিনার সুযোগ পায় এবং স্থায়ী বিবাহের পূর্বে একে অপরকে ভালভাবে জানার উদ্দেশ্যে এ বিবাহ সম্পাদিত হয়ে থাকে। ফলে অবৈধ সম্পর্ক,ব্যভিচার,জৈবিক চাহিদাকে দমন করে রাখা,প্রভৃতিকে রোধ করা সম্ভব হয়। এ বিষয়টি বিবিধ সমস্যায় মানুষদেরকে তাদের যৌন চাহিদা পূরনের  হারাম ও অবৈধ পন্থাসমূহ (যেমন- ব্যভিচার,হস্তমৈথুন প্রভৃতি) হতে ফিরিয়ে রাখে অর্থাৎ যে সকল ব্যক্তি এক স্ত্রীতে সন্তুষ্ট নয় (বা ধৈর্য ধারণে সক্ষম নয়) অথচ অর্থনৈতিকভাবে তার পক্ষে একাধিক স্ত্রীর ভরণ পোষণ বহন করা সম্ভব নয় অথবা অসচ্ছলতার কারণে যে ব্যক্তির জন্য আদৌ বিবাহ করা সম্ভব নয় অথচ সে চায় নিজেকে হারাম হতে মুক্ত রাখতে তার জন্য উপযুক্ত একটি পদ্ধতি ও উপায় হচ্ছে এ অস্থায়ী বিবাহ যা আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন।

মোটকথা এই বিবাহটি কোরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক একটি প্রথা এবং দীর্ঘ সময় সাহাবাগণ এ প্রথাটি তাদের জীবনে পালন করেছেন। যদি এটা ব্যভিচার বলে পরিগণিত হয় তবে এর অর্থ হল কোরআন,নবী এবং সাহাবাগণ ব্যভিচারকে বৈধ করেছেন এবং তারা দীর্ঘ সময় ধরে ব্যভিচারে লিপ্ত ছিলেন (নাউজুবিল্লাহ)।

তদুপরি এ প্রথাটি রহিতকরণের পিছনে কোরআন ও হাদিস ভিত্তিক কোন সুস্পষ্ট ও অকাট্য দলিল নেই।

যদিও জাফরী শিয়ারা কোরআন ও সুন্নাত কর্তৃক প্রবর্তিত ও বৈধ ঘোষিত এ বিবাহকে হালাল ও মুবাহ মনে করে তদুপরি তারা স্থায়ী বিবাহ ও পরিবার গঠনকে প্রাধান্য দেয় কারণ তা সুস্থ ও শক্তিশালী সমাজ গঠনের ভিত্তি। তাই তারা শরীয়তসম্মত এ বিবাহের দিকে না ঝুকে স্থায়ী বিবাহের সুবিধা গ্রহণেই আকাঙ্ক্ষী যা আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি।

এখানে উল্লেখ্য যে,জাফরী শিয়ারা কোরআন,সুন্নাহ এবং আহলে বাইতের ইমামগণের (আলাইহিমুস সালাম) নির্দেশনার অনুসরণে নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে থাকে এবং কখনই তার মর্যাদাকর ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন হতে দেয় না। শিয়া ফিকাহ গ্রন্থসমূহ ও তাঁদের ইমামদের হতে বর্ণিত হাদিসসমূহে নারীর মর্যাদা,সম্মান,অধিকার বিশেষতঃ তাঁদের সঙ্গে করণীয় নৈতিক আচরণ,বিবাহ,তালাক,সম্পদের মালিকানা,দুগ্ধ দান,সন্তান প্রতিপালন,ইবাদত ও লেনদেন সম্পর্কিত তাদের মর্যাদার উপযোগী বিধিবিধান বর্ণিত হয়েছে এবং এ বিষয়ে সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

(২৭) জাফরী শিয়ারা ব্যভিচার (জেনা),সমকামিতা,সুদ,ঘুষ,অন্যায় মানব হত্যা,মদ্য পান,জুয়া,প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ,প্রতারণা,প্রবঞ্চনা,ভেজাল দেয়া,মজুদদারী,ওজনে কম দেয়া,অবৈধ দখল,চুরি,খিয়ানত ও বিশ্বাসঘাতকতা,নাচ-গান,হিংসা-বিদ্বেষ,পবিত্র নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ,অন্যায় অপবাদ দেয়া,চোগলখোরী,বিশৃংখলা সৃষ্টি,মুমিনকে কষ্ট দেয়া,গীবত ও পরনিন্দা করা,গালি গালাজ করা,মিথ্যা বলা,অন্যের উপর মিথ্যারোপ,যাদু’ করা ইত্যাদি সকল প্রকার কবিরা ও সগীরা গুনাহকে হারাম বলে মনে করে এবং সকল সময় এগুলো থেকে দূরে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। তারা সমাজকে এগুলো থেকে মুক্ত রাখার নিমিত্তে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় চেষ্টা চালায় যেমন গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশ,নৈতিক প্রশিক্ষণ বিষয়ক পুস্তিকা প্রকাশ,আলোচনা সভা,বক্তব্য,কনফারেন্স ও সেমিনার,জুমার নামাজের খুতবাসমূহ ও এরূপ সম্ভাব্য পন্থাসমূহ।

(২৮) তারা উন্নত নৈতিক চরিত্রের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। উপদেশ ও নসিহতকে পছন্দ করে,উপদেশমূলক বক্তব্য শোনার জন্য উদগ্রীব। তাই উপদেশ গ্রহণের আগ্রহ নিয়ে মসজিদ,গৃহ,সম্মেলন কক্ষসহ সকল উপযুক্ত স্থানসমূহে বিভিন্ন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। একারণেই  তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মানুষের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মর্যাদা বৃদ্ধিকারী দোয়াসমূহ পাঠ করে থাকে। গভীর অর্থবহ এই দোয়াসমূহ মহানবী (সা.) ও আহলে বাইতের  ইমামদের হতে বর্ণিত হয়েছে যেমন-দোয়ায়ে কুমাইল,দোয়ায়ে আবু হামযা সুমালী,দোয়ায়ে সামাত,দোয়ায়ে জাওশানুল কাবীর, দোয়ায়ে মাকারেমুল আখলাক,দোয়ায়ে ইফতিতাহ (রমজান মাসের ইফতারের পর পড়া হয়ে থাকে)। তারা এই দোয়া ও মুনাজাতসমূহ অত্যন্ত মনোযোগ,বিনয় ও আধ্যাত্মিক অনুভূতি নিয়ে ক্রন্দনরত অবস্থায় সমর্পিত হৃদয়সহ পাঠ করে থাকে। কারণ তা তাদের আত্মিক পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধতা দান করে এবং তাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে। (এই দোয়াগুলি ‘মাউসুআতুল আদইয়াতিল জামেয়া’ বা দোয়া সমগ্র নামক গ্রন্থে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। অবশ্য এ দোয়াগুলি শিয়াদের প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ সকল দোয়া গ্রন্থে বিদ্যমান)

(২৯) তারা মহানবী (সা.) এবং তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের ইমাম ও বংশধরদের রওজার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। যেমন পবিত্র মদীনা নগরীর জান্নাতুল বাকীতে ইমাম হাসান মুজতাবা,ইমাম যাইনুল আবেদীন,ইমাম মুহাম্মাদ আল বাকির এবং ইমাম জাফর সাদিকের (আ.) রওজা,ইরাকের পবিত্র নাজাফ নগরীতে ইমাম আলীর (আ.) রওজা,কারবালায় ইমাম হুসাইন (আ.),তাঁর ভ্রাতা,পুত্র,নিকটাত্মীয় এবং সম্মানিত সাহাবাগণ যারা তাঁর সঙ্গে আশুরার দিন (৬১ হিজরীর ১০ই মুহররম) শহীদ হয়েছিলেন তাদের রওজা,সামাররায় ইমাম হাদী এবং ইমাম আসকারীর (আ.) রওজা এবং কাজিমিয়ায় ইমাম কাজিম ও ইমাম জাওয়াদের (আ.) রওজা,ইরানের মাশহাদ নগরীতে অষ্টম ইমাম আলী ইবনে মুসা রেজার (আ.) রওজা,কোম ও শিরাজে ইমাম মুসা কাজিমের সন্তান ও বংশধরগণ,সিরিয়ার দামেস্কে কারবালার বীরাঙ্গনা নারী সাইয়েদা হযরত যায়নাবের রওজা মোবারক এবং মিশরের কায়রোতে আহলে বাইতের বংশধারার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নারী সাইয়েদা হযরত নাফিসার রওজা। তাদের রওজার প্রতি সম্মান প্রদর্শন রাসুলের প্রতি সম্মানের নামান্তর। কারণ তারা হলেন তাঁরই বংশধর এবং ব্যক্তির সম্মান তার বংশধরদের সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমেই রক্ষিত হয়ে থাকে,আর ব্যক্তির সন্তানদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন তার প্রতি সম্মানেরই নামান্তর। এ কারণেই পবিত্র কোরআন ইমরান,ইবরাহিম ও ইয়াকুবের বংশধরদের প্রতি বিশেষ সম্মান দেখিয়েছে ও ভূয়সী প্রশংসা করেছে। যদিও তাদের অনেকেই নবী ছিলেন না তদুপরি বলেছে :

إِنَّ اللَّهَ اصطفَى آدَمَ وَ نُوحاً وَ آلَ إِبْرَاهِيمَ وَ آلَ عِمْراَنَ عَلى الْعَالَمِينَ ذُرِّيَّةَ بَعْضهَا مِن بَعْضٍ

অর্থাৎ নিঃসন্দেহে আল্লাহ আদম,নুহ,ইবরাহিমের বংশধর এবং ইমরানের পরিবারকে বিশ্ববাসীর ওপর মনোনীত করেছেন যারা বংশধর ছিলেন পরস্পরের।”

তাদের রওজার প্রতি সম্মান প্রদর্শন কোরআনের এ আয়াতের অনুসরণে যে,

لنتخذنَّ عليهم مسجدًا

“অবশ্যই আমরা তাদের (সমাধির) ওপর মসজিদ নির্মাণ করব।”

অর্থাৎ আমরা আসহাবে কাহফের রওজার উপর মসজিদ নির্মাণ করব। তারা তা করেছিল যাতে করে তাদের রওজার পাশে আল্লাহর ইবাদত করা যায়। কিন্তু কোরআন তাদের এ কর্মের প্রতিবাদ করেনি এবং এটিকে শিরক বলে মনে করেনি। কারণ একজন মুমিন ও মুসলিম কেবলমাত্র আল্লাহর উপাসনা করে,তাঁর জন্যই রুকু ও সিজদা করে। কিন্তু তারা এই ইবাদত তাঁর পবিত্র ওলিদের পবিত্র রওজার পাশে করে থাকে ঐ স্থানের পবিত্রতার কারণে যেমনটি মাকামে ইবরাহিমের ক্ষেত্রে ঘটেছে। হযরত ইবরাহিমের (আ.) মর্যাদার কারণে এ স্থানটি পবিত্রতা ও সম্মান অর্জন করেছে এবং আল্লাহ বলেছেন :

وَاتَّخذُوا مِن مَقَامِ اِبرَاهِيمَ مُصَلّی

“তোমরা ইবরাহিমের দাঁড়ানোর স্থানকে নামাজের স্থান নির্ধারণ কর।”

সুতরাং যে ব্যক্তি মাকামে ইবরাহিমের পিছনে নামাজ পড়ে ঐ স্থানের উপাসনা করে না। যেমনি কেউ সাফা ও মারওয়ার মধ্যে সাঈ করলে তা ঐ দুপর্বতের ইবাদত বলে পরিগণিত হয় না। কারণ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য কিছু পবিত্র ও বরকতময় স্থানকে নির্ধারণ করেছেন এবং পরিশেষে ঐ স্থানগুলোকে নিজের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন (অর্থাৎ তাঁর নিদর্শন বলে উল্লেখ করেছেন)। নিশ্চয়ই কিছু দিবস ও  কিছু স্থান পবিত্র বলে ঘোষিত যেমন আরাফার দিন (হজের দিবস),আরাফা ও মিনার ভূমি। এ স্থান ও দিবসগুলি আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কারণে সম্মানিত।

(৩০) একই কারণে জাফরী শিয়ারা অন্যান্য সমঝদার মুসলমানের ন্যায় রাসুল (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের সদস্যদের সম্মান প্রদর্শনের নিমিত্তে তাদের কবরসমূহ যিয়ারত করে থাকে। তারা এটা এজন্য করে যে,এর মাধ্যমে তাদের হতে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং তাঁদের সঙ্গে নতুন করে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় ও যে উদ্দেশ্যে তাঁরা সংগ্রাম ও প্রচেষ্টা চালিয়েছেন সে পথে চলার তাগিদ অনুভব করে। তাদের আদর্শকে রক্ষার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর ব্রত নেয়। কারণ এই পবিত্র স্থানগুলির যিয়ারতকারীরা যিয়ারতের সময় ঐ পবিত্র ব্যক্তিবর্গের সম্মান ও মর্যাদার কথা স্মরণ করে,নামাজ প্রতিষ্ঠা,জাকাত আদায়ের পথে তারা যে কষ্ট সহ্য করেছেন,দ্বীন প্রতিষ্ঠার পথে তারা যে অবিরত সংগ্রাম করেছেন তা পুনর্মন্থন করে। সেই সাথে মহানবীর বংশধরদের উপর আপতিত জুলুম ও অত্যাচার ও তাঁদের মজলুমিয়াতের কথা স্মরণ করে মহানবীর (সা.) দুঃখের সমব্যথী হয়।

এ বিষয়টিই কি হযরত হামযার (রা.) শাহাদাতের সময় রাসুল বলেননি (যেমনটি ইতিহাস ও জীবনী গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে)-

ولکن حمزَة لا بواکی له

“কিন্তু হায় হামযার জন্য কান্নাকাটি করার কেউ নেই?”

তিনি (মহানবী (সা.) কি তাঁর প্রিয় পুত্র ইবরাহিমের মৃত্যুতে কাঁদেননি?

তিনি কি জান্নাতুল বাকীতে কবর যিয়ারতে যেতেন না?

তিনি কি এ কথা বলেননি :

زوروا القبور فإنها تذکرکم بالاخرة

“তোমরা কবর সমূহ যিয়রত কর কেননা তা তোমাদের আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে।”

হ্যাঁ,মহনবীর (সা.) পবিত্র আহলে বাইতের ইমামগণের কবর যিয়ারত এবং তাতে তাঁদের জীবন পদ্ধতি ও ঐতিহাসিক সংগ্রামী ভূমিকার যে কথা স্মরণ করা হয় তা পরবর্তী প্রজন্মকে ইসলামের প্রতি এই মহান ব্যক্তিবর্গের আত্মোৎসর্গী অবদানের সাথে পরিচিত করায়,তাদের মনে শাহাদাত,আত্মত্যাগ,সাহসিকতা ও বীরত্বের বীজ বপিত হয় এবং আল্লাহর পথে তারা আত্মোৎসর্গে অনুপ্রাণিত হয়।

সুতরাং উপরিউক্ত কর্মটি একটি বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন সভ্য ও মানবিক কর্ম এবং প্রত্যেক জাতিই তাদের শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত ব্যক্তিবর্গকে,তাদের সভ্যতার স্থপতিদেরকে চিরস্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে তাদের স্মৃতিকে বিভিন্নভাবে জাগরুক রাখে। কারণ এটি তাদের গৌরবময় ভূমিকা সম্পর্কে পরবর্তী প্রজন্মকে অবহিত করে ও তারাও গৌরবান্বিত হয় এবং ঐ আদর্শকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হওয়ার অনুপ্রেরণা পায়।

কোরআন এর বিভিন্ন আয়াতে নবী,ওয়ালীগণ ও পুণ্যবান ব্যক্তিবর্গের কর্ম ও আচরণ সম্পর্কে আলোচনা করেছে এবং তাদের কাহিনী বর্ণনা করেছে তাও এ উদ্দেশ্যেই।

চলবে…

 

তথ্যসূত্র :

১। সূরা ত্ব-হা ৫৫।

২। সূরা আন নিসা ২৪।

৩। বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সিহাহ সিত্তাহ,সুনান ও মুসনাদের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহ যা বিভিন্ন মাজহাবের নিকট রয়েছে দেখুন।

৪। এ দোয়াটিতে মহান আল্লাহর এক হাজারটি পবিত্র নাম মূল্যবান মুক্তার দানার ন্যায় পরস্পর সমন্বিত হয়েছে।

৫। সূরা আলে ইমরান- ৩৩, ৩৪।

৬। সূরা কাহফ ২১।

৭। সূরা বাকারা ১২৫।

৮। সুবকি আশ শাফেয়ী,শিফাউস সিকাম পৃ. ১০৭। অনুরূপ সুনানে ইবনে মাজা, ১ম খণ্ড,পৃ. ১১৭।

(হুজ্জাতুল ইসলাম জাফর আল হাদী লিখিত, আবুল কাসেম অনূদীত “সত্য পরিচয়” গ্রন্থ থেকে সংকলিত )

 

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)