পৃথিবী হতে বিদায় নেয়ার পরও জীবনের অব্যাহত থাকা
পবিত্র কোরআনের আয়াত হতে সুস্পষ্ট বোঝা যায় যে,মানুষের মৃত্যু তার জীবনের শেষ নয়,বরং সে অন্য এক জীবনে প্রবেশ করে ও স্থানান্তরিত হয়। মানুষ মৃত্যুর পর বস্তুগত জগতের ঊর্ধ্বে এক নতুন জগতে অধিকতর বিস্তৃত জীবন লাভ করে। যেমন :
১। মহান আল্লাহ বলেছেন :
( اللَّـهُ يَتَوَفَّى الْأَنفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَىٰ عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْأُخْرَىٰ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ )
‘ আল্লাহ মৃত্যুর সময় প্রাণকে পূর্ণরূপে হরণ করেন এবং (তার প্রাণকে)যে ঘুমন্ত অবস্থায় রয়েছে ও মৃত্যুবরণ করে নি। অতঃপর যার মৃত্যু অবধারিত হয়েছে তার প্রাণকে আবদ্ধ রাখেন এবং অন্যান্যদেরকে (প্রাণ)নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফিরিয়ে দেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলী (আল্লাহর ক্ষমতার) রয়েছে। ’ ৩৫
২। অন্যত্র বলা হয়েছে :
( وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّـهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ )
‘ যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছে তাদের তোমরা মৃত ভেবো না, বরং তারা জীবিত এবং তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে জীবিকাপ্রাপ্ত। ’ ৩৬
অন্য একটি আয়াত হতে জানা যায় এই বিশেষ জীবন (বারজাখের জীবন) শুধু শহীদদের জন্যই নয়,বরং আল্লাহর সকল অনুগত ও সৎকর্মশীল বান্দার জন্য নির্ধারিত।
মহান আল্লাহ বলেছেন :
( وَمَن يُطِعِ اللَّـهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَـٰئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّـهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَـٰئِكَ رَفِيقًا )
‘ যারা আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত পুরুষের আনুগত্য করবে তারা সেই সকল ব্যক্তির সঙ্গে থাকবে নবিগণ, সত্যবাদিগণ, শহীদগণ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য হতে যাদের তিনি নিয়ামত দিয়েছেন। তারা কতই না উত্তম সঙ্গী! ’ ৩৭
যদি শহীদগণ আল্লাহর নিকট জীবিত থাকেন ও জীবিকা লাভ করেন তবে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত হবে-যেহেতু রাসূল নিজেও তাঁর আনীত নির্দেশের আনুগত্যকারী,সেহেতু তিনিও এর অন্তর্ভুক্ত-সেও শহীদদের সাথে থাকবে,কারণ উপরিউক্ত আয়াতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যকারী শহীদদের সঙ্গে থাকবে বলা হয়েছে। যদি শহীদরা মৃত্যুর পর আল্লাহর নিকট জীবিত থাকে তবে তারাও আল্লাহর নিকট জীবিত রয়েছে ও বারজাখী জীবনের অধিকারী। যদি বিন বাযের মতো কেউ বলেন,‘ তাঁরা আল্লাহর নিকট বেহেশ্তে রয়েছেন এবং এই পৃথিবীর কোন খবর রাখেন না’ ,এর জবাবে বলব,‘ আল্লাহ নিজের সম্পর্কে বলেছেন :
( وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنتُمْ )
‘ তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের সঙ্গে রয়েছেন। ’ ৩৮
( فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّـهِ )
‘ তোমরা যেদিকেই মুখ ফিরাও না কেন, সেদিকেই তিনি আছেন। ’ ৩৯
( نَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ )
‘ আমরা তার শাহরগ হতেও তার নিকটবর্তী। ’ ৪০
যদি আল্লাহ সকল স্থানে সকলের সাথে থাকেন তবে যেহেতু শহীদগণ তাঁর নিকটে অবস্থান করছেন তাঁরাও তাঁর নৈকট্যপ্রাপ্ত হিসেবে সকল স্থানের উপর পূর্ণ দৃষ্টি লাভ করেছেন এবং অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেন। আল্লাহর অলী ও অনুগত সৎকর্মশীল বান্দারাও তদ্রুপ। কোরআন বলছে :
( يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ )
‘ তিনি ( আল্লাহ) চক্ষুসমূহের বিশ্বাসঘাতকতা ও অন্তরসমূহ যা গোপন করে সে সম্পর্কে অবহিত। ’ ৪১
যে সর্বজ্ঞ আল্লাহ সবকিছু জানেন তিনিই তাদেরকে অদৃশ্য সম্পর্কে অবগত করেন। তিনিই তাঁর রাসূলকে অদৃশ্য সম্পর্কে অবহিত করেন।
( عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَىٰ غَيْبِهِ أَحَدًا إِلَّا مَنِ ارْتَضَىٰ مِن رَّسُولٍ فَإِنَّهُ يَسْلُكُ مِن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ رَصَدًا )
‘ তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী এবং তিনি অদৃশ্য বিষয় কারো কাছে প্রকাশ করেন না। তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। তখন তিনি তার অগ্রপশ্চাতে প্রহরী নিযুক্ত করেন। ’ ৪২
বিভিন্ন হাদীসেও এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। বদর যুদ্ধের পর মহানবী (সা.) যখন মুশরিকদের মৃতদেহগুলো একটি গর্তে নিক্ষেপ করলেন তখন সেই মৃত মুশরিকদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন,‘ নিশ্চয়ই তোমরা আল্লাহর রাসূলের মন্দ প্রতিবেশী ছিলে,তাকে তোমরা তার গৃহ হতে বহিষ্কার ও তাকে প্রত্যাখ্যান করেই ক্ষান্ত হও নি বরং তার বিরুদ্ধে সমবেতভাবে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলে। আমাকে আমার প্রতিপালক যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা সত্য পেয়েছি।’ এক ব্যক্তি মহানবীকে উদ্দেশ্য করে বলল,‘ হে আল্লাহর নবী! আপনি কিরূপে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন মাথাগুলোর সাথে কথা বলছেন?’ মহানবী তাকে বললেন,‘ তুমি তাদের হতে অধিক শুনতে পাও না।’ ৪৩
আনাস ইবনে মালিক মহানবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,‘ যখন কোন ব্যক্তিকে মৃত্যুর পর কবরে শুইয়ে তার সঙ্গীরা তাকে ত্যাগ করে চলে যায়,তখন সে তাদের পদধ্বনি শুনতে পায়।’ ৪৪
মুত্তাকী হিন্দী স্বীয় সূত্রে নবী করিম (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,যে ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে অসিয়ত না করে যায়,তাকে মৃতদের সাথে কথা বলার অনুমতি দেয়া হবে না।’ বলা হলো :‘ হে আল্লাহর রাসূল! মৃতরা কি কথা বলে?’ তিনি বললেন,‘ হ্যাঁ,তারা পরস্পরের সাথে সাক্ষাৎ করে।’ ৪৫