ইসলাম ও মাতৃভাষা

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন 'আশরাফুল মাখলুকাত' বা সৃষ্টির সেরা জীবরূপে মানুষ সৃষ্টি করে তাদের মনের ভাব প্রকাশের জন্য ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের বর্ণনানুযায়ী ভাষার স্রষ্টা স্বয়ং আল্লাহতায়ালা। এই মর্মে ইরশাদ হয়েছে, 'তিনি (আল্লাহ) মানুষ সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাকে ভাব প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন।' (সুরা আর-রাহমান, আয়াত : ৩-৪) জন্মগতভাবেই মানুষ তার মাতৃভাষাতেই কথা বলে। কারণ মহান আল্লাহ মানুষের জন্মের পর তাকে মায়ের ভাষাতে কথা বলতে শিখিয়েছেন। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর একটি শিশু তার মা, বাবা, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর কাছ থেকে যেসব কথা শোনে, তাদের কাছ থেকে যে ভাষা শিখে এবং তাদের সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলে মনের ভাব প্রকাশ করে তাই তার মাতৃভাষা। ভাষা মানুষের প্রতি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার অশেষ দয়া ও অনুগ্রহ এবং তাঁর সৃষ্টিকুশলতার একটি অনুপম নিদর্শন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন, 'আর তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে মহাকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য।' (সুরা আল-রুম, আয়াত-২২)

পরম করুণাময় আল্লাহ আদি মানব হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করে সব ভাষায় সব বস্তুর নাম তাদের গুণাগুণসহ শিক্ষা দিয়েছেন। অনন্তর পৃথিবীতে মানবসন্তানের বংশবৃদ্ধির ফলে তারা বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত হয়ে যায় এবং প্রত্যেক গোত্র নিজেদের জন্য এক একটি ভাষা গ্রহণ করে নেয়। ওইসব ভাষাতেই তারা কথা বলতে আরম্ভ করে, যা পরে ওই গোত্রের মাতৃভাষা হিসেবে গণ্য হয়। পৃথিবীর আদি থেকে এ পর্যন্ত যত ভাষার উৎপত্তি হয়েছে এবং যেসব ভাষা বর্তমানে প্রচলিত আছে তার মধ্যে এমন কোনো ভাষা নেই যে ভাষায় শুধু একজন লোক বা একটি পরিবার কথা বলে বরং প্রত্যেক মাতৃভাষায় নির্দিষ্ট একটি জনগোষ্ঠী কথা বলে।

আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে মানবজাতিকে সৎপথ প্রদর্শনের জন্য যত নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন এবং তাদের যেসব ঐশী ধর্মগ্রন্থ বা আসমানি কিতাব দিয়ে স্ব-স্ব জাতির কাছে পাঠিয়েছেন তাদের ভাষা ছিল ওইসব জাতির মাতৃভাষা। এর উদ্দেশ্য ছিল প্রত্যেক জাতির স্ব-স্ব মাতৃভাষায় অবতারিত ঐশী বাণী থেকে সহজে শিক্ষা লাভ করতে সমর্থ হওয়া। মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন, 'আর আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য।' (সুরা ইব্রাহিম, আয়াত-৪)

ঐশী ধর্মগ্রন্থ যেমনভাবে স্ব-স্ব জাতির মাতৃভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে অনুরূপভাবে মুসলমানদের অনুসৃত প্রধান ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআন আরবদের মাতৃভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। ইসলামের প্রবর্তক বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) ছিলেন আরবি ভাষাভাষী। তিনি মক্কা ও মদিনায় যে সমাজে বসবাস করেছিলেন তাদের ভাষাও ছিল আরবি। পবিত্র কোরআন যেহেতু সর্বপ্রথম রাসুলুল্লাহর (সা.) মাধ্যমে তাঁর স্বজাতির লোকদের কাছে অবতীর্ণ হয়, তাই নবী করিম (সা.) ও তাঁর জাতির মাতৃভাষার প্রতি লক্ষ্য রেখেই আরবি ভাষায় আল-কোরআন নাজিল করা হয়। আরবরা তথা সাহাবায়ে কিরাম তাদের মাতৃভাষা আরবিতে আল-কোরআনের বাণীগুলো নবীজির কাছ থেকে সহজে বুঝে নেয়ার পর অন্যান্য জাতির লোকদের কাছে এর বিশদ ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম হন, প্রচলিত অর্থে যাকে 'তাফসির' বলা হয়। এই মর্মে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, 'নিশ্চয়ই আমি একে অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায়, যাতে তোমরা বুঝতে পার।' (সুরা ইউসুফ, আয়াত-২)

আল্লাহতায়ালা আল-কোরআনের সর্বপ্রথম বাণীতে রাসুলুল্লাহকে (সা.) পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন, 'পাঠ করো তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।' (সুরা আল-আলাক, আয়াত-১) কারণ পড়াশোনা ছাড়া শিক্ষালাভ করা যায় নয়। মানুষ যেসব মাধ্যম ব্যবহার করে জ্ঞানার্জন করে থাকে পড়া হচ্ছে এর অন্যতম। নবীজিকে যে ভাষায় পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা ছিল তাঁর মাতৃভাষা। ইসলামে জ্ঞানার্জনের দ্বিতীয় মাধ্যম হচ্ছে শোনা। পবিত্র কোরআনে এর নির্দেশ দিয়ে আল্লাহপাক বলেছেন, 'সুতরাং আমি যখন এটা (নাজিলকৃত বাণী) পাঠ করি তখন তুমি সে পাঠের অনুসরণ করো।' (সুরা আল-কিয়ামা, আয়াত-১৮) পবিত্র কোরআনে অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, 'আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগসহকারে তা শুনবে এবং নিশ্চুপ হয়ে থাকবে, যাতে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়।' (সুরা আল-আরাফ, আয়াত-২০৪) উল্লেখ্য, নবী করিমকে (সা.) যে ভাষায় ঐশী বাণী শোনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা ছিল তাঁর মাতৃভাষা। শিক্ষালাভের জন্য প্রথমে অন্যের কাছ থেকে শুনতে হয়। প্রত্যেক মানবশিশু সর্বপ্রথম তার মায়ের কাছ থেকে শুনে শুনে জ্ঞান অর্জন করে। মায়ের কাছ থেকে সাধারণত একজন শিশু মাতৃভাষাই শুনে থাকে। মাতৃভাষা চর্চার ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন আদর্শের মূর্তপ্রতীক। আরবের কুরাইশ গোত্রের সম্ভ্রান্ত লোকদের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী শৈশবে হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিবি হালিমার তত্ত্বাবধানে বিশুদ্ধ ভাষাভাষী বনুসাদ গোত্রে প্রতিপালিত হওয়ার সুবাদে বিশুদ্ধ আরবি ভাষা শিখেছিলেন। তাই নবীজি তাঁর মাতৃভাষা আরবি শুদ্ধভাবে বলতেন। তিনি নিজ মাতৃভাষায় বিশুদ্ধতা অর্জনের ফলে গর্ববোধ করে বলেছিলেন, 'আমি আরবদের মাঝে সর্বাধিক বিশুদ্ধ ভাষাভাষী। উপরন্তু আমি কুরাইশ বংশের লোক।' ইসলামের আলোকে শিক্ষা ও উপদেশদানের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ মাতৃভাষার চর্চা, দক্ষতা, প্রাঞ্জলতা ও বিশুদ্ধতা অর্জন প্রয়োজন। যুগে যুগে মনীষীরা এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন। এমনকি ধর্ম প্রচারক নবী-রাসুলরাও তাদের উম্মতদের শিক্ষা দিতে গিয়ে মাতৃভাষার বিশুদ্ধতা ও প্রাঞ্জলতা অর্জনকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন। মাতৃভাষার প্রতি ইসলাম যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেছে। সব মাতৃভাষা আল্লাহর দৃষ্টিতে সমান। রাসুলুল্লাহও (সা.) নিজ মাতৃভাষা আরবিকে ভালোবাসতেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে যে, নবী করিম (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, 'তোমরা তিনটি কারণে আরব তথা আরবি ভাষীকে ভালোবাসবে। কেননা আমি আরবি ভাষী, কোরআনের ভাষা আরবি এবং জান্নাতবাসীর ভাষাও আরবি।' (বায়হাকি)

ইসলাম প্রচার ও প্রসারে মাতৃভাষা চর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন জাতি ও গোত্রের ভাষা বোঝা ও তাদের কাছে নিজস্ব ভাষায় ইসলামের দাওয়াত প্রদানে মহানবী (সা.) অন্যান্য জাতির মাতৃভাষা শেখার জন্য সাহাবায়ে কিরামদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। সাহাবিদের মধ্যে অনেকেই আরবি ভাষা ছাড়াও অন্যান্য ভাষা যেমন_ পারস্য, মিসরীয়, রোমান ও আফ্রিকান ভাষা জানতেন এবং সে ভাষায় উত্তম বক্তৃতা পরিবেশনে পারদর্শী ছিলেন।

মাতৃভাষার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার পাশাপাশি অন্যের ভাষার প্রতিও সবার শ্রদ্ধাশীল হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। পৃথিবীর সব ভাষাই আল্লাহর অনুমোদিত ভাষা। প্রত্যেক মাতৃভাষায় যেহেতু একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী কথা বলে থাকে তাই মাতৃভাষার প্রতি তাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। ভাষার সঙ্গে তাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি জড়িত থাকে, পারস্পরিক ভাব আদান-প্রদান, একে অপরকে বোঝা ও বোঝানো, অন্যকে প্রভাবিত করা, সৎপথে চলার আহ্বান করা, অন্যায় কাজে বাধা প্রদান, ধর্মের বিধিবিধান_ এসব মাতৃভাষার মাধ্যমেই সহজভাবে সম্ভব। একই মাতৃভাষায় কথা বলাতে সবার মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও হূদ্যতা গড়ে ওঠে।

ইসলামে ভাষা ও বর্ণের কৌলীন্য যেমন স্বীকৃত নয়, তেমনি জাতিগত কৌলীন্য ইসলাম সমর্থন করে না। দেশ ও বর্ণের পার্থক্যের কারণে যেমন কাউকে মন্দ বা ভালো বলা ইসলাম অনুমোদিত নয় ঠিক তেমনি ভাষার কারণেও মানুষের মর্যাদার পার্থক্য করার নির্দেশ দেয়ার সুযোগ ইসলামে নেই। ইসলাম যে দেশে প্রচার ও প্রসার পেয়েছে সে দেশের মাটি, মানুষ আর ভাষাকে আপন করে নিয়েছে। এ জন্যই ইসলাম এত দ্রুত বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করে সার্বজনীন ধর্ম হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে।ইসলামী আদর্শ যেমন সার্বজনীন, ইসলামে ভাষাও তেমনি সার্বজনীন। এভাবে ভাষা, বর্ণ ও আঞ্চলিকতার সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে ইসলাম শাশ্বত সত্য ধর্মের প্রচারে মাতৃভাষা চর্চার জোরালো তাগিদ দিয়ে ঘোষণা করেছে, 'তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে বিজ্ঞানসম্মত ও উত্তম ভাষণ দ্বারা আহ্বান করো এবং তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে আলোচনা করো।' (সুরা আল-নাহল, আয়াত-১২৫) পবিত্র কোরআন ও হাদিস তথা ইসলামের আলোকে ধর্মপ্রাণ মানুষের সৎ মনোভাব প্রকাশের দ্বারা মাতৃভাষার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য, ইসলাম প্রচারে মাতৃভাষার প্রয়োজনীয়তা এবং সর্বোপরি বিশ্বমানবতার কল্যাণে মাতৃভাষার চর্চা, অনুশীলন, সংরক্ষণ ও উৎকর্ষ সাধনে ভাষাশহীদদের সুমহান আত্মত্যাগের স্মৃতির প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শনে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে সচেতন হতে হবে।

যে ভাষা-ভাষীই হোক না কেন, বিশ্বের সব মুসলমানের ওপর কোরআন মজিদের পঠন-পাঠন এবং এর বিধি-বিধান অভিনিবেশসহ পালন করা ফরজ। এই মহাগ্রন্থের প্রতিটি সুরা, প্রতিটি আয়াত অত্যন্ত সুবিন্যস্ত এবং অর্থবহ। এমন একটি আয়াত খুঁজে পাওয়া যাবে না, যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অর্থ নেই। জ্ঞান-বিজ্ঞান, বিশ্ব সৃষ্টির রহস্য, মানবজন্ম রহস্য আইন, উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পদ বণ্টন, ইতিহাস, দর্শন, ব্যবসায় চুক্তি নীতিমালা, আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ, ধর্মীয় বিধিবিধান, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমরনীতি কী নেই এতে। কিন্তু কেবল ভাষাগত অবোধগম্যতার কারণে এর নির্যাস গ্রহণে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করার প্রয়াসেই নিবন্ধের প্রথমে একটি আরবি আয়াত এবং পাশাপাশি আমাদের মাতৃভাষায় অর্থান্তরিত অংশ তুলে ধরেছি। প্রথমাংশ আমার মতো অনেকের হৃদয়েই অণুপরিমাণ ক্রিয়া-বিক্রিয়ার অনুরণন তুলতে পারল না। পক্ষান্তরে মাতৃভাষায় অনূদিত অংশে, আল্লাহর অবস্থিতি-অস্তিত্ব অনুধাবন করে, হৃদয় মন হয় সম্মোহিত, আলোড়িত, তরঙ্গায়িত। এখানেই মাতৃভাষার শ্রেষ্ঠত্ব বা মাহাত্ম্য। সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ধ্যান-ধারণারও পরিবর্তন ঘটেছে। আগেকার দিনে হুজুররা কোরআন শিক্ষা দিতে গিয়ে শেখাতেন বাংলা একেবারই পরিত্যাজ্য। হেলেদোলে, সুর করে সম্মিলিত কণ্ঠে তোতাপাখির বোলের মতো বোল তুলে, কোরআন শরিফ খতম করে মসজিদে শিরনি দেওয়া হতো। এতে করে এই মহাগ্র্রন্থের জঠরে যে স্বর্ণখনি লুক্কায়িত আছে, তার একচিমটিও অধ্যয়নকারীর অনুভবে ধরা দিত না। অথচ কোরআন চর্চার রীতি-পদ্ধতিতে পরিষ্কার উল্লেখ করা আছে, ধীরেসুস্থে অর্থ বুঝে কোরআন পাঠ করা। আর অর্থ উদ্ঘাটন বা উপলব্ধি করা কি নিজ ভাষা ছাড়া সম্ভব? মোটেই না। আপনার সন্তানকে কোরআন শিক্ষার সময় আরবির পাশাপাশি বাংলায় অভ্যস্ত করে তুলুন। দেখবেন সে ওখান থেকে জেনে যাবে, বড়দের সঙ্গে বা ছোটদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হয়। প্রতিবেশী বা কাজের লোকের প্রতি দায়িত্ব কী! জ্ঞানার্জন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র শেখার জন্য কারোর লেজুরবৃত্তি করতে হবে না। ওখান থেকে সে জেনে যাবে, অন্যের অধিকার ক্ষুণ্ন করানো, অন্যের বা এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করে না। জাকাত প্রদান করে, দানের মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়ে তোলো। জিহাদের মাধ্যমে তাদের মোকাবিলা করো। যারা একদিন তোমাকে উচ্ছেদ করেছিল।

এক কথায় আল্লাহর বিধিবিধান নির্ভুলভাবে প্রতিপালনে, চরিত্র চয়নে, সুশীল সমাজ গঠনে, পারিবারিক ও সামাজিক মহমর্মিতা স্থাপনে, বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে, সুদমুক্ত অর্থব্যবস্থা গড়ে তুলতে, জ্ঞানার্জনে, পারলৌকিক মুক্তি লাভে, কলুষমুক্ত জীবন বিনির্মাণে, সুশাসন প্রতিষ্ঠায়, ন্যায়বিচার কায়েমে, সর্বোপরি সুন্দর, সুখী ও শান্তিময় জগত বিনির্মাণের যাবতীয় উপাদান প্রোথিত রয়েছে পুরো কোরআন পাকে। সেই সুখের কানন থেকে যা কিছু জ্যোতির্ময়, যা কিছু তেজস্কর তা আহরণ করতে হবে। অর্থাৎ বোধে আনতে হবে। আর বোধে আনার তথা বোধগম্য করার একমাত্র উপায় মাতৃভাষায় কোরআন চর্চা। কেননা, বিনা স্বদেশি ভাষা, মিটেকি মনের আশা। আর সে আশা জাগতিক বা অজাগতিক, যাই হোক না কেন।

বাংলা ভাষা তথা আমাদের মাতৃভাষা আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বাংলা ভাষাভাষী মানুষ বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুক না কেন এ ভাষাতে ইসলাম চর্চা আরও ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হবে। ইসলাম যেমন আরবীয় মরু অঞ্চল পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল ঠিক তেমনি বাংলা ভাষা তথা মাতৃভাষার মাধ্যমে আমরা ইসলামের চর্চাকে বিশ্বব্যাপী আরও সম্প্রসারিত করতে সক্ষম হব।

সুতরাং একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বাংলা ভাষার স্বকীয়তা রক্ষা করা আমাদের একান্ত অপরিহার্য। এ লক্ষ্যেই আমাদের মাতৃভাষাকে জাগতিক ও পারলৌকিক কল্যাণের কাজে ব্যবহার করতে হবে। মাতৃভাষায় ইসলাম চর্চায় প্রয়োজন সুগভীর অনুরাগ।  (সংগৃহীত)