20%

ইমামের ইমামত সম্পর্কে আলোচনা

আমাদের প্রিয় ইমামগণের রীতি ছিল জ্ঞানগত ,রাজনৈতিক ও দীনী কেন্দ্ররূপে নিজের পরবর্তী ইমামকে পরিচয় করানোর জন্য তাঁর নাম ঘোষণা করতেন ,যাতে একদিকে রাজনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য এ পথের অপব্যবহার করার মত কোন সুযোগ অবশিষ্ট না থাকে ;অপরদিকে সত্য অনুসারীরা তাঁকে চিনে নিতে পারে । আর এ জন্যেই আব্বাসীয়দের শ্বাসরুদ্ধকর দুঃশাসনের মধ্যেও তিনি নিজের পর ইমাম কাযেমের ইমামত সম্পর্কে তাঁর মহান পিতা বিভিন্ন ভাবে বর্ণনা করেছেন । এখানে আমরা এরূপ কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করব :

1.   আলী ইবনে জা ফর (আ.) বলেন : আমার পিতা ইমাম সাদেক (আ.) তাঁর একদল সাহাবীকে বলেছিলেন : আমার সন্তান মুসা সম্পর্কে আমার আদেশ গ্রহণ কর ,কারণ সে আমার সন্তানদের মধ্যে এবং যারা আমার স্মরণে আছে তাদের সকলের চেয়ে উত্তম । সে আমার উত্তরাধিকারী ,আমার পর সকল বান্দাগণের উপর আল্লাহর হুজ্জাত হবে । 48

আমর ইবনে আবান বলেন : ইমাম সাদেক (আ.) তাঁর পরবর্তী ইমামগণের (আ.) নাম বর্ণনা করেছিলেন ।

2.   আমি তাঁর পুত্র ইসমাইলের নাম উল্লেখ করলে ,তিনি বললেন : আল্লাহর শপথ! এ কর্মে আমাদের কোন স্বাধীনতা নেই ,এর দায়িত্ব আল্লাহর হাতে । 49

3.   ইমাম সাদেক (আ.)-এর প্রসিদ্ধ শিষ্যগণের মধ্যে জোরারাহ নামক একজন শিষ্য বলেন : ঐ মহান ব্যক্তির নিকট ছিলাম ;তাঁর অন্যতম সন্তান মুসা (আ.) তাঁর ডান পার্শ্বে ছিলেন এবং একটি শবদেহ (যা তাঁর অন্য সন্তান ইসমাইলের) তাঁর সম্মুখে শায়িত ছিল । ইমাম জা ফর সাদেক (আ.) আমাকে বললেন : জোরারাহ । যাও দাউদ রাকী ,হোমরান ও আবু বাসিরকে (ইমামের তিনজন সহযোগী) ডেকে নিয়ে আস ।

আমি তাদেরকে ডেকে নিয়ে আসলাম । অন্যান্যরাও আসল এবং কক্ষ পরিপূর্ণ হয়ে গেল ।

ইমাম দাউদ রাকীকে বললেন : শবদেহের উপর থেকে কাপড় সরিয়ে নাও । ইমাম যা বললেন ,দাউদ তাই করল । অতঃপর তিনি বললেন : দাউদ! দেখতো ইসমাইল জীবিত ,না মৃত!

সে বলল : হে আমার নেতা ,মৃত ।

ইমাম একে একে প্রত্যেককে শবদেহ দেখালেন এবং সকলেই বলল যে মৃত । অতঃপর তিনি বললেন : হে প্রভু! তুমি সাক্ষী থাক (যে মানুষকে ভ্রান্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কতটা চেষ্টা করেছি) । অতঃপর মৃতকে গোসল ও সুগন্ধি মেখে কাফন পড়াতে নির্দেশ দিলেন । যখন সব কাজ সম্পন্ন হল পুনরায় মোফাজ্জালকে আদেশ দিলেন : তার মুখের কাফন খুলে দাও ।

মোফাজ্জাল তা-ই করল ,যা ইমাম বললেন । অতঃপর জিজ্ঞাসা করলেন : জীবিত না মৃত ?মোফাজ্জল সবিনয়ে জবাব দিল : মৃত । পুনরায় উপস্থিত সকলকে জিজ্ঞাসা করলেন এবং সকলেই পূর্বের মত জবাব দিল । হযরত পুনরায় বললেন : প্রভু হে! তুমি সাক্ষী থাক । কিন্তু তারপর ও একদল যারা আল্লাহর জ্যোতিকে নির্বাপিত করতে চায় ,তারা ইসমাইলের ইমামতের বিষয়টি উত্থাপন করবে । এ সময় তার সন্তান হযরত মুসা (আ.)-এর দিকে ইঙ্গিত করে বললেন :

মহান আল্লাহ স্বীয় জ্যোতিকে নির্ধারণ করে থাকেন ,যদিও একদল তা না চেয়ে থাকে ।

ইসমাইলকে সমাধিস্থ করা হলো । ইমাম উপস্থিত সকলকে জিজ্ঞাসা করলেন : যাকে এখানে কবরস্থ করা হলো সে কে ?সকলেই বলল : আপনার সন্তান ইসমাইল । ইমাম বললেন : প্রভু হে ! তুমি সাক্ষী থাক । অতঃপর স্বীয় সন্তান মুসা (আ.)-কে ধরে বললেন :

هو الحقّ و الحقّ معه ومنه الي ان يرث الله الارض و من عليها

সে সত্যের উপর ও সত্যের সাথে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সত্য তার থেকে । 50

4.   মানসূর ইবনে হাযিম বলেন যে ,ইমাম সাদেক (আ.)-এর নিকট নিবেদন করলাম : আমার পিতা মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক ,সব সময় জীবন মৃত্যুর সম্মুখীন হয় ;যদি আপনার ক্ষেত্রে এরূপ ঘটে তবে কে আমাদের ইমাম হবেন ?ইমাম তাঁর সন্তান আবুল হাসান মুসা (আ.)-এর স্কন্ধে হাত রাখলেন এবং বললেন : যদি আমার কিছু ঘটে আমার এ সন্তান তোমাদের ইমাম হবে । ইমাম মুসা কাযেম (আ.) তখন পাঁচ বছরের ছিলেন এবং ইমাম জা ফর সাদেকের অপর সন্তান আবদুল্লাহ (পরবর্তীতে কেউ কেউ তার ইমামতে বিশ্বাসী ছিল) সে সভায়  আমাদের সাথে উপস্থিত ছিলেন ।

5.   শেখ মুফিদ (আল্লাহ তাঁর পবিত্র আত্মার উপর অপরিসীম রহমত বর্ষণ করুন) বলেন : ষষ্ঠ ইমামের একদল সঙ্গী যেমন : মোফাজ্জল ইবনে উমর ,মা য়ায ইবনে কাসির ,আবদুর রহমান ইবনে হাজ্জাজ ,ফাইয ইবনে মোখতার ,ইয়াকুব সিরাজ ,সোলাইমান ইবনে খালিদ ,সাফওয়ান জাম্মাল এবং অন্যান্যরা (যাদের নাম উল্লেখ করা সময়সাপেক্ষ) হযরত ইমাম কাযেম (আ.)-এর উত্তরাধিকারী হওয়ার ব্যাপারটি বর্ণনা করেছিলেন । অনুরূপ ইমামের দু ভাই ইসহাক ও আলী (যাদের তাকওয়া ,ফযিলাত ও পরহেজগারীর ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই) থেকেও বর্ণিত হয়েছে । 51

এছাড়া ষষ্ঠ ইমামের পক্ষ থেকে এতটা গুরুত্ব ও সুস্পষ্টরূপে বর্ণিত হয়েছে যে বিশেষ করে শিয়া এবং যারা ষষ্ঠ ইমামের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তাদের জন্য এটা সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট রূপে প্রতীয়মাণ ছিল যে ,তাঁর পর তার প্রিয় পুত্র আবুল হাসান মুসা ইবনে জা ফার আল কাযেম ইমাম হবেন ,ইসমাইল (যিনি তাঁর পিতার বর্তমানেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন) নন বা ইসমাইলের পুত্র মুহাম্মদও নন ;কিংবা ইমাম সাদেকের অন্য পুত্র আবদুল্লাহ্ও নন । এতকিছুর পরও সত্য ইমাম জা ফর সাদেকের শাহাদাতের পর একদল তার পুত্র ইসমাইল বা ইসমাইলের পুত্র অথবা অন্য পুত্র আবদুল্লাহর ইমামতে বিশ্বাস স্থাপন করেছিল । আর তাঁদের জন্য যে সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ করা হয়েছিল ,তা থেকে বিচ্যুত হয়েছিল ।