সূরা আ'রাফ;(৩য় পর্ব)

সূরা আ'রাফ; আয়াত ১১-১৫

সূরা আ'রাফের ১১ ও ১২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

وَلَقَدْ خَلَقْنَاكُمْ ثُمَّ صَوَّرْنَاكُمْ ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآَدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ لَمْ يَكُنْ مِنَ السَّاجِدِينَ (11) قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ

"আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরপর আকার-অবয়ব, তৈরি করেছি। এরপর আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছি-আদমকে সিজদা কর তখন সবাই সিজদা করেছে, কিন্তু ইবলীস সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।" (৭:১১)

"আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সিজদা করতে বারণ করল? ইবলিস বা শয়তান বললঃ আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।" (৭:১২)

আগের আয়াতে পৃথিবীতে মানুষের মাধ্যমে আল্লাহর দেয়া নানা নেয়ামত ব্যবহার সম্পর্কে কথা এসেছে। এ আয়াতে সৃষ্টির প্রারম্ভে মানুষের অবস্থানের কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে:  কেবল পৃথিবীর অধিবাসীই নয়, একইসঙ্গে আকাশের অধিবাসী ও ফেরেশতারাও মানুষের প্রতি বিনম্রতা বা সম্মান প্রকাশ করে। মানুষের মর্যাদা এতই উঁচু যে আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাকূলকে হযরত আদম (আ.)'র প্রতি সিজদার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ফেরেশতা না হওয়া সত্ত্বেও ফেরেশতাদের কাতারে স্থান-পাওয়া ইবলিস সিজদা করতে অস্বীকার করে।

ইবলিস বা শয়তান ছিল জিন জাতিভুক্ত। ব্যাপক ইবাদতের কারণে ফেরেশতাদের কাতারে স্থান পেয়েছিল সে। তাই আল্লাহ তাকে খেতাব করে ওই প্রশ্ন করেছেন। ইবলিস তার অবাধ্যতার জন্য অনুতপ্তও হয়নি এবং ক্ষমাও চায়নি। বরং সে তার এ কাজের অজুহাত দেখিয়ে বলেছে, আমি আগুনের তৈরি, আর আদম মাটির তৈরি। আগুন মাটির চেয়ে শ্রেয়। অথচ আল্লাহ আদমের বস্তুগত দিকের কারণে তাঁকে সিজদা করতে বলেননি। বরং তাঁর আধ্যাত্মিক মর্যাদা ও তাঁর মধ্যে খোদায়ী রুহ বা আত্মা ফুঁকে দেয়ার কারণেই  তাঁকে সিজদার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আসলে আল্লাহর এই সুস্পষ্ট নির্দেশ অমান্য করার কোনো যুক্তি বা অজুহাতের অবকাশ ছিল না।

ইবলিস তার সাফাইয়ের মাধ্যমে যেন এটা বলতে চেয়েছে যে: আমি আল্লাহর চেয়েও বেশি বুঝি! আল্লাহ আদমকে সিজদার যে নির্দেশ আমাকে দিয়েছেন তা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। দুঃখজনকভাবে অনেক মানুষ নিজের ক্ষুদ্র বুদ্ধি-বিবেচনার আলোকে আল্লাহর নির্দেশ মানার বা অমান্য করার চেষ্টা করেন। অথচ আল্লাহর অনেক বিধানের হিকমাত বা তাতপর্য বোঝা মানুষের সীমিত জ্ঞানের মাধ্যমে সম্ভব নয়। নিঃশর্ত আনুগত্য করাই বান্দা বা দাসের কর্তব্য।

এই দুই আয়াতের কয়েকটি শিক্ষা হল:

এক. ফেরেশতাদের সিজদা পাওয়ার মত যোগ্যতা ও প্রতিভা মানুষের রয়েছে।

দুই. আল্লাহর নির্দেশে সব ফেরেশতা যখন মানুষকে সিজদা করেছে তখন মানুষ আল্লাহর প্রতি সিজদা করবে না ও তার হুকুম মেনে চলবে না-এর চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতা আর কি হতে পারে?

তিন. বংশ, পদ-মর্যাদা, বয়স, অভিজ্ঞতা বা বস্তুগত প্রকৃতি শ্রেষ্ঠত্বের মাধ্যম নয়, বরং সেই তত বেশি বড় যে যত বেশি আল্লাহর অনুগত।

চার. মানুষ কেন শয়তানের অনুসরণ করবে যে শয়তান মানুষের প্রতি সিজদা জানাতে ও সম্মান জানাতে অস্বীকার করেছে?

সূরা আ'রাফের ১৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

قَالَ فَاهْبِطْ مِنْهَا فَمَا يَكُونُ لَكَ أَنْ تَتَكَبَّرَ فِيهَا فَاخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ الصَّاغِرِينَ

"(আল্লাহ ইবলিসকে) বললেন:  তুই এখান থেকে যা। এখানে অহংকার করার কোন অধিকার তোর নাই। অতএব তুই বের হয়ে যা। তুই হীনতমদের অন্তর্ভুক্ত।" (৭:১৩)

ইবলিস অহংকারী হওয়ায় ও নিজকে বড় ভাবার কারণেই আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করেছিল- এ আয়াতে তা তুলে ধরা হয়েছে। শয়তান বহু বছর ধরে ইবাদত করে আল্লাহর দরবারে যে মর্যাদা ও সম্মান অর্জন করেছিল, কেবল একবার আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার কারণেই  সেইসব সম্মান হারিয়ে ফেলে এবং ফেরেশতাদের কাতার থেকে বহিষ্কৃত হয়।  মহান আল্লাহ বলছেন, এই যে অহংকার ও নিজেকে বড় ভাবা এর শাস্তি হল  অপমান। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন,  যারা বিনম্র ও বিনয়ী আল্লাহ তাদেরকে সম্মান দান করেন। আর যারাই অহংকার করে ও দম্ভ প্রকাশ করে আল্লাহ তাদেরকে হীন বা অপমান করেন এবং তারা কিয়ামতের দিন মানুষের পায়ের নিচে দলিত হবে।

এ আয়াতের দু'টি শিক্ষা হলো:

এক. জ্ঞান ও ইবাদত মানুষের মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়। মুক্তি লাভের জন্য আল্লাহর নির্দেশের প্রতি অনুগত হওয়াই জরুরি। শয়তান আল্লাহকে চিনত ও তাঁর ইবাদতও করত, কিন্তু আল্লাহর নিঃশর্ত ইবাদত করতে প্রস্তুত হয়নি।

দুই. অহংকার মানুষের সৎকর্মকে ধ্বংস করে দেয় এবং মানুষের অধঃপতন ঘটায়।

সূরা আ'রাফের ১৪ ও ১৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

قَالَ أَنْظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ (14) قَالَ إِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ (15(

"(তওবা ও অনুশোচনা না করেই) ইবলিস বললঃ আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন।" (৭:১৪)

"আল্লাহ বললেনঃ তোকে সময় দেয়া হল।" (৭:১৫)

আল্লাহর দরবার থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর ইবলিস কিয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকার সুযোগ চায় আল্লাহর কাছে। আল্লাহ তাকে সেই সুযোগ দেন। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে আল্লাহ শয়তানকে কেন এই সুযোগ দিলেন? এর জবাবে বলতে হয়, শাস্তি ও পুরস্কারের মূল ভিত্তি হল কিয়ামত বা পুনরুত্থান। আল্লাহ সব পাপীকেই অবকাশ বা বেঁচে থাকার সুযোগ দেন। কেউ পাপ করার সাথে সাথেই আল্লাহ তাকে মেরে ফেলেন না বা শাস্তি দেন না।

মানুষকে পরীক্ষা করার খোদায়ী বিধান অনুযায়ী ভাল ও মন্দ কাজের উপকরণ পাশাপাশি রাখা হয়েছে যাতে মানুষের স্বাধীনতা অর্থবহ হয়। শয়তানও মানুষকে পরীক্ষা করার অন্যতম মাধ্যম। অবশ্য শয়তান কাউকে গোনাহ বা পাপে জড়াতে বাধ্য করে না। তার কাজ হল কুমন্ত্রণা দেয়া ও পাপের পথ সুগম করা। কিন্তু মানুষ কখনও নিজের স্বাধীনতা বা ভাল ও মন্দ পথ বাছাইয়ের ক্ষমতা হারায় না।

এই দুই আয়াত থেকে মনে রাখা দরকার:

এক. আল্লাহ পাপীদেরকেও তাতক্ষণিক শাস্তি না দিয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ দিয়েছেন। তারা কতই না ভাগ্যবান যারা এ ধরনের সুযোগকে তওবা ও আত্মসংশোধনের কাজে ব্যয় করে এবং নতুন করে পাপে জড়িত হয় না।

দুই. যে কোনো দীর্ঘ-জীবনই মূল্যবান নয়। কারণ, শয়তানেরও রয়েছে দীর্ঘ জীবন। জীবন বা আয়ুর যথাযথ ব্যবহারই বেশি জরুরি।

তিন. পরকালের শাস্তির কথা ইবলিস জানত। কিন্তু তার জ্ঞান আল্লাহ ও কিয়ামতের প্রতি ঈমান বা বিশ্বাসের স্তর পর্যন্ত গড়ায়নি। আর এ জন্যই সে তওবা ও মুক্তির প্রচেষ্টা চালায়নি।

সূরা আ'রাফ;(৩য় পর্ব)

 

সূরা আ'রাফ; আয়াত ১১-১৫ (পর্ব-৩)

সূরা আ'রাফের ১১ ও ১২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

وَلَقَدْ خَلَقْنَاكُمْ ثُمَّ صَوَّرْنَاكُمْ ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآَدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ لَمْ يَكُنْ مِنَ السَّاجِدِينَ (11) قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ (12(

"আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরপর আকার-অবয়ব, তৈরি করেছি। এরপর আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছি-আদমকে সিজদা কর তখন সবাই সিজদা করেছে, কিন্তু ইবলীস সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।" (৭:১১)

"আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সিজদা করতে বারণ করল? ইবলিস বা শয়তান বললঃ আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।" (৭:১২)

আগের আয়াতে পৃথিবীতে মানুষের মাধ্যমে আল্লাহর দেয়া নানা নেয়ামত ব্যবহার সম্পর্কে কথা এসেছে। এ আয়াতে সৃষ্টির প্রারম্ভে মানুষের অবস্থানের কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে:  কেবল পৃথিবীর অধিবাসীই নয়, একইসঙ্গে আকাশের অধিবাসী ও ফেরেশতারাও মানুষের প্রতি বিনম্রতা বা সম্মান প্রকাশ করে। মানুষের মর্যাদা এতই উঁচু যে আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাকূলকে হযরত আদম (আ.)'র প্রতি সিজদার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ফেরেশতা না হওয়া সত্ত্বেও ফেরেশতাদের কাতারে স্থান-পাওয়া ইবলিস সিজদা করতে অস্বীকার করে।

ইবলিস বা শয়তান ছিল জিন জাতিভুক্ত। ব্যাপক ইবাদতের কারণে ফেরেশতাদের কাতারে স্থান পেয়েছিল সে। তাই আল্লাহ তাকে খেতাব করে ওই প্রশ্ন করেছেন। ইবলিস তার অবাধ্যতার জন্য অনুতপ্তও হয়নি এবং ক্ষমাও চায়নি। বরং সে তার এ কাজের অজুহাত দেখিয়ে বলেছে, আমি আগুনের তৈরি, আর আদম মাটির তৈরি। আগুন মাটির চেয়ে শ্রেয়। অথচ আল্লাহ আদমের বস্তুগত দিকের কারণে তাঁকে সিজদা করতে বলেননি। বরং তাঁর আধ্যাত্মিক মর্যাদা ও তাঁর মধ্যে খোদায়ী রুহ বা আত্মা ফুঁকে দেয়ার কারণেই  তাঁকে সিজদার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আসলে আল্লাহর এই সুস্পষ্ট নির্দেশ অমান্য করার কোনো যুক্তি বা অজুহাতের অবকাশ ছিল না।

ইবলিস তার সাফাইয়ের মাধ্যমে যেন এটা বলতে চেয়েছে যে: আমি আল্লাহর চেয়েও বেশি বুঝি! আল্লাহ আদমকে সিজদার যে নির্দেশ আমাকে দিয়েছেন তা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। দুঃখজনকভাবে অনেক মানুষ নিজের ক্ষুদ্র বুদ্ধি-বিবেচনার আলোকে আল্লাহর নির্দেশ মানার বা অমান্য করার চেষ্টা করেন। অথচ আল্লাহর অনেক বিধানের হিকমাত বা তাতপর্য বোঝা মানুষের সীমিত জ্ঞানের মাধ্যমে সম্ভব নয়। নিঃশর্ত আনুগত্য করাই বান্দা বা দাসের কর্তব্য।

এই দুই আয়াতের কয়েকটি শিক্ষা হল:

এক. ফেরেশতাদের সিজদা পাওয়ার মত যোগ্যতা ও প্রতিভা মানুষের রয়েছে।

দুই. আল্লাহর নির্দেশে সব ফেরেশতা যখন মানুষকে সিজদা করেছে তখন মানুষ আল্লাহর প্রতি সিজদা করবে না ও তার হুকুম মেনে চলবে না-এর চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতা আর কি হতে পারে?

তিন. বংশ, পদ-মর্যাদা, বয়স, অভিজ্ঞতা বা বস্তুগত প্রকৃতি শ্রেষ্ঠত্বের মাধ্যম নয়, বরং সেই তত বেশি বড় যে যত বেশি আল্লাহর অনুগত।

চার. মানুষ কেন শয়তানের অনুসরণ করবে যে শয়তান মানুষের প্রতি সিজদা জানাতে ও সম্মান জানাতে অস্বীকার করেছে?

সূরা আ'রাফের ১৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

قَالَ فَاهْبِطْ مِنْهَا فَمَا يَكُونُ لَكَ أَنْ تَتَكَبَّرَ فِيهَا فَاخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ الصَّاغِرِينَ

"(আল্লাহ ইবলিসকে) বললেন:  তুই এখান থেকে যা। এখানে অহংকার করার কোন অধিকার তোর নাই। অতএব তুই বের হয়ে যা। তুই হীনতমদের অন্তর্ভুক্ত।" (৭:১৩)

ইবলিস অহংকারী হওয়ায় ও নিজকে বড় ভাবার কারণেই আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করেছিল- এ আয়াতে তা তুলে ধরা হয়েছে। শয়তান বহু বছর ধরে ইবাদত করে আল্লাহর দরবারে যে মর্যাদা ও সম্মান অর্জন করেছিল, কেবল একবার আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার কারণেই  সেইসব সম্মান হারিয়ে ফেলে এবং ফেরেশতাদের কাতার থেকে বহিষ্কৃত হয়।  মহান আল্লাহ বলছেন, এই যে অহংকার ও নিজেকে বড় ভাবা এর শাস্তি হল  অপমান। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন,  যারা বিনম্র ও বিনয়ী আল্লাহ তাদেরকে সম্মান দান করেন। আর যারাই অহংকার করে ও দম্ভ প্রকাশ করে আল্লাহ তাদেরকে হীন বা অপমান করেন এবং তারা কিয়ামতের দিন মানুষের পায়ের নিচে দলিত হবে।

এ আয়াতের দু'টি শিক্ষা হলো:

এক. জ্ঞান ও ইবাদত মানুষের মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়। মুক্তি লাভের জন্য আল্লাহর নির্দেশের প্রতি অনুগত হওয়াই জরুরি। শয়তান আল্লাহকে চিনত ও তাঁর ইবাদতও করত, কিন্তু আল্লাহর নিঃশর্ত ইবাদত করতে প্রস্তুত হয়নি।

দুই. অহংকার মানুষের সৎকর্মকে ধ্বংস করে দেয় এবং মানুষের অধঃপতন ঘটায়।

সূরা আ'রাফের ১৪ ও ১৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

قَالَ أَنْظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ (14) قَالَ إِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ (15(

"(তওবা ও অনুশোচনা না করেই) ইবলিস বললঃ আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন।" (৭:১৪)

"আল্লাহ বললেনঃ তোকে সময় দেয়া হল।" (৭:১৫)

আল্লাহর দরবার থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর ইবলিস কিয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকার সুযোগ চায় আল্লাহর কাছে। আল্লাহ তাকে সেই সুযোগ দেন। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে আল্লাহ শয়তানকে কেন এই সুযোগ দিলেন? এর জবাবে বলতে হয়, শাস্তি ও পুরস্কারের মূল ভিত্তি হল কিয়ামত বা পুনরুত্থান। আল্লাহ সব পাপীকেই অবকাশ বা বেঁচে থাকার সুযোগ দেন। কেউ পাপ করার সাথে সাথেই আল্লাহ তাকে মেরে ফেলেন না বা শাস্তি দেন না।

মানুষকে পরীক্ষা করার খোদায়ী বিধান অনুযায়ী ভাল ও মন্দ কাজের উপকরণ পাশাপাশি রাখা হয়েছে যাতে মানুষের স্বাধীনতা অর্থবহ হয়। শয়তানও মানুষকে পরীক্ষা করার অন্যতম মাধ্যম। অবশ্য শয়তান কাউকে গোনাহ বা পাপে জড়াতে বাধ্য করে না। তার কাজ হল কুমন্ত্রণা দেয়া ও পাপের পথ সুগম করা। কিন্তু মানুষ কখনও নিজের স্বাধীনতা বা ভাল ও মন্দ পথ বাছাইয়ের ক্ষমতা হারায় না।

এই দুই আয়াত থেকে মনে রাখা দরকার:

এক. আল্লাহ পাপীদেরকেও তাতক্ষণিক শাস্তি না দিয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ দিয়েছেন। তারা কতই না ভাগ্যবান যারা এ ধরনের সুযোগকে তওবা ও আত্মসংশোধনের কাজে ব্যয় করে এবং নতুন করে পাপে জড়িত হয় না।

দুই. যে কোনো দীর্ঘ-জীবনই মূল্যবান নয়। কারণ, শয়তানেরও রয়েছে দীর্ঘ জীবন। জীবন বা আয়ুর যথাযথ ব্যবহারই বেশি জরুরি।

তিন. পরকালের শাস্তির কথা ইবলিস জানত। কিন্তু তার জ্ঞান আল্লাহ ও কিয়ামতের প্রতি ঈমান বা বিশ্বাসের স্তর পর্যন্ত গড়ায়নি। আর এ জন্যই সে তওবা ও মুক্তির প্রচেষ্টা চালায়নি।