জাবরবাদীদের ভ্রান্ত ধারণার জবাব
জাবরবাদীদের গুরুতর ভুলধারণাগুলো ও ঐগুলোর জাবাব নিম্নে বর্ণনা করা হল :
১। মানুষের ইচ্ছা,অভ্যন্তরীণ প্রবৃত্তি বা কামনা জাগরণের মাধ্যমে রূপ পরিগ্রহ করে। আর এ ধরনের কামনা,একদিকে যেমন মানুষের নির্বাচনের ক্ষমতাধীন নয়,অপরদিকে তেমনি কোন বাহ্যিক কারণের প্রভাবেও আন্দোলিত হয় না। অতএব স্বাধীন নির্বাচন ক্ষমতার কোন স্থান থাকতে পারে না।
জবাব : আভ্যন্তরীণ প্রবৃত্তির জাগরণ,স্বাধীন নির্বাচন ও সিদ্ধান্তের জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র সৃষ্টি করে কোন কাজের সিদ্ধান্ত দেয় না,যার ফলে আভ্যন্তরীণ প্রবৃত্তির জাগরণের মাধ্যমে প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে বাধ্যতামূলক কোন ফলে উপনীত হবে। এর প্রমাণ এই যে,অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষকে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হতে হয় এবং ঐ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্যে চিন্তা-ভাবনা ও ঐ কর্মের লাভ-লোকসানকে বিবেচনা করতে হয় এবং কখনো কখনো তা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত হয়।
২। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার ভিত্তিতে বলা যায়,উত্তরাধিকার,গ্রন্থির ক্ষরণ,তদোনুরূপ পারিপার্শিক ও সামাজিক অবস্থাও মানুষের কোন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে এবং তাদের পারস্পরিক আচার-ব্যবহারের বৈসাদৃশ্যও এ কারণগুলোর বৈসাদৃশ্যের ফলে রূপপরিগ্রহ করে। যেমনটি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও মোটামুটি অনুমোদন পেয়েছে। অতএব মানুষের কীর্তি-কর্ম তার স্বাধীন নির্বাচন ক্ষমতা থেকে পরিগৃহীত -এ কথা বলা যায় না।
জবাব : এখতিয়ার ও স্বাধীন ইচ্ছাকে স্বীকার করার অর্থ এ নয় যে,উল্লেখিত কারণগুলোর প্রভাবকে অস্বীকার করা। বরং এর অর্থ এই যে,এ কারণগুলোর অস্তিত্ব থাকলেও মানুষ এগুলোকে প্রতিরোধ করতে পারে এবং যখন একাধিক প্রবৃত্তি বা কামনার মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়,তখন সে তাদের একটিকে নির্বাচন করতে সক্ষম।
তবে এ কারণগুলোর কোন কোনটির তীব্রতা,কখনো কখনো ঐগুলোর ব্যতিক্রমী কোন কর্মের নির্বাচনের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে। কিন্তু এ ধরনের প্রতিরোধ ও নির্বাচন,বিনিময়ে উৎকর্ষ ও পূর্ণতার ক্ষেত্রে অধিকতর প্রভাব ফেলে এবং পুরস্কারের জন্যে তার উপযুক্ততাকে অধিকতর করে থাকে,যেমন : নিদারুন উৎকন্ঠা ও অন্যান্য কঠিন অবস্থা,অপরাধ ও শাস্তি লাঘবের কারণ হয়ে থাকে।
৩। জাবরবাদীদের অপর একটি ভুল ধারণা হল : মহান আল্লাহ বিশ্বের সকল ঘটনা-দুঘটনা সম্পর্কে উদাহরণতঃ মানুষের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে,তা ঘটার পূর্বেই অবগত আছেন এবং প্রভুর জ্ঞান হল ভুল-ভ্রান্তি বিবর্জিত। সুতরাং সংগত কারণেই সকল ঘটনা মহান আল্লাহর অনাদি জ্ঞানানুসারেই ঘটে থাকবে যার ব্যতিক্রম করা অসম্ভব। অতএব স্বাধীন নির্বাচনের কোন সুযোগ নেই।
জবাব : সকল ঘটনা যেরূপেই ঘটুক না কেন,প্রভুর জ্ঞান সকল কিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে এবং মানুষ কর্তৃক স্বাধীনভাবে নির্বাচিত কর্মকাণ্ডগুলোও স্বাধীনত্বের বৈশিষ্ট্যসহ মহান আল্লাহর অবগতির আওতায় অবস্থান করে। অতএব যদি জাবরিয়াতের বৈশিষ্ট্য সহকারে কোন ঘটনা ঘটে,তবে তা খোদার জ্ঞান বহির্ভূত ঘটনা হিসেবে পরিগণিত হবে। যেমন : মহান আল্লাহ অবগত আছেন যে,কোন বিশেষ শর্তাধীন,কোন বিশেষ ব্যক্তি কোন কর্ম সম্পাদনের সিদ্ধান্ত নিবে এবং তা সস্পন্ন করবে। এরূপ নয় যে,আল্লাহর জ্ঞান,স্বাধীন নির্বাচন ও ইচ্ছার সাথে উক্ত কর্মের সস্পর্ককে অগ্রাহ্য করে শুধুমাত্র ঘটনাটি ঘটা সম্পর্কেই অবগত। অতএব আল্লাহর অনাদি জ্ঞান,ইচ্ছা ও স্বাধীন নির্বাচন ক্ষমতার সাথে কোন বিরোধ সৃষ্টি করে না।
জাবরবাদীদের অপর একটি ভ্রান্ত ধারণা,ক্বাজা ও ক্বাদার সংশ্লিষ্ট যা তাদের মতে মানুষের স্বাধীন নির্বাচন ক্ষমতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমরা পরবর্তী পাঠে এ বিষয়টি সম্পর্কে আলোচনার প্রয়াস পাব।