প্রাথমিক যুগের অনুসরণীয় মুসলমানদের কর্ম ধারায় কবরের উপর স্মৃতিসৌধ নির্মাণ
ইসলামের ইতিহাসের প্রতি লক্ষ্য করলে আমরা দেখি,ইসলামের আবির্ভাবের যুগ থেকেই মুসলমানদের মধ্যে কবরের উপর সৌধ নির্মাণের প্রচলন ছিল এবং এ বিষয়টি কখনোই সাহাবী ও তাবেয়ীদের প্রতিবাদের মুখোমুখি হয় নি। ইতিহাসের পরিক্রমায় প্রথমবারের মত ওয়াহাবীরা এ রীতির বিরুদ্ধে মৌখিক ও ব্যবহারিকভাবে প্রতিবাদ শুরু করে। মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত এ রীতির কিছু উদাহরণ এখানে উল্লেখ করছি :
১। মুসলমানগণ রাসূলের পবিত্র দেহ মোবারককে ছাদ বিশিষ্ট গৃহে দাফন করেন। তখন থেকেই তা সাহাবাদের সম্মানের স্থান হিসেবে পরিগণিত হতো।
হুসাইন ইবনে আহমান ইবনে মুহাম্মদ যিনি আবিল খাজ্জাজ বাগদাদী নামে প্রসিদ্ধ তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দীর একজন কবি যিনি হযরত আলীর প্রশংসায় রচিত উচ্চমানের কাসীদা যা তিনি তাঁর পবিত্র রওজার সন্নিকটে রচনা করেছেন তাতে আমিরুল মুমিনিনের কবরের উপর নির্মিত সাদা গুম্বুজের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন :
يا صاحب القبة البيضاء على النجف
من زار قبرك واستشفى لديك شفى
زوروا ابا الحسن الهادى لعلكم
تحظون بالاجر و الاقبال و الزلف
‘ হে নাজাফের সাদা গম্বুজের অধিকারী,
যে আপনাকে জিয়ারত করে শাফা (আরোগ্য) চায় সে শাফা লাভ করে,
তোমরা হেদায়েতকারী আবুল হাসানের (আলীর) কবর জিয়ারত কর,
যাতে পুরস্কার,সৌভাগ্য ও নৈকট্যের অধিকারী হতে পার।’ ১৯৪
৩। বুখারী তাঁর সহীহ্তে বর্ণনা করেছেন যে,হাসান ইবনে হাসান ইবনে আলী (আঃ) মৃত্যুবরণ করলে তাঁর স্ত্রী তাঁর কবরের উপর ছাউনী দিয়ে তাঁর নিকট বসে একবছর নিয়মিত ক্রন্দন করেছিল।১৯৫
মোল্লা আলী কারী উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন:‘ বাহ্যিকভাবে বোঝা যায় কবরের উপর ছাউনী এ উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছিল যে,যাতে করে তার বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা তার কবরের নিকট এসে কোরআন তেলাওয়াত,জিকির করতে পারে এবং তার সঙ্গীরা তার জন্য দোয়া ও মাগফেরাত কামনার জন্য সেখানে যায়।’
৪। সাইয়্যেদ বাকরী বলেছেন :‘ কবরের উপর সৌধ নির্মাণের নিষেধাজ্ঞা হতে নবিগণ,শহীদ ও সৎকর্মশীল বান্দারা বহির্ভূত।’ ১৯৬
৫। ইবনে শাবাহ বর্ণনা করেছেন,‘ আকীল ইবনে আবি তালিব তার নিজগৃহে কূপ খনন করার সময় একটি পাথরের সন্ধান পান যাতে লেখা ছিল : এই কবরটি সাখর ইবনে হারবের কন্যা হাবীবার। আকীল তখন কবরটি ঢেকে দিয়ে তার উপর একটি গৃহ নির্মাণ করলেন।’ ১৯৭
৬। সামহুদী হযরত হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিবের কবরের বর্ণনা দিয়ে বলেন :‘ তার কবরের উপর সুন্দর,মজবুত ও উঁচু একটি গম্বুজ রয়েছে. আব্বাসীয় খলিফা নাসিরুদ্দীনের (৫৭৫-৬২২) শাসনামলে তা নির্মিত হয়েছে।১৯৮
৭। ইবনে সা’ দ তার তাবাকাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন,‘ উসমান ইবনে মাজউনের মৃত্যুর পর জান্নাতুল বাকীতে তাকে দাফনের পর রাসূল (সা.) তার কবরের উপর স্থায়ী কিছু স্থাপন করলেন এবং বললেন :‘ এটি তার কবরের চিহ্ন।’ ১৯৯
আমর ইবনে হাজম বলেছেন :‘ উসমান ইবনে মাজউনের কবরের নিকট উঁচু কিছু স্থাপিত দেখলাম যা প্রতীকের মত ছিল।’ ২০০
মুতাল্লাব বর্ণনা করেছেন,‘ উসমান ইবনে মাজউনের মৃত্যু ও দাফনের পর মহানবী (সা.) নির্দেশ দিলেন পাথর জাতীয় কিছু আনার। একব্যক্তি ভারী একটি পাথর আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে মহানবী (সা.) আস্তিন গুটিয়ে পাথরটি উঠালেন ও উসমান ইবনে মাজউনের কবরের নিকট স্থাপন করলেন এবং বললেন :‘ তার কবরের চিহ্ন রাখতে চাই।’ ২০১
৮। ইবনে সা’ দ ইমাম বাকির (আ.) হতে বর্ণনা করেছে,‘ রাসূলের কন্যা ফাতিমা হযরত হামজার কবরের নিকট যেতেন ও তা পরিপাটি ও সংস্কার করতেন।’ ২০২
৯। বুখারী বর্ণনা করেছেন যে,আবদুর রহমান ইবনে আবি বাকরের মৃত্যুর পর হযরত আয়েশা নির্দেশ দিয়েছিলেন তার কবরের উপর তাঁবু স্থাপনের এবং একজনের উপর তা দেখাশোনার দায়িত্ব আরোপ করেন।২০৩
১০। হযরত উমর রাসূলের স্ত্রী জয়নাব বিনতে জাহাশের কবরের উপর তাঁবু নির্মাণের নির্দেশ দেন এবং কেউ তার এ কাজে বাধা দেয় নি।২০৪