ওয়াহাবীদের উপস্থাপিত দলিলের পর্যালোচনা
প্রথম দলিল
পূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি ওয়াহাবীরা তাদের মতের সপক্ষে নিম্নোক্ত হাদীসটি উপস্থাপন করে থাকে যে,মহানবী (সা.) বলেছেন :‘ যখন কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে তখন তার সকল সৎকর্ম বন্ধ হয়ে যায় তিনটি ব্যতীত যথা সাদকায়ে জারীয়া (মসজিদ,মাদ্রাসা,স্কুল,হাসপাতাল,ইয়াতিম খানা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা),তার রেখে যাওয়া যে জ্ঞান হতে অন্যান্যরা লাভবান হয় এবং সৎকর্মশীল (নেক) সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।
তারা উপরিউক্ত হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চায় মৃত্যুর মাধ্যমে এ পৃথিবীর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। এর ফলে তারা এ পৃথিবী হতে কোন কল্যাণ প্রাপ্ত হয় না এবং এ পৃথিবীতে তারা কোন প্রভাবও রাখতে সক্ষম নন।
আমাদের উত্তর
উপরিউক্ত হাদীসটিতে তিনটি কর্ম ব্যতীত মৃতব্যক্তি নিজের জন্য অন্য কোন কর্ম করতে পারে না বলা হয়েছে অর্থাৎ যে কর্মসমূহ মৃতব্যক্তি তার জীবদ্দশায় পরবর্তী জীবনের জন্য করতে পারত তা উল্লেখ করে বলা হয়েছে ঐ তিনটি ব্যতীত অন্য কোন কর্মের সওয়াব সে অনবরত লাভ করতে পারবে না। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে,অন্য কোন ব্যক্তি তার পক্ষে কোন কাজ করলে তা হতে সে লাভবান হবে না বরং অন্য কোন ব্যক্তি তার মৃত্যুর পর তার নিয়তে কোন সৎকর্ম করলে সে সওয়াব পেতে পারে। কারণ তা তার নিজ কর্মের উপর নির্ভরশীল নয়।৯৭
দ্বিতীয় দলিল
পবিত্র কোরআনের কোন কোন আয়াত হতে বাহ্যিকভাবে বোঝা যায় মৃতরা শুনতে পায় না। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন :
( فَإِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَى وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِينَ)
“ সুতরাং নিশ্চয়ই (হে নবী!) তুমি মৃতদের (যাদের অন্তর মৃত) শোনাতে সক্ষম নও এবং বধিরদের কর্ণেও তা পৌঁছাতে সক্ষম নও যখন তারা( নিজেরাই) পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে। ” ৯৮
অন্য আয়াতে এসেছে :
( وَمَا يَسْتَوِي الْأَحْيَاءُ وَلَا الْأَمْوَاتُ إِنَّ اللَّهَ يُسْمِعُ مَنْ يَشَاءُ وَمَا أَنْتَ بِمُسْمِعٍ مَنْ فِي الْقُبُورِ)
“ অবশ্যই জীবিত ও মৃত সমান নয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে চান শোনান। তুমি যে ব্যক্তি কবরে আছে তাকে শোনাতে সক্ষম নও। ” ৯৯
আমাদের উত্তর
প্রথমত উপরিউক্ত আয়াতের লক্ষ্য কবরে শায়িত প্রাণহীন দেহ হতে পারে যা মাটিতে পরিণত হয়েছে ফলে কোন কিছু বুঝতে সক্ষম নয়।
দ্বিতীয়ত শুনতে সক্ষম নয় অর্থ কোন কল্যাণ অর্জনে সক্ষম নয় হতে পারে যা বধিরতার সমার্থক বলা হয়েছে। ফলে আয়াতের অর্থ দাঁড়ায় এই মুশরিক পৌত্তলিকরা কোরআনের আয়াত শোনে কিন্তু তা হতে কোন কল্যাণ লাভ করে না যেমন কবরে শায়িতরা তোমার কথা শুনে কিন্তু কোন কল্যাণ প্রাপ্ত হয় না। কারণ তাদের সময় (কল্যাণ লাভের সুযোগ) শেষ হয়ে গেছে।
ইবনে কাইয়্যেম জাওযিয়াوما أنتَ بِمُسمعٍ من فی القبور আয়াতটির তাফসীরে বলেছেন : আয়াতটির লক্ষ্য সে সকল কাফের যাদের অন্তর মৃত,ফলে (হে নবী!) তুমি তাদের কর্ণে সত্যকে পৌঁছাতে সক্ষম নও যা হতে তারা লাভবান হতে পারে। যেমন কবরে শায়িতদের এমনভাবে শোনাতে সক্ষম নও যা হতে কল্যাণ লাভ করতে পারে।
( فَإِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَى وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِينَ)
ইবনে কাইয়্যেম এ আয়াতের তাফসীরে বলেছেন : তাদের শ্রবণের অক্ষমতা এ অর্থে যে,যেহেতু মুশরিকদের অন্তর মৃত সেহেতু তুমি সত্যকে তাদের নিকট পৌঁছাতে সক্ষম নও যেমনটি মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।’ ১০০
হাসান ইবনে আলী সাক্কাফ আশশাফেয়ীو ما أنت بمسمعٍ من فی القبور আয়াতটির তাফসীরে বলেছেন :‘ আয়াতটির লক্ষ্য সে সকল কাফের যারা বাতিলের পথে একগুয়েমি প্রদর্শন করে। ফলে তোমার উপদেশ হতে লাভবান হয় না যেমন কবরে শায়িতরা তোমার উপদেশ হতে কল্যাণ পায় না। অতঃপর তিনি তাফসীরে সাবুনী থেকে বর্ণনা করেছেন যে,আয়াতটির অর্থ হল যেমনভাবে মৃত কাফিররা তোমার হেদায়েত ও আহ্বান হতে কল্যাণ প্রাপ্ত হয় না দূর্ভাগা মুশরিকরাও তেমনি তোমার সৎপথ প্রদর্শন হতে লাভবান হয় না।১০১
( إنک لا تسمع الموتی ولا تسمع الصم الدعاء)
আয়াতটির তাফসীরে তিনি বলেছেন :‘ এর অর্থ হে নবী! যার অন্তরে বাতিলের মোহর অঙ্কিত হয়েছে তার নিকট তুমি সত্য পৌঁছাতে সক্ষম নও,কারণ তারা নিজেরাই সত্য হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।১০২