3%

নাহজুল বালাগার সার্বিকতা

নাহজুল বালাগাকে হযরত আলী (আ.)-এর সম্পূর্ণ প্রতিচ্ছবি সম্পন্ন গ্রন্থ বলতে পারছি না,তারপরও এটা কেমন গ্রন্থ? (প্রকৃতপক্ষে সাইয়্যেদ রাজী আলী [আ.]-এর বিভিন্ন বক্তব্যের অংশ বিশেষ এনেছেন। যেহেতু তিনি সাহিত্যিক ছিলেন তাই শুধু সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণের বিষয়গুলোই এনেছেন,অথচ মাসউদী [যিনি রাজীর একশ বছর পূর্বের] বলেছেন তৎকালীন সময়ে মানুষের নিকট আলী (আ.)-এর ৪৮০টি খুতবা লিখিত ছিল।) আমরা লক্ষ্য করব,নাহজুল বালাগায় বৈচিত্রময় বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে। যখন কেউ নাহজুল বালাগাহ্ পড়ে তখন কখনো মনে করে সম্ভবত আবু আলী সিনা কথা বলছেন। অন্যস্থানে দৃষ্টিপাত করে মনে করেন মাওলানা রুমী অথবা মহিউদ্দীন আরাবী কথা বলছেন। কোথাও দেখে যে,কবি ফেরদৌসীর মতো কথা অথবা কোন স্বাধীনতাকামী যার মাথায় স্বাধীনতা ছাড়া অন্য কিছুই আসে না এরূপ কেউ যেন কথা বলছে,কখনো লক্ষ্য করে,ঘরের কোণে অথবা মসজিদে বসা কোন আবেদ বা যাহেদ (যুহদ অবলম্বনকারী ) অথবা কোন ধর্মীয় নেতা বক্তব্য রাখছেন। অর্থাৎ সকল মূল্যবোধই আলী (আ.)-এর মধ্যে লক্ষ্য করে,যেহেতু বক্তব্য ব্যক্তির আত্মার প্রতিফলন। তখন বুঝি হযরত আলী কত বড় আর আমরা কত ক্ষুদ্র!

প্রায় পঞ্চাশ বছর পূর্বের কথা যখন আমাদের সমাজের (ইরানী) দীনি ও মাযহাবী প্রবণতা শুধু যুহদও ইবাদতের দিকে ছিল,দেখা যেত কোন বক্তা মিম্বারে গিয়ে নাহজুল বালাগার বিশেষ অংশই শুধু পড়তেন। দশ-বিশটি খুতবা যা সাধারণত পড়া হতো সেগুলো ওয়াজ-নসিহত ও যুহদ অবলম্বনের আহবান দিয়ে শুরু হয়েছে। যেমন হে মানব সম্প্রদায়! নিশ্চয় দুনিয়া তোমাদের অস্থায়ী বাসস্থান এবং আখেরাত চিরস্থায়ী বাসস্থান। সুতরাং অস্থায়ী বাসস্থানের পরিবর্তে স্থায়ী বাসস্থানকে গ্রহণ কর। নাহজুল বালাগার অন্যান্য খুতবাগুলো পড়া হতো না। যেহেতু সমাজ সেগুলো গ্রহণে সক্ষম ছিলো না। সমাজ এক বিশেষ মূল্যবোধের দিকে ঝুকে পড়েছিল এবং নাহজুল বালাগার সেই অংশ যা এ মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পর্কিত তা-ই প্রচলিত ছিল। শত বছর অতিক্রান্ত হয়ে যেত,কিন্তু একজন ব্যক্তিকে খুজে পাওয়া যেত না যে আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর মালেক আশতারের প্রতি লিখিত পত্র যা সামাজিক ও রাজনৈতিক দিক-নির্দেশনার এক ভাণ্ডার সেটি পড়বে,যেহেতু সমাজের আত্মা এর জন্য আগ্রহী ও পিপাসু ছিল না। অথবা যেখানে আলী (আ.) বলছেন,

فانی سمعت رسول الله (ص) یقول فی غیر موطن: لن تقدّس امّة لا یؤخذ للضّعیف فیها حقّه من القویّ غیر متتعتع

  নিশ্চয় আমি রাসূলল্লাহকে অনন্তর বলতে শুনেছি যে,কোন উম্মতই সম্মান ও মর্যাদার পবিত্র স্থানে পৌছতে পারবে না যতক্ষণ না তাদের ক্ষমতাশীলদের হস্ত হতে দুর্বলদের অধিকার আদায় করবে (অর্থাৎ উম্মতের দুর্বলরা ক্ষমতাশীলদের বিরুদ্ধে তাদের অধিকারের জন্য রুখে দাঁড়াবে) কোন দ্বিধা ও শংকা ছাড়াই। (নাহজুল বালাগাহ্,পত্র নং ৫৩)

পঞ্চাশ বছর পূর্বের ইরানের সমাজ এ কথার মূল্যকে অনুধাবন করতে পারত না। যেহেতু সমাজ একটি মূল্যবোধের দিকে ঝুকে পড়েছিল। অথচ হযরত আলীর বাণীর মধ্যে সকল মূল্যবোধ স্থান লাভ করেছে এবং এ মূল্যবোধগুলো তার ব্যক্তি জীবনের ইতিহাসেও আমরা দেখতে পাই।