আমরা বিশ্বাস করি যে ,ইমামেরও মহানবীর (সা.) মত বীরত্ব ,মহত্ত্ব ,আত্মসম্মান ,সত্যবাদিতা ,ন্যায় পরায়ণতা ,বিচক্ষনণতা ,জ্ঞান ,প্রজ্ঞা ও নৈতিকতা ইত্যাদি পরিপূর্ণ গুণের ক্ষেত্রে সবার সেরা হওয়া আবশ্যক। আর এক্ষেত্রে নবীর (সা.) শ্রেষ্টত্বের জন্য যে দলিল প্রযোজ্য ইমামের শ্রেষ্ঠত্বের জন্যও সেই একই দলিল প্রযোজ্য।
ইমাম তার শিক্ষা ,ঐশী হুকুমসমূহ এবং সমস্ত জ্ঞান নবীর মাধ্যমে কিংবা তার পূর্ববর্তী ইমামের মাধ্যমে লাভ করে থাকেন। যদি কোন নতুন প্রশ্নের সৃষ্টি হয় তবে তিনি তা আল্লাহ প্রদত্ত তার পবিত্র আত্মিক যোগ্যতার কারণে এলহামের মাধ্যমে জানতে পারেন। সুতরাং তিনি যখন কোন কিছুর প্রতি মনোনিবেশ করেন ও তার স্বরূপ উদঘাটন করতে প্রয়াসী হন তখন কোন প্রকার ভুল-ত্রুটি ব্যতীতই ঐ বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবগত হন। আর এ জন্য তাকে কোন প্রকার বুদ্ধিবৃত্তিক দলিল কিংবা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হয় না। তথাপি তাদের জ্ঞান ততোধিক বৃদ্ধি ও দৃঢ়করণ সম্ভব। (অর্থাৎ এমন নয় যে তাদের জ্ঞান এমন পর্যায়ে আছে যে আর বাড়তে পারে না।)
এ জন্যে মহানবী (সা.) তার দোয়ায় বলতেন-
“ প্রভু হে! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি কর। ”
মনস্তাত্বিক আলোচনায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে ,প্রত্যেক মানুষের জীবনেই এমন ঘটনা অন্ততঃ দু ’ একবার ঘটে থাকে যে ,সে তার অনুমান শক্তির মাধ্যমে কোন বিষয়ের জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এটিও এলহামের একটি অংশ। কারণ ,মহান আল্লাহই তাকে এ শক্তি দিয়েছেন। আর এ অনুমান-শক্তি ব্যক্তিভেদে দুর্বল বা শক্তিশালী কিংবা কম বা বেশী হতে পারে। যাহোক এমন একটি মুহুর্তে মানুষের অন্তর এক ধরনের জ্ঞান লাভ করে থাকে। অথচ এজন্য তাকে চিন্তা ,দলিলের অবতারণা কিংবা শিক্ষকের শরণাপন্ন হতে হয় না। প্রত্যেকেই তার জীবনে অসংখ্যবার এ ধরনের সুযোগ লাভ করে। সুতরাং মানুষের পক্ষে এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ও পরিপূর্ণ উৎকর্ষে পৌঁছা সম্ভব। আর এ ব্যাপারে সমসাময়িক ও প্রাক্তন উভয় যুগের দার্শনিকগণ আলোচনা করেছেন।
সুতরাং আমরা মনে করি ইমাম এলহাম লাভের সর্বোচ্চ যোগ্যতায় পৌঁছে যান এবং আমরা বলি এটা আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি। ফলে তার পবিত্র পরিশুদ্ধ আত্মার মাধ্যমে তিনি যে কোন অবস্থায় যে কোন মুহুর্তে যে কোন বিষয় সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন। সুতরাং তিনি যখন কোন বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন ও সে সম্পর্কে জানতে চান তখন কোন প্রকার নাম ভূমিকা বা শিক্ষা ব্যতীতই তার এ পবিত্র এলহাম শক্তির মাধ্যমেই ঐ বিষয়ে অবগত হন। তিনি যখন কোন বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তখন তা তার পবিত্র আত্মার উপর সুষ্পষ্টরূপে আপতিত হয় যেমন আপতিত হয় নির্মল আয়নার উপর কোন বস্তুর প্রতিচ্ছবি।
পবিত্র ইমামগণের (আ.) জীবন ইতিহাস থেকে এ ব্যাপারটি সুষ্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়। আমরা দেখতে পাই যে ,মহানবীর (সা.) মত ইমামগণও শৈশব জীবনের কোন সময়ই কারো নিকট প্রশিক্ষণ লাভ করেননি ,কোন শিক্ষকের শরণাপন্ন হননি-এমনকি লেখাপড়াও করেননি। তাদের জীবনে এমন কোন লেখক ও শিক্ষক দেখা যায় না যে তাদেরকে জ্ঞান দিয়েছেন। অথচ তারা হলেন পৃথিবীতে সমস্ত জ্ঞানের আধার এবং অতুলনীয়। সুতরাং তাদের জীবনে এমন কোন প্রশ্ন আসেনি যার তাৎক্ষনিক জবাব তারা দেননি। তারা কখনো "জানিনা ’ কথাটি উচ্চারণ করেননি। এমন কোন প্রশ্ন ছিল না যার জন্যে তারা কালক্ষেপণ করেছিলেন কিংবা চিন্তার আশ্রয় নিয়েছিলেন।
অপরদিকে এমন কোন ইসলামী পন্ডিত বক্তা কিংবা বিশেষজ্ঞ খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি তার জীবনী গ্রন্থে লিখেছেন যে ,তিনি পড়ালেখা করেননি কিংবা কোন পন্ডিতের নিকট জ্ঞানার্জন করেননি অথবা কোন বিষয়ের জ্ঞানে তার কোন সন্দেহ নেই। কারণ মানুষের স্বভাবজাত প্রকৃতি এরকমই।