বিপ্রতীপদ্বয়ের বিবর্তননীতি
এ নীতিটি‘ না-বোধকের না-বোধক’ নীতি বলে পরিচিত। কখনো কখনো একে প্রকৃতির বিবর্তন নীতিও বলা হয়ে থাকে। এ নীতির বক্তব্য হল : দ্বান্দ্বিকতার অসংখ্য রূপান্তরের ধারায় সর্বদা Thesis, Anti - thesis কর্তৃক অস্বীকৃত হয়ে থাকে। অনুরূপ Anti - thesis ও স্বয়ং Synthesis কর্তৃক অস্বীকৃত হয়। যেমন : বীজ,বৃক্ষকর্তৃক এবং তাও নতুন বীজসমূহ কর্তৃক অস্বীকৃত হয়। প্রাণ একক (نطفه ) ডিম কর্তৃক এবং স্বয়ং ডিম বাচ্চা কর্তৃক অস্বীকৃত হয়ে থাকে। কিন্তু সকল অনুজই,অগ্রজ অপেক্ষা পূর্ণতর। অর্থাৎ দ্বান্দ্বিক বিবর্তন-ধারা সর্বদা উন্নয়ন ও পূর্ণতার দিকে হয়ে থাকে। আর এ নীতির গুরুত্বও এখানেই সুপ্ত,যা রূপান্তর ধারাকে নির্দেশ করে এবং রূপান্তর ধারা উন্নয়ন ও পূর্ণতার দিকে বলে গুরুত্বারোপ করে।
সমালোচনা :
নিঃসন্দেহে প্রতিটি পরিবর্তন ও বিবর্তনেই পূর্ববর্তী অবস্থান ও অবস্থা বিলুপ্ত হয়ে থাকে এবং নতুন কোন অবস্থা ও অবস্থানের সূত্রপাত ঘটে। যদি‘ না-বোধকের না-বোধক’নীতিকে উপরোল্লেখিত অর্থে বিবেচনা করি,তবে তা রূপান্তরের অবিচ্ছেদ্য বিষয়ের বর্ণনা ব্যতীত আর কিছুই নয়। কিন্তু এ নীতির যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে এবং একে যে,গতি ও পূর্ণতার দিক-নির্দেশনা বলে মনে করা হয়েছে,সে প্রসঙ্গে বলতে হয় : বিশ্বের গতি ও রূপান্তর পূর্ণতার দিকে বলতে যদি এ অর্থকে বুঝায় যে,প্রতিটি নতুন বিষয়ই অপরিহার্যভাবে পূর্ববর্তী বিষয় অপেক্ষা পূর্ণতর তবে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না । ইউরেনিয়াম যে,অতি বিচ্ছুরণের প্রভাবে সীসায় পরিণত হয় তাও কি আর পূর্ণতাপ্রাপ্তি বলে পরিগণিত হয় ? পানি যে,বাস্পে পরিণত হয় অথবা বাস্প যে পানিতে পরিবর্তিত হয়,তাতেও কি পূর্ণতা প্রাপ্তি ঘটে ? বৃক্ষ ও লতা-পাতা যে,শুষ্ক হয়ে যায় এবং কোন প্রকার বীজ ও ফলই তাতে অবশিষ্ট না থাকে তা-ও কি তাদের পূর্ণতা প্রাপ্তি?
অতএব শুধুমাত্র এটুকই গ্রহণযোগ্য যে,কোন কোন প্রাকৃতিক বিষয়বস্তু গতি ও পরিবর্তনের ফলে পূর্ণতর হয়ে থাকে (সকল বিষয়ই নয় )। সুতরাং বিবর্তনকেও বিশ্বের সকল সৃষ্ট বিষয়ের জন্যে একটি সার্বজনীন সূত্ররূপে গ্রহণ করা যায় না ।
পরিশেষে স্মরণ করব : এ সকল নীতিগুলো সার্বজনীনভাবে যদি গৃহীত ও স্বীকৃতও হয়ে থাকে,তারপরও প্রকৃতি বিজ্ঞানে প্রমাণিত সূত্রসমূহের মত শুধুমাত্র সৃষ্ট বিষয় বস্তর স্বরূপ উদ্ঘাটন করতে পারত । কিন্তু,এমন কোন প্রতিষ্ঠিত সার্বজনীন নীতি ও সূত্রের অস্তিত্ব নেই যে,প্রমাণ করবে কোন বিষয় তার সৃষ্টিকর্তা বা অস্তিত্বদাতা কারণ ব্যতীতই সৃষ্টি হয়েছে। যেমনি করে পূর্ববর্তী পাঠসমূহে আমরা বর্ণনা করেছি যে,যেহেতু বস্তু ও বস্তুগত বিষয়সমূহ হল সম্ভাব্য অস্তিত্ব,সেহেতু কোন অনিবার্য অস্তিত্বের উপর নির্ভরশীল থাকা অপরিহার্য ।